রেসিপি:-আখের গুড় দিয়ে নারিকেলের নাড়ু তৈরি।

in আমার বাংলা ব্লগlast year



হ্যালো বন্ধুগণ,
আমি @bidyut01. একজন বাঙালি ব্লগার।সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।



আজ শুক্রবার। ০৫ ই মে , ২০২৩ ইং।


আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি। আজকে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের নিকট হাজির হয়েছে।

Picsart_23-05-05_22-13-13-937.jpg



সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আমরা বাঙালি জাতি। আর বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের অনেকগুলো ঐতিহ্যবাহী খাবার রয়েছে। যেমন, বিন্নি ধানের খই, মুড়কি, মোয়া, আখের গুড় দিয়ে তৈরি খাজা, বিভিন্ন ধরনের নাড়ু ইত্যাদিসহ রয়েছে আরো অনেক ধরনের খাবার। কিন্তু বর্তমান সময়ে বিদেশি বিভিন্ন খাবারের প্রভাবে আমাদের দেশীয় ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো একেবারেই বিলুপ্তির পথে। বর্তমান সময়ের অধিকাংশ ছেলে-মেয়েরা আমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোর সঠিক নামই জানে না। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোর মধ্যেই আমাদের দেশের পুরনো ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিহিত রয়েছে। শুধু তাই নয়, আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে খাবারের প্রকৃত সুগন্ধ ও স্বাদ।

নারিকেলের নাড়ু আমাদের দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় খাবার। বিশেষ করে অতীতে আমাদের দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে খুবই প্রিয় একটি খাবার ছিল নারিকেলের নাড়ু। আমি ছোটবেলায় দেখেছি, প্রতিদিন সকালে আমার পরিবারের বড়রা নারিকেলের নাড়ু এবং মুড়ি দিয়ে সকালের নাস্তা করতো। আবার বাড়িতে হঠাৎ আত্মীয়রা আসলে প্রথমেই তাদেরকে নারিকেলের নাড়ুর সাথে মুড়ি খেতে দেওয়া হতো। শুধু তাই নয়, ছোটবেলা আমি দেখেছি যে, আমার ফুপুরা যখন শ্বশুর বাড়িতে যেত, তখন আমার দাদি অনেকগুলো নারিকেলের নাড়ু সাথে বেঁধে দিতো। তখনকার সময় এটা ছিল এক ধরনের কালচার। কিন্তু সময়ের বিবর্তনের ফলে অতীতের সেসব কালচার কালের গর্ভেই হারিয়ে গেছে। যাহোক, আজ আমি আপনাদের নিকট ঐতিহ্যবাহী নারিকেলের নাড়ু তৈরির রেসিপি শেয়ার করছি। আমি আশা করি, আমার আজকের রেসিপিটি আপনাদের নিকট অনেক অনেক ভালো লাগবে।



সুপ্রিয় বন্ধুগণ, চলুন এক নজরে দেখে আসি আখের গুড় দিয়ে নারিকেলের নাড়ু রেসিপি তৈরির জন্য আমার ব্যবহারিত বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো :-

উপাদানপরিমাণ
পাকা (ঝুনো) নারিকেল০২ টা
আখের গুড়৭৫০ গ্রাম
আতপ চালের গুড়াপরিমাণ মতো
লবণপরিমাণমতো


আখের গুড় দিয়ে নারিকেলের নাড়ু রেসিপি'র প্রক্রিয়াগুলো নিম্নে ধাপে ধাপে উপস্থাপন করা হলো:

