দুর্ঘটনায় একটি আকস্মিক মৃত্যু, একটি পরিবারের অপূরণীয় ক্ষতি।

in আমার বাংলা ব্লগ6 months ago



হ্যালো বন্ধুগণ,
আমি @bidyut01. একজন বাঙালি ব্লগার।সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।



আজ বুধবার। ০৩রা জানুয়ারি, ২০২৩ ইং।


আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি। আজকে আমি আরো একটি নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি।

death-valley-3133502_1280.jpg

Source



সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আমরা মানুষ জাতি, মহান সৃষ্টিকর্তার সকল সৃষ্টির মধ্যে আমরাই সেরা জীব। সৃষ্টির সেরা জীব হওয়া সত্ত্বেও আমাদের মৃত্যু অনিবার্য। পৃথিবীর বুকে যে মানুষ যত বড়ই রাজা-বাদশা হোক না কেন কিংবা খুবই নিম্ন পদমর্যাদার মানুষই হোক না কেন, সকল মানুষকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর এটাই চিরন্তন সত্য কথা। এই চিরন্তন সত্যকে মিথ্যায় ঢেকে ফেলার মতো ক্ষমতা মানুষের নেই। তাই আমাদেরকে সর্বদা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কেননা মৃত্যু আমাদের একেবারেই সন্নিকটে।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, মৃত্যুর সংবাদ সবসময় আমাদের বেদনা দেয়। কিন্তু তারপরও কিছু মৃত্যু আছে যেগুলো সহনীয় হয়। যেমন, একেবারে বৃদ্ধ বয়সে যে সমস্ত মানুষেরা বিছানাগত হয়ে মৃত্যুর জন্য ছটফট করে তাদের মৃত্যু হলে তাদের পরিজনদের মনে তেমন আফসোস থাকে না। কিন্তু একটি পরিবারের উপার্জনকারী মানুষের যখন হঠাৎ মৃত্যু হয় তখন সেই পরিবারের যেমন অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়, ঠিক তেমনি তার স্বজনদের মধ্যে দুঃখ, বেদনা ও হতাশার কোন শেষ থাকে না। তাই এরকম মৃত্যু আমাদের কারো কাম্য নয়। কিন্তু তারপরও প্রকৃতির নিয়মে এরকম আকস্মিক মৃত্যু আমাদের দেখতে হচ্ছে এবং যে পরিবারে আকস্মিক মৃত্যু হচ্ছে সেই পরিবারের স্বজনদের আহাজারি সহ্য করতে হচ্ছে। কারণ মানুষ মাত্রই মরণশীল, আর এটাই চিরন্তন সত্য কথা।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আমার চাচা একজন মাঝামাঝি বয়সের মানুষ ছিলেন। তিনি ছিলেন আমাদের এলাকার কাজিপুর ডিগ্রী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক। তিনি অত্যন্ত ভদ্র এবং জ্ঞানী মানুষ ছিলেন। একই সাথে তিনি ছিলেন অত্যন্ত পরপোকারী এবং ধর্মভীরু মানুষ। তিনি গত ০১/০১/২০২৪ইং তারিখে রাত নয়টার দিকে তার বাসভবন বামুন্দি থেকে গাংনী বাজারের উদ্দেশ্যে নিজ বাইকে চড়ে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু আসার পথে বামুন্দি এবং গাংনীর মাঝামাঝি পথে এসে অন্য একটি বাইকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছিল। ঘটনা স্থানে আমার চাচা মাথায় প্রচন্ড আঘাত পায় এবং উক্ত স্থানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তারপর তাকে দ্রুত কুষ্টিয়া হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানকার ডাক্তাররা প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পরে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।

তারপর ওই রাতেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয় এবং ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তারপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রিপোর্ট আসে বাইক থেকে পড়ার সাথে সাথে আমার চাচার স্ট্রোক হয়ে গেছে এবং মাথার সামনের অংশে প্রচন্ড আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। তারপর ডাক্তার বলেছিল অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার চাচার জ্ঞান ফিরলো না। গতকাল বিকেল তিনটার সময় তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন। শেষ হয়ে গেল একটি তরতাজা প্রাণ। এতিম হয়ে গেল দুটি নাবালক বাচ্চা। অকালে স্বামীহারা হয়ে গেল নাবালক দুই সন্তানের জননী। সকল আত্মীয়-স্বজনদের শোকে ভাসিয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন আমার চাচা।

