উপকূলবর্তী জেলেদের জীবন-জীবিকার রহস্য।১০% বেনিফিসারী@shy-fox.
প্রিয় কমিউনিটির সদস্য আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে আপনারা সকলেই ভাল আছেন। আমিও ভালো আছি আপনাদের দোয়ায় ।আজকে আমি অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়ি বাড়িতে এসেছি বাড়িতে আসতে আস্তে ঘড়ির কাটায় প্রায় ৯ টা বেজে গেছে। তার পরেও আমার কাছে মনে হচ্ছে আজকে খুব আগেভাগেই বাড়িতে চলে এসেছি। কারণ প্রতিদিনই আমার অফিস থেকে সাড়ে এগারোটা বারোটায় বের হতে হয় ।সেই তুলনায় আজকে একটু আগেভাগেই অফিস থেকে বের হতে পেরেছি ।কিন্তু এর পিছনে মূল কারণ হলো আমাদের ডিউটি এখন শিফটিং ডিউটি করছে অর্থাৎ ১২ ঘন্টা করে কিন্তু তারপরেও ১২ ঘন্টার বেশি ডিউটি করতে হয়। যাই হোক মূল আলোচনায় ফিরে আসি ।
আজকে আমি আপনাদের সাথে যে গল্পটি শেয়ার করবো সেই গল্পটি হচ্ছে উপকূলবর্তী জেলেদের জীবন-জীবিকার রহস্য।
করিমগঞ্জ একটি উপকূলবর্তী গ্রাম। এই গ্রামে কৃষিকাজ সহ অন্যান্য কাজ একেবারে নাই বললেই চলে ।এখানকার মানুষের প্রধান জীবিকা হচ্ছে মাছ ধরা। ধান-চাল সহ যে সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সবকিছুই বাইরে থেকে করিমগঞ্জ গ্রামে আসে ।এমনকি শাকসবজি ও বাইরে থেকে এই গ্রামে আসে ।বলতে পারেন একেবারে এখানে কোন কিছু আবাদ হয় না। আবাদ হয় না বললে ভুল হবে কারণ এখানে সমুদ্রের লবণাক্ততার কারণে কোনো ফসলই হয়না ।তাই এখানকার মানুষ জীবিকার মাধ্যম হিসাবে মাছধরা কেই বেছে নিয়েছে।কিন্তু এই মাছ ধরার মৌসুম বছরে ছয় মাস থাকে বাকি ছয় মাস তাদের একেবারেই ঘরে বসে খেতে হয়।
এই ছয় মাস মানুষ ঘরে বসে খাওয়ার কারণে বিভিন্নভাবে ঋণের সাথে জড়িয়ে পড়ে যা তাদের আর্থিক অবস্থাকে একেবারেই দুর্বল করে ফেলে।তাই এই ছয় মাসে মানুষ যে যার মতো পারে উপার্জন করে নেয়। কারন তারা ভাবে যে আগামী 6 মাস এই উপার্জনের অর্থ দিয়েই তাদের সংসার পরিবার-পরিজন সবকিছু চালাতে হবে। এত পরিকল্পনার পরেও দেখা যায় বছর শেষে তারা বিভিন্নভাবে ঋণে জর্জরিত হয়ে যায় যার ফলশ্রুতিতে তাদের বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ধারদেনা করতে হয়। প্রত্যেক সমাজেই কিছু দাদন ব্যবসায়ী থাকে যারা মানুষদেরকে দাদন দিয়ে থাকে বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে দ্বিগুণ কোন ক্ষেত্রে তিন গুণ চার গুন ও মুনাফা লুটে নেয়। যখন বর্ষা মৌসুম শুরু হয় তখন জেলেরা তাদের জাল কেনা ট্লার মেরামত করা সহ বিভিন্ন কাজের জন্য তাদের টাকার প্রয়োজন হয় ।কিন্তু এই টাকাগুলো তারা স্থানীয়ভাবে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই নিয়ে থাকে। এর ফলশ্রুতিতে এই জেলেরা দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে এক প্রকার জিম্মি হয়ে যায়। জিম্মি বলতে এখানে বোঝানো হয়েছে তারা বাজারমূল্যের থেকে কম মূল্যে তাদের কাছে মাছ বিক্রি করতে হয় ।