জাহিন বাবুর জন্মদিন

in আমার বাংলা ব্লগlast year

হ্যালো বন্ধুরা

সবাইকে আমার নমস্কার,আদাব।আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন,সুস্থ আছেন?ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আমিও ভালো আছি।

প্রত্যেকের জীবনে জন্মদিন এমনি একটা বিশেষ দিন যেটা সকলের কাছেই অনেক মূল্যবান।ঠিক তেমনি জাহিনের বাবা-মার জন্য জাহিনের জন্মদিন টি খুবই মূল্যবান একটি দিন।জাহিনের বাবা আমাদের থানার সেকেন্ড অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। এবং আমরা যে বাসায় থাকি সেই বিল্ডিং এর চার তলায় বাসা ঠিক করেন।তারপর ভাবিকে নিয়ে আসেন বাসায়।থানার সেকেন্ড অফিসার হওয়ার কারনে ভাই খুব একটা বাসায় থাকার সুযোগ পান না।ভাবি সারাদিন বাসায় একা একা থাকেন মাঝে মধ্যে সবার সাথে দেখা হলে কথাবার্তা বলেন।বিয়ের অনেক বছর সময় পার হয়ে যায় কিন্তু ভাবির সন্তান না হওয়ার জন্য উনি খুবই ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন তাই সবসময়ই খুব মন মরা হয়ে থাকতেন।

IMG_20230913_231406.jpg

আমাদের বিল্ডিং এর সব ভাবিরা আমার বাসায় যাতায়াত করেন।ঠিক তেমনি মিমি ভাবিও মাঝে মধ্যে আসতেন তবে খুব কম।মাঝে ভাই ভাবির বিবাহ বার্ষিকী অনুষ্ঠান খুব ধুমধামের সহিত পালন করেন কিন্তু দুঃখের বিষয় আমি সেই অনুষ্ঠানে থাকতে পারিনি তখন আমার মা খুবই অসুস্থ ছিলেন তার চিকিৎসার জন্য আমি ঢাকায় গিয়েছিলাম।আমি ঢাকা থেকে এসে শুনি ভাই ভাবি দুজনে ইন্ডিয়াতে গেছেন চিকিৎসার জন্য।বাংলাদেশে চিকিৎসা করে কোনো লাভ হচ্ছিলো না তাই বাধ্য হয়েই ইন্ডিয়া গিয়েছেন।তিন মাস পর একদিন শুনতে পেলাম মিমি ভাবি মা হতে চলেছেন।এই কথাটা শুনে আমরা সবাই খুবই আনন্দিত হয়েছিলাম।

IMG_20230913_231531.jpg

দীর্ঘ চার মাস পর ভাবি চেন্নাই থেকে বাসায় আসেন।ভাই ভাবি খুবই খুশি ছিলেন ওনাদের খুশির মুহুর্ত গুলো দেখেও ভালো লাগতো।যথাসময়ে জাহিন বাবুর আগমন ঘটলো ভালোভাবেই।কিন্তু দু'দিন পরেই শুনতে পাই জাহিন বাবু খুবই অসুস্থ তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়ায় নিয়ে গেছে এবং মিমি ভাবি এখানে হাসপাতালে আছেন।এই কথা শোনার পর খুবই কষ্ট পেলাম এবং আমরা সবাই যার যার মতো ঈশ্বর কে ডাকতে থাকলাম যাতে করে জাহিন বাবু সুস্থ হয়ে মায়ের কোলে ফিরতে পারে।ঈশ্বর হয়তো তার মায়ের ডাক এবং সকলের প্রার্থনা শুনেছিলেন তাই জাহিন বাবু সাতদিন পর মোটামুটি সুস্থ হয়ে তার মায়ের কোলে ফিরলো।

