অনেক দূরে যাচ্ছি.......।

in আমার বাংলা ব্লগ11 months ago

হ্যালো বন্ধুরা

সবাইকে আমার নমস্কার,আদাব।আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন,সুস্থ আছেন?ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আমিও ভালো আছি।

মা সন্তানের সবচেয়ে আপনজন। আবার মায়ের কাছেও সন্তানের থেকে প্রিয় কিছু নেই। সৃষ্টির শুরু থেকেই মা-সন্তানের বন্ধন চিরন্তন, শাশ্বত। সন্তান জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই এ বন্ধন তৈরি হয়ে যায়। মায়ের সঙ্গে সন্তানের সবচেয়ে গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক। বিপদ-আপদ, ঝড়-ঝামেলা, দুঃখ-ব্যথা থেকে মা সন্তানকে আগলে রাখেন।আজ পনেরো বছর হলো মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করেছি।তখন থেকে আজ পর্যন্ত কখনো সন্তান ছাড়া একটি দিনও কোথাও থাকা হয়নি।আমি বরাবরই সন্তানের প্রতি বেশি দায়িত্বশীল আর তাই তিন বছর আগেই ওদের বাবা নিঃসন্দেহে মেয়েদের কে আমার দায়িত্বে রেখে নিজের কর্মস্থলে নিশ্চিন্তে নিজের দায়িত্ব পালন করছে।

IMG_20230903_150807.jpg

IMG_20230903_145818.jpg

আজ হঠাৎ করেই মেয়েদের কে রেখে অনেক দূরে যাচ্ছি। তাই বুকের ভেতর টা হাহাকার করছে,কিছু ভালো লাগছে না।অনেক দিন ধরেই অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি তাই হঠাৎ করেই হাসবেন্ড বললো দুই একদিন এর জন্য ঢাকায় আসো তাহলে ভালো ডাক্তার দেখানো যাবে।প্রথমে মেয়েদের কে নিয়েই যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু ওরা বাসে একদম জার্নি করতে পারে না এত্তো বমি করে যে রাস্তায় অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা হয়ে যায় তাই ওদের বাবা চাইছিলো না দুই তিন দিনের জন্য মেয়েরা ঢাকায় যাক। এতো লম্বা সময়ের জার্নির ধকল ওরা নিতে পারবে না অসুস্থ হয়ে পড়বে।তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো আমি একাই ঢাকায় যাবো!আর মেয়েরা বাসায় আমার শাশুড়ী মায়ের সাথে থাকবে।গতকাল সন্ধ্যায় শাশুড়ী মা গ্রামের বাড়ি থেকে আসলেন।আমি দুই দিনের রান্নাবান্না সবকিছু গুছিয়ে রেখে দিয়েছি যাতে ওদের কোনো সমস্যা না হয়।আমার শাশুড়ী মা একদম কাজকর্ম করতে পারেন না শুধু মেয়েদেরকে দেখে রাখতে পারবেন এটুকুই,তাই আমি সব খাবার দাবার রেডি করে রেখেছি ওরা শুধু ভাত রান্না করলেই খেতে পারবে।বড় মেয়ে সব ধরনের রান্না করতে পারে কিন্তু আমি চাই না যে আমার অবর্তমানে ও রান্না করুক এবং কোনো দুর্ঘটনার শিকার হোক।