যদি কেউ বা তাদের কাছ থেকে দাদন না নেয় তা হলে তারা সেই সকল জেলেদের সাথে একটু ভিন্ন ধরনের পথ অবলম্বন করে। দাদন নিয়ে জাল মেরামত করা কাজ হয়ে গেলে তখন তারা টলার ভালোভাবে মেরামত করে নেয় কিন্তু এখানেই যদি দাদন ব্যবসায়ীদের নির্যাতন শেষ হতো তাহলে তো কোন কথাই ছিল না। দাদন ব্যবসায়ীদের আসল নির্যাতনের ভয়াবহতার দিকেই যাচ্ছি। জেলেরা একসাথে কয়েকজন মিলে একটি ট্রলারে যায় অনেক ক্ষেত্রে দশজন থেকে শুরু করে ১০০ জন মানুষ ও একটলারে যায়। তারা ঝড়-বৃষ্টি সবকিছু উপেক্ষা করেই গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য যায় অনেক সময় তারা মাছ ধরে হাসিমুখে ঘরে ফিরে আসতে পারে আবার অনেক সময় ঐ গভীর সমুদ্রে বুকে ট্লার ডুবে সকলেই মৃত্যুবরণ করে ।কিন্তু তাদের লাশ আর খুঁজে পাওয়া যায় না সমুদ্রের পানিতে ভেসে যায়। এদিকে তাদের বাড়ির লোকেরা বিশেষ করে মা বাবা সহ শিশু সন্তানেরা বাবার জন্য অপেক্ষা করে কবে বাবা আসবে তাদের কাছে এই অপেক্ষায় থাকে শিশু সন্তানেরা অন্যদিকে বাবা-মা সন্তানের জন্য চিন্তা করে যে তারা কি ভালোভাবে বাড়ীতে ফিরে আসতে পারবে কারণ এই গভীর সমুদ্রে যাওয়ার প্রতিটি পদক্ষেপে তাদের জন্য রয়েছে বড় বড় বিপদ। কিন্তু একটু আগে বলেছিলাম দাদন ব্যবসায়ীদের আসল ভয়াবহতার কথা সামনে বলব ।দাদন ব্যবসায়ীরা যখন কোন জেলাকে দাদন দিতে পারেনা তখন তারা একটু ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে। অর্থাৎ যখন জেলেরা মাছ ধরে ট্লার নিয়ে সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় আসার চেষ্টা করে সেই মুহূর্তেই দাদন ব্যবসায়ীরা ঐসকল জেলেদেরকে জিম্মি করে নিয়ে যায় ।অর্থাৎ জলদস্যুদের ধারা দাদন ব্যবসায়ীরা জেলেদের কে অপহরণ করে। আর মুক্তিপণ হিসেবে জলদস্যুরা মোটা অংকের টাকা জেলে পরিবারের কাছে দাবি করে। বাধ্য হয়েই জেলে পরিবারের সদস্যরা দাদন ব্যবসায়ীদের দ্বারস্থ হয় তারা দাদন ব্যবসায়ীদের অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে টাকা নেয় এবং তাদের সাথে চুক্তি করে যে, কমমূল্যে তাদেরকে মাছ দিতে হবে। বাধ্য হয়েই একপ্রকার জেলে পরিবারের সদস্যরা দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জেলেদেরকে জলদস্যুদের হাত থেকে ছাড়িয়ে আনে। এভাবেই দাদন ব্যবসায়ীরা জেলেদেরকে জিম্মি করে রেখেছে যাতে করে তারা সারা জীবন দাদন ব্যবসায়ীদের অধীনস্থ হয়ে থাকে।
ভাই আপনি অনেক সুন্দর লিখেছেন। পড়ে ভালো লাগলো তবে আপনাকে একটা পরামর্শ দিতে চাই, আপনি এক সাথে পুরো লেখ না লিখে লেখার মাঝে গ্যাপ রাখবেন তাতে দেখতে অনেক সুন্দর লাগবে। ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ আপনাকে।