প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ 'বঙ্গ এগ্রো কমপ্লেক্স' পার্ক ভ্রমণ || তাং:-০৩/০৯/২০২২ইং।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি।

Picsart_22-09-03_11-14-01-972.jpg

Image sourcew3w

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আমি ভ্রমণ করতে খুবই পছন্দ করি। আমি বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার মাঝে স্বর্গীয় সুখ অনুভব করি। আমি সুযোগ পেলেই যেকোনো ঐতিহাসিক স্থান, কিংবা বিখ্যাত পার্কে ভ্রমণ করতে চলে যায়। আমি বিশ্বাস করি যে, ভ্রমণ করার মধ্য দিয়ে মানুষ তার মনের ক্ষুধাকে নিবারণ করতে পারে। ভ্রমণ করার মধ্য দিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার মাঝে যে সুখ আছে পৃথিবীতে আর অন্য কোন কাজের মধ্যে সেই সুখ নেই। তাই আমি মনে করি আমাদের সকলের উচিত, আমাদের মনকে আরো বেশি ফ্রেশ/ সতেজ করে তোলার জন্য বিভিন্ন সৌন্দর্য জায়গায় ভ্রমণ করা। আবার ভ্রমণ করার মধ্য দিয়ে আমরা বাইরের জগত সম্পর্কে বিশেষ অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারি। আমাদের জ্ঞানের পরিধিকে ভ্রমণ করার মধ্য দিয়ে প্রসারিত করতে পারি। এক কথায় বলা যায় ভ্রমন করার মধ্য দিয়ে আমরা নতুন জ্ঞান অর্জন করতে পারি। যেটা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য খুবই ভালো একটা দিক হয়ে থাকবে।


IMG_20220831_161402_330.jpg

IMG_20220831_161424_516.jpg

IMG_20220831_161654_887.jpg

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, গত কয়েকদিন আগে আমাদের এলাকার বিখ্যাত একটি পার্কে আমি বেড়াতে গিয়েছিলাম। আমি মোটরসাইকেল চড়ে পার্কে ভ্রমণ করতে গিয়েছিলাম। মোটরসাইকেল চড়ে পার্কে যেতে আমার ৩৫ মিনিট সময় লেগেছিল। পার্কটি আমাদের এলাকার মধ্যে অবস্থিত তাই এত কম সময় লেগেছিল। আমার ভ্রমণ করা এ পার্কের নাম হল বঙ্গ এগ্রো কমপ্লেক্স। এই পার্কটি আমাদের মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার জুগীরগোফা নামক গ্রামে অবস্থিত। এই পার্কের চারিদিকে রয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রাম। এই পার্কটি কোন সরকারি পার্ক নয় কিংবা কোন সরকারি জায়গার উপর পার্কটি অবস্থিত নয়। বঙ্গ এগ্রো কমপ্লেক্স পার্কটি সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানাধীন। এই পার্ক সম্পর্কে আমি আগেই জেনেছিলাম যে জুগীরগোফা নামক গ্রামে নুরু মিয়া নামের একজন বিখ্যাত জমিদার বসবাস করতেন। তিনি হাজার হাজার বিঘা জমির মালিক ছিলেন। তার সেজো ছেলে প্রায় ৩৫০ বিঘা জমির উপর বঙ্গ এগ্রো কমপ্লেক্স পার্কটি তৈরি করেছেন। যাহোক আমি বিকেল চারটার পরে বঙ্গ এগ্রো কমপ্লেক্স পার্কে পৌছালাম। পার্কে পৌঁছানোর পর ৩০ টাকা দিয়ে একটি টিকিট ক্রয় করলাম। আমার জন্য টিকিটের মূল্য ছিল ২০ টাকা এবং আমার মোটরসাইকেল গাড়ির জন্য দশ টাকা। তারপর বঙ্গ এগ্রো কমপ্লেক্স পার্কের প্রধান গেট দিয়ে পার্কের ভিতরে প্রবেশ করলাম।


IMG_20220831_171214_581.jpg

IMG_20220831_161455_083.jpg

IMG_20220831_161801_483.jpg

IMG_20220831_161702_552.jpg

পার্কের ভিতরে প্রবেশ করে আমি দেখতে পেলাম যে পার্কের মধ্যে অসংখ্য সুন্দর সুন্দর ফুলের গাছে পরিপূর্ণ। পার্কের মধ্যে আমি আরো দেখতে পেলাম অনেক বড় বড় অনেকগুলো পুকুর রয়েছে। পুকুরের পাড়ের উপর লাগানো রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রঙ্গিন ফুলের গাছ এবং শোভা বর্ধনকারী গাছ। পার্কের ভিতরে প্রবেশ করে যতদূর চোখ গেল শুধু দেখতে পেলাম বড় বড় পুকুর আর পুকুর পাড়ে লাগানো সুন্দর সুন্দর ফুলের গাছ। সবুজ শ্যামল পরিবেশে পার্কে বেড়াতে আমার খুবই ভালো লাগছিল। পার্কের পরিবেশটা অত্যন্ত মনোরম। পাশাপাশি পার্কের ভিতর নিরাপত্তার বিশেষ ব্যবস্থাও রয়েছে। অত্যন্ত পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন পার্কের বিভিন্ন ফুলের সৌন্দর্য দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেছিলাম। পার্কের ভিতরে মাঝেমধ্যে দক্ষিণের বাতাস বড় বড় পুকুরের পানি ছুড়ে এসে আমার গায়ে যখন লাগছিল তখন আমি খুবই শীতলতা অনুভব করছিলাম।


