আম্মাকে এন্ডোস্কপি করাতে কুষ্টিয়া সরকারি হাসপাতালে পুরো একটি দিন কাটালাম।

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago



হ্যালো বন্ধুগণ,
আমি @bidyut01. একজন বাঙালি ব্লগার।সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।



আজ বৃহস্পতিবার। ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ ইং।


আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি। আজকে আমি আরো একটি নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি।

IMG_20240418_095905_053.jpg



সুপ্রিয় বন্ধুগণ, বেশ কয়েক মাস যাবত আমার মা শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ। বিশেষ করে পেটে আলসার জনিত সমস্যা এবং পেটে পলিপ সৃষ্টি হওয়ার কারণে আমার মা দিন দিন অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। মাকে সুস্থ করে তোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। একই সাথে নিয়মিত ভাবে চিকিৎসা করানো হচ্ছে আমার মাকে। আজকে কুষ্টিয়া সরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলাম আমার মাকে পুনরায় এন্ডোস্কপি করানোর জন্য, ডক্টর আরিফুল ইসলাম স্যার এন্ডোসকপি করিয়ে থাকেন কুষ্টিয়া সরকারি হাসপাতালে। যাহোক, সকাল সাড়ে নয়টার সময় কুষ্টিয়া সরকারি হাসপাতালে পৌঁছেছিলাম। তারপর একটি টিকিট ক্রয় করে ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল। ডক্টর আরিফুল ইসলাম স্যার তখন রাউন্ডে ছিলেন।

IMG_20240418_095905_053.jpg


ডক্টর আরিফুল ইসলাম স্যারের অপেক্ষায় এন্ডোসকপি রুমের পাশে পুরো দুই ঘন্টা আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছিল। আর কুষ্টিয়া সরকারি হাসপাতালের ভিতরে এবং চারপাশে বিভিন্ন প্রকারের রোগীর উপচে পড়া ভিড় দেখে বেশ খারাপ লেগেছিল আমার। আমরা ছিলাম হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায়। দ্বিতীয় তলায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অনুমান করলাম একমাত্র দ্বিতীয় তলা ভবনে কমপক্ষে হলেও ১০০ থেকে দেড়শ রোগী রয়েছে। অথচ হাসপাতালে মাত্র আড়াইশোটি বেড রয়েছে। ছোট থেকে বৃদ্ধ সব রকম বয়সের রোগীদের দেখা মিলেছিল। আর অতিরিক্ত রোগীর চাপের কারণে কুষ্টিয়া সরকারি হাসপাতালের পরিবেশটা একেবারেই জঘন্য। হাসপাতালের পরিবেশটি যেমনি নোংরা ঠিক তেমনি চারিদিক থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। এতে রোগীরা যেমন কষ্ট পাচ্ছে ঠিক তেমনি রোগীর সাথে আসা মানুষদের রোগা আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।

IMG_20240418_101014_457.jpg

IMG_20240418_101055_140.jpg



যাহোক মায়ের সাথে ছিলাম আমি এবং আমার ছোট ভাই সুমন। আমরা তিনজনেই মুখে মাক্স পরিহিত অবস্থায় ছিলাম। একই সাথে জীবাণু নাশক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করেছিলাম। যাহোক এগারোটার পরে রাউন্ড শেষ করে ডক্টর আরিফুল ইসলাম স্যার তার চেম্বারে আসলেন। তারপরে প্রথমে তিনি বেশ কয়েকটি রোগী দেখে নিলেন। এরপর শুরু হলঝ রোগীদের এন্ডোসকপি করানোর কার্যক্রম। যেহেতু আমার মাকে পূর্বে একবার এন্ডোসকপি করানো হয়েছে তাই প্রথম থেকে আমার মা বেশ ভয় করছিল। তাই ডাক্তারকে আমি অনুরোধ করেছিলাম আমার মাকে প্রথমে এন্ডোসকপি করানোর। কিন্তু ডাক্তার সাহেব উত্তর দিলেন সিরিয়াল অনুসারে এটা করানো হবে। তাই আমার মায়ের আগে একজন বৃদ্ধ পুরুষ রোগীকে এন্ডোস্কোপি করানোর কার্যক্রম শুরু করলেন।

