বৃষ্টি এলো স্বস্তি নিয়ে || তাং:০২/০৯/২০২২ইং।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি।

IMG_20220902_155732_109.jpg

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, কিছুদিন আগেই আমাদের বর্ষা ঋতু চলে গেল বৃষ্টি ঝরানো ছাড়াই। তারপরে শুরু হলো শরৎ ঋতু। এলো ভাদ্র মাস। ভাদ্র মাসের শুরু থেকেই প্রচন্ড গরম আর তাপদাহ শুরু হয়ে গেল। বিশেষ করে গত ছয় দিন ভাদ্র মাসের তাল পাকানো গরমে আমরা সত্যিই অনেক অনেক অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলাম। প্রচন্ড গরমের দাপট দেখে মনে হল হয়তো এ বছর আর বৃষ্টি হবে না। আজকের সকালটাও শুরু হয়েছিল ঝলমলে রোদ দিয়ে। তবে আজ সকাল থেকেই রোদের সাথে হালকা হালকা বাতাস বইছিল। কিন্তু তারপরও মনে হচ্ছিল যে আবহাওয়ার কোন পরিবর্তন হয়তো হবে না গতদিনের মতো আজকেও প্রচন্ড গরমে অতিষ্ঠ করে তুলবে আমাদের। আজ সকাল ৮:৪৫ মিনিটের সময় ডিসকোর্ড এর জেনারেল চ্যাটে আমি শ্যামসুন্দর ভাইয়ের সাথে চ্যাট করছিলাম। তখন আমি শ্যামসুন্দর ভাইকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে ভাইয়া আজকে আপনাদের ওদিকে আবহাওয়াটা কেমন। তিনি উত্তরে বলেছিলেন রাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে, এখনও বৃষ্টি পড়তেছে। বৃষ্টির কথা শুনেই শ্যামসুন্দর ভাইয়াকে একটু মশকরা করেই বলেছিলাম যে, ভাইয়া আমাদের এদিকে বৃষ্টিকে একটু পাঠাইয়া দেন। যাহোক, জেনারেল চ্যাট শেষে আমি মাঠের দিকে বের হয়েছিলাম আমার ধানের জমিতে পানি সেচ দেওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু মাঠে গিয়ে জানতে পারলাম, বারবার লোডশেডিং এর চাপে পড়ে পানি সেচ দেওয়া ছ্যালোমোটর পুড়ে গেছে। এদিকে আমার ধানের জমিতে একেবারেই রস বলতে কিছুই নেই, প্রচন্ড রোদের তাপে ধানের জমির মাটি ফেটে যাওয়া শুরু করেছে। খুবই মন খারাপ করে বাড়িতে চলে আসলাম।

IMG_20220902_102145_787.jpg

আজকে সকালে আমার ধানের জমি দেখতে গিয়ে ফটোগ্রাফিটা করেছিলাম।


জুম্মার নামাজ আদায় এর উদ্দেশ্যে মসজিদে বসে ইমাম সাহেবের খুতবা শুনছিলাম। ঠিক ওই সময় অর্থাৎ দুপুরবেলায় মসজিদ থেকে লক্ষ্য করলাম উত্তর দিকের আকাশে ঘন কালো মেঘ জমা হয়ে গেছে, বাতাস একটু জোরে বইতে শুরু করেছে। আবার এরই মাঝে হালকা রোদের ঝিলিক লক্ষ্য করলাম। আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম হয়তো আজকে বৃষ্টি হলেও হতে পারে। একটু পরেই শুরু হয়ে গেল মোটা মোটা ফোটের বৃষ্টি। ওই সময় জুম্মার নামাজ শুরু হয়ে গেল। নামাজ শেষে দেখলাম মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। সাথে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। খুবই শীতল আবহাওয়া। মসজিদ থেকে বাহির হওয়ার কোন উপায় নেই। উত্তর দিক থেকে ঝড়ো হওয়ার সাথে বৃষ্টি এসে মসজিদের জালানা দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা গুলো আছড়ে পড়তে লাগলো। মসজিদের জানালার পাশে দাঁড়াতেই বৃষ্টির ফোঁটা ছিটকিয়ে আমার হাতের উপর এসে পড়লো, সাথে সাথে আমার শরীর যেন শিউরে উঠলো। ভাবতে লাগলাম সৃষ্টিকর্তা তার রহমতের বৃষ্টি দান করতে শুরু করেছে। শত শত চাষীর জমির ফসল কে রক্ষা করার জন্য আজ ঠিক দুপুরবেলায় সৃষ্টিকর্তা বৃষ্টিকে পাঠিয়ে দিয়েছে।

