"আমার বাংলা ব্লগ"প্রতিযোগিতা-২৭||চিংড়ির পুর ভরা এঁচোড়ের কোপ্তা কারি তৈরির রেসিপি।
♥️আসসালামুআলাইকুম♥️
আমার বাংলা ব্লগ এর প্রিয় বন্ধুগণ, আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।সবার সুস্থতা কামনা করে আজকের এই পোস্ট শুরু করলাম।
আমার বাংলা ব্লগে এখন চিংড়ির ছড়াছড়ি। কেন বলছি এই কথা? আপনারা তো সবাই জানেন এই এক সপ্তাহ ধরেই চলতেছে চিংড়ি মাছের ইউনিক রেসিপি গুলো। আর চিংড়ি মাছ অনেকেরই এত বেশি পছন্দের যে যেকোনোভাবে রান্না করলেই খেতে পারে। আর তার মধ্যে আমি তো অন্যতম। আমার খুবই পছন্দের মাছ হচ্ছে চিংড়ি মাছ। অন্যান্য মাছ থেকে আমি এটি বেশি পছন্দ করি। আর আমার পরিবারের সকলেই চিংড়ি পছন্দ করে। সেই হিসেবে আমাদের প্রায় সময়ই চিংড়ি মাছ কেনা হয় এবং খাওয়া হয়। আর তার মধ্যে চিংড়ির মালাইকারি তো সব সময় তৈরি করা হয়। কারণ এটি অনেক পছন্দের একটি রেসিপি। যাই হোক চিংড়ি দিয়ে কতইনা রেসিপি তৈরি করা হয়। চিংড়ির মালাইকারি, চিংড়ি ভুনা,চিংড়ি ভাপা, ডাব চিংড়ি,চিংড়ির আচার আরো অনেক কিছু।
যাইহোক যখন রেসিপি কনটেস্টটি চলে এসেছে তখনই চিন্তা করতে থাকলাম কোনটি তৈরি করা যায়। যেহেতু সবসময় ইউনিক কিছু করার চেষ্টা করি সেই হিসেবে চিংড়ি মাছ দিয়ে ইউনিক রেসিপিগুলো খুঁজছিলাম। কিন্তু অনেকগুলো রেসিপি যেন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। কোনটা রেখে কোনটা করব ভেবেই পাচ্ছিলাম না। অবশেষে চিংড়ির আচার, ডাব চিংড়ি এবং চিংড়ির পুর ভরা এঁচোড়ের কোপ্তা কারি এই তিনটি সিলেক্ট করলাম। তার মধ্যে ভাবলাম এঁচোড় যেহেতু খুব সহজে পাওয়া যাবেনা তাই আমি এটি ব্যবস্থা করেই তৈরি করব। যাই হোক এইবারও এঁচোড় সংগ্রহ করতে খুব বেশি কষ্ট না হলেও দুইদিন সময় লেগেছে। কারণ আমি আম্মুকে আবারও কল দিলাম এঁচোড় আছে কিনা দেখতে। তখন আম্মু দেখলো এখনো গাছের মধ্যে ছোট ছোট ৩ টি রয়েছে। তার মধ্যে এটি কিছুটা বড়। আর আমি বললাম যেভাবেই হোক আমার জন্য একটি পাঠিয়ে দিতে। সেই হিসেবেই আম্মু একটি এঁচোড় পাঠিয়ে দিল।আর আমিও লেগে পড়লাম এই ইউনিক রেসিপির পিছনে।
@swagata21 দিদিকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই পছন্দের মাছের রেসিপি কনটেস্টের আয়োজন করার জন্য।
চিংড়ির পুর ভরা এঁচোড় এর কোপ্তা কারি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ |
---|
পরিমাণ |
চিংড়ি | ৫টি | এঁচোড় | পরিমাণ মত | লবণ | পরিমাণ মত | ময়দা | ১ কাপ | পেঁয়াজ | ৫ টি | কাঁচামরিচ | ৫/৬ টি | টমেটো | ১টি | গাজর | অর্ধেক | ধনেপাতা কুচি | পরিমাণ মত | সয়াসস | ১ চা চামচ | টমেটো সস | ১ টেবিল চামচ | হলুদ গুড়ো | ২ চা চামচ | মরিচ গুড়ো | ৪ চা চামচ | জিরে গুড়ো | ২ চা চামচ | আদা বাটা | ১ চা চামচ | রসুন বাটা | ২ চা চামচ | সয়াবিন তেল | আধা কাপ |
চিংড়িগুলোকে খোসা ছাড়িয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিলাম। লবণ আর সামান্য পরিমাণ হলুদ দিয়ে মেখে রাখলাম কিছুক্ষণ। এরপর তেল গরম হতে দিয়ে দিলাম। তেল গরম হওয়ার পর আমি এই চিংড়ি মাছ গুলোকে ভেজে নিলাম মিডিয়াম লো আঁচে। ভালোভাবে ২ পাশ ভাজা হয়ে গেলে এগুলো তুলে নিলাম।
