আমার বাংলা ব্লগ-গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সাপ খেলা-তাং: ২২/১০/২০২১ইং(10% beneficiary to @shy-fox)
আসসালামু আলাইকুম।
সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আমি আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভাল আছেন এবং নিরাপদে আছেন। হেমন্তের সন্ধ্যায় আপনাদের সবাইকে হৈমন্তীর শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার পোষ্ট শুরু করছি।
আজ আমি আপনাদের নিকট গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সাপ খেলা নিয়ে কিছু কথা উপস্থাপন করছি।
আমাদের গ্রামাঞ্চলে এক সময় সাপখেলা ছিল নিত্য দিনের ঘটনা । ছোট বড় সবাই মিলে দেখত সাপ খেলা । সাপ খেলা দেখার মাধ্যমে সবাই অনেক আনন্দ পেত। অনেক রকম সাপ নিয়ে সাপুড়ে সাপ খেলা দেখাত । বিশেষ করে গোখরা সাপ ফনা তুলে ফুস ফুস শব্দ বাচ্চাদের মনে ভয় ধরিয়ে দেয় । এটা তারা বেশ উপভোগ করে। এখনও মাঝে মাঝে হাটে বাজারে সাপ খেলা দেখা যায় । কিন্তু তা খুব কম । এখন মানুষ এই পথে রজগার করতে চাই না। সে কারনেই হয়ত আর বেশি দেখা যাই না।
আর একটি কথা না বললেই নয়, আমাদের দেশ নদীমাতৃক দেশ । নদীকে কেন্দ্র করে এদেশের গড়ে উঠেছে বিভিন্ন বেদে সম্প্রদায়। বেদে সম্প্রদায় মূলত যাযাবর জাতি। বেদে সম্প্রদায়ের বিশেষ করে পুরুষেরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাপের খেলা এবং বানরের খেলা দেখিয়ে রোজগার করে থাকে। আবার বেদে মেয়েরাও সাপ খেলা দেখায় । তারা বানর , সাপ খেলা এবং তাবিজ বেঁচে জীবন নির্বাহ করে। বেদে পরিবার দের এটা ঐতিহ্য বাহী পেশা। এরা সাপ ধরতেও পটু । কোথাও সাপ দেখা গেলে অনেকে বেদেদের খবর দেয় । তারা এই সাপ ধরে খেলা দেখায় । গ্রামে সাপ খেলা দেখালে অনেকে চাল ও টাকা দেয় । এটায় তাদের প্রধান রজগারের পথ।
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে এককালে খুবই জনপ্রিয় ছিল সাপ খেলা। সাপের খেলা অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি খেলা ছিল অতীতে।আমি যখন ছোট ছিলাম দেখতাম সেই সময় আমাদের গ্রামে সাপ খেলার বিশাল আয়োজন হত। দূর দূরান্ত থেকে বিভিন্ন বয়সের সাপুড়ে ছুটে আসত এখানে সাপ খেলা দেখানোর জন্য। আবার অনেক দূরের এলাকা থেকেও শত শত জনগণ আসতো সাপ খেলা দেখার জন্য ।সাপ খেলায় বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হতো এবং পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকত।অনেক প্রতিযোগী আসত পুরস্কার পাওয়ার আশায় । অনেকে সাপ- খেলা দেখাতে ব্যর্থ হত। তখন অনেকে বলত মন্ত্র পড়ে তার অক্ষম করা হয়েছে । যাইহোক সেটা সবাই উপভোগ করত। কিন্তু,কালের বিবর্তনে সাপের খেলা দিন দিন আমাদের কাছ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। অতীতের সাপের খেলা গ্রামবাংলার মানুষের কাছে বিনোদনের অন্যতম প্রধান একটি উৎস ছিল।