IMG_20220831_161950_220.jpg

IMG_20220831_161827_913.jpg

IMG_20220831_161923_246.jpg

IMG_20220831_162052_091.jpg

পার্কের ভিতর রয়েছে বিভিন্ন দেশীয় এবং বিদেশি জাতের অসংখ্য ফুলের গাছ। প্রায় প্রত্যেকটি ফুলের গাছে বিভিন্ন রঙের রঙ্গিন ফুল ফুটে রয়েছে। বিভিন্ন সবুজ গাছের উপর ফুটে থাকা হরেক রকমের রঙিন ফুল গুলোর সৌন্দর্য দেখে মনের তৃপ্তি মেটাতে পারছিলাম না। রঙ্গিন সুন্দর সুন্দর ফুল গুলো আমি যতই দেখছিলাম আমি ততই আনন্দ উপভোগ করছিলাম। আমার পরিচিত অনেকগুলো ফুল আমি দেখতে পেয়েছি যেমন বিভিন্ন রঙের গোলাপ ফুল, রক্ত জবা ফুল, অস্ট্রেলিয়ান জবা ফুল, পোর্তুলিকা ফুল, ঘাসফুল, হৈমন্তী ফুল, অলকানন্দা ফুল, বিভিন্ন ধরনের টাইমফুল, ডেজি ফুল, পদ্মফুল, শাপলা ফুল, বিভিন্ন ধরনের রঙ্গন ফুল, সূর্যমুখী ফুল, শত শত গাঁধা ফুলের গাছ, নীল ও সাদা বর্ণের অপরাজিতা ফুল, ডালিয়া ফুলের গাছ, শিউলি ফুল, কদম ফুলের গাছ সহ আরো অনেক ধরনের বিদেশি ফুলের গাছ বঙ্গ এগ্রো কমপ্লেক্স পার্কে রয়েছে। এই পার্কের সৌন্দর্য কখনো শেষ হয় না। সারা বছর বিভিন্ন ধরনের রঙ্গিন ফুল এই পার্কে ফুটে থাকে। খুবই অপরূপ সুন্দর সাজে সজ্জিত এই পার্কে বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক ভ্রমণ পিপাসু মানুষেরা প্রতিদিন ভ্রমণ করতে আসে। ঝিনাইদহ এবং যশোর থেকেও বাস গাড়ি ভর্তি ভ্রমণ পিপাসু মানুষেরা এখানে পিকনিক করতে আসে। যাহোক আমি আরো বেশি মুগ্ধ হয়েছি এই পার্কের দেশি এবং বিদেশি জাতের বিভিন্ন ফলের গাছ দেখে এবং বিভিন্ন ঔষধি গাছ দেখে। আঙ্গুর ফলের গাছ, শতমূলী এবং অশ্বগন্ধা গাছগুলো আমার খুবই পরিচিত ছিল। তবে এই পার্কে গিয়ে আমি জীবনে প্রথম আপেল ফলের গাছ দেখতে পেয়েছি।