IMG_20240418_113733_543.jpg


পুরুষ রোগীকে এন্ডোসকপি করানোর দৃশ্য দেখে আমার মা আরও বেশি ভয় পেয়ে গেল। মায়ের ভয় পাওয়া দেখে আমরা দুই ভাই মাকে বারবার সাহস দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের মনের মধ্যেও এক প্রকার ভয় কাজ করছিল। কারণ আমার মা শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ এবং দুর্বল হয়ে পড়েছে। এরপর সিরিয়াল অনুসারে আমার মাকে এন্ডোসকপি করানোর কার্যক্রম শুরু হলো। এন্ডোসকপি করানোর সময় আমার মায়ের পাকস্থলীর অবস্থাটা আমরা দুই ভাই ডাক্তারের সাথে এন্ডোসকপি মেশিনের সাথে লাগানো স্কিনে দেখতে লাগলাম। আসলে এন্ডোসকপি করা অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। তার উপরে আমার মা বেশ বয়স্ক একজন মানুষ এবং শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ। তাই আমার মা খুবই কষ্ট পেয়েছিল এন্ডোসকপি করার সময়। যাহোক, এন্ডোসকপি শেষ করার 10 থেকে 15 মিনিটের মধ্যেই রিপোর্ট চলে আসলো।

IMG_20240418_203234_142.jpg


রিপোর্ট দেখে ডাক্তার সাহেব বললেন, পাকস্থলীতে তিনটা পলিপ রয়েছে এবং পলিপগুলো বেশ বড় হয়ে গেছে। তাই খুব শীঘ্রই অপারেশনের মাধ্যমে পলিপগুলো দূর করতে হবে। ডাক্তার সাহেব আরো বললেন, আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই অপারেশন করে পলিপ দূর না করতে পারলে পরবর্তীতে জটিল সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। ডাক্তারের কথা শুনে আমি বলেছিলাম, স্যার তাহলে খুব দ্রুত আমার মায়ের অপারেশনের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু ডাক্তার বললেন একটা পলিপ খুবই খারাপ জায়গায় অবস্থান করছে, এটা আমাদের জন্য বেশ রিক্স হয়ে যাচ্ছে অপারেশন করা। যারা খুবই ভাল স্পেশালিস্ট তাদের দিয়ে এই অপারেশনটি করাতে হবে। তারপর ডাক্তার সাহেব রাজশাহী পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর একটি ডাক্তারের ঠিকানা লিখে দিলেন এবং মোবাইল ফোন থেকে ঢাকার একজন ভালো ডাক্তারের ঠিকানার ছবি তুলে দিলেন।

IMG_20240418_123714_785.jpg

IMG_20240418_203303_860.jpg



একই সাথে পূর্বের প্রেসক্রিপশন অনুসারে ওষুধ খাওয়ার নির্দেশনা দিলেন। পাশাপাশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিলেন, বিশেষ করে আমার মা যেন তেলে ভাজাপোড়া এবং চর্বি জাতীয় খাবার না খায় সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে বললেন। একই সাথে আমার মাকে স্যালাইন দেওয়ার পরামর্শ দিলেন। এরপর ডাক্তার দেখানো শেষ করে আমরা বাড়ির দিকে রওনা হলাম। এখন আমার মাকে সুস্থ করার জন্য খুব দ্রুত অপারেশন করাতে হবে। কিন্তু আমার মায়ের শারীরিক অবস্থা বর্তমানে খুবই খারাপ অর্থাৎ শারীরিকভাবে আমার মা খুবই দুর্বল। কিন্তু তারপরেও আমার মাকে সুস্থ করানোর জন্য আমি যথার্থ পদক্ষেপ গ্রহণ করবো ইনশাল্লাহ। আর আপনারা সবাই আমার মায়ের জন্য সৃষ্টিকর্তার নিকট দোয়া করবেন যাতে সকলের দোয়ায় মহান সৃষ্টিকর্তা আমার মায়ের প্রতি সদয় হন। আসলে মা ছাড়া পৃথিবীতে আপন মানুষ কেউ নেই। মা যতক্ষণ বেঁচে আছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের পায়ের নিচে মাটি আছে এবং আমাদের মাথার উপর বট গাছের ছায়া আছে। তাই মহান আল্লাহতালার উপর ভরসা রেখে এবং আপনাদের সকলের দোয়া নিয়ে আমার মাকে সুস্থ করে তোলার জন্য আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ। তাই আপনারা সবাই আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন যাতে আমি আমার মায়ের সুস্থ শরীরের হাসি মাখা মুখটি দেখতে পারি।🙏🙏