ভাজা চিংড়ি মাছগুলো তুলে নেয়ার পর এর মধ্যে পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা মরিচ কুচি,আর কিছু টমেটো কুচি দিয়ে দিলাম। কিছুক্ষণ ভাজার পর এর মধ্যে রসুন বাটা দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে নিলাম।
এরপরে ভেজে রাখা চিংড়ি মাছ গুলো দিয়ে দিলাম। কিছুক্ষণ ভেজে তারপর তুলে নিলাম। ভালোভাবে ভেজে নেয়ার পর সবকিছু একসাথে আলাদা বাটিতে নিয়ে নিলাম।
এঁচোড়কে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে ভালোভাবে ধুয়ে নিয়েছিলাম।তারপর সামান্য লবণ আর হলুদ গুড়ো দিয়ে ভালোভাবে সিদ্ধ করে নিয়ে পানি ঝরিয়ে রেখে দিলাম। পানি ঝরানোর পর এগুলোকে শিল-পাটায় বেটে নিলাম।
এবারে আমি এঁচোড় বাটার মধ্যে ১ চা চামচ লবণ, আধা চা চামচ হলুদ গুড়ো, ২ চা চামচ মরিচ গুড়ো, পেঁয়াজ কুচি,আর ধনেপাতা দিয়ে মেখে নিলাম। এরপর অল্প অল্প করে আটা দিয়ে আবারো ভালোভাবে মেখে নিলাম। যাতে করে এই ডো টা শক্ত হয়।এবং লেচি আকারে নেয়া যায়।
যে ডো তৈরি করে রেখেছিলাম সেটি থেকে কিছুটা পরিমাণ হাতে নিয়ে রুটি তৈরির লেচির মত নিলাম,এক্ষেত্রে হাতে না লাগার জন্য আটা হাতে মেখে নিলাম। তারপর মাঝ বরাবর ফাঁকা করে একটি চিংড়ি দিয়ে আবারো উপর দিয়ে হাত দিয়ে ভাজ করে পুরোটাকে একটি বড় আকারের লেচির মত তৈরি করে নিলাম।এটি হলো চিংড়ির পুর ভরা কোপ্তা। একইভাবে সবগুলো তৈরি করে নিলাম।
এরপর ফ্রাই প্যানে পরিমাণ মতো তেল দিয়ে দিলাম যাতে এগুলো ভাজা যায়। তেল গরম হয়ে এলে এক এক করে এই চিংড়ির পুর ভরা কাঁঠালের কোপ্তাগুলো দিয়ে দিলাম। এক পাশ হয়ে গেলে অপর পাশ উল্টে দিয়ে দিলাম যাতে ভালোভাবে হয়ে যায়। এভাবে পাঁচ মিনিটের মতো মিডিয়াম লো আঁচে আমি এই কোপ্তা গুলো ভেজে নিলাম। ভাজার পর সবগুলোকে তুলে নিয়েছি।
এবার আলাদা একটা কড়াইতে আমি পরিমাণ মত সয়াবিন তেল দিয়ে দিলাম। তেল গরম হলে এলে এর মধ্যে পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা মরিচ ফালি দিয়ে কিছুক্ষণ ভেজে নিলাম। তারপরে দিয়ে দিলাম টমেটো আর গাজর কুচি। এগুলো দিয়ে কিছুক্ষণ ভাজলাম।
তারপরে দিয়ে দিলাম আদা বাটা এবং রসুন বাটা। এগুলো দেয়ার পর কিছুক্ষণ ভেজে মরিচ গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো এবং জিরা গুঁড়ো দিয়ে আরো কিছুক্ষণ কষিয়ে নিলাম। তারপরে টমেটো সস এবং সয়াসস দিয়ে দিলাম তার পাশাপাশি সামান্য পরিমাণ লবণও দিয়ে দিলাম। সবকিছু একসাথে রান্না করতে থাকলাম বেশ কিছুক্ষণ।
তারপর সামান্য পরিমাণ পানি দিয়ে এগুলোকে কষাতে থাকলাম। পানির বলক এলে এর মধ্যে ভেজে রাখা কোপ্তা গুলো দিয়ে দিলাম। এগুলো কিছুক্ষণ রান্না করলাম। একপাশ দুই থেকে তিন মিনিট রাখার পর আরো একবার উল্টে এগুলো প্রায় পাঁচ থেকে ছয় মিনিটের মতো রান্না করে নিলাম। শেষ পর্যায়ে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে নিলাম। আর তৈরি হয়ে গেলো মজাদার চিংড়ির পুর ভরা কোপ্তা কারি।