IMG_20220902_155223_008.jpg

এবছর বৃষ্টিতে ভেজার আমার খুবই শখ ছিল। কিন্তু বৃষ্টিতে ভেজার শখটি এখনো এ বছর পূরণ করতে পারিনি। জুম্মার নামাজ শেষ হয়েছিল ১ঃ৫০ মিনিটে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে মসজিদ থেকে বাহির হতে পারছিলাম না। কয়েকবার মনে মনে ভাবলাম যে ভিজতে ভিজতেই বাড়িতে চলে যায়। কিন্তু মসজিদ ভর্তি মানুষের মধ্যে একা ভিজতে ভিজতে বাড়িতে যাওয়াটা কেমন যেন বোকামির মতোই মনে হল। তাই আমি বাড়ি যাওয়া থেকে বিরত থাকলাম, তবে মসজিদের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থেকেই বহু কাঙ্খিত এবং বহু প্রত্যাশিত বৃষ্টিকে উপভোগ করতে লাগলাম। জালানার পাশে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল আমি বৃষ্টির সাথে আলিঙ্গন করছি, বৃষ্টিতে ভিজে বৃষ্টিকে উপভোগ করছি। বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটায় ফোটায় মনে হচ্ছিল আমার জমির ধানগুলো সতেজ হয়ে উঠছে, গাছের পাতাগুলো সবুজ হয়ে উঠছে, শুকনো মাটি তার বহুদিনের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে। এমন ভাবনার মুহূর্তে হঠাৎ দমকা হাওয়ার সাথে জালানা দিয়ে বৃষ্টি এসে আমাকে প্রায় অর্ধেক ভিজিয়ে দিয়ে গেল। আমার গায়ের পাঞ্জাবিটা তো প্রায় ভিজেই গেল।

IMG_20220902_155706_363.jpg

আজকের বৃষ্টি ছিল এ বছরে সর্বোচ্চ মানের বৃষ্টি। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে একই ভাবে বৃষ্টি হয়েছে।৩:২০মিনিটের সময় মসজিদ থেকে বাড়িতে আসলাম। বাড়িতে আসার সময় দেখলাম বৃষ্টির পানিতে পুকুর ভাটিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে গেছে। বাড়িতে পৌঁছানোর পর বৃষ্টি পড়া খুবই কম হয়ে গেল। কিন্তু আকাশ তখনো মেঘাচ্ছন্ন ছিল, কেমন যেন অন্ধকার অন্ধকার ভাব। তারপরে, পর পর দুইবার খুবই জোরে মেঘ ডেকে উঠলো, মনে হল বজ্রপাত হয়ে গেল। মুহূর্তের মধ্যে পুনরায় মুষলধারে বৃষ্টি হওয়া শুরু হলো। ভাবলাম ছাতা মাথায় দিয়ে বৃষ্টিকে উপভোগ করে আসি কিন্তু বিদ্যুৎ চমকানো দেখে ঘরের বাইরে যেতে সাহস পেলাম না।

