'কে তুমি? / 𝐖𝐡𝐨 𝐘𝐨𝐮 𝐀𝐫𝐞?' [ 10% ʙᴇɴᴇғɪᴄɪᴀʀɪᴇs ғᴏʀ ᴍʏ ғᴀᴠᴏᴜʀɪᴛᴇ @sʜʏ-ғᴏx🦊]
নূর-এ-আলম।
পুরো নাম 'নূর-এ-আলম সিদ্দিকি'।
চাকরী থেকে অবসর নিয়েছে অল্প কিছু দিন হল। তবে নিজের প্রতি একটু যেন বিতৃঞ্চা, ক্ষোভ, সঙ্গে হতাসা। জীবনের অতীতটা এখন তার আফসোস। চাকুরী কালটা ভালো কাটেনি নূর-এ-আলমের। প্রমোশন জোটেনি কপালে ৩৬ বছরেও। অযোগ্য ? না , তা নয়। তবু অযোগ্যের কাতারে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল তাকে। অভিযোগ একটাই , অতিশয় সৎ। আর যে সৎ তার অন্যায় ধাচে সয়না। সুযোগ পাওয়া হয় নি, তাই প্রমোশনের কথা বলাও হয় নি ঠিক মত। যওি কখনো সিনিয়রের কানে তুলেছে। তিরস্কার সহ শুনতে হয়েছেঃ-
“চাকরীর অর্থ বুঝো নূর। চাকরি হল সিনিয়রের হ্যাঁ এর সাথে হ্যাঁ মিলানো।
হ্যাঁ এর সাথে হ্যাঁ মিলাতে পারেনি নূর, তাই যেই পোষাকে সে চাকরী করতে গিয়েছিলো, সেই পোষাকেই ফেরৎ আসতে হয়েছে ৩৬ বছর পার করে। নূর কখনো কখনো ভেবেছে ছেড়ে দেবে চাকরীটা। কিন্তু পারেনি। এরপর থেকে চাকরীটাকে তার মনে হয়েছে, ওটা একটা গলার কাঁটা। গিলতেও পারেনি বেরও করতে পারেনি। গলার মাঝখানে আঁটকে গেছে বেমক্কা ভাবে, দিনে দিনে ক্রমশঃ ক্ষত হয়ে যেন ক্যান্সার জন্ম দিচ্ছে ওটা। কিন্তু সে জানতেও পারেনি ক্যান্সার তার গলায় নয়, আসলে তার ঘরের ভিতে ধরেছে।
জীবনের সবটুকু নিঃশেষ করে নূর একদিন চাকরী শেষ করে বিষন্ন বদনে সংসারে ফিরে এলো। বিষন্নতা যখন একটু কেটে গেল। খুটিয়ে খুটিয়ে সে তার তিরিশ বছরের পুরনো সংসারটাকে দেখলো ঘুরে ফিরে। তার কাছে মনে হল, সব কিছু যেন কেমন টিম টিম করছে। ঘরের সব কিছুতে দারিদ্রের ছাপ, বিছানার চাদরে, সোফায়, দেয়ালে, দেয়াল ঘাড়িতে সর্বত্র। বাতী গুলো যেন নিভু নিভু করছে। পাশে শোয়া বউ এর দিকে ভালো করে তাকালো নূর।
Image Source:https://www.pexels.com/search/sad%20woman%20/
বিষন্নতায় আবার মনটা ভরে গেল তার। বউটা আর আগের মত নেই। বুড়ী হয়ে গেছে। চুল পেকে গেছে, কালশিটে পড়েছে চোখের নীচে। এতো কটা বছর বউটার দিকে ভালোকরে তাকাবারও ফুরসৎ মেলেনি তার। নূর এর মনে হল একটু যেন বেশী তাড়াতাড়ী বুড়িয়ে গেছে বউটা। স্থীর চোখে তাকিয়ে রইলো সে তার বউ এর দিকে। কত গুলো বছর পেরিয়ে গেছে , ভালো করে দেখা হয়নি তাকে। সেই যে দেখেছিল তিরিশ বছর আগে বিয়ের পরে কদিন মাত্র। আর আজ।
নূরের কাছে মনে হল, যেন এইতো সেদিন বিয়ে করে নিয়ে এসেছে এই মেয়েটাকে। নূর একটা হাত তুলে দিল তার বউ এর গায়ে।
ডাকলোঃ- "জান্নাত!"