এখানে আমি টমেটোকে পাতলা করে কেটে একটি গোলাপ ফুলের মত তৈরি করলাম।৩ টি কোপ্তা একটি প্লেটে নিয়ে উপরে গ্রেভি দিয়ে দিলাম।এই কোপ্তাগুলোর মাঝখানে টমেটো দিয়ে তৈরি করা গোলাপ ফুলটি দিয়ে দিলাম।
আশা করি এই রেসিপিটি আপনাদের সবার কাছেই ভালো লাগবে।কেমন লাগলো আমার আজকের এই রেসিপি তা মন্তব্য করে জানাবেন।
আমি তাহমিনা আক্তার বৃষ্টি। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাংলায় কথা বলি,আমি বাংলায় নিজের মনোভাব প্রকাশ করি। আমি নিজের মত করে সবকিছু করার চেষ্টা করি। আমি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। পড়ালেখার পাশাপাশি আমি বিভিন্ন জিনিস আঁকতে পছন্দ করি। বিভিন্ন ধরনের ছবি আঁকা, রঙ করা, নতুন নতুন কিছু তৈরি করা আমার পছন্দের কাজ। তবে রান্নাবান্না আমার ভালোলাগা, চেষ্টা করি সবসময় নিজে নতুনভাবে কিছু রান্না করার। ভ্রমণপ্রেমীদের মত আমিও ঘুরতে পছন্দ করি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
|
---|
চিংড়ির পুর ভরা এঁচোড়ের কোপ্তা কারি রেসিপি একেবারে ইউনিক হয়েছে। আসলে এইভাবে কখনো চিংড়ি মাছ রান্না করে খাওয়া হয়নি। এঁচোড়ের সাথে চিংড়ি মাছের দারুন একটি কম্বিনেশন হয়েছে। সত্যি আপু আপনার মাথায় সব সময় ইউনিক চিন্তা গুলো আসে। দারুন হয়েছে আজকের এই রেসিপি।
কি যে বলেন না আপু আপনিও কম কিসের। সামান্য চেষ্টা গুলোই তো তুলে ধরার প্রক্রিয়া। তবে ভালো লেগেছে এই নতুন রেসিপিটি।
ওরে বাবারে আপনার রেসিপি দেখেই তো লোভ লেগে যাচ্ছে আপু। সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের একটা রেসিপি আজকে আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করলেন। আপনি আর ভাইয়া যে রেসিপিগুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন আজকে সত্যিই সেই দুটো দেখে আমি মুগ্ধ হলাম। পৃথিবীর দুটো দেখে যে কি পরিমাণে লোভ লেগে গিয়েছে আমার তা হয়তোবা বলে বোঝাতে পারবো না।
চিংড়ি মাছের তো বিভিন্ন ধরনের রেসিপি দেখি। কিন্তু যেহেতু প্রতিযোগিতা ইউনিক কিছু করার চিন্তা সব সময় মাথায় থাকে। সেজন্যই চেষ্টা করলাম দুইটা রেসিপি আলাদা আলাদা ইউনিক করতে। ভালো লাগলো জেনে আমারও খুব ভালো লাগছে ভাইয়া।
আপু আপনি এবং ভাইয়া দুইজনেই ইউনিক রেসিপি দিয়েছেন। আসলেই এই সময় এঁচোড়ের পাওয়া বেশ কষ্টের, ভাগ্যিস আন্টি পাঠিয়েছিলো দুই দিন দেরি হলেও।আপু বেশ দারুন ভাবে তৈরি করেছেন ডেকোরেশন দেখেই লোভ হচ্ছে খেতে।কোপ্তা গুলো ভুনা করাতে মনে হয় খেতে আরে ভালো হয়েছে। কালারটাও বেশ সুন্দর। প্রতিটি ধাপ খুব ভালো লাগলো।ধন্যবাদ
জি আপু একদম ঠিক বলেছেন। কোপ্তা যদি বেশি করে করতাম তাহলে এমনিতেই ভাজা করেও খেতে পারতাম। কিন্তু যেহেতু সন্ধ্যার পরে রেসিপিটি তৈরি করেছি সে হিসেবে খুব বেশি তৈরি করিনি। কারণ বাবু তো খুব বেশি জ্বালাতন করেছে কয়েকদিন। তাও কষ্ট করেই করলাম।
You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!