IMG_20220831_171236_502.jpg

IMG_20220831_162205_824.jpg

IMG_20220831_171254_137.jpg
Image sourcew3w

বঙ্গ এগ্রো কমপ্লেক্স পার্কের ভিতরে অবস্থিত বিভিন্ন বড় বড় পুকুরে বেড়ানোর জন্য কয়েকটি স্পিডবোট এবং কাঠের তৈরি নৌকা রয়েছে। আমি প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত পার্কের বিভিন্ন সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম। বঙ্গ এগ্রো কমপ্লেক্স পার্কটি যেমন সুন্দর ঠিক তেমনি রয়েছে সুন্দর নিয়ম কানুন। উক্ত পার্কের অন্যতম প্রধান নিয়ম হলো সেখানে কোনো প্রকারের ধূমপান করা যাবে না। যেটা আমি জানতে পেরে সত্যি সত্যিই খুবই মুগ্ধ হয়েছিলাম। আরেকটি নিয়ম আমার ভালো লেগেছে সেটা হল সন্ধ্যার আগে অর্থাৎ মাগরিবের আজান দেওয়ার ৫ মিনিট আগেই পার্কের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তাই সকল ভ্রমণ পিপাসু মানুষকে সন্ধ্যার আগে পার্ক ত্যাগ করে বাড়ির দিকে রওনা হতে হয়। যাহোক আমি বঙ্গ এগ্রো কমপ্লেক্স পার্কের বিভিন্ন বড় বড় পুকুরের পাড় দিয়ে যখন বেড়াছিলাম তখন মনে হচ্ছিল হয়তো আজকে বাড়িতে যাব না, এই পার্কেই থেকে যাব। অত্যন্ত মনোরম পরিবেশের মধ্যে অবস্থিত এই পার্কে যে একবার যাবে তাকে বারবার যেতে ইচ্ছে করবে ওই পার্কের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এ পার্কে ভ্রমণ করতে এসে আমি যে পরিমাণ মানসিক শান্তি পেয়েছি, চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য দেখে মনের তৃপ্তি পেয়েছি সেটা হয়তো অন্য কোথাও থেকে পাওয়া অসম্ভব। তাই আপনারাও সময়-সুযোগ পেলে এই পার্কে এসে সৌন্দর্য উপভোগ করে যাবেন।


সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আবারো অন্য কোন সৌন্দর্যময় স্থান ভ্রমণ করে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো ইনশাল্লাহ। আসলে ভ্রমণের মধ্যেই প্রকৃত সুখ পাওয়া যায় বলে আমি মনে করি। তবে ভ্রমণ করার ক্ষেত্রে যানবাহন পরিচালনা করা এবং যাতায়াতের ক্ষেত্রে আমাদের বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। যাতে কোন ধরনের দুর্ঘটনা সম্মুখীন আমাদেরকে হতে না হয়। যাহোক বন্ধুগণ আমি আজকের মতো এখানেই শেষ করছি, আপনারা সবাই ভাল থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ।


১০% বেনিফিসারী প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য বরাদ্দ।


সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ



Sort:  
 2 years ago 

বঙ্গ এগ্রো কমপ্লেক্স পার্কটি অনেক বড়।প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিয়ে ভরপুর এই পার্কে। ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের আমার কাছে বেশ ভালো লাগে। আমিও সময় পেলে কোথাও না কোথাও ঘুরতে যাই। নতুন কিছু জায়গা গেলে শিক্ষনীয় অবশ্যই কিছু না কিছু শেখা যায়। পার্কের লেক গুলো অনেক সুন্দর লাগছে। পার্কের মধ্যে অনেক ধরনের ফুল আছে দেখছি। ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে সুন্দর কিছু মূহূর্ত ছবি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। সবমিলিয়ে পার্কটি ভালো লেগেছে। শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য।

 2 years ago 

গঠনমূলক মন্তব্য করার জন্য ভাইয়া আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

ভাইজান প্রথমে বলবো আপনি কিন্তু দারুন একটি সময় কাটিয়েছেন ৷প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ বঙ্গ এগ্রো কমপ্লেক্স পার্কে ৷আর ভাই ঠিক বলেছেন ভ্রমন এক ধরনের খাবার শরীর সুস্থ মন মানসিকতা ভালো রাখার জন্য ৷
আর ভাই পার্কটি তো অনেক বড় ৩৫০ বিঘা জুড়ে সত্যি বিশাল বড় ৷আর চারদিকে পরিবেশ টা ও বেশ চমৎকার ছিল ৷চারদিকে শুধু ফুল ফুল আর ফুল ভালো লাগলো আপনার ভ্রমন কাহিনী পরে ৷
ধন্যবাদ

 2 years ago 

জি ভাইয়া বঙ্গ এগ্রো কমপ্লেক্স পার্কে খুবই মজার সময় কাটিয়েছি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যগুলো দারুণভাবে উপভোগ করেছি।

 2 years ago 

আপনার পার্ক ভ্রমণের গল্পটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আপনি অনেক সুন্দর সময় কাটানোর পাশাপাশি ফটোগ্রাফি গুলো অনেক সুন্দর ভাবে আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন।
আপনার জন্য শুভ কামনা রইল

 2 years ago 

অতি চমৎকার মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

 2 years ago 

ভাইয়া পার্কটা ৩৫০ বিঘা জমির উপর তাহলে তো অনেক বড়। আবার ফটোগ্রাফিতে দেখলাম অনেক সুন্দর। আর বিশ টাকা টিকেট বেশি না। কিন্তুু এই প্রথম দেখলাম মানুষের সাথে গাড়ির টিকেট লাগলো। যায়হোক পার্কটিতে অনেক ফুল গাছ আছে। দেখে অনেক ভাল লাগলো। ধন্যবাদ।

 2 years ago 

গাড়িতে টিকিট নিয়েছে এটাই ভালো কারণ গাড়িটা আমার নিরাপদ জায়গায় থাকল। সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 65792.18
ETH 2695.80
USDT 1.00
SBD 2.90