কুষ্টিয়া সরকারি হাসপাতালে রোগী নিয়ে একটি রাত অতিবাহিত করার তিক্ত অভিজ্ঞতা।
হ্যালো বন্ধুগণ,
আমি @bidyut01. একজন বাঙালি ব্লগার।সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।
আজ সোমবার। ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ইং।
আসসালামু আলাইকুম।
সুপ্রিয় বন্ধুগণ, এইতো কয়েকদিন আগে আমার মেজো মামা আমাদের মেহেরপুর শহর থেকে বাসে চড়ে গাংনীতে আসার সময় এক প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছিল। চলন্ত বাসে প্রথমে আমার মামাকে আতর জাতীয় সুগন্ধ শুকিয়ে প্রথমে তাকে জ্ঞানশূন্য করেছিল। তারপরে প্রতারক চক্র আমার মামার সাথে কি করেছিল সেটা আমার মামা আর বলতে পারে না। মামাকে অজ্ঞান করে তার কাছে থাকা এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকা পকেট কেটে বের করে নিয়েছিল। তারপর গাংনী বাস স্ট্যান্ডে যখন বাস থামলো তখন অনেকেই আমার মামার মুখ থেকে অঝরে লালা ঝরতে দেখে এবং অজ্ঞান অবস্থা দেখে দ্রুত গাংনী সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেছিল স্থানীয় লোকেরা।
আমরা খবর পেয়ে খুব দ্রুত গাংনী সরকারি হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলাম। তারপর সেখানকার ডাক্তারদের পরামর্শ মতো সেদিন সন্ধ্যার সময় অ্যাম্বুলেন্সে করে মামাকে নিয়ে গিয়েছিলাম কুষ্টিয়া সরকারি হাসপাতালে। হাসপাতালে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত প্রায় আটটা বেজে গেছিল। তারপর জরুরি বিভাগে ঢোকাতে কয়েকজন নার্স এসে নাম মাত্র আমাদেরকে সাহায্য করলো। তারপরেই সেই নার্স আমাদের কাছে চেয়ে বসলো তাদেরকে ২০০ টাকা দিতে হবে। মামাকে নিয়ে অত্যন্ত উত্তেজিত এবং দুশ্চিন্তায় ছিলাম, তাই কোন কথা না বাড়িয়ে তাদের ফকিরের মতো পেতে রাখা হাতে দুইশো টাকা দিয়ে দিলাম। আর কুষ্টিয়া সরকারি হাসপাতালে রোগীদের এতো পরিমানে চাপ যে সেখানে বেড পাওয়ার কোন উপায় নেই। যাহোক দ্রুত ছুটে গেলাম ডাক্তার ডেকে আনার জন্য কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখলাম কোন ডাক্তার নেই। শুধুমাত্র জরুরী বিভাগে প্যারা মেডিকেলের ডাক্তার রয়েছে। সেই ডাক্তারের পরামর্শ মতো মামাকে স্যালাইন দেওয়া হলো।
তারপর রাত সাড়ে দশটার সময় যখন বড় ডাক্তার রাউন্ডে এলেন তখন মামার বিষয়টি পুরো শুনে নতুন করে স্যালাইন ও ইনজেকশন লিখে দিলেন। তারপর সেগুলো আমার মামার শরীরে দেওয়া হলো। ডাক্তার সাহেব বললেন, আগামীকাল সকাল ছয়টা থেকে সাতটার মধ্যে যদি জ্ঞান না আসে তাহলে খুব দ্রুত রাজশাহীতে নিয়ে যাবেন। ডাক্তারের মুখে এরকম কথা শুনে আমরা সকলে অত্যন্ত দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। কারণ আমার মামার শরীরে আবার ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে। আবার