"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা-২০|| আমার জীবনে প্রথম প্রেমের অনুভূতি || তাং:১৯/০৭/২০২২ইং।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago
"আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটিতে আমার নতুন একটি নতুন পোস্টে আপনাদের সবাইকে জানাই সুস্বাগতম

আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি। আজ আমি আপনাদের নিকটে আমার জীবনের প্রথম প্রেমের অনুভূতি শেয়ার করছি। আমি আশা করি আমার জীবনের প্রথম প্রেমের অনুভূতি আপনাদের নিকট অনেক অনেক ভালো লাগবে।

IMG_20220130_163331.jpg

🌹আমার জীবনের প্রথম প্রেমের অনুভূতি🌹
আমার জীবনের প্রথম প্রেম শুরু হয়েছিল হাইস্কুলে লেখাপড়া করা অবস্থায়। আমার প্রথম প্রেমিকার নাম ছিল বর্ষা। বর্ষা ছিল আমার খালার ননদের মেয়ে। আমরা একই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতাম। আমি তখন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম এবং বর্ষা ছিল সপ্তম শ্রেণীর একজন ছাত্রী। বর্ষা আমার খালার সাথে মাঝেমধ্যেই আমাদের বাড়িতে আসতো। আমাদের বাড়িতে এসেই বর্ষা আমার পড়ার ঘরে যেত এবং আমাকে বিভিন্নভাবে জ্বালাতন করতো। একদিন আমার বিজ্ঞান বইয়ের ভিতর একটি চিঠির খাম পেলাম। চিঠির খামের মধ্যে একটি সাদা কাগজের মাঝখানে হার্ট এর চিত্র অঙ্কন করা এবং হার্টের ভিতরে দুইটি ইংরেজি অক্ষর 'বি' লেখা ছিল। কিন্তু এ বিষয়টি আমার মনের মধ্যে তেমন কোন রেখা সৃষ্টি করেছিল না এবং আমি নিজেও কোন সন্ধান করেছিলাম না যে, কে এই চিঠি আমাকে দিয়েছে।


IMG_20220130_163255.jpg

সেদিন দিন ছিল বৃহস্পতিবার। আমার আজও মনে আছে প্রথম দুইটি ক্লাসের পর শুরু হয়েছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আমি অষ্টম শ্রেণীতে এবং বর্ষা সপ্তম শ্রেণীতে পড়তো। আমাদের বিদ্যালয়ের সকল ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক মন্ডলীগণ একটি বড় কক্ষের মধ্যে সবাই উপস্থিত হয়েছিল। আমিও অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য আমার শ্রেণী পক্ষ থেকে বের হচ্ছিলাম। এমন সময় বর্ষা তার দুজন বান্ধবী সাথে করে নিয়ে এসে উপস্থিত হলো আমার শ্রেণীকক্ষে। তখন সে বিভিন্ন প্রকারে কথা বলতে বলতে আমাকে সরাসরি বলল "আমাকে আপনার কেমন লাগে"। আমি তখনোও বিষয়টি বুঝতে পারছিলাম না। আমি একটু রাগের সাথে উত্তর দিলাম এখান থেকে সরে যাও পেত্নী। তারপর বর্ষার পাশে এক বান্ধবী আমাকে বলল বর্ষা তোমাকে ভালোবাসে। একথা শুনে আমি যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলাম। তারপর আমি অনুষ্ঠানে চলে গেলাম।


