হাড় কিপটে নাটক এর রিভিউ||তাং:১৯/০৬/২০২২ইং।
আসসালামু আলাইকুম।
সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি। আজ আমি আপনাদের নিকট হাড়কিপটে নাটকের রিভিউ উপস্থাপন করছি। আশা করি নাটকটির রিভিউ আপনাদের নিকট অনেক অনেক ভালো লাগবে
নাটকের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলী নিম্নে উপস্থাপন করা হলো:-
নাটকের নাম হাড় কিপটে লেখক বৃন্দাবন দাস পরিচালনা সালাউদ্দিন লাভলু অভিনয়ে আ.খ.ম হাসান, চঞ্চল চৌধুরী, শামীম জামান, মৌটুসী, স্বর্ণা, আমিরুল হক চৌধুরী, রাশেদা চৌধুরী, হাবিবুর রহমান মধু, আনিসুল হক বরুণ, মাজহারুল আলম ধরন কমেডি নাটক ভাষা আঞ্চলিক বাংলা দৈর্ঘ্য ১:১২ মিনিট মুক্তি পায় ২০০৮ সালে
স্ক্রিনশট দিয়ে দেয়া হয়েছে।
নাটকের সারসংক্ষেপ।
নাটকের শুরুতে দেখা যায় দুইজন লোক গোসল করে গামছা পরিধান করে ভেজা লুঙ্গী শুকানোর চেষ্টা করছে। তারপরে দেখা যায় ওই দুইজন লোকের পিতা নজর আলী এক হাতে ছাতা এবং অন্য হাতে জুতা নিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। কিন্তু ছাতা পুরাতন হয়ে যাওয়ার ভয়ে এবং জুতা ছিড়ে যাওয়ার ভয়ে তিনি ছাতা ফুটালেন না এবং জুতা পায়ে দিচ্ছেন না। অন্যদিকে নজর আলীর বড় এবং ছোট ছেলে তার সুগন্ধ সাবান দিয়ে গোসল করাই তাদের ভাত বন্ধ করে দেয় নজর আলী।
স্ক্রিনশট দিয়ে দেয়া হয়েছে।
এদিকে নজর আলীর বাড়িতে তার একমাত্র জামাই আসার কারণে নজর আলীর মেজো ছেলে বহর আলী তার দুলাভাই এর উপর খুবই ক্ষিপ্ত। রান্না করার ক্ষেত্রে তেল ব্যবহারে বিষয়ে নজর আলীর বেশ তীক্ষ্ণ নজর ছিল। তরকারি রান্না করার সময় তেল যাতে কম লাগে সেই জন্য নজর আলী তার স্ত্রীকে অত্যাধুনিক একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করে শিখিয়ে দেয়। এদিকে নজর আলী বড় ছেলে ফজর এবং ছোট ছেলে নহর বিয়ে করার জন্য দুজন দুটি মেয়ের সাথে প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। কিন্তু হাড়কিপ্টে নজর আলী কোনমতেই তার ছেলেদের বিয়ে দিতে রাজি নয়। ফজর এবং নহরের প্রেমিকা মাঝেমধ্যেই বহরের সাথে বিয়ে করার বিষয় নিয়ে পথে-ঘাটে মজা করে।
স্ক্রিনশট দিয়ে দেয়া হয়েছে।
একদিন হঠাৎ বহরের সাথে একজন সাধু বাবার দেখা হয়। সাধু বাবার গলায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে দড়ি জড়ানো এবং ঝোলানো থাকে। তাই বহর সাধুবাবা কে দড়ি বাবা বলে ডাকতে শুরু করে। কিন্তু সাধুবাবা ছিল একজন ভন্ড বাবা। তার উদ্দেশ্য ছিল নজর আলীর সম্পদ প্রতারণা করে আত্মসাৎ করা। অন্য দিকে নজর আলীর বড় এবং ছোট ছেলে বিয়ে করার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছে কিন্তু বাবার কাছে নিজের বিয়ের প্রস্তাব রাখার মত সাহস তাদের হচ্ছে না। এদিকে বহর কোন মতেই নিজের বিয়ে করতে রাজি নয়।
স্ক্রিনশট দিয়ে দেয়া হয়েছে।