IMG_20220902_155418_030.jpg

IMG_20220902_155732_109.jpg

কিছুক্ষণ পরে বৃষ্টি পড়া কিছুটা কম হয়ে গেল। তখন আর দেরি না করে ছাতা মাথায় দিয়ে এবং খালি পায়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম। চারিদিকের প্রকৃতি দেখে তো আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম, বৃষ্টির পানিতে সমস্ত গাছের পাতাগুলো সবুজ এবং সজীবতায় ভরে উঠেছে। আমি আরো বেশি অবাক হয়ে গেলাম আমার মহল্লার অবস্থা দেখে। কেমন যেন নিস্তব্ধ হয়ে আছে আমার মহল্লা, কোথাও কোন মানুষের দেখা নেই, কিংবা কোথাও কোন মানুষের কথাও শুনা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছিল আমার মহল্লার সকল মানুষগুলো কোথায় যেন চলে গেছে। শুধু তাই নয় প্রকৃতির দিকে চেয়ে দেখলাম, কেমন যেন গম্ভীর হয়ে আমার দিকে চেয়ে রয়েছে, গাছে নেই কোন পাখি, নেই কোন পাখির ডাক। বুঝতে পারলাম, প্রচন্ড রোদ-গরমের পর হঠাৎ বৃষ্টি পেয়ে সকলেই বৃষ্টিকে মনের মত করে উপভোগ করছে।

IMG_20220902_160342_710.jpg

IMG_20220902_155615_908.jpg

IMG_20220902_155523_389.jpg

বৃষ্টির ছন্দের তালে তালে আমি প্রকৃতির সান্নিধ্যে যেতে লাগলাম। বৃষ্টি ভেজা প্রকৃতি যতই দেখতে লাগলাম, প্রকৃতির বৃষ্টিভেজা অপরূপ সৌন্দর্য দেখে আমি ততই মুগ্ধ হতে লাগলাম। বৃষ্টি প্রকৃতিকে যে কিভাবে সৌন্দর্যময় করে তোলে তার বাস্তব দৃশ্য আজ আমি সামনে থেকে দেখেছি। আমার কাছে মনে হলো, কয়েক ঘন্টার বৃষ্টিতেই সবুজ প্রকৃতি রোদের তীব্র তাপদাহের কথা ভুলেই গেছে। এদিকে মাটি তার তৃষ্ণা মিটিয়ে জল গুলো গড়িয়ে দিচ্ছে। এতদিনের তাপদাহে শুকিয়ে ফেটে যাওয়া মাটি গুলোর তৃষ্ণা কয়েক ঘন্টার বৃষ্টিতেই নিবারণ। ছাতা মাথায় দিয়ে বৃষ্টির কারিশমা গুলো যতই গভীরভাবে উপলব্ধি করছিলাম আমি ততই মুগ্ধই হচ্ছিলাম। এমন সময় আমি দেখলাম একজন মানুষ পলিথিন কাগজ চাদরের মতো করে জড়িয়ে ভ্যান গাড়ি চালাতে চালাতে বাড়ির দিকে যাচ্ছে। অনেকদিন পরে বৃষ্টির ভয়ে পলিথিন কাগজ জড়ানো মানুষকে দেখে আমার খুবই ভালো লাগলো।

IMG_20220902_155803_008.jpg

IMG_20220902_155838_851.jpg

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, বহুদিন পর হঠাৎ বৃষ্টি এসে সত্যিই আমাদের অনেক উপকার করে দিয়ে গেল। কিন্তু এ বছরের বৃষ্টির শূন্যতা হয়তো একদিনের বৃষ্টিতে পূরণ হবে না। তবুও হঠাৎ বৃষ্টিতে আমরা দারুণভাবে স্বস্তি পেয়েছি। আশা করি আগামী দিনেও বৃষ্টি এসে আমাদেরকে এভাবেই স্বস্তি দিয়ে যাবে এবং আরামদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করে দিবে।


১০% বেনিফিসারী প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য বরাদ্দ।


সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ



Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 65970.26
ETH 2696.32
USDT 1.00
SBD 2.88