ভালো মন্দ আপেক্ষিক নাকি বাস্তবিক ?।।২২ শে অক্টোবর ২০২১।।
ভালো মন্দ আপেক্ষিক নাকি বাস্তবিক ?এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজাটা আমাকে অনেক রাত জাগিয়েছে ।অনেক পথ হেঁটেছি হৃদয়ের বাইপাসে।উত্তর খুঁজে পাইনি আবার হয়তো পেয়েছি।আর তাই নিয়েই আমার আজকের পোস্ট।
প্রথমেই একটি গল্প শেয়ার করতে চাইছি বন্ধুরা আপনাদের সঙ্গে।এই গল্পটা বহুকাল আগেই পড়েছিলাম একটি বইতে। গল্পটা ঠিক এইরকম এক লোক হঠাৎ ডাকাতের কবলে পড়ে যায়।তার সকল ধনসম্পত্তি কেড়ে নেয় ডাকাতেরা আর তাকে হত্যা করার জন্য প্রবৃত্ত হয়।প্রত্যেক মানুষের জীবনের প্রতি মায়া থাকে, বেঁচে থাকার লড়াই থাকে।
নিজেকে ডাকাতের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য দৌড়াতে শুরু করলো লোকটি।দৌড়াতে দৌড়াতে মাঠ ঘাট জঙ্গল পেরিয়ে পৌঁছালো লোকালয়ে। তবু ডাকাতরা তার পিছু ছাড়বো না।লোকটি নিজেকে বাঁচানোর জন্য সাহায্য চাইতে লাগলো।কিন্তু তাকে সাহায্য করতে কেউ এগিয়ে এলো না। লোকটি মানুষের দ্বারে গিয়ে আঘাত করতে লাগলো।
দরজায় কড়া নেড়ে বলতে লাগলো যে আমাকে বাঁচান আমাকে ভিতরে ঢুকতে দিন।ডাকাতের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করো।কিন্তু সমাজে নিষ্ঠুর মন তার এই ডাকে সাড়া দিল না।
সবাই দরজা-জানালা বন্ধ করে দিল।সে কোথাও জায়গা পেল না।এইভাবে দৌড়াতে দৌড়াতে এক আশ্রমে উপস্থিত হলো লোকটি।আশ্রমে এসে লোকটি দেখলো কোথাও কেউ নেই।সে হঠাৎ দেখল যে ঘরের দরজা খোলা।ঘরের দরজা খোলা পেয়ে সে দৌড়ে ঘরে ভিতরে ঢুকে গেল এবং দেখল ঘরের ভিতরে ঈশ্বরের আরাধনায় ব্যস্ত সাধু।
সাধু কে দেখেই বোঝা গেল তিনি যথেষ্ট তেজস্বী এবং মানুষের পতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসা রয়েছে।লোকটি নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য ঘরের কোণে একটি বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী বিভিন্ন বস্তু রাখা একটি কোণে লুকিয়ে পড়লো। একটু পর ডাকাতেরা সেখানে উপস্থিত হল।ডাকাত হলেও ধর্মের প্রতি সবারই একটা ভীরুতা কাজ করে।এই ভীরুতাকেই আমরা ধার্মিকতা বলি।দৃঢ় বিশ্বাস বলি।এটা অত্যন্ত জরুরী সমাজ এবং দেশের জন্য।
এই ভীরুতা দুর্বলতা নয় বরং এটা আমাদের একটা শক্তি তাই ডাকাত হলেও ধর্মের প্রতি তাদের একটা নিষ্ঠা আছে। তাই সাধুকে দেখেই তারা সাধুর কাছে জানতে চাইলো এখানে কোন লোক ঢুকেছে কিনা? কারন ডাকাতদের বিশ্বাস এই মহান সাধু কখনো মিথ্যে কথা বলবেন না। তিনি যেটা বলবেন সেটাই সত্য এর থেকে বড় কোন সত্যতা নেই।বেশ কয়েকবার ডাকাতরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলো যে এখানে লোকটি ঢুকেছে কিনা ?উত্তর দিল না সাধুটি।ডাকাতেরা অধৈর্য হয়ে চারিদিকে ঘুরতে লাগলো।
