বকসী বাড়ির দূর্গা পূজা। shy-fox 10%
হ্যালো
আমার বাংলা ব্লগ বাসী সবাইকে আমার নমস্কার, আদাব। আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন,সুস্থ আছেন? ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আমিও পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে ভালোই আছি।
আমাদের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে। বকসী বাড়ি হচ্ছে আমাদের বাড়ির নাম আমাদের এলাকায় এক নামেই পরিচিত। আমি জন্মগত সূত্রে বকসী পরিবারের মেয়ে, আর বৈবাহিক সূত্রে চাকী পরিবারের পুত্রবধূ স্বামীর ইচ্ছেতেই নামের শেষে চাকী পদবি ব্যবহার করি।আমার দাদুর নাম স্বর্গীয় মনি ভূষণ বকসী তাকে চেনে না এমন কোন লোক নেই এলাকায়। আমরা খুব ছোটবেলায় দাদুকে হাড়িয়েছি তার কথা খুব বেশি মনে না পড়লেও কিছু কিছু স্মৃতি মনে পড়ে। আমি সবসময়ই দাদুর কাছে কাছে থাকতাম দাদুর কখন কি লাগতো সেগুলো তার হাতের কাছে এনে দিতাম এগুলো একটু একটু মনে পড়ে।আমার দাদু খুবই ভালো একজন মানুষ ছিলেন তাকে এলাকার সবাই খুব সন্মান করতেন, সবাই তাকে বকসী বাবু বলে ডাকতেন।
আমাদের বাড়ির পূজা কত বছর আগে শুরু করা হয়েছিল তার কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য আমার জানা নেই আমার দাদু বাবা যদি বেঁচে থাকতো তাহলে হয়তো আমি সঠিক তথ্য দিতে পারতাম।যাইহোক অনেক অনেক বছর আগে থেকে করা পূজা আমাদের বাড়িতে প্রতি বছর হয়ে থাকে। আমার বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে যতটুকু দেখেছি ততটুকুই বলতে পারবো।
পূজা আসার অনেক দিন আগে থেকেই আয়োজন শুরু হয়ে যেতো প্রথম কাজ হলো গ্রামের সকল মানুষ কে বাড়িতে ডেকে নিয়ে মিটিং করা হতো তার কারণ হলো পুজোর অনেক কাজ থাকে যেগুলো একার পক্ষে করা সম্ভব হয়না তাই সকলের সাহায্য প্রয়োজন সেজন্য নির্দিষ্ট একটা দিন ধার্য করা হয় পূজার মিটিং করার জন্য। তারপর একজন ব্যক্তি গিয়ে প্রত্যেক বাড়ি বাড়ি সবাইকে বলতে হয় বকসী বাড়িতে আসার জন্য। নির্ধারিত দিনে সন্ধ্যার পর সবাই আমাদের বাড়িতে এসে হাজির হতো তারপর সবাইকে বসার ব্যবস্থা করে দিতো। পূজা কিভাবে হবে কে কি কাজ করবে সেগুলো নিয়ে আলাপ আলোচনা করা হতো।
গ্রামের মানুষ পূজার চাঁদা সেরকম দিতো না যার যা মন চাইতো সে সেরকম দিতো আমার খুব ভালো করে মনে আছে, কেউ, ২০ টাকা, কেউ ৫০ টাকা সর্বোচ্চ এরকম করে হাতে গোনা কয়েকজন দিতো সবমিলিয়ে হয়তো হাজারখানেক টাকার মতো হতো। টাকাটা বড় কথা না সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন তাই প্রতিবছর গ্রামের মানুষ কে ডাকা হয়। দশমী শেষে ভাসান এর সময় কলাগাছ কেটে বড় করে ভেলা বানানো তারপর পুকুরে নিয়ে যাওয়া বিসর্জন দেওয়া সবকিছুর জন্য অনেক মানুষের প্রয়োজন।
মূর্তি তৈরি করে যিনি তাকে আমাদের এলাকায় মালাকার বলা হয়। মালাকার আসে তারপর শুরু হয়ে যায় বাঁশ কাটা কাঠাম তৈরি,খড় পাকানো মাটি লাগানো দিনের পর দিন চলে মূর্তি তৈরির কাজ। আমরা খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে সারাদিন মালাকার দাদুর সাথে পড়ে থাকতাম তার মূর্তি বানানো দেখার জন্য, হাতে হাতে তার সাথে কাজও করে দিতাম আমরা সবাই।
মহালয়ার দিন থেকে শুরু হয় পূজার আনন্দ
দেখতে দেখতে পূজার দিন ঘনিয়ে আসে সব আয়োজন শেষ হয়। শহরের মতো অনেক বেশি জাঁকজমকপূর্ণ পূজা না হলেও খুব নিয়ম নিষ্ঠার সহিত পূজা হয় আমাদের বাড়িতে প্রতিটি পূজা সময় অনুযায়ী এবং খুব সুন্দরভাবে করা হয় পূজাতে কোনরকমের ত্রুটি রাখা হয়না, তার জন্য আমাদের মা খুবই জাগ্রত সেটা সকলেই জানেন, পূজাতে কোন ত্রুতি পেলে সাথে সাথে কোন না কোন ইঙ্গিত দেয়। এলাকার একজন কাকিমা মাছ খেয়ে সেই শরীরে মন্দিরে প্রবেশ করেছিলো সাথে সাথে তার শাড়িতে আগুন লেগে গেছিলো, এরকম অনেক অনেক ঘটনা আছে।
