'মীনা/𝗠𝗘𝗘𝗡𝗔' (গল্পঃ১ম পর্ব) [10% ʙᴇɴᴇғɪᴄɪᴀʀɪᴇs ғᴏʀ ᴍʏ ғᴀᴠᴏᴜʀɪᴛᴇ @sʜʏ-ғᴏx🦊]
একটি কুঁড়ে ঘরে নুটি সুটি হয়ে শুয়ে আছে 'জমির'। মাটির মেঝেতে বিছানা পেতে শুয়েছে সে, পাশে তার বউ 'মীনা' সদ্যজাত বাচ্চাটাকে বুকে সেঁটে ধরে ঘুমাচ্ছে বেঘোরে।
লিংকএখানে
বাচ্চাটা বড় নট খট করে, আধা রাত পর্যন্ত ঘুমতে দেয়নি মীনাকে, খেলতে হবে তার সাথে রাত তাতে কি হয়েছে। একটু ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছিল, তাই জমির পড়নের দু’এক জাগায় ফেঁসে যাওয়া লুঙ্গীটা গায়ে টেনে নিল। হঠাৎ চোখের ভেতরে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল জমিরের। বুঝতে পারছে একটা হতাসা তাকে গিলে ফেলেছে। চোখের পাতা দুটো খুলে গেল জমিরের নিজ থেকে। উঠে বসে একটা হাই তুললো, সাথে আড়মোড়া ভাঙ্গলো সে। মীনার দিকে তাকালো একবার , বেঘোরে ঘুমাচ্ছে বউটা। ফোঁস ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলছে। উঠে গেল জমির কোন শব্দ না করে। ঝাঁপ সরিয়ে বাইরে উঁকি দিল সে। মেঘে লেপটে আছে সারা আকাশ। গুড়ি গুড়ি বৃস্টি ঝড়ছেই কদিন থেকে সারাক্ষন।
বর্ষা কাল, তাই জমির এখন বেকার। কৃষি কাজ করে সে, তবে নিজের জমি নেই, অন্যের জমিতে কাজ করে। জমির জানে, ঘরে অভাব ঢুকছে দ্রুত। উঁৎ পেতে বসে আছে সে ঘরের দুয়ারের সামনে বিচ্ছিরি দাঁত গুলো বের করে। হাঁসছে মিটি মিটি।
ঘরে জমিরের বিয়ে করা বউ। দু’মাস হলো বাচ্চর বাবা হয়েছে সে। বড় ভালবাসে সে তার বউকে। একটি পুত্র সন্তান তাকে দিয়েছে তার বউ। ওদের খাবার জোগার করা, এখন এটা একটা যুদ্ধের মতো মনে হয় জমিরের। চোখে মুখে তার ভয়, হতাসা। ভাতের পাতিলের ঢাকনাটা খুললো জমির, কিছু ভাত পাতিলের তলায় পানিতে ভাসছে। নিঃশব্দে আবার পাতিলটা ঢেকে দিল জমির। কি যেন খুঁজতে লাগলো সে, হ্যাঁ পাওয়া গেছে, ঝুলন্ত তাকের উপর থেকে একটা ডিব্বা নামিয়ে আনলো। মুড়ি আছে এতে, এক মুঠো মুড়ি নিয়ে মুখে দিল ও, কিন্তু মুড়ির বেজায় অভদ্র কুড় মুড় শব্দে নিজেই চমকে উঠলো। যা ভয় করছিল তাই হলো, নড়ে উঠলো মীনা। মীনা মিটি মিটি চোখে জমিরের দিকে তাকালো, সামান্য করে হাসলো। তারপর ইশারায় কাছে ডাকলো। জমির উঠে গিয়ে মীনার পাশে বসলো এবং মীনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।
লিংকএখানে
ভেবেছিল দুপুরের দিকে আকাশটা হয়তো হালকা হবে কিন্তু না পরিবর্তন নেই তার চেহারায়, যেনো ঠোট ঝুলিয়ে বসে আছে প্রচন্ড ক্ষেপে মানুষ গুলোর উপর। বাচ্চাটাকে ঘুম পাড়িয়ে উঠে বসলো মীনা, বললোঃ-
“দরজায় খাড়াইয়া কি ভাবতাছেন আপনে?"
