শিক্ষকের বিদায় অনুষ্ঠান সম্পর্কে আমার অনুভূতি।
হ্যালো বন্ধুগণ,
আমি @bidyut01. একজন বাঙালি ব্লগার।সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।
আজ সোমবার। ২৯ ই জানুয়ারি, ২০২৩ ইং।
আসসালামু আলাইকুম।
সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি। আজকে আমি আরো একটি নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি।
সুপ্রিয় বন্ধুগণ, গতকাল রবিবার আমাদের বিদ্যালয়ে বিদায় অনুষ্ঠান ও নবীনবরণ অনুষ্ঠান যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। উক্ত অনুষ্ঠানে আমাদের বিদ্যালয়ের সকল ছাত্র-ছাত্রী এবং আমাদের বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকমন্ডলী ও কর্মচারীগণ উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানটি সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছিল। উক্ত অনুষ্ঠানে এই বছরে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের বরণ করে নেওয়া হয়। একই সাথে আমাদের বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষককে বিদায় দেওয়া হয়। সাবেক প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক গতবছর শেষের দিকে তাদের চাকরির মেয়াদ শেষ করেন। একই সাথে উক্ত বিদায় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের আমাদের বিদ্যালয় থেকে বিদায় দেওয়া হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিক আমার কাছে মনে হয়েছে আমাদের সাবেক দুই শিক্ষকের বিদায় দেওয়ার বিষয়টি। কেননা আমাদের বিদ্যালয় একটি প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত করার ক্ষেত্রে বিদায় নেওয়া সাবেক প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আমাদের বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। আর আমাদের এই দুই স্যার আমাদের বিদ্যালয় শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত হয়েছিলেন ১৯৮৬ সালের মাঝামাঝিতে। তখন আমাদের বিদ্যালয় এমপিও ভুক্ত হয়েছিল না। ওই সময় আমাদের এই দুই শিক্ষক পুরো ছয় থেকে সাত বছর বিনা বেতনে চাকরি করেছেন। আর এটা নিঃসন্দেহে তাদের বিশাল একটি উদারতা ছিল আমাদের বিদ্যালয়ের প্রতি এবং আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি। বিদায় নেওয়া আমাদের এই মহান শিক্ষক দুজন বেতনভুক্ত হয়েছিলেন সহকারী শিক্ষক হিসেবে। তারপর আস্তে আস্তে অভিজ্ঞতা অর্জন করে ও পদোন্নতি পেয়ে একজন হয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক এবং অন্যজন হয়েছিলেন সহকারী প্রধান শিক্ষক। তাই আপনারা নিঃসন্দেহে বুঝতে পারছেন যে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে উন্নত করার জন্য তাদের কি পরিমাণ ভূমিকা ছিল।
২০১৮ সালে বুক ভরা আশা ও মন ভর্তি আনন্দ নিয়ে সদ্য বিদায় নেওয়া প্রধান শিক্ষকের অধীনে আমি চাকরিতে জয়েন করেছিলাম। তারপর প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকের প্রশাসনিক দক্ষতা সত্যিই আমাকে অনেক মুগ্ধ করেছিল। তাদের দক্ষতা ও চঞ্চলতা দেখে আমি মনে মনে ভাবতাম কবে যে এরকম একজন দক্ষ শিক্ষক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবো। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত সদ্য বিদায় নেওয়া দুজন বিজ্ঞ ও আদর্শবান শিক্ষকের অধীনে চাকরি করতে পেরে সত্যিই আমি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান। তাদের আদেশ, উপদেশ এবং তাদের দেখানো পথ কখনোই ভুলে যাওয়ার নয়। যখন আমাদের সাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং পরে আমাদের সাবেক প্রধান শিক্ষক তাদের অনুভূতির কথা গুলো প্রকাশ করছিল তখন উপস্থিত আমরা সকলে খুবই আবেগ আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল যেন আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ইট, প্রতিটি গাছ, এমনকি প্রতিটি ঘাস যেন তাদের জন্য অশ্রু বিসর্জন দিয়েছিল।