ঐতিহ্যবাহী এ খেলাটি এখন আর দেখা যায় না বললেই চলে। তবে আজ সকালে ৬৫-৭০ বছর বয়সের এক চাচা আমাদের সাপের খেলা দেখান। আমি সাপুড়ে চাচার কাছ থেকে জানতে পারলাম যে তিনি দশ- বার বয়স থেকে সাপের খেলা দেখানো শুরু করেছেন। প্রথমে তিনি তার দাদার নিকট থেকে সাপের খেলা দেখানোর দক্ষতা অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে তিনি তার পিতার নিকট থেকে সাপের খেলা দেখানোর দক্ষতা অর্জন করে। সাপুড়ে চাচা বিভিন্ন গ্রামের পাড়াগাঁয়ে ঘুরে সাপের খেলা দেখিয়ে থাকেন।
সাপুড়ে চাচা সাপের খেলা দেখাতে চাইলে আমি তাকে একটা খোলামেলা জায়গায় নিয়ে যায়। তারপর, সাপুড়ে চাচা তার সাপ থাকা বাক্সগুলো মাটিতে নিয়ে তার সাপ খেলা দেখাতে আরম্ভ করে।
সাপুড়ে চাচা তার বাক্স থেকে একে একে বিভিন্ন জাতের গোখরা সাপ বের করতে থাকে। আর সাপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিভিন্ন প্রকারের তন্ত্র মন্ত্র পাঠ করছিলেন এবং তার সাথে লোকগীতি গান পরিবেশন করেছিলেন।কিছুক্ষণের মধ্যেই পাড়াগাঁয়ের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা দলবেঁধে সাপের খেলা দেখতে আসে। ছোট ছেলেমেয়েরা খুবই আনন্দের সাথে সাপ খেলা উপভোগ করতে থাকে।
সাপ খেলা দেখে মানুষের সাপে কামড়ানোর কথা মনে হলো।কয়েক বছর আগেও কাউকে সাপে কামড়ালে সাধারণ মানুষ ডাক্তারের কাছে না গিয়ে সাপুড়ে খুঁজতো। আজকাল বনাঞ্চল কমছে, সাপ কমছে, কমছে সাপুড়ের সংখ্যাও। পাশাপাশি সচেতনতা মূলক শিক্ষা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের দ্রুত অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাধারণের মাঝে সচেতনতাও বাড়ছে। ফলে সাপে কাটলে সাপুড়ে খোঁজার প্রবণতাও কমেছে অনেক। এখন সাপে কামড়ালেই সবাই ডাক্তারের শরণাপন্ন হচ্ছে।
প্রতিটি মানুষ অবাক দৃষ্টিতে দেখছিল সাপুড়ে চাচার সাপ খেলা। অনেকে আবার গোখরা সাপ দেখে ভয় পাচ্ছিল। তারপরও সাপ খেলা না দেখে উপায় নেই। এদেশের সাপুড়ে সম্প্রদায়ের প্রতিটি বহরের সঙ্গে ‘সাপ’ ছিল তাদের একটা বিশেষ অংশ। জীবন চলার পথে বছরের কয়েক মাস কয়েকটি স্থানে ভ্রাম্যমাণ আশ্রয় স্থাপন করে তারা বসবাস করে। এরপর জীবিকা হিসেবে কেউ সাপ, কেউ বা অন্য কোন পেশায় নিযুক্ত থেকে বসবাসকৃত এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে সাপুড়েরা সাপ নাচিয়ে খেলা দেখায়। সাপুড়েদের সাপের খেলা আমাদের লোকসংস্কৃতির একটি বিশেষ অংশ।
সাপুড়ে চাচা একটি গোখরো সাপ বের করল সে সাপটি মোটা এবং লম্বায় প্রায় ছয় ফুট।মন মাতানো গানের সুরে সাপের খেলা প্রদর্শন করলেন।