কোন জবাব না দিয়ে মাথায় গামছা পেঁচিয়ে ঘর থেকে নেমে গেলো জমির। দরজার কাছে এসে মীনা চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলোঃ-
“কই , কথার জয়াব দেয়না ক্যান বাচ্চার বাপে। জিগাই কৈ যান আপনে?"
এবারও কথার জবাব দিলনা জমির, মনে মনে বললো, একছার পাগল একটা। জমির জানে এরপর কি করবে তার বউটা। পেছন দিকে একবার তাকিয়ে গট গট করে হেঁটে চলে গেল জমির সোজা বিলের দিকে। বিলের কাছে এসে জমির দেখলো, বিলের পানি কেমন জানি ফুলে ফুলে উঠছে। বিলে বর্ষার পানি ঢুকছে। শাপলা গুলো পানিতে ভাসছে বিক্ষিপ্ত ভাবে।
লিংকএখানে
জমির ভাবছে এই শাপলাই হবে আজকের তরকারী। বিলে নেমে পড়লো সে, পেছনে আরো একজন পানিতে নামছে টের পেয়ে জমির পেছনে তাকালো। মীনা দাঁড়িয়ে হাঁটু পানিতে, হাসছে মিটি মিটি। জমির ধমকে উঠতে যাচ্ছিলো, কিন্তু ঢোক গিলে তা হজম করে নিল। শান্ত করে বললোঃ-
“মীনারে তুই আবার পানিতে নামলি ক্যান-বাচ্চা কো?
“বাচ্চা বুঁচির কুলে। আমিও আপনের লগে শাপলা তুলুম"।
বুঁচি পাশের ঘরের খালার মেয়ে। যার নাক বোঁচা এবং সারক্ষন ঝড়তে থাকে। জমির বললোঃ-
“তাইলে আয় মীনা আমরা শাপলা তুলি"।
অনুমতি পেয়ে মীনা ঝাঁপিয়ে পড়লো। অনুমতি না পেলেও ঝাঁপিয়ে পড়তো। আসলে ও ঝাঁপিয়ে পড়লো পানিতে নয় জমিরের উপরে। পানিতে হাবুডুবু খেয়ে উঠে দাঁড়ালো ওরা। বউকে আরো দুটা চুবানি দিতে চায় জমির কিন্তু বউ ততক্ষনে নাগালের বাইরে। মীনা চেঁচীয়ে বললোঃ-
“পোলার বাপ শাপলাটা ধরেনগো"।
শাপলা তোলা যখন শেষ হলো খেয়াল করলো মীনার চোখে পানি, বললোঃ-
“কি হইছেরে বউ?"
“পায়ে মনে হয় শামুক ঢুকছে"। জানালো মীনা।
জমির কোলে তুলে নিয়ে পাড়ে নিয়ে এলো মীনাকে। হ্যাঁ, মীনার পায়ে ভাঙ্গা শামুক ঢুকেছে। শামুক খুলে মীনাকে সোজা ঘাড়ে তুলে নিল জমির, হাঁটা ধরলো ঘরের দিকে। ঘরে পৌঁছতেই বুঁচির মা খেঁকিয়ে উঠলোঃ-
“বাহ ! সন্দর , বড়ই মনহর দৃশ্য। এক্কেবারে ঘাড়ে উইঠা বইছই?"
ঘাড় থেকে নেমে জোড় কদমে ঘরে ঢুকলো মীনা, খেপে গেছে সে বুঁচির মার উপর।
“দ্যাখ জমিরা, বউরে এতো মাথায় তুলিসনা। আইজ ঘারে উঠছে কাইল মাথায় উঠবো কিন্তুক।”
জমির বললোঃ- “না মাইনে পায়ে শামুক বিনছিলতো---
"দেইখা তো মনে অইলনা"(বুঁচির মা)
ফোঁস ফোঁস করতে করতে যেভাবে ঘরে ঢুকেছিল সেভাবেই বেরিয়ে এলো মীনা যেনো সে কিছু বলতে চাইছে.....
পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন
"ধন্যবাদ সময় নিয়ে আমার গল্পটি পড়ার জন্য। সবাই ভালো থাকবেন এবং একে অপরকে ভালো থাকতে সাহায্য করবেন"।
"যদি ১০০ জন ক্ষুধার্তকে না খাওয়াতে পারো তবে অন্তত ১জন ক্ষুধার্তকে খাওয়ানোর চেস্টা করো"।
"আমি জান্নাতুল ফেরদৌস বৃস্টি, ইংরেজি ডিপার্টমেন্টের ৫ম সেমিস্টারের একজন ইউনিভার্সিটির ছাত্রী। আমি মোটিভেশনাল আর্টিকেল, গল্প, ড্রইং এবং গভীর চিন্তার বিষয় গুলো লিখতে ভালবাসি। পাশাপাশি আমি একজন শিক্ষিকা।"
গল্পের কাহিনী টা আসলে বাস্তব জীবনের সাথে মিলে গিয়েছে। তাদের নতুন অতিথি নিয়ে পরিবারের কাহিনী টা মজার আবার রোমান্টিক বটে। মীনা আর জমিরের জীবন কাহিনী শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপু 💚
ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
গল্পটায় মিষ্টি ভালোবাসা, অভাবের হাতছানি, মিষ্টি অভিমাণ সবটাই আছে।গল্পটা পড়ে মনে হলো কোনো এক দুর্দশাগ্রস্থ ঘরের মধ্যের উঁকি দেওয়া ভালোবাসাকে দেখছি। আসলে ভালোবাসা বোধহয় এমন ই হয়।দারুণ হয়েছে আপনার লেখা আপু।
আপি মনি সুন্দর মন্তব্য এর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভাইয়া সুন্দর মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
বাহ! আপু অসাধারণ একটি গল্প লিখেছেন।
সবচেয়ে ভালো লাগছে গল্পটির জমিরের এবং মিনার যে আঞ্চলিক ভাষা গুলো সেগুলো সব চাইতে ভাল লেগেছে।
তবে শত অভাবেও জমির এবং মিনার একজনের প্রতি একজনের যে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ আপনি করেছেন সেটা ও অনেক অসাধারণ ছিল। অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের মাঝে এত সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
আপনার সুন্দর মন্তব্য এর জন্য অনেক অনেক।
খুব সুন্দর লিখেছেন আপনি। বিশেষ করে জমিরের ও মিনার সংলাপগুলো আমার কাছে দারুন লেগেছে।। আপনি আপনার লেখনীর মাধ্যমে খুব দারুন ভাবে বাস্তবতা ইমোশন সবকিছুকে ফুটিয়ে তুলেছেন।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
দরিদ্র পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করছে মিনা এবং জমিরের সংসার।আর আপনি জমিরের দরিদ্র পরিবারের কঠোর বাস্তবতা ফুটে তুলেছেন।খুব সুন্দর লিখেছেন আপু। ধন্যবাদ আপনাকে।
সুন্দর মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
বাহ! দারুণ লিখেন তো আপনি, গল্পের মাঝে একটা আকর্ষণ অনুভব করছি আমি। অভাব এবং গ্রামের কৃষি কাজ করে খাওয়া মানুষগুলোর গল্প নিয়ে কেউ আজকাল মাথা ঘামায় না বরং সবাই আধুনিক প্রযুক্তি এবং উচ্চাবস্থানে বসবাস করা মানুষগুলোকে নিয়ে লিখতে বেশী পছন্দ করেন।
আপনার গল্পের মাঝে জীবনের নির্মম ছোঁয়া রয়েছে, রয়েছে ভালোবাসার আবেগ, তাই পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
জি ভাইয়া, আপনার সুন্দর মন্তব্য এর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
অসাধারণ গল্প আপু,পড়ে খুবই ভালো লাগলো।গরিবের সংসারে কত সংগ্রাম, সাধারণ খুনসুটি ও বাস্তবের চিত্ৰ তুলে ধরেছেন।যখন গল্পটি আমি পড়ছিলাম তখন আমার মনে হচ্ছিল মহেশ গল্পের গফুর ও তার মেয়ের কথা।সুন্দর হচ্ছে ,পরের পর্বের অপেক্ষাতে রইলাম আপু।ধন্যবাদ আপনাকে।
দিদি মনি অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
দারিদ্র্যের বাস্তবতা এবং গরিবের কুঁড়েঘরের ভালোবাসা দারুণভাবে লিখেছেন আপনি আপু। গল্পটা পড়তে খুবই ভালো লাগছিল। আগামী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। শুভকামনা রইলো আপনার আগামীর জন্য।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।