সাধু দেখলেন যে বিপদ এবার ডাকাতেরা লোকটি কে খুঁজে বের করে ফেলবে এবং হত্যা করবে।তখন সাধু বলল না এখানে কেউ ঢোকেনি।একথা শুনা মাত্রই ডাকাতেরা সেখান থেকে বেরিয়ে গেল।
আড়াল থেকে সবকিছুই দেখছিল ওই লোকটি। লোকটি বেরিয়ে এল এবং বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল ,সাধুবাবা আপনি এত বড় মহাপুরুষ কিভাবে মিথ্যার আশ্রয় নিলেন ?আপনার তো মহা হবে এর জন্য।এর জন্য তো আপনার নরক দর্শন হবে।ঈশ্বর আপনাকে শাস্তি দেবে। তখন সাধু একটু হাসলো তারপর বললো, দেখো বাবা সত্যি আর মিথ্যে ধর্ম আর অধর্ম এ বিষয়গুলি খুবই জটিল ও গোলমেলে।এটা যতটা কঠিন ততটাই বাস্তবিক।
আবার তেমনি আপেক্ষিক ও বটে।আমার এই মিথ্যে কথা বলার পিছনে উদ্দেশ্য সৎ। আমি যদি সত্যি কথা বলতাম তাহলে ডাকাতেরা তোমাকে হত্যা করতো।এর থেকে বড় অধর্ম আর কিছু হতে পারে না।কিন্তু আমি মিথ্যে বলেছি তার জন্য একটি নিষ্পাপ মানুষ বেঁচে গেল এর থেকে বড় ধর্ম ও সত্য আর কিছু হতে পারে না।এটাই সত্যিকারের সত্য ও মিথ্যার রূপ।
এজন্য বন্ধুরা কলিযুগে সত্যবাদী যুধিষ্ঠির হওয়ার প্রয়োজন নেই।মিথ্যা কথা বললে তুমি পাপী মহা মিথ্যুক। এটা ভাবার ও কোনো কারণ নেই।আবার সত্যি কথা বললেই তুমি মহান এটা ভাবার মতো বোকামি ও আর কিছু নেই।সত্যের শক্তি কতটুকু আর মিথ্যের অপব্যয় কতটুকু আমাদের চিন্তা করতে হবে এগুলো। আমার একটা সত্যের পিছনে কতটা মহৎ কার্য লুকিয়ে আছে সেটা হলো তার মানদণ্ড।আবার একটা মিথ্যার পিছনেই কতটা গুরুত্ব লুকিয়ে আছে , তার দ্বারা যদি কোনো বৃহত্তর মঙ্গল কার্য হয় তাহলে সেটা অনেক বড় সত্য।
আমার এই লেখার মানে এই নয় যে আপনারা মিথ্যা কথা বলুন। আমার লেখার এই মানে এই নয় যে আপনারা সত্যবাদী হোন সদা সত্য কথা বলুন।আমার লেখাটা আরেকবার ভালো করে পড়ুন আর চিন্তা করুন আমি সত্য বলতে তাকে বুঝিয়েছি যে কথার পিছনে আছে ভালো কিছু আছে।
উদ্দেশ্য মহান।আমি তাকেই সত্য বলেছ। আর আমি তাকে মিথ্যা বলেছি যার পিছনে আছে নোংরা মানসিকতা আছে অন্যের ক্ষতি করার প্রচেষ্টা।আমি তাকে মিথ্যা বলেছি।আমি বোঝাতে চেয়েছি আলোকে অন্ধকার বললে সে অন্ধকার হয়ে যায় না তেমনি অন্ধকার কে আলো বললে সেটা আলো হয়ে হয়ে যায় না।কিন্তু সত্য এবং মিথ্যা অদল বদল হয়।
Take it out and let it go.