গতবছরের একটি ঘটনা থেকে আমি আরও বেশ ভালো করেই বুঝতে পেরেছি মায়ের উপস্থিতি।প্রতিবছর আমার মা পূজার সকল কাজ নিজ হাতেই করে থাকেন পূজা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মন্দিরে থাকেন,কিন্তু মা গতবছর অনেক অসুস্থ ক্যান্সারে আক্রান্ত তাই পূজার কাজ করা তো দূরের কথা মায়ের মুখ পর্যন্ত দর্শন করতে পারেননি তাই আমারও
পূজার আনন্দ খুব ভালো উপভোগ করতে পারিনি।
সন্ধি পূজার সময় আমরা সবাই মন্দিরের সামনে বসে আছি সময় অনুযায়ী পূজা শেষ করে পুরোহিত মশাই বাইরে বের হয়ে আসে তখন মন্দিরে কেউ ছিলনা সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল হঠাৎ করেই মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বালন করা হয় পাঁচদিন ব্যাপী সেই প্রদীপ পড়ে গিয়ে ভেঙ্গে যায় তখনি সবাই খুব ভয় পেয়ে যায় যে মা কি অমঙ্গলের চিহ্ন দেখালেন, তার ঠিক দু'দিন পরেই আমার মা আমাদের ছেড়ে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে চলে যান।
পূজা শুরুর আগে থেকে আমাদের বাড়িতে নিরামিষ খাবার খাওয়া হয় পুজোর কয়দিন মাছ মাংস পেঁয়াজ রসুন কোন জিনিস আমাদের বাড়িতে আসেনা দশমীর দিন সকালে পুঁটিমাছ দিয়ে যাত্রা করার পর মাছ আসে বাড়িতে। কোনভাবেই অনিয়ম করা যায় না করলেই কোন না কোন বিপদ ঘটবেই তার কোন মাফ নেই, তাই সবাই খুব মানে আমাদের বাড়ির মাকে, যে যা মানত করে তাই পূর্ণ হয় তার জন্য প্রতিবছর সবাই মাকে অনেক কিছু দেয় সোনা, শাড়ি,শাঁখাসিঁদুর আলতা,সন্দেশ আরও কতকিছু দিয়ে মাকে সন্তুষ্ট করার আপ্রাণ চেষ্টা করে সবাই মাও সবাইকে তার কৃপা প্রদান করেন কখনো কাউকে নিরাশ করেন না।
আমাদের মায়ের কৃপার কোন শেষ নেই তাই চাইলেও কখনো পূজা বন্ধ করা সম্ভব না, যত সমস্যা হোক না কেন পূজা করতেই হবে। যুগের পর যুগ ধরে বকসী বাড়ির পূজা চলছে আশাকরি এভাবে চলতেই থাকবে।
আমাদের বাড়ির পূজার আরও অনেক ভালো ভালো কিছু মুহুর্ত রয়েছে যেগুলো পরবর্তী সময়ে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন আজ এখানেই শেষ করছি।
কাকিমা আপনি অনেক সুন্দরভাবে আপনাদের পরিবারের ঐতিহ্য আর ঐতিহাসিক পুজার কথা বলেছেন।আপনাদের মন্দির বেশ জাগ্রত।এরকম মন্দির খুব কমই থাকে।অনেক ভাল লাগল আপনাদের পারিবারিক পুজা সম্পর্কে জানতে পেড়ে।ধন্যবাদ কাকিমা।
সুন্দর মন্তব্য করার জন্য তোমাকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। হ্যাঁ আমাদের বাড়ির মন্দিরের মা অনেক জাগ্রত।
আপু আপনার বাবার বাড়ির পুজো সম্পর্কে জেনে সত্যি ভালো লাগলো। অনেক পুরনো দিনের বাড়ি আপনাদের তাহলে। এলাকার মধ্যে আপনাদের বাড়ির পুজো সবার কাছেই সুপরিচিত জেনে ভালো লাগলো। আসলে আমাদের যেখানে বেড়ে ওঠা সেখানের প্রত্যেকটি জিনিস ভালো লাগে। বৈবাহিক সূত্রে হয়তো আপনার পদবী চেঞ্জ করতে হয়েছে। কিন্তু আপনি মনে মনে ঠিকই বকসী হয়ে গেছেন আপু।
ঠিক বলেছেন আপু অনেক পুরোনো দিনের বাড়ি আমাদের আমরা এখনো সবকিছু যৌথভাবে করে থাকি যেকোন অনুষ্ঠানে আমাদের বাড়িতে খুবই আনন্দ হয়ে থাকে। এখনকার দিনের মেয়েরা বিয়ের পর নিজের পদবী পরিবর্তন করেনা কিন্তুু আমার হাসবেন্ড এর ইচ্ছে যে আমার নামের পাশে তার পদবীটা থাক তাই আমি পরিবর্তন করেছি।বকসী আমার জন্মগত পদবী তাই আমি মনে প্রাণে সবসময়ই বকসী থাকবো। ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
দিদি আপনাদের মন্দিরে পুজো সম্পর্কে অনেক সুন্দর করে উপস্থাপন করছেন।আপনাদের বকসী বাড়ি মন্দির তো বেশ জাগ্রত।এভাবে পুজো করলে ফল পাওয়া যায়। আপনার বাড়ি পুজা সম্পর্কে জেনে ভাল লাগল দিদি।
দিদি আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য। সত্যিই দিদি আমাদের মন্দির অনেক জাগ্রত আজ পর্যন্ত অনেক গুলো ঘটনার সাক্ষী আমরা সবাই তাই মানতেই হয় আমাদের মা অনেক জাগ্রত।