যাইহোক নাটকের একটি অংশে দেখা যায় দড়ি বাবা বহরকে বিভিন্নভাবে প্রতারণার মাধ্যমে বহরের মন জয় করতে চেষ্টা করছে। দড়ি বাবা প্রথমে বহরে কাছ থেকে একটি পাকা আম নিয়ে তিনটি পাকা আম তৈরি করে দেয়। তারপর দশ টাকার নোট কে তিনটি দশ টাকার নোটে রূপান্তরিত করে। একইভাবে নজরআলীকে সামনে রেখে একটি 100 টাকার নোট কে তিনটা 100 টাকার নোটে পরিণত করে। ফলে নজর আলী এবং বহর দড়ি বাবার কেরামতি দেখে মুগ্ধ হয় এবং তাদের সকল টাকা-পয়সা এবং সোনাদানা তিন গুণ করার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়। এদিকে ফজর এবং নহরের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে তার মা পাত্রীপক্ষের নিকটে যায় এবং বিয়ের দিন ধার্য করে।
স্ক্রিনশট দিয়ে দেয়া হয়েছে।
স্ক্রিনশট দিয়ে দেয়া হয়েছে।
নজর আলী তার সমস্ত সোনাদানা এবং টাকা পয়সা তিন গুণ করার জন্য দড়ি বাবার কাছে দিয়ে দেয়। দড়ি বাবা খুব কৌশলে নজর আলীকে ঠকিয়ে তার সমস্ত টাকা ও সোনার গহনা নিয়ে পালিয়ে যায়। হাড়কিপটে নজর আলী সমস্ত টাকা-পয়সা এবং সোনাদানা হারানোর বেদনা সহ্য না করতে পেরে স্টোক করে মৃত্যুর মত অবস্থা হয়ে যায়। মুমূর্ষ প্রায় পিতার মাথার কাছে বসে বহর কান্নাকাটি করছিল ঠিক ওই সময় ফজর এবং নহর বিয়ে করে নতুন বউ বাড়িতে নিয়ে আসে। নজর আলী মৃত্যুবরণ করেছে মনে করে তার জন্য দামী কাপড়, সুগন্ধ সাবান নিয়ে এসে তার মাথার কাছে রাখা হয়। কিন্তু সুগন্ধ সাবানের সুগন্ধে নজরআলী জ্ঞান ফিরে পায় এবং উঠে বসে বলতে থাকে "এ তো দেখছি দামি কাপড় ও দামি সাবান"। বহর দামি কাপড় এবং সুগন্ধি সাবান দোকানে ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দেয় নজর আলীকে। শশুরের সুস্থতা দেখে নজর আলী নতুন দুই বউ মা হাসতে হাসতে বলে "বাবা আপনার সুস্থতা দেখে আমাদের যে কি ভালো লাগছে"। একথা শুনে নজরআলী পুনরায় অসুস্থের মত হয়ে শুয়ে পড়ে এবং নাটকটি শেষ হয়ে যায়।
স্ক্রিনশট দিয়ে দেয়া হয়েছে।
স্ক্রিনশট দিয়ে দেয়া হয়েছে।
শিক্ষা
হাড়কিপটে নাটকটি হলো হাস্যরস বিশিষ্ট একটি সচেতনতা মূলক নাটক। হাড়কিপটে নাটকের মাধ্যমে আমরা যে শিক্ষা নিতে পারে সেগুলো হলো, প্রথমেই আমাদের সন্তানদেরকে অবশ্যই কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে এবং পরিবারের সকল সদস্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। আর দ্বিতীয়টি হলো, আমাদেরকে ধর্মীয় গোঁড়ামি বা ধর্মীয় কুসংস্কার পরিত্যাগ করতে হবে। অর্থাৎ ধর্মের দোহাই দেওয়া সকল প্রকারের সাধুবাবা বা দড়ি বাবাদেরকে এড়িয়ে চলতে হবে। তাদের কোন প্রকারের মিষ্টি কথায় কর্ণপাত করা যাবে না এবং এরকম ভন্ড বাবাদের আশ্রয় দেওয়া যাবে না। সর্বশেষ শিক্ষা টি হল, পরিবারের কর্তাকে উদার মনের মানুষ হতে হবে এবং পরিবারের সন্তানদেরকে সামাজিকতা রক্ষার বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
নাটকটি সম্পর্কে আমার মতামত