IMG_20230913_231520.jpg

দেখতে দেখতে জাহিন বাবু বড় হতে লাগলো।সময় কত দ্রুত চলে যায় তা বুঝতেই পারিনা আমরা।হঠাৎ সেদিন সন্ধ্যা বেলা মিমি ভাবির আগমন আমার বাসায়।ভাবি এসে বসলেন তারপর আমাকে বললেন বৌদি আগামীকাল সন্ধ্যায় আমার বাসায় আপনাদের দাওয়াত কিন্তু কিসের দাওয়াত তা বলছেন না।আমি অনেক ভেবেচিন্তে বললাম ভাবি কাল কি জাহিনের জন্মদিন?তখন ভাবি হাসি দিয়ে বললো হ্যাঁ।আমি দুঃখের সহিত জানালাম ভাবি আগামীকাল তো আমার জন্মাষ্টমীর উপবাস তাই আমি তো খেতে পারবো না,আর আমার মেয়েরাও উপোস করবে তাই ওরাও খেতে পারবে না।তখন ভাবি বললো বৌদি আপনি রাতে কি খাবেন!আমি বললাম পুজো শেষ করে ফল খাবো।ভাবি বললো খাবার খেতে না পারেন কিন্তু আমার ছেলেকে দোয়া করতে অবশ্যই আসবেন।আমি ভাবিকে নিরাশ করলাম না বললাম ঠিক আছে ভাবি অবশ্যই চেষ্টা করবো।

আমরা সব ভাবিরা মিলে আলোচনা করলাম জাহিন বাবুকে কি উপহার দেওয়া যায়!বর্তমান বাজারে যে জিনিসপত্রের দাম তাতে করে অল্প টাকায় ভালো কিছু কেনা সম্ভব নয়,তারপর বেশি টাকা খরচ করাটাও সাধ্যের বাইরে।তাই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো বাজেটের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে এমন কিছু দিতে হবে যাতে করে সবদিক বজায় থাকে।আমরা পাঁচজন মিলে টাকা একত্রে করে দুই ভাবিকে দিলাম কেনাকাটা করার জন্য।ওনারা বাজারে গিয়ে একটা বেবি সাইকেল ও একটা আল্লাহর ওয়ালমেট কিনে আনেন।

IMG_20230913_231613.jpg

IMG_20230913_231633.jpg

সন্ধ্যায় সবাই ভাবির বাসায় যায়,কিন্তু আমি যেতে পারিনি তার কারন আমি আমার সারাদিন উপোস ছিলাম সন্ধ্যায় পুজো শেষ করেছি,তারপর বৃত্তদের বাসায় পুজোর নিমন্ত্রণ ছিলো সেখানে গিয়েছিলাম।সব ভাবিরা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো।মিমি ভাবি আমাকে কল করে বললেন বৌদি তাড়াতাড়ি চলে আসেন আপনাদের জন্য অপেক্ষায় আছি কেক কাটবো।আমি শুনে তাড়াতাড়ি চলে আসলাম এবং অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলাম।সব বাচ্চারা মিলে কেক কাটলো জাহিন বেশ হাসিখুশি ছিলো ভাবি ভাই তো অনেক খুশি এতোদিন পর ছেলের জন্মদিন করতে পারছে এটা ওনাদের কাছে খুবই খুশির মুহুর্ত।

কেক কাটা খাওয়াদাওয়া শুরু হলো আমি ভাবিকে বললাম ভাবি আমি তো খাবো না এখন তাহলে বাসায় চলে যাই।ভাবি কিছুতেই বাসায় আসতে দিচ্ছে না খুব অনুরোধ করে বলছিলো বৌদি একটু বসেন।আমি ভাবলাম এতো করে যখন বলছে তখন একটু বসেই যাই।কিছুক্ষণ পর দেখি ভাবি একটা থালা ভর্তি করে ফল কেটে নিয়ে আসলো এবং আমার হাতে ধরিয়ে দিলো।আমি তো খাবো না ভাবি খুব জোরাজোরি করছিলো তাই বাধ্য হয়েই খেতে হলো।অন্য সবার জন্য বিরিয়ানি ডিম,সালাদ কোক,কেক মিষ্টি এগুলো আয়োজন করেছিলো।খাওয়াদাওয়া শেষে সব বাচ্চারা ভাবির রুমে গিয়ে গান খেলাধুলা করলো আর আমরা সব ভাবিরা মিলে বেশকিছুক্ষণ ধরে আড্ডা দিলাম।সবাই মিলে অনেক ছবি তুললো।

IMG_20230913_231424.jpg

IMG_20230913_231502.jpg

দুই মডেল রুবি ভাবি ও মৌসুমি ভাবি দুজনেই খুব রসিক মানুষ।দুজনের হাসবেন্ড পুলিশের চাকরি করেন।

