তেইল্যা চোরা|বই রিভিউ
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগ বাসী। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি। আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করতে এসেছি একটি বুক রিভিউ পোস্ট। এটিই আমার প্রথম বুক রিভিউ পোস্ট,জানি না কতটুকু লিখতে পারব! এজন্য একটুখানি নার্ভাসও বটে।যাইহোক তবুও শুরু করছি।
বইয়ের নাম: | তেইল্যা চোরা |
---|---|
বইয়ের লেখক: | ওবায়েদ হক |
বইয়ের ধরন: | মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস |
প্রকাশক: | বিদ্যানন্দ প্রকাশনী |
সারসংক্ষেপ
গল্পের প্রধান চরিত্র ফজর আলী স্ত্রী আমেনা ও ছেলে মজিদকে নিয়ে বসবাস করে বলরামপুর গ্রামে।ফজর আলী পেশায় একজন চোর যে কিনা সমগ্র গ্রামে তেইল্যা চোরা নামেই অধিক পরিচিত।এই পেশা তার বাবা কসর আলী ওরফে কাইল্যা চোরার কাছ থেকে পাওয়া।শুরুর দিকে এই পেশা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চাইলেও সমাজের অমানবিক ও নির্দয় আচারণে ফজর আলী বাধ্য হয় তেইল্যা চোরার জীবন বেছে নিতে।কেননা চোরের ছেলেকে আর যাইহোক কখনো বিশ্বাস করার যায় না! কাজেই ফজর আলীর কপালেও কোনো কাজ-কর্ম জোটে না। তাই সে চৌর্যবৃত্তি করেই সংসার চালাতে থাকে।এতে তার বউ আমেনার আপত্তি থাকলেও ছেলের মুখ চেয়ে সে কিছুই বলতে পারে না, নিরবে সব কিছু মেনে নেয়।
কিন্তু একদিনের একটি ঘটনা আবার ফজরকে ভিতর থেকে নাড়িয়ে দেয়।ঘটনাটি ছিলো এরূপ:গ্রামের পাঠশালার পাশ দিয়ে আসার পথে সে পাঠশালা থেকে তার ছেলে মজিদের কাঁদবার শব্দ শুনতে পেলে ফজর সেখানে গিয়ে হাজির হয় এবং দেখতে পায় যে তার ছেলেকে চুরির অভিযোগে মারধর করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদ করতে গেলে সকলে তাকে তার পেশা নিয়ে কথা তোলে এবং চোরের ছেলে চোর বলে মজিদকেও কথা শোনাতে থাকে। এতে ফজর খুব কষ্ট পায় এবং বাড়িতে এসে সব শোনার পরেও আমেনার নির্লিপ্ত আচারন তাকে আরো ব্যথিত করে তোলে। তখন সে তার ছেলের মাথায় হাত রেখে আমেনার কাছে শপথ করে চুরি ছেড়ে দেওয়ার।
এরপর অনেক কষ্টে সে গ্রামের ধুর্ত, লোভী, স্বার্থপর জোয়ার্দারের বাড়িতে কাজ জোগার করে। সেখানে কিছু দিন কাজ করলেও কপাল দোষে তার বিরুদ্ধে আবার চুরির অভিযোগ ওঠে এবং সমাজের অন্যায় বিচারে তাকে জেলে যেতে হয়। জেলে গিয়ে তার পরিচয় হয় নানাধরনের মানুষের সাথে।নাদির গুন্ডা, সুজন মাস্টার, একজন প্রফেসর যে কিনা "পাগলা পফেসর" নামেই পরিচিত,ইউসুফ মুন্সি, বাচ্চু এদের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে। জীবনের নানা জায়গা থেকে আসা মানুষগুলো কিভাবে যেন এক সুতোয় গাঁথা পড়ে।
এরই মাঝে দেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ জেলখনার বাইরের পরিবেশের সাথে সাথে পালটে যেতে থাকে জেলখানার ভিতরের পরিবেশ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পাশাপাশি এদেশের সার্থান্ধ কিছু মানুষ মনুষ্যত্বের সম্পূর্ণ বিসর্জন দিয়ে হয়ে ওঠে হিংস্র -নিষ্ঠুর নরপশু। দেশের সাধারণ মানুষদের উপর চালাতে থাকে অমানবিক নির্যাতন। নারীদের উপর এই নির্যাতন যেনো আরো দ্বিগুণ হতে থাকে।তখন জেলে থাকা ফজররা প্রিয় মানুষগুলোর চিন্তায় অধীর হয়ে পড়ে। সিদ্ধান্ত নেয় জেল থেকে পালানোর। ধিরে ধিরে একজন তেইল্যা চোরা জড়িয়ে পড়তে থাকে মুক্তিযুদ্ধের সাথে।ফজররা কী পেরেছিল জেল থেকে পালাতে? তাদের প্রিয়জনদের দেখা কি তারা পেয়েছিল? কীভাবে তারা জড়িয়ে পড়ল মুক্তিযুদ্ধের সাথে?
সমাজের সাধারণ মানুষের উপর করা ধনিক গোষ্ঠীর অন্যায় জুলুম,পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একজন চোরের বউ আমেনার জীবন বাঁচাবার লড়াই, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের অমানবিক নির্যাতন, সবশেষে সমাজের মান বাঁচানো নয় এমন কিছু মানুষের মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের মানুষের প্রাণ বাঁচানোর গল্প জানতে হলে পড়তে হবে তেইল্যা চোরা বইটি।
ব্যক্তিগত মতামত
বইটি আকারে ছোট হলেও অনেক অনেক ভালো লাগার মতো লাইন মন ছুয়ে গেছে।এই সমাজের সর্বস্তরের মানুষ যে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলো সেই চিত্র যেনো এই বইটি পড়ার আগ পর্যন্তও আমার কাছে কিছুটা অস্পষ্ট ছিলো। কিন্তু এখন ভাবতেই গায়ের রোম শিউরে উঠছে যে সত্যিই আমাদের আজকের এই স্বাধীনতার জন্য সেই সময়ের প্রতিটি মানুষকে কতখানি আত্মত্যাগ করতে হয়েছে!বইটি আমার দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা হলেও পাল্টে দিয়েছে। আশা করি বইটি পড়লে যে কারুরই মন ছুঁয়ে যাবে।
ধন্যবাদ সবাইকে।যেহেতু প্রথম বুক রিভিউ পোস্ট, কাজেই অনেক ভুল-ত্রুটি হতে পারে।দয়া করে সেগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং।
আমার বাংলা ব্লগে বই রিভিউ খুব কম সংখ্যক লোকই দেয়। আপনার বই রিভিউটি দেখে আমার খুব ভালো লাগলো।আশা করছি এই প্রক্রিয়া চলমান রাখবেন। ধন্যবাদ আপনাকে সবার উদ্দেশ্যে শেয়ার করার জন্য ।
ধন্যবাদ ভাইয়া, এমন উৎসাহ পেলে অবশ্যই নিয়মিত লেখার চেষ্টা করব।
বই পড়তে যদিও আমি খুব ভালোবাসি তবে সময় সল্পতার কারণে এখন বই পড়া হয়না। আপনার এই বই রিভিউ দেখে খুব বেশি খুশি হলাম। ধন্যবাদ সবার উদ্দেশ্যে শেয়ার করার জন্য। ভালো থাকবেন সর্বদায় ফ্যামিলির সবাইকে নিয়ে সবসময় এই কামনা করি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু আপনার ভালো লাগা শেয়ারের জন্য।