আজ সকাল ১১টার সময় আমার চাচার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আমার চাচার জানাজায় হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি হয়েছিল। এমনকি আমাদের গাংনী উপজেলার মাননীয় এমপি মহোদয় পর্যন্ত জানাজায় উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত এমন কোন মানুষ ছিল না যে তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়ায় আমার চাচার জন্য। আমার চাচা যে মানুষের নিকট অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন তার বাস্তব প্রমাণ ছিল আজকে তার জানাজায়। যাহোক, আপনারা সবাই আমার চাচার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন, এবং আমার চাচার জন্য দোয়া করবেন যাতে মহান আল্লাহ আমার চাচাকে নিঃশর্তে জান্নাত দান করেন, আমিন।


ছবিটি আমার চাচার ফেসবুক আইডি থেকে নেওয়া হয়েছে।
FB_IMG_1704188610726.jpg

প্রফেসর রিয়াজ আহমেদ (রাষ্ট্রবিজ্ঞান)। কাজিপুর ডিগ্রী কলেজ, গাংনী, মেহেরপুর। মৃত্যু:-০২/০১/২০২৪ ইং (বিকেল তিনটা)।



১০% বেনিফিসারী প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য বরাদ্দ।



Sort:  
 6 months ago 

আকস্মিক মৃত্যু গুলো আসলে সারা জীবনের কান্না আপনি ঠিক বলছেন। এভাবে যদি মৃত্যুবরণ করে তাহলে পরিবারের উপর খুব বেশি খারাপ প্রভাব পড়ে। কারণ একটা মানুষ যখন তার পরিবারের সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণ করে। সেই মানুষের উপর নির্ভরশীল হয় তাহলে এভাবে অকালে চলে গেলে পরিবারের সদস্যরা অনেক বেশি অসহায় হয়ে পড়েন। কিন্তু যখন একদম বৃদ্ধ মানুষ কষ্ট পেয়ে মরেন আসলে অতটা কষ্ট পায় না মানুষ। বিস্তারিত পড়ে অনেক খারাপ লাগলো আপনার চাচার জন্য। ওনার পরিবারের উপর সৃষ্টিকর্তা সহায় হবেন।

 6 months ago 

খুব দুঃখজনক ঘটনা।আসলে এমন মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না।আপনার চাচার পরিবারের জন্য খুব খারাপ লাগছে।আপনার চাচা খুব ভালো মনের মানুষ ছিলেন কিন্তুুু তার মৃত্যু এভাবে মেনে নেয়া যায় না।সৃষ্টিকর্তা ওনার পরিবারের সবাইকে শোক কাটিয়ে ওঠার শক্তি দিক।

 6 months ago 

আজকাল আমাদের দুর্ঘটনা বেড়াতে আছে হঠাৎ কেন জানিনা অনেকেই আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অর্থাৎ আকস্মিক মৃত্যুতে পরিণত হচ্ছে। এই আকস্মিক মৃত্যুর কথা মনে পড়লেই আমার প্রথমে যার নাম ভেসে ওঠে তিনি হচ্ছেন আমার শ্রদ্ধেয় স্যার সালাউদ্দিন স্যারের কথা। তার স্মৃতিচারণা আজও রয়েছে এ হৃদয়ে গাথা। জি স্যার আপনিও ঠিক বলেছেন যে দুর্ঘটন একটি আকর্ষণিক মৃত্যু একটা পরিবারের অপূরনীয় ক্ষতি। আজকাল দেখি খুব বেশি হচ্ছে সেটা হচ্ছে মোটরবাইক এক্সিডেন্ট। তবে আপনার পোস্ট করে জানতে পারলাম আপনার চাচা জান মোটরসাইকেল থেকে পড়ার সাথে সাথে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছেন । ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।ধন্যবাদ আপনাকে পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.029
BTC 57839.82
ETH 3132.70
USDT 1.00
SBD 2.43