IMG_20230913_231547.jpg

সপ্তমী সুলতানা ভাবি উনি পুলিশের চাকরি করেন ভাবি সময় পেলেই খুব আড্ডা দিতে পছন্দ করেন।সাথে আমার বড় কন্যা বর্ষা।মাঝখানে নাজু আরেক ভাবির মেয়ে।
IMG_20230914_011959.jpg

মৌসুমি ভাবির ছেলে রৌদ্র আমার মেয়ের ক্লাসমেট।অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে দুজনের ড্রেস ম্যাচিং হয়েছে তাই দুজন সেই খুশিতে একটা সেল্ফি তুলে নিয়েছে।
IMG_20230914_012527.jpg

ছোটোখাটো ঘরোয়া ভাবে একটি জন্মদিনের আয়োজন ছিলো।সবমিলিয়ে আমরা সবাই অনেক ভালো সময় কাটিয়েছিলাম।মন থেকে সবাই জাহিন বাবুর জন্য অনেক অনেক আশীর্বাদ করেছি,ও বড় হয়ে যেনো মানুষের মতো হয় এবং বাবা-মায়ের সব স্বপ্ন পূরণ করে।আজ এখানেই শেষ করছি সবাই জাহিন বাবুর জন্য আশীর্বাদ,দোয়া করবেন।

ধন্যবাদ।

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  
 last year 

সকলে মিলে যে বেশ ভালোই সময় কাটিয়েছেন তা আপনাদের ছবিগুলো দেখেই বোঝা যাচ্ছে। জাহিনের জন্য শুভেচ্ছা রইল, ওর আগামী দিনগুলো ভালো কাটুক এই প্রত্যাশাই করি।

 last year 

হ্যাঁ ভাবি অনেক ভালো সময় কাটানো হয়েছে সবাই মিলে।ধন্যবাদ ভাবি।

 last year 

জাহিন বাবুর জন্য শুভকামনা আর ভালোবাসা রইলো। ও যেন বড় হয়ে একজন ভালো মানুষ হয়। আর জন্মদিন উপলক্ষে সবাই মিলে বেশ মজা হয়েছে বোঝাই যাচ্ছে। আর উপহারের সাইকেলে চড়া জাহিন বাবুর ছবিটি ভীষণ ভালো লাগলো। পাঁচ জনে মিলে দারুণ একটি উপহার দিয়েছো।

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

হ্যাঁ মনা সবাই মিলে উপহার টা বেশ ভালোই হয়েছিলো।সাইকেল পেয়ে জাহিন খুব খুশি। ধন্যবাদ মনা।

 last year 

জাহিন বাবু যে তার বাবা মায়ের সবেধন নীলমনি তা বুঝতে পারলাম।যদিও সব বাবা মায়ের কাছেই সন্তান স্নেহের ধন। জাহিন বাবুর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। সবাই অনেক উপভোগ করেছেন জন্মদিন তা বোঝাই যাচ্ছে সবার চোখে আনন্দের ঝিলিক দেখে। গিফটগুলোও অনেক সুন্দর হয়েছে।ধন্যবাদ কাকিমা আনন্দের মুহুর্ত গুলো শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

আসলেই জাহিন ওর বাবা মায়ের অনেক আদরের ধন।তোমাকেও ধন্যবাদ জানাই সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 last year 

শুভ জন্মদিন জাহিন।জাহিন অনেক আদরের ও সবার প্রিয় বাচ্চা বুঝতে পেলাম পোস্ট টি পরে।অনুষ্ঠানের আনন্দঘন পরিবেশের চিত্র বেশ সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন পোস্টে খুব ভালো লাগছে।জাহিন বাবুর উপহারের সাইকেলে টি সুন্দর হয়েছে এবং জাহিন বাবুর ও বেশ পছন্দ হয়েছে বোঝাই যাচ্ছে ছবিতে।

 last year 

ঠিক বলেছো জাহিন সাইকেল পেয়ে খুবই খুশি, আর এতে করে আমরাও খুশি। অনেক সুন্দর মন্তব্য করার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