গতকাল রাতে যখন ব্যাগ গোছাচ্ছিলাম তখন দেখলাম ছোট মেয়ের মনটা ভীষণ খারাপ ও বার বার বলছিলো মা তুমি বেশিদিন থাকবা না কিন্তু!আমি ওকে আশ্বস্ত করে বললাম এই দেখো আমি খুবই অল্প কাপড়চোপড় নিলাম যাতে বেশিদিন থাকতে না পারি।খাবার দাবারের পর্ব শেষ করে সবাই রাতে ঘুমোতে গেলাম,ছোট মেয়ে আর একসাথে আছি ও ঘুমানোর পর আমার সেই কান্না পাচ্ছিলো যে ওদেরকে রেখে আমি কিভাবে বাসা থেকে বেড়িয়ে যাবো!চিন্তায় সারারাত ঘুমাতে পারলাম না।খুব সকালে উঠে নাশতা বানিয়ে স্নান সেরে খেয়ে নিলাম,আর ওদের খাবার ঢেকে রাখলাম যাতে ঘুম থেকে উঠে খেতে পারে।তারপর আস্তে আস্তে রেডি হতে লাগলাম।এর মধ্যে সবাই উঠে পড়লো।আমি সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে বাসা থেকে বেড় হওয়ার প্রস্তুতি নিলাম,তখন মনে হচ্ছিলো আমার পৃথিবী থেকে কি যেনো হারিয়ে যাচ্ছে,বুকের ভিতর টা দুমড়ে মুচড়ে উঠলো।চোখ দিয়ে জল বের হাওয়ার উপক্রম কিন্তু অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রাখলাম,আমি যদি কান্না করি তাহলে মেয়েরাও কান্না করবে তখন রেখে আসাটা আরও বেশি কষ্টদায়ক হয়ে যাবে।

IMG_20230903_151126.jpg

IMG_20230903_151138.jpg

খুব দ্রুত ঠাকুর প্রণাম সেরে,শাশুড়ী মাকে প্রণাম করে রিতু ভাবি কে বলে বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়লাম।সাথে বড় মেয়ে আসলো এগিয়ে দিতে আমি রিক্সায় উঠার পর ও বাসায় চলে গেলো।আর সাথে সাথেই আমার চোখ দিয়ে জল অঝোরে ঝরতে লাগলো।দুই মিনিটের মধ্যে বাস কাউন্টারে এসে পৌঁছালাম।কিছুক্ষণের মধ্যে বাস এসে গেলো আমি উঠে পড়লাম।আর ঘন্টা খানেক পর হয়তো ঢাকায় পৌঁছে যাবো কিন্তু মনের কষ্ট এখন পর্যন্ত একটুও কমেনি।যতক্ষণ পর্যন্ত মেয়েদের কাছে ফিরতে পারবো না ততক্ষণ পর্যন্ত এই কষ্ট মনের মধ্যে থেকেই যাবে এটা আমি নিশ্চিত।আমি আর কখনো মেয়েদের রেখে যাওয়ার চিন্তাও করবো না কারন এই কষ্ট সহ্য করার মতো ক্ষমতা হয়তো ভগবান আমাকে দেননি।

আজ এখানেই শেষ করছি।সবাই ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন এই প্রার্থনা করি।

IMG_20230307_020842.png

4gZTTLyoV1msFb1u1BdB14ZHSP5sNg8hbP9cbJyTmUqfzLdXDsNijBKWNGJn5ogmozSiA7cyReMsKwomyC79dv8nHgZj3RKbXhPtULzHvi...hMHPzmtXdqcE25kuBukgtAciNVXSHonSRqmAmfHf9YgyuYwwZo1Nd9dUCogeVvSsKh3MRCxw1Khi2NyeZh4Rt4J9n7wTsZvJ1tiUMafwrMjZ5AQz2ERchsjjJv.png

VOTE @bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png OR
SET @rme as your proxy
witness_vote.png

Break3.jpg
Banner User.png
Break3.jpg

আমি অতসী চাকী (বৃষ্টি) । নতুন নতুন রেসিপি বানিয়ে সবাইকে খাওয়াতে আমার ভাল লাগে। আর ভাল লাগে নতুন নতুন জায়গা ভ্রমণ করতে। আমি "ভাল কাজের, ভাল ফল কথাটাতে" মনে প্রাণে বিশ্বাস করি এবং মেনে চলার চেষ্টা করি।