বয়স মোটামুটি ৫০ এর উপরে চলে গেছে তাই দুশ্চিন্তা হওয়াটাই স্বাভাবিক। তারপর ডাক্তার সাহেব বললেন রাউন্ড শেষে পুনরায় আপনার মামাকে আমি আরো একবার দেখে যাবো। রাত পৌনে বারোটার সময় ডাক্তার সাহেব পুনরায় এসে মামার বুকে এবং বুকের আশপাশে কল লাগিয়ে বেশ কয়েকবার পরীক্ষা করলেন। তারপর তিনি বললেন, বর্তমানে শরীরের যে অবস্থা সেক্ষেত্রে অনুমান করা যায় যে আগামী কাল সকাল পর্যন্ত জ্ঞান ফিরে আসতে পারে। তারপর তিনি রক্তের সুগার এবং রক্তে জন্ডিস আছে কিনা সেটা পরীক্ষা করার আদেশ দিয়ে গেলেন।
তারপর মামার পাশে বসে থাকতে হলো আবার পুরো রাত। স্যালাইন সারারাত চলতে লাগলো। রাতের বেলায় মামা কেমন যেন শব্দ করে উঠে বসে পড়ার মত ভঙ্গি করছিল। সঙ্গে সঙ্গে মামাকে চেপে ধরে স্বাভাবিক করতে হয়েছিল আমার। সাথে সাথে আশপাশে থাকা বিভিন্ন রোগীদের আর্তনাদে অসহনীয় অবস্থা হয়ে গিয়েছিল আমার। আর যেকোনো প্রয়োজনে সহজে কি নার্সদের পাওয়া যাচ্ছে? মনে হচ্ছিল যেন কুষ্টিয়া সরকারি হাসপাতালের নার্স গুলো নবাবের চেয়েও নবাব। রাতের বেলায় সব থেকে বেশি খারাপ লেগেছিল আমার সরকারি হাসপাতালে নোংরা পরিবেশটি দেখে। প্রসাবের দুর্গন্ধে যেকোনো সুস্থ মানুষ এমনিতেই অসুস্থ হয়ে যাবে এরকম সরকারি হাসপাতালে। আর রোগীদের কথা কি বলবো? রোগীরা সুচিকিৎসা পাওয়ার আশায় এবং সুস্থ হওয়ার আশায় এসে তারা যেন মারাত্মক বিপদে পড়ে গেছে। আসলে নাম মাত্র হাসপাতাল, প্রকৃতপক্ষে নোংরার কারখানা হলো কুষ্টিয়া সরকারি হাসপাতাল।
যাহোক আস্তে আস্তে যখন রাত বৃদ্ধি হতে লাগলো তখন মামা নিথরে ঘুমাতে লাগলো। মামার এরকম ঘুম দেখে পাশে থাকা একজন বয়স্ক মহিলা বললো, "বাবা, তোমার মামার জ্ঞান হয়তো আগামী কাল সকালে ফিরে পাবে। বয়স্ক মহিলার মুখের এরকম কথা শুনে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছিলাম। কিন্তু সময় যাচ্ছিল না। অন্য ক্ষেত্রে কাজ করতে করতে কখন যে সময় চলে যায় বোঝা যায় না। কিন্তু সেদিন হাসপাতালে থেকে রাতের সময়টুকু একেবারেই যাচ্ছিল না, যেন মনে হচ্ছে ঘড়ির কাঁটা আটকে গেছে। আসলে বিপদের মুহূর্তটুকু এরকমই কঠিন হয়, যার কারণে সেটা সব সময় মনে থাকে। যাহোক যখন আমার মেজো মামা নিথরে ঘুমাতে লাগলো তখন রাত সাড়ে তিনটার পরে মামিকে মামার কাছে রেখে বিশুদ্ধ বাতাসে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য হাসপাতাল থেকে বের হয়েছিলাম। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে কিছুটা সময় গল্প করার সুযোগ পেয়েছিলাম হাসপাতাল পাহারা করা ব্যক্তিদের সাথে।