IMG_20220130_163243.jpg

কয়েকদিন পরে বর্ষার এই প্রস্তাবের কথাটি আমার মনে ভেসে উঠল। কিন্তু এই কথায় সাড়া দেয়ার কোন বুদ্ধি আমার মাথায় ছিল না। কিন্তু আমি তারপর থেকে খেয়াল করতাম বর্ষা আমার সাথে তেমন কথা বলতাম এবং আমাকে দেখলে মাথা নিচু করে চলত। আমিও বর্ষার সাথে তেমন কথা বলার আগ্রহ দেখাতাম না। এভাবেই পুরো একটি বছর কেটে গেল। আমি নবম শ্রেণীর অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা শেষ করেছি তখন বর্ষা অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। বর্ষার গায়ের রং ছিল শ্যামলা এবং দেহের গঠন ছিল প্রায় চিকন। বর্ষার হাসিটা ছিল খুবই মিষ্টি এবং মাথায় ছিল ঘনকালো কেশ। বর্ষা কে আমার আস্তে আস্তে ভালো লাগতে শুরু করে। আমি যখন একা থাকতাম তখনই বর্ষা'র কথা মনে হতো, বর্ষা'র ছুটন্ত চলাফেরার কথা চোখে ভেসে উঠতো, বর্ষা'র হাসি এবং কথা বলার ভঙ্গি অনবরত মনে ভেসে উঠতো। যখনই সুযোগ পেতাম তখনই বর্ষার দিকে এক পলকে চেয়ে থাকতাম। নবম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কিছুদিন আগে আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম যে বর্ষাকে বলব আমিও তোমাকে ভালবাসি। কিন্তু কথাটি বলতে অনেক দেরি হয়ে গেছিল তাই মনের মধ্যে খুবই ভয় লাগছিল। তারপর আমার কয়েকজন বন্ধুকে সাথে নিয়ে বর্ষাকে আমার মনের কথাটি বলার চেষ্টা করলাম কিন্তু বলা হলো না। অবশেষে আমি একটি চিঠির মাধ্যমে বর্ষাকে আমার মনের কথাটি জানাতে পারলাম। বর্ষা সাথে সাথে আমার কথার সাড়া দিল এবং আমাদের দুজনের মধ্যে এক গভীর ভালোবাসা সৃষ্টি হল। আর বর্ষা'র সাথেই শুরু হলো আমার জীবনের প্রথম প্রেম।


IMG_20220130_163321.jpg

দুজন প্রতি রাত্রে মোবাইল ফোনে কত যে এসএমএস দিয়া-দিয়ে করতাম তার কোন শেষ নেই। বর্ষা প্রতিরাতে আমার মোবাইল ফোনে ছোট ছোট কবিতা এসএমএস দিতো। তার লেখা ছোট ছোট কবিতা গুলো আমি বারবার পড়তাম এবং খুবই আনন্দ পেতাম। আমাদের দুজনের একে অপরের সাথে প্রতিদিন কথা বলা এবং দেখা করা নিয়ে অনেকেই ঘেনা-ঘেসি করত এবং আমাদের দুজনার মধ্যকার সম্পর্কের কথা চারদিকে ছড়িয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগলো না। কিন্তু আমরা তাতে কোন কর্ণপাত করতাম না। আমরা আমাদের মত চলতাম। তবে আমাদের ভালোবাসার সম্পর্ক বেশিদিন স্থায়ী হয়েছিল না। এসএসসি পাস করার পর আমি যখন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হলাম। তখন বর্ষা দশম শ্রেণীর ছাত্রী। তখন বর্ষা মাঝেমধ্যেই আমাকে বলতো বাইরে থেকে তার বিয়ের সম্বন্ধ আসছে। বর্ষা আমার পরামর্শ মতো বাইরে থেকে আসা সকল বিয়ের সম্বন্ধ নাকোচ করে দিত। তারপর আমাদের মধ্যে এভাবেই সম্পর্ক চলতে থাকে। বর্ষা ইতিমধ্যেই এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে ফেলেছে। আমিও এইচএসসি ফাইনাল পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। একদিন বর্ষা রাত্রে বেলায় আমার মোবাইলে পরপর আটবার রিং দিয়েছিল। রাত তখন সাড়ে নয়টা এমন হবে। তখন আমি একটি ইংরেজি প্রাইভেট পড়তে যেতাম তাই মোবাইল ফোন নিরব করা ছিল। তাই আমি বর্ষা'র দেওয়া ফোন রিসিভ করতে ব্যর্থ হয়। পরে আমি বর্ষাকে অনেকবার ট্রাই করি কিন্তু তার মোবাইল ফোনে রিং ঢুকাতে পারিনি। তারপর সকালবেলায় অনেকবার ট্রাই করলাম কিন্তু তাও বর্ষার মোবাইল ফোনে রিং ঢুকলো না। আমি মনে মনে ধরেই নিয়েছি বর্ষা আমার উপর অভিমান করেছে।