সাপেরখেলা দেখানো শেষে সাপুড়ে চাচা তাবিজ বিক্রয়ের ধান্দা শুরু করে। অবশ্য সাপ খেলা দেখানোর মূল উদ্দেশ্য থাকে তাবিজ বিক্রি করা। শুধুমাত্র পাড়াগাঁয়ের সাপ খেলা দেখিয়ে সাপুড়েরা তাবিজ বিক্রি করে না তারা এখনও হাটে বাজারে মানুষের নিকট তাবিজ বিক্রি করতে দেখা যায় । তারা মানুষের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য সাপ খেলা দেখায় । এতে মানুষ জড়ো হলে তাদের তাবিজ বিক্রিও বেড়ে যায়। যদিও তাবিজ জিনিসটি শুধুই ধোঁকাবাজি , তারপরও সাধারন ও অশিক্ষিত মানুষেরা তাবিজ ব্যবহার করে থাকে। তাদের বিশ্বাস এতে তাদের সব রোগ ভালো হয়ে যাবে । আর জিনে আসর করবে না। এতে কোন বিষাক্ত সাপ তাকে দংশন করবে না বা কামড়াবে না।এটা বেশ অদ্ভুদ শ্রেণীর বিশ্বাস ও বটে।কিন্তু কোন মানুষ তাবিজ ক্রয়ের প্রতি আগ্রহ দেখালো না। তবে ছেলেমেয়েরা পাড়ার মধ্য থেকে কিছু চাউলৈ তুলে এনে তাকে দিল এবং কয়েকজন মানুষ পাঁচ দশটা করে তাকে দিল। এগুলো নিয়েই সাপুড়ে চাচা অন্য গ্রামে খেলা দেখানোর উদ্দেশ্যে চলে যায়। যাহোক, অনেকদিন পর একটি জমজমাট সাপের খেলা উপভোগ করেছি।
সুপ্রিয় বন্ধুগণ, ঐতিহ্যবাহী সাপ খেলা নিয়ে আমার এ পোস্টটি আপনাদের কাছে ভালো লাগলে আপনারা কমেন্ট করবেন এবং আমাকে সমর্থন করবেন। অসংখ্য ধন্যবাদ সবাইকে। সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং নিরাপদে থাকবে।
১০% লাজুক খ্যাকের জন্য বরাদ্দ।
আমার পরিচয়:
আমি মোঃ নাজিবুল ইসলাম বিদ্যুৎ(@bidyut01)। একজন বাঙ্গালী হিসেবে আমি পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। মাতৃভাষা বাংলা আমার অহংকার।আমার প্রধান পেশা শিক্ষকতা (নতুন যোগদান করেছে চাকরিতে)। প্রাইভেট এর অধীনে এম এ শেষ পর্বের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আমি(কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ)। আমি অনলাইনের কাজ করে আসছি হাই স্কুলের ছাত্র জীবন থেকে। এছাড়াও বর্তমানে আমি কৃষি কাজের সাথেও জড়িত আছি। আমি ছবি অঙ্কন করতে, গান ও কবিতা লিখতে এবং ভ্রমণ করতে অধিক পছন্দ করি।
এই ব্যাপারটি তো জানাই ছিলোনা আমার একদম।আমি ভাবলাম এরা এমনিতেই টাকা পায় তাই খেলা দেখায়।
তবে আজকেই প্রথম দেখলাম আমি এসব, এর আগেও কোনোদিন দেখিনি।
আপু সাপ খেলা দেখানোর মূল উদ্দেশ্য থাকে যে তারা তাবিজ কবজ বিক্রি করবে। আমার এই পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমার এ পোস্টটি পড়ে আপনি খুব সুন্দর মন্তব্য প্রকাশ করেছেন।
আমাদের এলাকার হাট-বাজারে ইউনানী ঔষধ বিক্রেতারা যাদু দেখা,সাপ খেলা দেখায় ঔষধ বিক্রির ফাঁকে ফাঁকে।
ভালোই লাগতো এসব।
ধন্যবাদ ভাই আপনাকে অনেক সুন্দর একটি পোস্ট লেখার জন্য।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনি আমার এ পোস্টটি পড়ে খুবই সুন্দর মন্তব্য করেছেন। আপনার মন্তব্য বলে আমার অনেক ভালো লেগেছে।
সাপ খেলার ছবিগুলো দেখে সাপ খেলা দেখতে খুব ইচ্ছে করতেছে। আমি কখনো সাপ খেলা বাস্তবে দেখিনি। সব মিলিয়ে আপনার পোস্টটা খুব সুন্দর হয়েছে। সাপটা ও দেখতে খুব সুন্দর
ভাইয়া গ্রামে এখনো মাঝে মাঝে সাপ খেলা দেখা যায়। সাপ খেলা দেখার জন্য গ্রামে আসতে হবে ভাইয়া। আমার এ পোস্টটি বলে আপনার সুন্দর মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
সাপ আমার খুবই ভয় লাগে। তবে ছোটো বেলায় সাপের খেলা দেখেছি। শহরে ওগুলো এখন আর দেখা যায় না। আপনার সাপের ছবি গুলো দেখে আমার ভয় লাগছে।