তারপর এভাবেই পুরো রাতটা অত্যন্ত কষ্ট এবং পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে পার করেছিলাম। সব থেকে বেশি খারাপ লেগেছিলো হাসপাতালের নোংরা পরিবেশটা দেখে। আসলে এতো নোংরা পরিবেশে মানুষ এক ঘন্টাও থাকতে পারবে না, সেখানে রোগীরা কিভাবে থাকে এটাই তো আমার বড় প্রশ্ন। আর এরকম সরকারি হাসপাতাল তত্ত্বাবধান করার কি কোন লোক নেই? যাহোক সকাল সাড়ে সাতটার দিকে আমার মামার হালকা হালকা জ্ঞান এসেছিল। তারপর ডাক্তার বললো আস্তে আস্তে পুরো জ্ঞান চলে আসবে, ডাক্তারের কথা মতো তাই এসেছিল এবং আমার মামা সুস্থ হয়েছিল। যাহোক আমি সবসময় দোয়া করি সকল মানুষ যেন সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকে। কারণ একজন অসুস্থ মানুষের সাথে গিয়ে অন্য সুস্থ মানুষ যেন হাসপাতালে আজাব গ্রহণ করে অসুস্থ না হয়। একটি হাসপাতাল হওয়া উচিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, কিন্তু সেখানে আমাদের কুষ্টিয়া সরকারি হাসপাতাল পুরোই বিপরীত।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
কুষ্টিয়া সরকারি হাসপাতালের পরিবেশটা একদমই বাজে। যেখানে একজন রোগীকে সুস্থ মানুষ নিয়ে গেলে তিনি রোগীর মত হয়ে যায়। প্রচন্ড পরিমাণ দুর্গন্ধ তার পাশাপাশি রোগীর চাপ বেশি বেড পাওয়া যায় না। যাই হোক খারাপ একটা দিন ছিল আপনার জন্য আপনার মামা দ্রুত সুস্থ হয়ে যাক সেটাই প্রত্যাশা করি।
গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য রিপন ভাই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
অজ্ঞান পার্টিরা বিভিন্নভাবে মানুষকে অজ্ঞান করে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়। আপনার মামার এরকম করুন পরিস্থিতির কথা শুনে সত্যিই বেশ খারাপ লাগছে। আমাদের আসলে বাসে বা ট্রেনে চলাচল করার সময় অনেকটা সাবধানতার সাথে চলাচল করা উচিত। আর সাথে যদি থাকে অনেক টাকা তাহলে তো কোন কথাই নেই। তবে সরকারি হাসপাতালের যে বর্ণনা দিলেন আপনি, তাতে তো ওখানে যেকোনো সুস্থ মানুষই অসুস্থ হয়ে যাবে , এটা মনে হলো। একদিকে আপনার মামার জ্ঞান ফিরছিলো না , অন্যদিকে হাসপাতালের নার্সদের ব্যবহার অত্যন্ত খারাপ, সব মিলিয়ে বেশ খারাপ সময় কাটিয়েছেন বোঝা ই যাচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত যে আপনার মামার জ্ঞান ফিরেছে এবং সুস্থ হয়েছে এটাই অনেক বড় ব্যাপার।
অত্যন্ত খারাপ একটি সময় কাটিয়েছিলাম সেদিন কুষ্টিয়া সরকারি হাসপাতালে।
সেটা আপনার ব্লগটি মন দিয়ে পড়েই বুঝতে পেরেছি ভাই।
ভাই শুধু কুষ্টিয়া সরকারি হাসপাতাল না,বরং বাংলাদেশের যে কোনো সরকারি হসপিটালের অবস্থা খুবই শোচনীয়। পরিবেশ যেমন নোংরা থাকে, তেমনি নার্সদের ব্যবহার খুব খারাপ। আপনার মামার অবশেষে জ্ঞান ফিরেছে, এটা জেনে ভীষণ ভালো লাগলো। আসলে বর্তমানে মানুষকে ঠকানোর জন্য, বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। সুতরাং সবাইকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার মন্তব্যটি পড়ে আপনার কথাগুলোর সাথে আমি সহমত পোষণ করছি।