আসলেই তাই আপু, এই সময় এঁচোড়ের পাওয়া খুব কষ্টের। রেসিপিটি সত্যিই ইউনিক ছিল। কোপ্তা তৈরি করার পরে আবার সেগুলো রান্না করেছেন যার কারণে টেস্ট অনেকটা বেড়ে গিয়েছে নিশ্চয়ই। কালারটা খুবই লোভনীয় লাগছে দেখতে। ডেকোরেশন টাও খুব সুন্দর হয়েছে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপু ইউনিক একটি চিংড়ি মাছের রেসিপি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
এই সময় কিন্তু এঁচোড় বা কাঁচা কাঁঠাল পাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য। তবে যেহেতু গাছের মধ্যে ছিল তাই নিয়ে আসতে পারলাম। আর সত্যি বলেছেন রান্না করার পর এগুলো খুবই মজার হয়েছিল খেতে।
চিংড়ির পুর ভরা এঁচোড়ের কোপ্তা কারি তৈরির রেসিপি দেখে অনেক সুস্বাদু মনে হচ্ছে এবং একদম ইউনিক রেসিপি। আপনি খুবই সুন্দরভাবে রেসিপিটি তৈরি করে আমাদের সাথে পরিবেশন করলেন। দেখে খুবই ভালো লাগলো।
সত্যিই ভাইয়া রেসিপিটি খুবই ভালো লেগেছিল। রাতের খাবারের সময় আমরা এটি খেয়েছি খুব মজা করেই।
খুব সুন্দর একটি রেসিপি আপনি আজকে করলেন। আমার মনে হচ্ছে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য এটা একটি ভালো রেসিপি। এঁচোড় আর চিংড়ি দিয়ে অত্যন্ত যত্ন নিয়ে রেসিপিটি তৈরি করেছেন তা বুঝাই যাচ্ছে। টমেটো, গাজর দিয়ে রেসিপিটিকে খুব সুন্দর ডেকোরেশন করা হয়েছে। মনে হচ্ছে আপনার বাসায় এখনই চলে যাই এবং দুটো খেয়ে আসি।
প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার কথা বাদই দিলাম। কারণ রেসিপি করতে আমার কাছে এমনিতেই খুব ভালো লাগে। আর আমি এমনিতেই রান্না করে খাওয়াতে বেশি পছন্দ করি।
https://twitter.com/bristy110/status/1597912825024090112?s=20&t=WmXWlUZyeAsNmXMcXSf40A
ওয়াও আপু চিংড়ির কোপ্তা দেখে লোভ লেগে গেল। দেখে খেতে অনেক ইচ্ছে করছে। সত্যি আপু দাওয়াত দিলে পারতেন হা হা হা। চিংড়ি আমার তেমন পছন্দ না, তবে আমার পরিবারে সবাই অনেক পছন্দ করে। আমার রেসিপিটি ইউনিক ছিল। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ইউনিক রেসিপি শেয়ার করার জন্য।
দাওয়াত তো সব সময় রইল আপু। চলে আসবেন সময় করে। তৈরি করে খাওয়াবো সমস্যা নেই।
আরেহ বাবারে বাবা কি অদ্ভুত এক রেসিপি দেখলাম! পুরাই সেরা।এমন অদ্ভুদ সুন্দর লোভনীয় রেসিপি শুধু বাংলা ব্লগের দেখা যায়।যাইহোক সব বুঝলাম কিন্তু "এঁচোড়" জিনিসটা কি ঠিক এটা বুঝলাম না।
আমরা কাঁচা কাঁঠাল বলি আবার এর ভিন্ন নাম হল এঁচোড়। কাঁচা কাঁঠাল কিন্তু রান্না করে খাওয়া যায়। অনেক আগে একবার আমি রেসিপি দিয়েছিলাম। ভালো লাগলো মন্তব্য পেয়ে।