Break3.jpg

qPJmwNUkWBAaDEoDjHMPfsMwgtrUZt8qa7V155BbYgaJXHJ1RRNUNKdUiokw5GRZBvxgBBVEBbKqo6AEzUdFuSjduriYosyxZpyV2NieiY...bPKmPgfXrNfAMtnsiof2m2pTeP6UoYMNZBPC9JqRMarJmAvp5mRMbmGXVjdfuvHdTYWTA39Pnv8yBC8UW7mFNqJ4smiyK8f59Ws31d1VPokdDJahN7obGWMw9o (2).gif

Sort:  

আপু আপনি ঠিকই বলেছেন সন্তান ও মায়ের সম্পর্ক হচ্ছে অবিচ্ছেদ্য। আর মায়ের সঙ্গে সন্তানের গভীর ভালোবাসা চিরন্তন। আপু আপনি সবসময় আপনার মেয়েদের সঙ্গে সঙ্গে থেকেছেন বলে ওদের রেখে যেতে আজ আপনার এতটা কষ্ট হয়েছে। আপনার কষ্টটা আমি উপলব্ধি করতে পারছি। কেননা আমার অর্ধাঙ্গিনী যখন প্রথম চাকরিতে জয়েন করেছিল, তখন আমার মেয়ের বয়স ছিল মাত্র ৫ বছর। আর এই বয়সের একটি মেয়েকে রেখে সারাদিন স্কুল করতে হতো বলে আমার অর্ধাঙ্গিনীও বেশ কিছুদিন খুবই কান্নাকাটি করেছিল। এমনও হয়েছিল মেয়েকে রেখে থাকার কারণে চিন্তায় চিন্তায় তার জ্বরও এসেছিল। কিন্তু এখন তার অভ্যেস হয়ে গিয়েছে, আর তাইতো সে এখন ছেলে ও মেয়েকে রেখে আমার সাথে বাইক ট্যুরে ৪-৫ দিন করে বাইরে থেকে আসে। তবে আমার ছেলে ও মেয়েকে আমার শাশুড়ি ও আমার মা দুজনের কাছে রেখে তবেই যাই। যাইহোক আপু অনেক বলে ফেললাম, আপনি খুব দ্রুত আপনার মেয়েদের কাছে ফিরে আসুন এই প্রত্যাশা করছি।

 11 months ago 

জ্বি ভাইয়া আপনি কিছুটা হলেও আমার অনুভূতি উপলব্ধি করতে পেরেছেন।সন্তান রেখে থাকা প্রতিটি মায়ের জন্যই অনেক কষ্টের।দোয়া করবেন ভাইয়া যাতে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থভাবে মেয়েদের কাছে ফিরতে পারি।অসাধারণ একটি মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই ভাইয়া।

 11 months ago 

আপনার লেখাগুলো পড়ছিলাম আর আমারই বুকের ভেতরটা হু হু করে আসছিলো।আসলে মায়েরা পারেনা সন্তানকে ছেড়ে একটি দিনের জন্য ও কাটাতে। আর আপনি কখনও তো কোথাও রেখে ওদের যাননি, তাই খারাপ লাগাটা একটু বেশীই হবে।তবে আপনি ডাক্তার দেখিয়ে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন এটাই চাই।আপনি অনেক দিন থেকে অসুস্থ শুনে আসছি।চিন্তা করবেন না। আপনার মেয়েরা ভালো ই থাকবে ওর দিদার কাছে। আপনি সুস্থ হয়ে উঠুন।অনুভুতি গুলো শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপু।অনেক অনেক শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।

 11 months ago 

সত্যিই আপু সন্তান দের রেখে বাইরে যাওয়া বুকের ভিতর টা কি রকম কষ্ট হয় তা শুধু মায়েরাই জানে।অনেক দিন অসুস্থতার কারনেই এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি আপু,দোয়া করবেন।