আমার পরিচয়।

IMG_20220709_132030_108.jpg



আমার নাম মোহাঃ নাজিবুল ইসলাম (বিদ্যুৎ)। আমি বাংলাদেশের নাগরিক এবং আমি অতিশয় ক্ষুদ্র জ্ঞানের একজন মানুষ। আমি মেহেরপুর জেলার ছোট্ট একটি গ্রামে বসবাস করি। আমি ২০২১ সালের আগস্ট মাসে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে কাজ শুরু করার মধ্য দিয়ে আমার স্টিমিট প্ল্যাটফর্মে যাত্রা শুরু হয়। আমার স্টিমিট আইডি নাম (#bidyut01). প্রথম প্রথম স্টিমিট প্ল্যাটফর্মের কাজ কিছুই পারতাম না। কিন্তু আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সম্মানিত ফাউন্ডার, এডমিন এবং মডারেটরদের সার্বিক সহযোগিতায় খুব সহজেই স্টিমিট প্ল্যাটফর্মের কাজ গুলো সম্পর্কে জানতে পারি ও শিখতে পারি। এরপর থেকে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি সম্পর্কে আমার এলাকাতে আমি ব্যাপকভাবে প্রচার করি। যার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে আমার এলাকার অনেকেই এখন আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সদস্য। যাহোক, এখন আমার মাতৃভাষায় লেখালেখি করতে আমার খুবই ভালো লাগে। যদিও আমার প্রধান পেশা শিক্ষকতা এবং পাশাপাশি মাছের চাষাবাদ করা। আমার পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ৮ জন। আমার পরিবারের প্রধান হলো আমার বাবা ও মা। আমার পছন্দের কাজ সমূহ হলো-ছবি অঙ্কন করা, যেকোনো জিনিসের অরিগ্যামি তৈরি করা, বিভিন্ন প্রকারের রেসিপি তৈরি করা, কবিতা লেখা, ভ্রমণ করা ও ফটোগ্রাফি করা। আর একটু সময় সুযোগ পেলেই পুরনো দিনের মুভি গুলো দেখতে আমি খুবই পছন্দ করি।
১০% বেনিফিসারী প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য বরাদ্দ।

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 2 months ago 

সর্বদা মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট দোয়া কামনা করি আল্লাহ যেন আমার আম্মাকে পরিপূর্ণ সুস্থ করে দেন এবং পুনরায় হাসিখুশি অবস্থায় আমাদের সাথে পথ চলার সুযোগ করে দেন। ডাক্তার অপারেশন করতে বলেছে ঢাকাতে অথবা রাজশাহীতে। দেখি আল্লাহ কবে কখন অপারেশন করার সুযোগ দেন এবং আম্মাকে সুস্থ করেন।

 2 months ago 

আপনার ছোট ভাইয়ের থেকে আপনার মায়ের অসুস্থতা সম্পর্কে শুনেছিলাম। ব‍্যাপার টা সত্যি দুঃখজনক। পুরোটা পড়ে বেশ খারাপ লাগছে আমার। সৃষ্টিকর্তা যেন আপনার মা কে দ্রুত সুস্থ্য করে দেন। এন্ডোসকপি ব‍্যাপার টা বেশ ভয়েরই। যেভাবে মুখ দিয়ে নল দেয় ভয় পাওয়া স্বাভাবিক।

 2 months ago 

মহান সৃষ্টিকর্তার নিকটে আমরা দোয়া প্রার্থী আল্লাহ যেন আমাদের আম্মাকে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন দান করেন ও আপনাদের সকলের নিকটে দোয়া চাই আমাদের আম্মার জন্য। অপারেশন করার পরে তিনি যেন স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন।

 2 months ago 

সফল ভাবে আপনার আম্মুর এন্ডোস্কপি করেছেন,শুনে অনেক ভালো লাগলো। আসলে যে কোন রুগিদের পাশে থেকে তাদেরকে সাপোর্ট দিতে হয়। তাহলে তাদের ভয়টা কম লাগে। যেহেতো কুষ্টিয়ার ডাক্তার রাজশাহীতে যেতে বলছে যত তারাতারি সম্ভব পলিপগুলো অপারেশন করে ফেলুন। আপনার আম্মুর সুস্থতা কামনা করি। ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.12
JST 0.028
BTC 65160.59
ETH 3545.92
USDT 1.00
SBD 2.43