ডাকের কোনো জবাব দিল না তার বউ জান্নাত। আবার ডাকলো নূরঃ- “জান্নাত! উঠো, একটু কথা বলি তোমার সাথে। তোমার সাথে তো কোনোদিন ভালো করে কথা বলা হয়নি আমার"।
জান্নাত সাড়া দিল না। গভীর রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল নূরের। পাশ ফিরে দেখলো পাশে তার বউ নেই। বালিশটাও নেই।
নূর নীচু সূরে ডাকলোঃ- “জান্নাত কোথায় তুমি!" জবাব না পেয়ে উঠে গিয়ে এঘর ওঘর জান্নাতকে খুজতে লাগলো নূর। পাওয়া গেল তাকে, ছোট মেয়ের ঘরে। মেয়ের গা ঘেঁসে শুয়ে আছে সে।
নূর মৃদু সুরে ডাকলোঃ- “জান্নাত!
চোখ খুললো জান্নাত।
নূর বললঃ- “তুমি এইঘরে কেনো?
উঠে বসলো জান্নাত।
বললঃ- “ওঘরে আমি শুতে পারছি না নূর। খানিকক্ষন চুপ করে রইলো জান্নাতুন ফেরদৌস। তারপর বললঃ- “তোমাকে আমি ক্রমশঃ হারিয়ে ফেলেছি নূর। আমি তোমার পাশে শুতে পারছি না। এখন তোমাকে আমার পর পুরুষ বলে মনে হয়। তুমি আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছো"।
কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল নূর-এ-আলম।
সকালে বাড়ীর বারান্দায় একটা সোফায় বিষন্ন বদনে বসে আছে নূর। মাথাটা পেছন দিকে হেলানো। চোখের কোন দুটো একটু ভেজা ভেজা, হয়তো ভেতরে ভেতরে কাঁদছে সে। সারা শরীর ঝাকুনি দিয়ে উঠল নূরের। বুক কাঁপিয়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো বুকের গহীন থেকে। হয়তো রাতের কথা গুলো কাঁদাচ্ছিল তাকে। হঠাৎ তার মনে হল কেউ যেন এসে দাড়িয়েছে তার পাশে। চোখ খুলে দেখতে পেল, তার বউ এক কাপ চা নিয়ে দাড়িয়ে আছে। হাত বাড়ালো নূর, কিন্তু জান্নাত চায়ের কাপটা তার হাতে না দিয়ে টি টেবিলে নামিয়ে রাখলো। কিন্তু চলে গেল না। দাড়িয়ে রইলো সে, যেন কিছু বলবে।
Image Source: https://www.pexels.com/search/sad%20woman%20/
নূর বললঃ- “কিছু বলবে জান্নাত? একটু বস না আমার পাশে। জান্নাত বসলো, কিন্তু কিছু বলল না। চুপ করে বসে রইলো।
নূর তার বউ এর মুখের দিকে তাকালো। এক চিল্তে হাসি ফুটে উঠল তার মুখে। জান্নাত আজ সেজেছে। খুব সুন্দর দেখাচ্ছে ওকে। কত কাল দেখা হয়নি বউটাকে এই সাজে।
হঠাৎ জান্নাত বলে উঠলঃ- “এবার আমাকে ছুটি দাও নূর।
কথাটা বুঝতে না পেরে চুপ করে রইলো নূর। জান্নাত আবার বললঃ- “আমাকে একটু দিয়ে আসবে? আমাকে একটু দিয়ে এসো"।
নূরঃ- “কোথায় যাবে তুমি? কোথায় দিয়ে আসবো তোমাকে?
জান্নাতঃ- “তিরিশ বছর আগে যেখান থেকে তুমি আমাকে নিয়ে এসেছিলে, সেখানে। মধুপুর গ্রামে আমার বাবার কাছে।
নূরঃ- “তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাইছো জান্নাত!
