মায়ের শেষ কথা।😥

in আমার বাংলা ব্লগlast year

হ্যালো বন্ধুরা

সবাইকে আমার নমস্কার,আদাব।আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন,সুস্থ আছেন?ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আমিও ভালো আছি।মেয়ের টেস্ট পরীক্ষা শুরু হওয়াতে অনেকটা ব্যস্ত হয়ে পড়ি। তাই কাজে নিয়মিত হতে পারছি না সেজন্য বাধ্য হয়েই ছুটি নিতে হয়েছে।আশাকরি ২৫ তারিখ থেকেই নিয়মিত হয়ে যাবো।আজ মায়ের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী তাই মায়ের কথা খুব মনে পড়ছিলো,মাকে নিয়ে কিছু লিখতে মন চাইছিলো।তাই মায়ের সাথে আমার শেষ কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্য চলে এসেছি।

সেদিন ছিলো ১৩ই অক্টোবর মহা সপ্তমী প্রতিবারই পুজোর সময় বাড়িতে যাওয়া হয় কিন্তু এবারের যাওয়াটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো তার কারন মা অসুস্থ।খুব সকাল সকাল বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যাই। গাড়িতে উঠার পর থেকেই কেনো জানি মনে হচ্ছিলো এক ঘন্টার রাস্তা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না মনটা খুব ছটফট করছিলো কখন বাড়িতে পৌঁছাবো এবং কখন মা'কে দেখতে পাবো সময়টা একই ছিলো কিন্তু অপেক্ষা যেনো শেষ হচ্ছিলো না।
IMG_20231018_172910.jpg

বাড়িতে পৌঁছালাম পৌঁছে প্রথমে মায়ের রুমে গেলাম গিয়ে দেখি মা বিছানা শয্যাশায়ী আমি দেখেই অবাক হয়ে গেলাম,তার কারণ মাত্র সাত দিন আগেও মা বেশ সুস্থই ছিলো দ্বিতীয় কেমোথেরাপি দেওয়ার পর অনেকটা অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলো তারপর ডাক্তার একটা ওষুধ লিখে দিলো বাবলা খুব দ্রুত ঔষধ নিয়ে আসলো এবং মাকে খাওয়ানো হলো।ঘন্টাখানেক রেস্ট করার পর মাকে নিয়ে আমরা বাসায় ফিরে আসলাম। দুপুরবেলা স্নান করিয়ে দিলাম,কাকিমা খুব তাড়াতাড়ি খাবার রেডি করে দিলো আমি মাকে খাইয়ে দিলাম। মা বেশ ভালোই খেতে পারলো এ দৃশ্যগুলো দেখে বড় কাকাও বেশ খুশি হয়ে বললেন বাহ আজ তো বৌদিকে বেশ সুস্থ লাগছে আমরাও মাকে দেখে খুশি হলাম।

পরের দিন খুব সকালবেলা আমি ঢাকা থেকে নিজের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হবো,মা পরের দিন বাড়িতে আসবে।আমি আসার সময় মা আমার পিছন পিছন দোতলা থেকে নেমে আসছে।আমি তো মা কে দেখে রাগ করলাম,তুমি কেন নামতে গেলে!তখন মা বলল যে না ভালোই আছি সমস্যা হবে না। পরে মা উপরে উঠে গেলো আমি চলে আসলাম।সেই মানুষকে সাত দিন পর বিছানা শয্যাশায়ী দেখে অনেকটা বিধ্বস্ত হয়ে গেলাম।

মা কিছুই খেতে পারছে না মুখে দিলেই তার দ্বিগুণ বমি করে ফেলছে।আমি মাকে ফলের রস করে খাওয়ানোর চেষ্টা করলাম।এক চামচ খাওয়ার সাথে সাথেই কেমন জানি চিৎকার করে উঠলো,আর শুরু হয়ে গেলো পেটে ব্যাথা।মায়ের এমন অবস্থা হয়েছে যে এক চামচ জলও খেতে পারছিলো না। সাথে সাথে এ্যালজিন ট্যাবলেট খাওয়ানো হলো কিছুক্ষণ পর একটু ব্যাথা কমলো।এভাবেই পূজোর কয়টা দিন কাটলো।দশমীর দিন রাতে সবাই মিলে বসে কথাবার্তা হলো মাকে কে ঢাকায় নিয়ে যাবে!এক পর্যায়ে মেজদা যেতে চাইলো।পরে আমি মায়ের কাছে এসে বললাম মা আমি হয়তো এবার ঢাকা যেতে পারবো না, মেজদা শাপলা ও বাবলা সাথে যাবে। আমি কয়দিন পরেই যাবো।