Creativity and Hard working. Discord
"আড়াল থেকে সবকিছুই দেখছিল ওই লোকটি। লোকটি বেরিয়ে এল এবং বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল ,সাধুবাবা আপনি এত বড় মহাপুরুষ কিভাবে মিথ্যার আশ্রয় নিলেন ?আপনার তো মহা হবে এর জন্য।এর জন্য তো আপনার নরক দর্শন হবে।ঈশ্বর আপনাকে শাস্তি দেবে। তখন সাধু একটু হাসলো তারপর বললো, দেখো বাবা সত্যি আর মিথ্যে ধর্ম আর অধর্ম এ বিষয়গুলি খুবই জটিল ও গোলমেলে।এটা যতটা কঠিন ততটাই বাস্তবিক।" জীবন বাঁচানোর জন্য সাধু যা করেছে একদম ভালো কাজ করেছে । প্রতিটি ধর্মে তো এমনই বলে , জীবন বাঁচানোর তাগিদে মিথ্যার আশ্রয় নিলে ক্ষতি নেই । সময় উপযোগী পোস্ট এবং অনেক তথ্যবহুল। শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য ভাই ।
যে মিথ্যা মানুষের কোন উপকার না করলেও কোন ক্ষতি সাধন করে না তাকে মিথ্যা বলা যায় না। আপনার আর্টিকেল টি সুন্দর একটা বিষয় কে ঘিরে লিখেছেন। ভাল থাকবেন দাদা। শুভ কামনা রইল।
গল্পটি খুব বাস্তবধর্মী । এর থেকে অনেক কিছু শিক্ষা গ্রহণ করা যায়। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ
অনেকটা সময় আছে যখন মিথ্যা বলা যায় এবং ইশ্বর নিজেও হয়তো সেই মিথ্যার ভুল ধরেন না।কারন একটি মিথ্যার জন্য যদি কারো জীবন বাচে তাহলে দোশ কোথায়।জীবন বাচানো তো এক ধর্ম অনেক শিক্ষণীয় একটি বিষয় লিখেছেন দাদা।
অনেক সুন্দর এবং শিক্ষামুলক গল্প ছিল দাদা। এবং গল্পের পর আপনার মতামত টাও খুব শিক্ষনীয় ছিল।
যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর অর্থাৎ সাধু ঐ লোককে বাঁচানোর জন্য মিথ্যা বলল আর ঐ লোক বলে আপনি একজন সাধু হয়ে মিথ্যা বললেন।
এবং মহৎ কাজ যেমন কারুর প্রাণ বাঁচানো। আপনার একটা মিথ্যার জন্য অনেক বড় দাঙ্গা বা বিবাদ মিটে যাচ্ছে তাহলে মিথ্যা বলতে সমস্যা নেই।
ভাইয়া আপনার গল্পটি পড়ে আমার খুবই ভালো লাগলো। এই গল্পটির মাধ্যমে ভাল এবং মন্দ বিষয়টি আপনি খুব চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। সত্য সবসময় সত্যই থাকে। ভাই আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
অসাধারণ একটি গল্প আপনি আমাদের মাঝে উপহার দিয়েছে। এই গল্পটির ভাবমূর্তি বাস্তবসম্মত। আপনি এই গল্পের মাধ্যমে বাস্তবসম্মত একটি বিষয় তুলে ধরেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের মাঝে এমন গল্প শেয়ার করার জন্য।
মূল কথা হচ্ছে উদ্দেশ্যটাই আসল। যদি আপনি মিথ্যা বলেন আর সেই মিথ্যার পেছনে উদ্দেশ্য থাকে সৎ তাহলে সেই মিথ্যাতে দোষ নাই। চমৎকার লিখেছেন দাদা।
একদম ঠিক বলেছো। জীবনে সত্যে মির্থার বিশেষত্ব বুঝতে হবে সবার। মহৎ উদ্দেশ্যে বড় কোনো ভালো কাজে যদি মির্থা বলা হয় যে মির্থা দ্বারা সমাজ কল্যাণ ও মানবিক কল্যাণ সাধিত হয় তাহলে সেই মির্থা কঠিন সত্যতার সমান। আবার অনেক সময় কঠিন সত্য অনেকসময় মানবিক ক্ষতি বয়ে আনলে সেটা কখনো কখনো বিপরীত দিক বেছে নিয়ে মির্থা বলা উচিত। আমাদের মহৎ উদ্দেশে বিবেচনা করেই কথা বলা উচিত। অনেক শিক্ষনীয় পোস্ট করেছো বন্ধু। ধন্যবাদ তোমাকে
আমার দাদি মারা গেছে। তিনি প্রায় সময় আমাকে বলতেন কাওকে বাঁচাতে মিথ্যা বলতে পাপ হয়না।অনেকদিন পর আজকে আপনার এই লেখা দেখে মনে পড়ে গেলো।
অনেকসময় সত্যর চেয়েও মিথ্যাটা অনেকটা বেশি দরকার হয়। তবে তার মানে এই নয় যে মিথ্যাই বলতে হবে। ব্যাপারটা বুদ্ধি দিতে বিচার করার মতো। অনেক ভালো লিখেছেন আপনি।