আমাদের বিয়ে এবং ১৮'তম বিবাহবার্ষিকী পর্ব-শেষ। shy-fox 10%
"হ্যালো"
আমার বাংলা ব্লগ বাসী সবাইকে আমার নমস্কার,আদাব।আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন,সুস্থ আছেন?ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আমিও পরিবারের সবাইকে নিয়ে সাথে নিয়ে ভালো আছি, সুস্থ আছি।
আমাদের বিবাহবার্ষিকীর সব অনুষ্ঠান সম্পর্কে সবকিছুই শুভ ভাইয়ার পোস্টের মাধ্যমে জেনেছেন
তাই নতুন করে বলার মতো কিছু নেই। আমাদের ১৮ বছর বিবাহিত জীবনের এটাই প্রথম বিবাহবার্ষিকী পালন করা এভাবে কখনোই পালন করা হয়নি।তার জন্য শুভ ভাইয়া,হিরা ভাবি,শ্যামসুন্দর,রিতু আমিন ভাবি এবং আমার মেয়েদের কাছে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই।
গত দুই পর্বে আমাদের বিয়ে সম্পর্কে মোটামুটি সবকিছুই জেনেছেন এবং সকলেই অনেক ভালো ভালো মন্তব্য করেছেন যা সত্যিই অনেক ভালো লাগার মতো বিষয় ছিলো আমার কাছে।আমার বড় মেয়র জন্ম তাকে বড় করা পর্যন্ত মোটামুটি সবকিছুই ভালো ছিলো কিন্তু যেই ২০১২ সালে আমার ছোট মেয়ের জন্ম হয় ঠিক তখনই আমি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ি।ছোট মেয়ের জন্মের সময় থেকে আট মাস পর্যন্ত ভালোই ছিলাম।আমার ছোট পিসি আমার বাসায় ঘুরতে যায় একদিন দুপরের খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমরা সবাই শুয়ে শুয়ে গল্প করছিলাম হঠাৎ করেই আমার হাতের বুড়ো আঙুল ব্যথা শুরু হয় তারপর আস্তে আস্তে পুরো হাতে ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে এত পরিমাণে ব্যথা যে মনে হচ্ছিলো আমার হাত ভেঙ্গে গেছে সেরকম ব্যথা আমি এবং পিসি দুজনেই খুব ভয় পেয়ে গেলাম।আমার হাসবেন্ড কে ফোন করে সবকিছু জানালাম ও তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসে এবং আমাকে স্থানীয় এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় উনি সবকিছু দেখে এবং প্রাথমিক চিকিৎসা দেয় আমরা বাসায় চলে আসি।
রাতের খাবার আমার পিসি আমাকে তুলে খাইয়ে দিলো আমি ডান হাত তুলতেই পারছিলাম না তারপর ব্যথার ঔষধ দিয়েছিলো সেগুলো খেলাম তারপর ঘুমাতে গেলাম।তারপর শুরু হয়ে গেলো অসহ্য যন্ত্রণা কোনভাবেই বিছানায় টিকতে পারছিলাম না,যত রাত বাড়ছে ব্যথা ততই বেড়ে যাচ্ছে এবং আমার পুরো শরীর ফুলে যাচ্ছে কি এক ভয়ংকর পরিস্থিতি তা বলার মতো নয়।কোনরকমে রাত টা কাটিয়ে পরের দিন খুব সকালেই আমাকে ইবনে সিনায় জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলো ওখানকার ডাক্তার দেখানো হলো সবরকম পরীক্ষা নিরিক্ষার করতে দেওয়া হলো সেগুলো করে রিপোর্ট আসার অপেক্ষায় থাকলাম তারপর সন্ধ্যায় ডাক্তার দেখানো হলো সবগুলো রিপোর্ট দেখে