আসলে সদ্য বিদায় নেওয়া শিক্ষকদের জীবনের সোনালী মুহূর্তটুকুই কাটিয়েছেন আমাদের বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা দেওয়ার কাজে। হাজারো মানুষের মাঝে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার আলো, গড়ে তুলেছেন শিক্ষিত সমাজ, সৃষ্টি করেছেন দেশের অমূল্য সম্পদ। একই সাথে সৃষ্টি করেছিলেন আমাদের বিদ্যালয়ে সুশৃংখল একটি পরিবার ও পরিবেশ। আর আজ সেই পরিবার থেকে নিজেদের চেয়ার রেখে বিদায় নিতে হলো আমাদের সেই দু'জন আদর্শবান শিক্ষককে। যেটা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। আসলে বিদায় শব্দটির মধ্যেই বেদনা দারুন ভাবে জড়িয়ে আছে। আমাদের দু'জন আদর্শ মানুষ শিক্ষক তাদের পেশা থেকে বিদায় নিলেও আমি মনে করি আমাদের মনে ও তাদের সকল ছাত্র-ছাত্রীদের মনে আজীবন থেকে যাবেন। একই সাথে আমি মনে করি, তাদের জীবন ধন্য হয়েছে। কেননা তাদের দেওয়া শিক্ষা, তাদের জ্বালিয়ে দেওয়া প্রদীপ আজ বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে হাজারো ছাত্র-ছাত্রী। শুধু তাই নয় তাদের দেঝয়া জ্ঞানকে দিন দিন প্রসারিত হয়ে সকল মানুষের মধ্যে প্রবেশ করছে। যেটা একজন শিক্ষকের জন্য চরম স্বার্থকতা।
ফুল দিয়ে নতুনকে বরণ করতে হয় আবার ফুল দিয়ে প্রবীণকে বিদায় জানাতে হয়- এটাই চরম সত্য কথা। আর বিদায় নেওয়ার বা বিদায় দেওয়ার মুহূর্তটুকু যে কত কষ্টের হয়, কত বেদনার হয়- সেটা সামনে থেকে না দেখলে বোঝা যায় না, কাউকে বোঝানো যায় না। আমাদের অনুষ্ঠান শেষ করে যখন বিদায়ী শিক্ষকদের সাথে নিয়ে আমরা নাস্তা করছিলাম ঠিক সেই মুহূর্তেও তারা কেঁদেছিল। সেই কান্নাটা যে কত কষ্টের, কত বেদনার একমাত্র তারাই ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু তাদের বেদনার মাত্রাটা আমরা অনুভব করতে পেরেছিলাম, অনুমান করতে পেরেছিলাম। তাদের দুচোখ দিয়ে নোনা জল গড়িয়ে যাওয়া দেখে কিছুক্ষণের জন্য আমরা সকলেই স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম। কারণ এমন দিনটা তো আমাদের জীবনেও একদিন আসবে।
আমার সব থেকে বেশি খারাপ লেগেছিল যখন দুজন শিক্ষক আমাদের সাথে শেষবারের মতো হাতে হাত মিলিয়ে স্কুল গেট দিয়ে বের হওয়ার আগে পেছনদিকে তাকিয়ে বিদ্যালয়ের অফিস রুমের দিকে তাকালো আর রুমাল দিয়ে তাদের চোখ মুছেছিল ওই মুহূর্তের দৃশ্যটুকু আমার জীবনে আমি কখনোই ভুলতে পারবো না। হয়তো তাদের চোখের পানির মূল্য আমরা কখনোই দিতে পারব না, কিন্তু তাদের রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ। আর এটাই আমার জীবনের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। ভালো থাকুক আমাদের বিদ্যালয়ের সাবেক দুইজন অভিভাবক, সারা জীবন আলো ছড়িয়ে যাক আমাদের দুই নক্ষত্র, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় পরিপূর্ণ থাক আমাদের বিদায়ী শিক্ষকের জীবন, স্যালুট স্যার।💝💝💝
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
সাথে আপনারা দুইটা কাজ সম্পূর্ণ করে ফেলেছেন এটা দেখে খুবই ভালো লাগলো। ২০২৪ সালের এসএসসি ব্যাচের বিদায়ী দেওয়া হলো আবার সেই সাথে নতুনদের কে বরণ করে নেয়া হলো। একই সাথে লক্ষ্য করলাম শিক্ষকদেরও বিদায় দেয়া হয়েছে এই অনুষ্ঠানে।
এক ঢিলে তিন পাখি।একই আয়োজনে তিনটি কাজ সম্পন্ন করেছে আপনার প্রতিষ্ঠান টি।এটা অনেক বেশি ভালো কাজ, এতে করে টাকার অপচয় থেকে বেঁচেছে। আমি প্রথম আজকে এরকম একটি ঘটনা দেখতে পারলাম আপনার পোস্টের মাধ্যমে। আপনাকে ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
অনেক সুন্দর কমেন্ট করেছেন ভাই ধন্যবাদ আপনাকে।
বিদায় দেওয়াটা আসলেই খুবই বেদনার।তবুও পুরাতনকে বাদ দিয়ে নতুনকে সুযোগ করে দেওয়াই নিয়ম। আপনার অনুভূতি পড়ে ভালো লাগলো।বেদনা, আনন্দ দুটো মিলেই ভালো সময় কাটিয়েছেন আশা করি, ধন্যবাদ ভাইয়া।
সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।