IMG_20220130_163308.jpg

তারপর সকাল আটটার দিকে আমি জানতে পারলাম রাত্রে বর্ষা'র বিয়ে হয়ে গেছে। বর্ষা'র স্বামী সেনাবাহিনীতে চাকরি করে। বর্ষা'র বিয়ের কথা শুনে মনে হল আমার মাথার উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়ল, আমার চোখ অন্ধকার হয়ে মাথা ঘুরে গেল। আমি দ্রুত কুষ্টিয়া থেকে বাড়িতে চলে এলাম কিন্তু আমার বাড়ির অভিভাবকেরা বুঝতে পারছি আমার বিষয়টি। তাই তারা খুব সহজেই আমাকে আয়ত্ত করে এবং লেখাপড়ার প্রতি তীব্র উৎসাহ প্রদান করে। কিন্তু আমি সেদিনই বাড়ি থেকে পুনরায় কুষ্টিয়াতে চলে যাই। পরবর্তীতে অনেকবার বর্ষাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু মন থেকে ভুলতে পারিনি ,এখনো না। কিন্তু বর্ষার প্রতি আমার তেমন কোন আকর্ষণ আর ছিল না এবং তার কোন খোঁজ খবর বা সন্ধানও আমি রাখতাম না। বর্ষার বিয়ের দেড় বছর পর হঠাৎ একদিন শুনতে পেলাম তার সুন্দর একটি কন্যা সন্তান হয়েছে। তারপর বর্ষায় আর কোন খোঁজ খবর আমি রাখেনি। এমনকি বর্ষা যখন মাঝেমধ্যে আমাদের বাড়িতে আসতো তখন তার আসার কথা শুনে আমি হয় বাড়ি থেকে অন্য কোথাও চলে যেতাম অথবা নিজ কক্ষের ভিতর ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকতাম।


IMG_20220719_182950_103.jpg

আমি পরবর্তীতে জানতে পেরেছিলাম যে আমার প্রেমের ব্যর্থতার সম্পূর্ণ দোষ বর্ষা আমাকে দিয়েছিল। কিন্তু বর্ষার এসব কোন কথায় আমি মাথায় নিতাম না। আমি আমার মত শুধুমাত্র লেখাপড়া করে গেছি এবং সামনের দিকে তাকিয়েছি। অবশেষে লেখাপড়া শেষ করার পরপরই ২০১৮ সালের ১১ জানুয়ারি একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরিতে যোগদান করি। আমি এখনো সেই চাকরিরত অবস্থায় আছি। দীর্ঘদিন পর বর্ষা'র সাথে আমার শেষবার দেখা হয়েছিল ২০২০ সালের মে মাসে আমাদের গাংনী শহরে স্মরণিকা শপিংমলে। তখন করোনাভাইরাসের মহামারী চলছিল। তাই দুজনের মুখেই মাক্স ছিল। বর্ষা আমাকে দেখেই বলেছিল, "কেমন আছো"? আমি আমার মাথাটা নেড়ে উত্তর দিলাম এবং তার চোখের দিকে একটু তাকিয়ে রইলাম। পরে আমি বর্ষাকে চিনতে পারলাম। কিন্তু ততক্ষণে সে চলে গেল।


সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আমি আমার অতীত স্মৃতি কাউকে জানাতে একেবারেই পছন্দ করি না। কিন্তু আজ আমার জীবনের প্রথম প্রেমের অনুভূতি আপনাদের নিকট শেয়ার করে আমার মনটা বেশ হালকা লাগছে। তাই এত সুন্দর একটি প্রতিযোগিতা আয়োজন করার জন্য আমি আমার প্রিয় দাদাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।

১০% বেনিফিসারী প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য এবং ৫% বেনিফিসারি এবিবি-স্কুল এর জন্য।

Sort:  
 2 years ago 

অসমাপ্ত প্রেম । পরিণতি পেলে অবশ্য এর আগেই আমরা ভাবীর দেখা পেয়ে যেতাম । তবে ঘটনা শুনে মনে হচ্ছে এটা আমার কোন ক্লাসমেট ছিল সে । এতদিন পর জানার সুযোগ পেলাম । খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে লেখার কারণে পরতে ও খুব ভাল লাগলো । ধন্যবাদ দাদু অজানা প্রেমের কাহিনি আমাদের জানার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.029
BTC 66244.62
ETH 3320.00
USDT 1.00
SBD 2.70