তেমন কোনো রোগ সনাক্ত করতে পারলেন না শুধুমাত্র ধারণা করলেন যে আমার রিউমেটিক ফেভার হয়েছে তাই কিছু ঔষধ পত্র দিলেন সেগুলো খাওয়া শুরু করলাম কয়েকদিন পর ব্যথা অনেকটাই কমে গেলো তারপর আবারও ডাক্তার দেখালাম ঔষধ চলছেই।আস্তে আস্তে আমার শরীর কেমন জানি খারাপ হতে লাগলো,তারপর আবার অন্য এক ডাক্তার দেখানো হলো সেও ভুল চিকিৎসা দিলো সেগুলোর কারণেও শরীর অনেক বেশি খারাপ হলো।শেষে পিজি হসপিটালে গিয়ে ডাক্তার দেখানোর পর সব পরীক্ষা নিরিক্ষার পর জানালেন আমার রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস হয়েছে যা কোনদিনও ভালো হবে না সারাজীবন ঔষধ খেতে হবে।১৮ বছর পর্যন্ত রিউমেটিক ফেভার হয় কিন্তু তারপর একটা বয়সে গিয়ে সেটা আথ্রাইটিস হয়। যা যা ঔষধ দেওয়ার ডাক্তার দিলেন তারপর আমরা বাসায় চলে আসলাম।ছোট বাচ্চা কিভাবে কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না তাই ছোট পিসি কয়েকদিন আমার কাছে থেকে আমার দেখাশোনা করলো তারপর কয়েকদিন আমার কাকার বাসায় গিয়ে থাকলাম কাকিমা আমার দেখাশোনা করলেন এভাবে একটু সুস্থ হওয়ারর পর আবারও আমার বাসায় ফিরে গেলাম।বাসার সমস্ত কাজ করার জন্য একজনকে রাখা হলো আর আমাকে আমার হাসবেন্ড সকালে খাবার খাইয়ে দিয়ে ঔষধ পত্র খাওয়ানোর পর কাজে যেতো আবারও কাজের ফাঁকে ফাঁকে এসে আমার কি প্রয়োজন সেগুলো দেখে যেতো। আমি তখন এমন এক পরিস্থিতিতে যে নিজের মাথার চুল আঁচড়ানো এক গ্লাস জল ঢেলে নিয়ে খাওয়া কোনকিছু করার মতো ক্ষমতা ছিলো না।
প্রতি মাসে মাসে ডাক্তার দেখানো ঔষধ পরিবর্তন পরীক্ষা নিরিক্ষা এগুলোের মধ্যেই চলতে থাকে আমার জীবন যে যেখানে ডাক্তার দেখানোর কথা বলেছে সেখানেই আমাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য নিয়ে যেতো আমার হাসবেন্ড।আমি অসুস্থ হওয়ার পর থেকে তার খাওয়া ঘুম আরাম কোনকিছুরই ঠিক ছিলো না।সারাদিন তার কাজকর্ম তারপর আবার আমার সেবাযত্ন করা তার নিত্য দিনের সঙ্গী হয়েছিলো। সেই থেকে আজ পর্যন্ত সে আমার দেখাশোনা করেই যাচ্ছে,এখন হয়তো কাজের সুত্রে তাকে দূরে থাকতে হয় তারপরও সবমসময় আমার চিন্তার মধ্যে দিয়ে থাকে আমার একটু শরীর খারাপ হলে সে বেশি কষ্ট পায়।আমি শারীরিক ভাবে সবসময়ই অনেক অসুস্থ থাকি এটা তার জন্য অনেক কষ্টের কারন হয়ে থাকে সবসময়।সেই ২০১২ সাল থেকে ঔষধের উপরে আমরা জীবন চলছে আর হয়তোবা বাকিটা জীবন এভাবেই কাটবে।একটা সময় ছিলো নিজের হাতে এক গ্লাস জল ঢেলে খাওয়ার ক্ষমতা ছিলো না এরকম একজন অসুস্থ মানুষকে নিয়ে চলার মতো ধৈর্য্য আমার হাসবেন্ড এর মতো মানুষের ছিলো বলেই হয়তো আমি এখনও চলেফেরা করতে পারছি নিজের কাজ গুলো নিজের হাতে করতে পারছি এবং ১৮ টি বছর ধরে তার সাথে কাটাতে পেরেছি এবং সংসার সন্তান সামলিয়ে আমার বাংলা ব্লগ এর মতো কমিউনিতে আপনাদের সাথে যুক্ত হতে পেরেছি এটা আমার জন্য কতটা যে ভাগ্যের ব্যাপার তা শুধু আমিই জানি।