জান্নাতঃ- “আমি তো এসেছিলাম তোমার কাছে তোমার সাথে সংসার করবো বলে। আমার বাবা মা তোমার কাছে পাঠিয়েছিল তোমার সংসার করার জন্য। কিন্তু তুমি আমাকে তা দাওনি। আমাকে ফেলে রেখেছো ছেঁড়া কাগজের মত। একটু থেমে আবার বলল জান্নাতঃ- “আমার আশা ভালোবাসাকে সপ্ন গুলোকে চিপে মেরেছো তুমি"।
খানিক্ষ খন চুপ করে রইলো নূর। কি জবাব দিবে সে, শুধু বললঃ- “হ্যাঁ সত্যি, আমি তোমাকে সংসার দিতে পারিনি। আমি তোমার অপরাধি"।
জান্নাতঃ- “দিয়েছো। ফুলের মত তিনটা ছেলে মেয়ে তুমি আমাকে দিয়েছো। আমার দ্বায়িত্ব আমি শেষ করেছি নূর। ওদের আমি মানুষ করেছি, বুকে আগলে রেখে বড় করেছি। এখন এখানে আমার কোন কাজ নেই, আমাকে এবার ছুটি দাও"।
নূরঃ- “সত্যি কি আমি তোমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছি জান্নাত?
জান্নাতঃ- “কদিনইবা ছিলে তুমি আমার জীবনে"। উঠে দাঁড়ালো জান্নাত।
নূরঃ- "ছেলে মেয়েদের কি বলবো আমি?
জান্নাতঃ- "তুমি কিছু বলোনা। আমি ওদের মা, আমি যেখানেই থাকি না কেনো ওরা আমাকে ঠিকই খুজে নিবে"।
নূরঃ- "তুমি কি আমার কেউ নও?"
জান্নাতঃ- "না, আমি তোমার কেউ নই"।
নূরঃ- "তাহলে কে তুমি?
জান্নাতঃ- "আমি শুধুই তোমার সন্তানের মা"।
- সমাপ্ত -
জীবন যুদ্ধে সবাই সবার জায়গা সঠিক। কিন্তু কতো মানুষ একটু সময়, কেয়ার,ভালবাসার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে জীবন থেকে। আসল ব্যাপার হচ্ছে 'সময়', অনেক ভারী একটি জিনিস। যার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করা হয়, তাকেই যদি সারা জীবন কাছে না পাওয়া গেলো, তার সময় না পাওয়া গেলো তবে সে কি পেলো জীবনে? শুধু মাত্র সন্তান জন্ম দেয়ার নাম ই কি বিয়ে? সংসার? জীবন?।
ধন্যবাদ সময় নিয়ে আমার গল্পটি পড়ার জন্য। সবাই ভালো থাকবেন এবং অন্যকে ভালো থাকতে সাহায্য করবেন।
✍️ জান্নাতুল ফেরদৌস বৃস্টি
জীবনের চরম বাস্তবতা হচ্ছে টাকা না থাকলে ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালায়।
জীবনের এক চরম বাস্তবতা নিয়ে গল্পটি।
খুব ভালো লাগলো আপু 💌
তবে টাকার কাছে কি সত্যিই ভালোবাসা হেরে যায় ?
এটা খারাপ লাগলেও মোটামুটি সত্যি। তবে ভাইয়া তার চেয়েও আসল ব্যাপার হচ্ছে 'সময়'। যার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করা হয়, তাকেই যদি সারা জীবন কাছে না পাওয়া হয় তাহলে কি পায় তারা জীবনে? এটাই আসল বিষয়বস্তু ছিল গল্পের৷ অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর কমেন্ট করার জন্য।
বৃষ্টি আপু আপনার লেখা গুলো বৃষ্টির মতোই। একই ধারায় বইতে থাকে, কেও থামাতে পারেনা, কোনো বাঁধা নেই।
আপনি বাস্তবতাকে অসাধারণ ভাবে তুলে ধরতে পারেন লেখার মাধ্যমে।
ভালোবাসা হারিয়ে যায় বেশিরভাগ সময় এই জীবন যুদ্ধেই।
জী আপু সঠিক। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ গল্পটি পড়ে এতো সুন্দর মন্তব্য করার জন্য 💗
আপনাকেও ধন্যবাদ আপু।
আপনার গল্পটা পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু বাস্তবতা এটাই। একজন সৎ সরকারি চাকরিজীবী বর্তমান সমাজের সুখে দিন কাটাতে পারে না। সব জায়গা থেকে তিরস্কৃত হতে হয়। বর্তমান সমাজের চরম বাস্তবতা ফুটে তুলেছেন আপনার লেখায়।আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
আমার গল্পটি পড়ে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।