⬇️ ধাপ-০১:⬇️

IMG_20220926_093042_620.jpg

প্রথমেই পাকা নারিকেল গুলো সুন্দরভাবে কেটে নিয়েছিলাম।

⬇️ ধাপ-০২:⬇️

IMG_20220926_103149_450.jpg

IMG_20220926_103141_109.jpg

পাকা নারিকেল গুলো কুর্নি দিয়ে নারিকেলের ঝুরি বানিয়ে নিলাম।

⬇️ ধাপ-০৩:⬇️

IMG_20220926_103228_546.jpg

IMG_20220926_103240_700.jpg

পরিমাণ মতো আখের দানাদার গুড় সংগ্রহ করে নিলাম।

⬇️ ধাপ-০৪:⬇️

IMG_20220926_103337_269.jpg

IMG_20220926_103635_875.jpg

পরিমাণ মতো আখের গুড় গুলো কড়াই এর ভিতরে ঢেলে দিলাম।

⬇️ ধাপ-০৫:⬇️

IMG_20220926_104013_310.jpg

IMG_20220926_104018_457.jpg

তারপর চুলার আগুন হালকা পর্যায়ে রেখে আখের গুড় গুলো কষিয়ে নিলাম।

⬇️ ধাপ-০৬:⬇️

IMG_20220926_104111_652.jpg

কষিয়ে নেওয়া আখের গুড় গুলোর ভিতরে নারিকেলের ঝুরিগুলো ঢেলে দিলাম। তারপর পরিমাণ মতো লবণ দিয়ে দিলাম। তারপর একটি খুন্তি দিয়ে গুড়ের সাথে নারিকেলের ঝুরিগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে দিলাম।

⬇️ ধাপ-০৭:⬇️

IMG_20220926_104650_667.jpg

IMG_20220926_105509_184.jpg

আখের গুড়ের সাথে নারিকেলের ঝুরিগুলো মিশানোর পর চুলার আগুন মাঝামাঝি পর্যায়ে রেখে জ্বাল দেওয়া শুরু করলাম। কিছুক্ষনের মধ্যেই তৈরি হয়ে গেল নারিকেলের সুস্বাদু ক্ষীর। তারপর নারিকেলের ক্ষীরের মধ্যে পরিমাণ মতো আতপ চালের গুড়া দিয়ে দিলাম। নারিকেলের ক্ষীরের সাথে আতপ চালের গুড়াগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে দিলাম।

⬇️ ধাপ-০৮:⬇️

IMG_20220926_105951_149.jpg

আতপ চালের গুড়া মিশানোর পর পুনরায় আগুনের জ্বাল দেয়া শুরু করলাম। একটু পরেই তৈরি হয়ে গেল নারিকেলের পুর।

⬇️ ধাপ-০৯:⬇️

IMG_20220926_112303_322.jpg

IMG_20220926_112330_256.jpg

IMG_20220926_112247_215.jpg

নারিকেলের পুর গুলোর উপরে সামান্য পরিমাণ দারচিনির গুড়া ছিটিয়ে দিলাম। নারিকেলের পুর গুলো হালকা গরম থাকা অবস্থায় নাড়ু বানানো শুরু করেছিলাম। নারিকেলের পুর পরিমাপ মতো নিয়ে দুই হাতের তালুর মাঝখানের সাহায্যে গোলাকার নাড়ু বানানো শুরু করেছিলাম।

⬇️ শেষ ধাপ⬇️

IMG_20220926_112410_615.jpg

IMG_20220926_112415_509.jpg

IMG_20220926_112428_056.jpg

IMG_20220926_112444_030.jpg

গোলাকার নারিকেলের নাড়ুগুলো বানানোর শেষে খোলা বাতাসের জায়গায় কিছুক্ষণ রেখে দিয়েছিলাম। আর এভাবেই আমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার নারিকেলের নাড়ু তৈরি করেছিলাম।



অনেকদিন পরে নারিকেলের নাড়ু খেতে খুবই সুস্বাদ এবং মজাদার লেগেছিল। তাই আপনারা চেষ্টা করলে এ ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরি করতে পারেন। পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আমি আপনাদের নিকট কৃতজ্ঞ। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।





১০% বেনিফিসারী প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য বরাদ্দ।

Sort:  
 last year 

ঠিকই বলেছেন সময়ের সাথে সাথে যেন অতীতের সব কালচার গুলোই শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের নাড়ুগুলো খেতে আমার কাছেও অনেক ভালো লাগে। তবে তৈরি করা অনেক ঝামেলা ।আপনি আখের গুড় দিয়ে নাড়ুগুলো তৈরি করে রেখেছেন আমারতো দেখেই মনে হচ্ছে একটা একটা করে নিয়ে খেয়ে ফেলি। খুব ভালো লাগলো নাড়ুগুলো বানানো দেখে।

 last year 

খুবই চমৎকার মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

 last year 

সাধারণত পুজোর সময় প্রতিবছর মা নারকেল দিয়ে এ নাড়ুটা তৈরি করে থাকেন। আমার তো ভীষণ প্রিয় একটা খাবার এটা। তবে আমি গুড়ের থেকে চিনি দিয়ে তৈরি নাড়ু টাই বেশি পছন্দ করি। আপনার উপস্থাপনাটা অনেক ভালো লাগলো ভাই। খুব ইচ্ছে করছিল প্লেট থেকে তুলে নিয়ে দুটো খেতে 😊😊

 last year 
 last year 

ভাই আজকে আপনি দারুন একটি রেসেপি শেয়ার করলেন ৷ আসলে কি সময়ের সাথে সবকিছু পরিবর্তন যা প্রতিনিয়ত দেখছি ৷ সেই মনে পড়ে মুড়ির মোয়া,নারকেল নাড়ু এছাড়া মুড়কি ৷ তবে গ্রামে এখন আছে ৷ তবে শহরে এসব আর দেখে মেলে না ৷ তবে আজকে দারুন একটি ইউনিক রেসেপি শেয়ার করলেন ৷ দেখে তো জিভে জল এসে গিয়েছে ৷ আখের গুড় দিয়ে নারিকেলের নাড়ু তৈরি। দারুন হয়েছে ৷

 last year 

অনেক সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 last year 

একা একা নারিকেলের নাড়ু খাওয়া একেবারে অন্যায়। পেটের সমস্যা হয়ে যেতে পারে ভাইয়া। নাড়ু তৈরি করে আমাদেরকে দাওয়াত দিলেই হত। আমরাও নিজ দায়িত্বে চলে যেতাম। যাইহোক সুন্দরভাবে নারিকেলের নাড়ু তৈরির পদ্ধতি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন এজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

 last year 

আপু আপনি কাছে থাকলে আপনাকেও কিছুটা খেতে দিতাম। তবে এরকম সুস্বাদু খাবার একা একাই খেতে ভালো লাগে।

 last year 

ভাইয়া আপনার এই কথাটি আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে বিদেশী খাবারের প্রভাবে আমাদের দেশীয় খাবারগুলো বিলুপ্তির পথে আপনি ঠিকই বলেছেন । নাড়ুর সাথে ছোটবেলার অনেক স্মৃতি সবারই জড়িত আছে আমার মনে হয় । তবে এখন সে পরিমাণে নাড়ু দেখা যায় না । আপনার নারিকেলের নাড়ুর রেসিপিটি আমার কাছে বেশ ভালো লাগলো ।তবে আখের গুড় দিয়ে কখনো নাড়ু খাওয়া হয়নি । আপনার রেসিপিটি দেখে আমার ভীষণ লোভ লাগছে । কারণ নাড়ু আমার ভীষণ পছন্দের । ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য ।

 last year 

আপু, আমার পোস্টটি পড়ে খুবই গঠনমূলক মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 last year 

সত্যি বলেছেন ভাইয়া বিদেশি খাবারের প্রভাব আমাদের খাবার গুলো হারিয়ে যাচ্ছে। সত্যি এই নারকেলের নাড়ু এক সময় অনেক জনপ্রিয় ছিল সবারই ঘরে ঘরে তৈরি করা হত। কিন্তু এখন জনপ্রিয় আছে তবে ঘরে ঘরে তৈরি হয় না।নাড়ুগুলো দেখে অনেক ভালো লাগল। খেতে পারলে আরো ভালো লাগত হা হা হা। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটা রেসিপি শেয়ার করার জন্য।

 last year 

অনেক সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 last year 

আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের খাবারের মধ্যে অনেক গুলো খাবার আছে যেগুলোর মধ্যে নারকেল নাড়ু কিন্তু অন্যতম। আপনি বেশ মজার করে নারকেল নাড়ু তৈরি করেছেন দেখে তো খেতে ইচ্ছে করছে। নারকেল নাড়ু আমার অনেক প্রিয় একটি খাবার। অনেক ধন্যবাদ প্রিয় খাবারের রেসিপিটি শেয়ার করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 62706.80
ETH 2439.89
USDT 1.00
SBD 2.66