সব সত্যি ভয়ংকর প্রাণী। একবার কামড়ালে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। আপনি আমার এই পোস্টটি পড়ে খুবই সুন্দর আপনার নিজস্ব মতামত প্রকাশ করেছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।
গ্ৰামে মাঝে মাঝে সাপ খেলার দৃশ্য দেখা যায়। সাপুড়ে যখন সাপ খেলা শুরু করে তখন গ্ৰামের লোকজন চাড়পাশ দিয়ে গোল হয়ে সাপ খেলা দেখে। সুন্দর পোস্ট করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
ভাইয়া গ্রামের মানুষ এখনও সাপ খেলা দেখতে পছন্দ করে। আমার এ পোস্টটি পড়ে আপনি খুব সুন্দর মন্তব্য করেছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী প্রাক্তন খেলা হচ্ছে সাপের খেলা দেখতে খুবই ভালো লাগে ওনারা নেচে-গেয়ে মানুষকে আনন্দ দেয় এবং সাপ দিয়ে অনেক রকমের খেলা দেখায় আপনি খুব সুন্দরভাবে ছবিগুলোকে সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন খুবই সুন্দর হয়েছে আপনার জন্য শুভকামনা থাকলো
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনি আমার এই পোস্টটি পড়েছেন এবং খুবই সুন্দর মন্তব্য করেছেন। আপনার মন্তব্য গুলো সত্যিই আমার মন ছুঁয়ে গেছে। অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
সত্যি খুব ভালো লিখেছেন ভাই। সাপ খেলা আমাদের ঐতিহ্য। গ্রাম বাংলার এই খেলা এখন বিলুপ্ত প্রায়। এটা ছোটবেলা আমিও দেখেছি। সাপখেলা দেখানো সাঁপুড়ে এটা দিয়ে তার জীবিকা নির্বাহ করত। আপনার পোস্টে ঐতিহ্যের একটি ছাপ ফুটে উঠেছে।।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনার মন্তব্যগুলো সত্যিই আমার খুবই ভালো লেগেছে। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
ভাই আপনার পোস্টি পরে আমার সেই আগের দিনের হাটের কথা মনে পরে গেলো বাবার সাথে হাটের দিনে বাজার করতে গেলে এই গুলো দেখতাম এখন তেমন এদের দেখা যায়না।ধন্যবাদ পোস্টি শেয়ার করার জন্য।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। আমার এ পোস্টটি পড়ে আপনার পুরনো স্মৃতি মনে হয়ে গেছে জানতে পেরে আমারও অনেক ভালো লাগলো। খুবই সুন্দর হয়েছে আপনার মন্তব্যগুলো।
একসময় পাড়ায় পাড়ায় সাপুড়িয়া ভাইয়েরা খেলা দেখাত।বাড়ি থেকে একমুঠো চাউল বেতের সের'এ(দোন) করে নিয়ে বসতাম। খেলা শেষে সবাই চাউল দিয়ে চলে আসতাম। এখন শহরে-বাজারে দু একজনের দেখা হলেও, গ্রামে আর দেখিনা। ভাল ছিল।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আমার এ পোস্টটি পড়ে খুব সুন্দর মন্তব্য করেছেন। আপনার মন্তব্যগুলো আমার খুবই ভালো লেগেছে।
ভাই আপনার কাজ আমাকে খুবই ভালো লেছে। আপনি সাপুড়ের প্রতি সহনাভূতি দেখিয়েছেন। আগে গ্রামে সাপুরে সাপ নিয়ে আসতো খেলা দেখাতে অনেক ভয় পাইয়াম বারান্দায় বসে খেলা দেখতাম।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই আপনাকে। আপনার এই পোস্টটি পড়ে খুব সুন্দর মন্তব্য করেছেন।