 11 months ago 

আপনার লেখা গুলো পড়ে সত্যি আমারো অনেক খারাপ লাগছিল। সত্যি আপু মা সন্তানের সম্পর্ক চিরন্তন। আসলে আপু একজন মা জানে সন্তান কি জিনিস। আমি ও আপনার মতো বাচ্চাদের রেখে কখনো কোথাও যায়নি। যাইহোক আপু প্রয়োজনে তো যেতেই হয়। আশাকরি বাচ্চারা ভালো ভাবেই থাকবে।দোয়াকরি আপনি ভালো ভাবে ডাক্তার দেখিয়ে সুস্থ হয়ে আসবেন। ধন্যবাদ আপু পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 11 months ago 

আমিও জীবনে কখনো বাচ্চাদের রেখে কোথাও যাইনি এটাই প্রথম অভিজ্ঞতা।সুন্দর মন্তব্য টি করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

 11 months ago 

মা আর সন্তানের বন্ধন পৃথিবীর পবিত্রতম এবং গভীরতম বন্ধন। মা যে কি জিনিস, তা আমরা সন্তানেরা বুঝতে পারি যখন মা কাছে থাকে না, তখন। সন্তানদের জন্য মায়েদের চিন্তা, সে তো সব সময়ই থাকে। তুমি অত চিন্তা করো না দিদিভাই, তোমার দুই মেয়েই বেশ দ্বায়ীত্ববান এবং বুঝদার। তারা নিজেরা নিজেদের প্রতিও যত্নশীল। আর সাথে তো ঠাম্মী আছেই!

Posted using SteemPro Mobile

 11 months ago 

ঠিক কথা মা কি জিনিস তা আমরা বুঝতে পারি যখন মা কাছে থাকে না।হ্যাঁ বড় মেয়ে অনেক কিছু বোঝে। আর ছোট মেয়ে সেতো জ্ঞানী মহারাণী ও আমাদের কে জ্ঞান দিয়ে বসে থাকে তাই চিন্তা একটু কম।ধন্যবাদ মনা।

 11 months ago 

সন্তান দেরকে ছেড়ে দূরে যেতে মায়েদের অনেক কষ্ট হয়। তবে আপনি তো ঢাকায় ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছেন। আর আপনার মেয়েদের অসুস্থতার কারণে তাদের রেখে যাচ্ছেন। আসলে অনেকেই বাসে জার্নি করতে পারে না। তবে আপনি খুবই দ্রুত যেন ফিরে আসেন তার জন্য শুভকামনা রইল।

 11 months ago 

হ্যাঁ ভাইয়া মেয়েরা একদম বাসে জার্নি করতে পারে না তাই বাধ্য হয়ই ওদের কে রেখে যেতে হয়েছে।ধন্যবাদ ভাইয়া। দোয়া করবেন।

 11 months ago 

আসলেই অসুস্থতার কাছে মাঝে মাঝে ভালোবাসা পরাজিত হয়ে যায় আমি জানি খুব ভালো করেই। বাচ্চাদের কে দূরে রাখলে সব সময় খারাপ চিন্তা মাথায় ঘুর ঘুর করে তবুও অসহায় হয়ে থাকতে হয় যে যখন এমন পরিস্থিতিতে পড়ে সে বোঝেন এর কষ্ট টা কতোটা ভয়ংকর হয়। মেয়েরাও কষ্ট পাচ্ছে কখনো কোনদিন মা কে ছারা থাকে নি কিন্তুু বাস্তবতার কাছে সবাই অসহায়। ভালো ঢাক্তার দেখানও তারাতাড়ি সুস্থ হয়ে যান এই কামনা রইলো।

 11 months ago 

ঠিক বলেছো মাঝে মাঝে অসুস্থতার কাছে আমরা পরাজিত হয়ে যাই।তখন বাচ্চা সংসার সবকিছু ছেড়ে চিকিৎসার জন্য দূরে যেতে হয়।সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59824.84
ETH 2666.86
USDT 1.00
SBD 2.48