নাটকটির মাধ্যমে ফুটে উঠেছে গ্রামাঞ্চলের একজন সংবেদনশীল এবং নিরীহ মানুষের পারিবারিক কাহিনী। উক্ত নাটকে পরিবারের কর্তা হিসেবে নজর আলী তার পরিবারের খরচ বহন করতে গিয়ে নিজেকে সকলের নিকট হাড় কিপটে নামে পরিচিত করে ফেলে। প্রতি বছর শেষে জমি ক্রয় করার নেশায় নজর আলী তার সন্তানদের লেখাপড়া পর্যন্ত শেখায় নি। এখন তার তিনটি সন্তান বিয়ের উপযুক্ত কিন্তু বাড়িতে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি হয়ে যাওয়ার ভয়ে নজর আলী তার বিয়ের উপযুক্ত সন্তানদের বিয়ে দেয়ার কথা চিন্তাই করে না। আমি মনে করি এখানে এক ধরনের অজ্ঞতা এবং কুসংস্কার ফুটে উঠেছে। হাড় কিপটে নাটক এর মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে হাস্যরস থাকলেও গ্রামীণ পরিবেশে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি বিমুখতা তুলে ধরা হয়েছে। উক্ত নাটকের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে এখনো গ্রামের মানুষের মধ্যে শিক্ষার চেয়ে টাকা বা সম্পদের প্রতি মানুষের তীব্র আকর্ষণকে। তাই আমি মনে করি একমাত্র শিক্ষার অভাবেই মানুষ মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলে। যার ফলে মানুষ যেকোনো মূল্যে সম্পদ বাড়ানোর দিকে ঝুঁকে পড়ে। এমনকি সম্পদ বাড়ানোর লক্ষ্যে যেকোনো ধরনের কুসংস্কার এবং ধর্মীয় গোঁড়ামি কে বিশ্বাস করে নিজের সর্বস্ব হারিয়ে ফেলে। যেমনটি হাড়কিপটে নাটকে নজরআলী করেছে। তাই আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি সকলকে সচেতন করতে এবং নিজেদের সচেতন করতে আমাদের সকলকে উচিত নাটকটির দেখা এবং নাটকটির অর্থ বোঝা।
হারকিপটে নাটক আমার কাছে ভীষণ ভালো লাগে। অনেক আগে আমি দেখেছি নাটক পুরোটা। মাঝে মাঝেই আমি এখনো দেখি। খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপনা করেছেন আপনি। নাটক রিভিউ দেখে ভাল লাগল ভাই। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
একটা সমউ ছিলো যখন সালাউদ্দিন লাভলু মানেই হিট কিছু। সালাউদ্দিন লাভলু আমাদের বেশ ভালো ভালো নাটক উপহার দিয়েছেন। চঞ্চল চৌধুরী তো জাত অভিনেতা। তার অভিনয় নিয়ে কারো সন্দেহ আছে বলে আমার মনে হয় না।
হারকিপ্টে নাটিকের কি রকম হাইপ ছিলো তা আমরা সবাই জানি। এর অনেক ডায়লগ বেশ ভাইরলা এখন অব্দি।
আপনার রিভিউটি পড়ে আবার সেই সময়ে ফিরে গেলাম মনে হলো।
ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
খুবই চমৎকার একটি নাটকের রিভিউ আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন এই নাটক আমি ছোটবেলায় অনেকবার দেখেছি। অনেকদিন বাদে এরকম একটি রিভিউ দেখে খুবই ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপনাকে।
খুবই হাসির একটি নাটকে এটি। আমি অনেকবার দেখেছি অনেক পুরানো একটি নাটক। এত সুন্দর নাটক রিভিউ আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
নাটকটি আমার খুবই প্রিয়। আমি আমার জীবনে এই নাটক অসংখ্যবার দেখেছি। এই নাটকের মধ্যে রয়েছে অনেক শিক্ষণীয় বিষয়। আপনি খুব সুন্দরভাবেই রিভিউ করে শেয়ার করেছেন।
আপনি খুব চমৎকার একটি নাটক আমাদের মাঝে রিভিউ করেছেন। আসলে আমি নাটকটি অনেকবার দেখেছি নাটকের সংলাপ এবং চরিত্র খুবই ভালো লেগেছে আমার। এই ধরনের নাটক দেখতে খুব ভালো লাগে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই।