আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা দিবস উদযাপন।
হ্যালো বন্ধুগণ,
আমি @bidyut01. একজন বাঙালি ব্লগার।সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।
আজ বৃহস্পতিবার।২২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ইং।
আসসালামু আলাইকুম।
সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি। আজকে আমি আরো একটি নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি।
সুপ্রিয় বন্ধুগণ, রাঙা ফাল্গুনের রঙ্গিন আলো যখন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে, গাছের পুরনো পাতা ঝরে যখন গাছে গাছে নতুন পাতা গোজাতে শুরু করেছে, আম-লিচুর মুকুলের সুগন্ধে যখন পরিপূর্ণ হতে শুরু করেছে চারিদিক, রঙ্গিন ফুলেরা পাপড়ি ছড়িয়ে যখন সৌন্দর্য বিলিয়ে দিচ্ছে বাংলার প্রকৃতির মাঝে, দক্ষিণের মৃদু শীতল বাতাসে যখন বাংলা মায়ের মাথার চুল স্পর্শ করতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই বন্দুকের ভয়ংকর গুলির ঝনঝনানি শব্দ শুরু হলো, মুহূর্তের মধ্যে বাংলার দামাল ছেলেরা লুটিয়ে পড়লো বাংলা মায়ের কোলে, ঝরতে লাগলো অজস্র ফোটা রক্ত, মুহূর্তেই নিভে গেল তরতাজা প্রাণের আলো, বাংলা মায়ের বুকে মাথা রেখে শহীদ হলো বাংলার সেই মহানায়ক, মহাসাহসী ছেলেরা। যারা মায়ের ভাষা রক্ষা করতে গিয়ে জীবন উৎসর্গ করে রচনা করেছে মহাকাব্যিক ইতিহাস।
সুপ্রিয় বন্ধুগণ, গতকাল ছিল একুশে ফেব্রুয়ারি। যেটা আমাদের বাঙালি জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। এই দিনে আমাদের মায়ের ভাষাকে রক্ষা করতে গিয়ে আমাদের বড় ভাইয়েরা তাদের জীবনকে নির্দ্বিধায় বিসর্জন দিয়েছিলেন। তাই উক্ত দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। তাই আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে মহান ভাষা দিবস উদযাপন করেছি। গতকাল আমাদের বিদ্যালয়ের সকল ছাত্র-ছাত্রীসহ আমাদের বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক মন্ডলী ও কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন। আমরা সকাল পৌনে সাতটার সময় আমাদের বর্ণাঢ্য রেলি আরম্ভ করেছিলাম। তখন আমাদের সকলের মুখে ছিল প্রভাতফেরির গান। আমাদের সকল ছাত্র-ছাত্রীসহ আমরা শিক্ষক মন্ডলী সকলেই গেয়েছিলাম মধুর সুরে প্রভাতফেরীর গান।"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি?" এই প্রভাতফেরির গান উচ্চারণ করার সাথে সাথে আমার পুরো শরীর শিহরিত হয়ে উঠলো। মুহূর্তের মধ্যেই আমার শরীরের প্রতিটি পশমের গোড়া ফুলে উঠলো। ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর ভালোবাসায় আমার মন পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো।
ভাষা শহীদদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা কখনোই শেষ হবে না এবং আমরা কখনোই তাদের ভুলতে পারবো না। আমরা তাদেরকে কেমন করে ভুলবো? তারা তো মিশে আছে প্রতিদিনের সূর্য উদয়ের আলোর সাথে, তারা তো মিশে আছে সকালের শিশিরের সাথে, তারা তো মিশে আছে হৃদয় শীতল করা ঠান্ডা হাওয়ার সাথে, তারা তো মিশে আছে আমার বাংলা মায়ের সকল সন্তানের রক্তে, তারা তো মিশে আছে বাংলার সবুজ শ্যামল প্রকৃতির মাঝে, বাংলার প্রতিটি ফুলের সৌন্দর্যের মাঝে, তারা তো মিশে আছে বাংলার প্রতিটি কবিতা ও গানের মাঝে, তারা তো মিশে আছে আমার বাংলা ভাষার প্রতিটি অক্ষরের মাঝে। তাই পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশের মানচিত্র যতদিন আছে ততদিনই স্বর্ণ অক্ষরে লেখা থাকবে আমাদের ভাষা শহীদদের নাম এবং তাদের অবদান।
মহান ভাষা দিবস উদযাপনে আমার সব থেকে ভালো লেগেছিল আমার কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের মধুর আচরণ দেখে। তারা সকলেই খালি পায়ে, হাতে ফুল ও বাংলা মায়ের পতাকা নিয়ে ভাষা শহীদের প্রতি অফুরন্ত সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রদর্শন করেছে। আমার ছাত্র-ছাত্রীরা একত্রিত হলে কত প্রকারে হাসাহাসি করে, একে অপরের সাথে ঠাট্টা করে, একটু একে অপরের সাথে ঠেলাঠেলিও করে। কিন্তু গতকাল অর্থাৎ মহান ভাষা দিবসের দিন আমার ছেলে-মেয়েরা কত নম্র, কত ভদ্র আচরণ দেখালো, যেটা দেখে আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছিলাম ও গর্বিত হয়েছিলাম। কারণ ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের সাথে সাথে আমার সকল ছাত্র-ছাত্রীর ভিতরে স্বদেশপ্রেম জাগ্রত হয়েছে। আর এটাই তো আমরা চাই।
আমরা যেমন মহান ভাষা দিবস পালন করেছি, ঠিক তেমনি আমাদের মতো বিশ্বের প্রতিটি স্বাধীন দেশ মহান ভাষা দিবস পালন করেছে। বিশ্বের প্রতিটি স্বাধীন দেশ স্মরণ করেছে বাংলা মায়ের সেই দামাল ছেলেদের আত্মত্যাগের কথাগুলো। বিশ্বের প্রতিটি দেশ বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রদর্শন করেছে আমাদের ভাষা শহীদদের প্রতি। যেটা আমাদের ভাষা শহীদদের জন্য এবং আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত গর্বের, অত্যন্ত গৌরবের, অত্যন্ত অহংকারের ও সম্মানের। যাহোক, মহান ভাষা দিবসের দিন আরো অনেক ধরনের কথা মনে আসতে লাগলো এবং ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতি মনের মধ্যে জেগে উঠেছিল। আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নিয়ে গ্রাম ঘুরিয়ে পুনরায় আমাদের স্কুল প্রাঙ্গনে হাজির হয়েছিলাম। তারপর সকলেই হাত মুখ ধুয়ে পবিত্র হয়ে আমাদের বিদ্যালয়ের হলরুমে বসে ছিলাম। তারপর মহান ভাষা দিবস উপলক্ষে সাধারণ বক্তৃতা করেছিলাম। এরপর সকলেই মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারের দুই হাত তুলে ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছিলাম। আর এভাবে আমরা ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে মহান ভাষা দিবস পালন করেছি।
সুপ্রিয় বন্ধুগণ, অনেকগুলো তরতাজা প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা আজ সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই আমরা সব সময় আমাদের মাতৃভাষাকে সম্মান করবো এবং মাতৃভাষাকে সুস্পষ্টভাবে উচ্চারণ করবো। আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে, যাতে কেউ কখনোই আমাদের মাতৃভাষাকে বিকৃত না করতে পারে। পাশাপাশি আমাদের মাতৃভাষাকে আরও বেশি উন্নত করার চেষ্টা করতে হবে এবং আমাদের মাতৃভাষাকে বিশ্বের সকল প্রান্তে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। একই সাথে আমাদের মহান ভাষা শহীদদের প্রতি সবসময় বিনম্র শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে এবং তাদের বীরত্তের কথাগুলো সকল প্রজন্মের নিকটে পৌঁছে দিয়ে সকলকে স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। পরিশেষে সকল ভাষা শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে এখানেই শেষ করছি, আল্লাহ হাফেজ।
#februarytwentyone #greatlanguageday #celebration #steemexclusive #krsuccess #amarbangla-blog #bangladesh
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
ঠিকই বলেছেন ভাই ভাষা শহীদদের প্রতি ভালোবাসা শ্রদ্ধা শেষ হবার নয় কারণ আমরা যে ভাষায় কথা বলছি সেই ভাষার রক্ষার্থে তারা নিজেদের জীবনকে বিলিয়ে দিয়েছে।
গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
জী ভাইয়া পৃথিবীতে আমরা এক মাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য আন্দোলন করতে হয়েছে। আমাদের ভাইয়েরা ভাষার জন্য নিজের জীবন দিয়েছে। আপনার স্কুল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানায়। তারা ভাষা শহীদদের স্বরন করেছে। ধন্যবাদ।