আপনারা হয়তো-বা ভাবছেন যে বিবাহবার্ষিকীর মধ্যে অসুস্থতার কথা কেনো বলছি আসলে আমাদের বিবাহিত জীবনের এতগুলো সময় আমরা কিভাবে কাটিয়েছি এবং আমার হাসবেন্ড এর মতো একজন মানুষের নিঃস্বার্থ ভালোবাসার গল্প গুলোই শেয়ার করলাম আপনাদের সাথে। ঈশ্বরের কাছে আমার একটাই চাওয়া জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যেনো আমি এই মহান মানুষ টার সাথেই কাটাতে পারি।আপনারা সবাই আমাদের জন্য আশীর্বাদ, দোয়া করবেন এটাই কাম্য।
OR
আপনার পুরো পড়া পরে বুঝতে পারলাম আপনি অনেক অসুস্থ তাই আপনার জন্য অনেক অনেক দোয়া রইল আপনি যেন সুস্থ হয়ে ওঠেন।সৃষ্টিকর্তা চাইলে সবকিছু করতে পারেন উনি আবার আপনাকে রোগমুক্ত করতে পারেন তাই সবকিছু সৃষ্টিকর্তার উপর ছেড়ে দেন।এভাবে জীবনের ভালো-মন্দ সবকিছু শেয়ার করলে অনেক ভালো লাগে অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
দোয়া করবেন আপু সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করে আপনাদের সবার সাথে যুক্ত থাকতে পারি।সুন্দর মন্তব্য করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু।
আপনার পোস্ট পড়ে অনেক না জানা কিছু জানতে পারলাম। আসলে জীবনে এমন একজন সঙ্গী দরকার যে আজীবন সুখে দুঃখে পাশে থাকবে।আপনার জন্য অনেক দোয়া রইল, আপনি ঔষধ খেয়ে যেন সুস্থ থাকতে পারেন।ধন্যবাদ আপনাকে।
একজন ভালো মানুষ পাশে থাকলে জীবনে যতই খারাপ সময় আসুক না কেনো সেগুলো অতিক্রম করে ভালো থাকা যায়। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু।
প্রতিটা মানুষ ই জীবনের সাথে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকে। আপনি হঠাৎ একটি রোগে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তারপর ডাক্তার দেখিয়েছেন, যেটা জানতে পারলাম আপনার আপনার অসুখ একেবারে ঠিক হবে না, যাই হোক দোয়া রইলো আল্লাহ যেন আপনাকে সুস্থ রাখেন সেই সাথে আপনার বিবাহ বার্ষিকীতে রইলো আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
জ্বি ভাইয়া আমার সমস্যা হয়তো কোনদিনও ভালো হবে না কিন্তু এখন আগের থেকে অনেকটাই ভালো আছি দোয়া করবেন এভাবেই যেনো থাকতে পারি।সুন্দর মন্তব্য টি করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
প্রথমে আমি আপনার জন্য দোয়া করি যেন সর্বদা সুস্থ শরীরের দিকে যাপন করতে পারেন। আমি জানি আমার দুলাভাই অনেক ভালো মানুষ যে আপনাকে মনে প্রাণে ভালোবাসেন। আপনাদের দুজনার মধ্যেকার সুন্দর ভালোবাসা যেন চিরজীবন অটল থাকে। সুখেশান্তিতে দিনযাপন করতে পারেন সে প্রত্যাশা রইল। অনেক তথ্য জানতে পারলাম আপনার আজকের এই পোস্ট পড়ার মধ্য দিয়ে।
আপনি সত্যিই বলেছেন ভাইয়া আপনার দুলাভাই আসলেই একজন ভালো মানুষ। আপনাদের দোয়ায় যেনো সারাজীবন এভাবেই কাটাতে পারি।অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।