 last year 

আসলে এরকম ভাবে যদি জন্মদিনের অনুষ্ঠান করা হয় তখন খুবই ভালো সময় কাটানো যায়। আর সেই অনুষ্ঠানে যদি সবাই থাকে তাহলে তো আরো বেশি ভালো লাগে। বুঝতেই পারছি জাহিন সাইকেল পেয়ে অনেক বেশি খুশি হয়েছিল। আসলে ছোট বাচ্চারা এরকম খেলনা গুলো খুব পছন্দ করে। সাইকেল চালাতে পারবে সে অনেক মজা করে। সময়টা বেশ ভালোভাবে উপভোগ করেছিলেন বুঝা যাচ্ছে।

 last year 

জাহিন বাবুর জন্মদিন তাহলে পাঁচজন মিলে একসাথে গিফট দিলেন। আসলে জাহিন বাবুর মা-বাবার জন্য কষ্ট লাগলো। বিয়ে করার এত বছর পর তাদের একটি সন্তান হল তাও অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে। আসলে সন্তান দেওয়া আল্লাহর উপর। যাইহোক জাহিন বাবু যেন খুব ভালো হয় বড় হয়ে মা-বাবার মুখ উজ্জ্বল রাখে। যাহোক আপনি আপনার ধর্মীয় রীতি রেওয়াজ মেনে জন্মদিনে এটেন্ড করেছেন শুধু জাহিন বাবুর দোয়া করার জন্য। এবং অনেক সুন্দর করে জাহিন বাবুর জন্মদিনের পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন।

 last year 

অনেক সময় আপু পরিবারে বাচ্চা না হলে তখন ওই পরিবারে মন থেকে সুখ থাকে না। কারণ টাকা-পয়সা থাকলেও বাচ্চার কারণে মনটা হতাশ থাকে। তবে জাহিন বাবুর জন্ম হওয়াতে তাদের অনেকদিনের আশা পূরণ হল।যাইহোক জাহিন বাবুর জন্মদিনে আপনাদের ফ্লাটে সবাই অ্যাটেন্ড করেছেন। যদিও সেইদিন আপনার ধর্মীয়ভাবে ও উপোস করতেছেন। তারপরও আপনি জন্মদিনে অংশগ্রহণ করলেন। শুনে ভালো লাগলো সবাই মিলে একসাথে হয়ে ভালো গিফট করলেন।জাহিন বাবুর জন্মদিনে সবার জন্য দোয়া রইল।

 last year 

জাহিনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। জাহিনের মা বাবার দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর শেষ পর্যন্ত ইন্ডিয়াতে গিয়ে চিকিৎসা করার পর জাহিন জন্মগ্রহণ করেছে,এটা জেনে খুব ভালো লাগলো। আপনি সেখানে উপস্থিত হয়ে খুব ভালো একটা কাজ করেছেন আপু। আপনাদের গিফটটা দারুণ ছিলো। ফটোগ্রাফি গুলো দেখে খুব ভালো লাগলো। যাইহোক এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 last year 

প্রথমে জানাই জাহিদ বাবুর জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। জাহিদ বাবুর আগামী দিনগুলো সুন্দর কাটুক সে জীবনে যেন ভালো মানুষের মতো মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে পারে এই প্রত্যাশাই করি। জাহিদ বাবুর জন্মদিন উপলক্ষে উপহার পাওয়া সাইকেলটিও বেশ দারুন ছিল। দেখে বোঝা যাচ্ছে সবাই মিলে বেশ মজা করেছিলেন জন্মদিন উপলক্ষে। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

 last year 

প্রথমেই জানাই জাহিন বাবুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা শুভ জন্মদিন। জাহিন বাবুর জন্মদিন কে কেন্দ্র করে আপনারা অনেক সুন্দর সময় অতিবাহিত করেছেন এটা জেনে ভালো লাগলো। জন্মদিনের এই মুহূর্তগুলো আপনি একই সাথে দারুন ভাবে ক্যামেরা বন্দি ও করে ফেলেছেন। জন্মদিনে পাওয়া সাইকেলটা অনেক সুন্দর হয়েছে।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.15
JST 0.030
BTC 65725.56
ETH 2673.18
USDT 1.00
SBD 2.90