আমার না যাওয়ার কথা শুনেই মা কান্না করে দিলো। মাকে অনেকভাবে বুঝালাম মন খারাপ করিও না, ওখানে তো কাকা কাকিমা মেজদা শাপলা বাবলা সবাই থাকবে তোমার কোনো সমস্যা হবে না তাও মা কিছুতেই বুঝতে চাইছিলোনা।সারারাত আমি ঘুমাতে পারি নাই মা ঢাকায় যাবে আর আমি সাথে যেতে পারবো না এটা আমার কাছে অনেকটা কষ্টের কারণ কিন্তু পরিস্থিতির কারণে আমি হ্যাঁ বলতেও পারছিলাম না।রাতটুকু পার হলো সকালবেলা মাকে সাবান শ্যাম্পু দিয়ে স্নান করিয়ে দিলাম।খাওয়ানোর চেষ্টা করা হলো কিন্তু খেতে পারছিলো না মুখে দেওয়ার সাথে সাথে বমি করে দিলো।মা যতক্ষণ ছিলো পুরোটা সময় মায়ের কাছে থাকলাম,আর মা বারবার আমাকে যাওয়ার কথা বলছিলো আমি মাকে অনেক ভাবে বুঝাচ্ছিলাম কিন্তু মা বুঝতেই চাচ্ছিলো না।শেষে মা আমার হাত ধরে বলছিলো তুই যদি আমার সাথে না যাস তাহলে মনে আমি বাঁচবো না তখন মা আমার গলা জড়িয়ে ধরে সেই কান্না শুরু করে দিলো

আর মা বারবার বলছিল তুই না গেলে আমি বাঁচবো না অনেক কষ্ট করে মাকে গাড়িতে তুলে দিয়েছি তারপর আমিও সাথে সাথে বাড়ি থেকে চলে আসছি মাকে ছাড়া কিছুতেই থাকতে পারছিলাম না।রাতে মা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে খবরাখবর নিচ্ছি কিন্তু মায়ের সাথে কথা বলতে পারছি না।তাই বর্ষার বাবাকে আমি বললাম যে আমি ঢাকায় না গেলে হয়তো টেনশনেই মারা যাবো। তুমি যেভাবেই হোক আমাকে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করো। তখন ওর বাবা বললো ঠিক আছে। খুব ভোরবেলা উঠে ঢাকা যাওয়ার টিকিট কেটে আনলো।কিন্তু রাত বারোটার কারন ঢাকায় গেলে কতদিনে আসতে পারবো তার ঠিক নেই,গোছগাছ করে রেখে যেতে হবে।সকলে মাকে হসপিটালে ভর্তি করানো হয় মেজদা ফোন করে বললো।তখন থেকেই আমি অস্থির হয়ে পড়লাম কি করবো বুঝতে পারছি না। আমি কাপড় গোছাচ্ছি আর মন থেকে কেন জানি বারবার মনে হচ্ছিলো যে মায়ের সাথে আমার আর মনে হয় দেখা হবে না কান্না করছিলাম আর ভাবছিলাম কেনো আমি ঢাকায় গেলাম না আর নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছিলো। ওর বাবা আমাকে শান্তনা দিচ্ছিলো যে কিছুই হবে না আমরা ঠিক মায়ের কাছে পৌঁছাতে পারবো এবং মা সুস্থ হয়ে উঠবে।

আমি যা ভেবেছিলাম আর ঠিক তাই হলো ১১ টার পরপরই খবর আসলো মা আর এই পৃথিবীতে নেই।তাই আর আমার ঢাকায় যাওয়া হলো না।সেই যাওয়া বাড়িতে গেলাম অপেক্ষায় রইলাম মা কখন বাড়িতে ফিরবে।অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো মা ফিরে আসলো কিন্তু মায়ের সাথে আমার আর কোনো কথা হলো না চুপচাপ সারারাত কেটে গেলো পরেরদিন মা একেবারে জন্য বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
আর কোনোদিন মায়ের সাথে কথা হবে না।

জীবন জীবনের মতোই চলছে চলবে হয়তো অনেক কথা আসবে যাবে,কিছু মনে থাকবে কিছু ভুলে যাবো
কিন্তু মায়ের শেষ কথা টা আমার সারাজীবন এবং মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত মনে থাকবে তোকে ছাড়া আমি বাঁচবো না...........

আজ মায়ের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী সবাই মায়ের জন্য প্রার্থনা করবেন যাতে মা স্বর্গবাসী হয়।

🙏🙏

ধন্যবাদ।

Break3.jpg
Banner User.png
Break3.jpg

আমি অতসী চাকী (বৃষ্টি) । নতুন নতুন রেসিপি বানিয়ে সবাইকে খাওয়াতে আমার ভাল লাগে। আর ভাল লাগে নতুন নতুন জায়গা ভ্রমণ করতে। আমি "ভাল কাজের, ভাল ফল কথাটাতে" মনে প্রাণে বিশ্বাস করি এবং মেনে চলার চেষ্টা করি।

Break3.jpg

6bhseHAdLtYRoe4mZ6fU3gFc8eKGc3JgYMfqGaKxkR3mYxjKJArHq7pMcxbrR68rpWSk5szypPkRxehi1ennJCAQns4ZHJhX3jZu9bF4dM...QupMZMXmBS4xXZG99M87px48bfqKir7P6LAFLX7xazKN9GzHCW8CsKaSYT34EZ1QWUFNrxTRnr5Kt6t6MpkUnx83wmMV94xMPanMdFywnT1Trh7TnqzMYjNjth.gif

Sort:  
 last year 

আপু পৃথিবীতে মা তো মায়ই,মায়ের সাথে আর কারো তুলনা হয় না। আসলে আপু জীবন তো কখনো থেমে থাকে না। জীবনে চলতে হলে অনেক কিছু ভুলে থাকতে হয়। দোয়া করি দিদি আল্লাহ আপনার মাকে বেহেশতে নসিব করুণ। ধন্যবাদ আপু।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 63788.86
ETH 2476.31
USDT 1.00
SBD 2.66