জীবনে প্রথমবার সাঁতার শেখার স্মৃতিময় গল্প।

in আমার বাংলা ব্লগ4 months ago



হ্যালো বন্ধুগণ,
আমি @bidyut01. একজন বাঙালি ব্লগার।সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।



আজ বুধবার। ২৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ইং।


আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি। আজকে আমি আরো একটি নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি।

girls-1284419_1280.jpg

Source



সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আমাদের বাল্য জীবনে অনেক রকমের আনন্দের স্মৃতি রয়েছে। আমাদের বাল্য জীবনের সকল স্মৃতির মধ্যে অন্যতম প্রধান স্মৃতি হলো সাঁতার শেখা। আমাদের অনেকেই ছোটবেলায় নদীতে গোসল করার মধ্য দিয়ে সাঁতার দেওয়া শিখেছে, আবার অনেকেই তাদের বাল্যজীবনে সাঁতার দেওয়া শিখেছে সাগরে। কিন্তু আমাদের এলাকায় সাগর বা নদী কোনোটিই না থাকার কারণে আমি আমার বাল্য জীবনে প্রথম সাঁতার দেওয়া শিখেছিলাম পুকুরে গোসল করতে গিয়ে। সুপ্রিয় বন্ধুগণ, ২০০১ সালের মাঝামাঝিতে আমি প্রথমবার পুকুরে সাঁতার দেওয়া শিখেছিলাম। তখন বেশ ছোট ছিলাম, বয়স হয়তো নয়-দশ বছর হবে। ওই সময় আমাদের গ্রাম অঞ্চলের শতকরা প্রায় ৯৮% মানুষ পুকুরে গোসল করতো। আর আমাদের বাল্য জীবনে দিনের মধ্যে দুই তিনবার থেকে শুরু করে যতবার গোসল করেছি ততবারই পুকুরে নেমেই গোসল করেছি। তাই খুব সহজেই সাঁতার দেওয়া কাজটা ভালোভাবেই শিখেছিলাম। যদিও এটা অনেকের কাছেই কঠিন একটি কাজ।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আমার জীবনে প্রথম পুকুরে সাঁতার দেওয়া শিখেছিলাম আমার দাদীর কাছ থেকে। প্রতিদিনই দুপুরবেলায় দাদির সাথে পুকুরে গোসল করতে যেতাম। প্রথম প্রথম পুকুরে নেমে পানিতে শুধুমাত্র দাঁড়িয়ে থাকতাম। আর মাঝেমধ্যে গলা পর্যন্ত পানিতে ডোবাতাম। তারপরে দাদীর সাহসে এবং মনের জোরে পানিতে ডুব দেওয়াটা শিখেছিলাম। কিন্তু অবশিষ্ট ছিল পানিতে সাঁতার দেওয়া শেখা। দাদির সাহায্যে পানিতে সাঁতার কাটা শিখেছিলাম। আমাকে সাঁতার শেখানোর জন্য আমার দাদি তার বুক পর্যন্ত পানিতে ডুবিয়ে দাঁড়াতো। আর তখন আমি আমার দাদির দুই কাঁধে হাত দিয়ে নিজেকে পানির উপর ভাসিয়ে রেখে দুই পা দিয়ে পানিতে বারবার আঘাত করতাম। এভাবে কয়েকদিন অনেকবার অনুশীলন করার পরে দাদি আমাকে বলেছিল, এবার তুই নিজে নিজে সাঁতার দেওয়া শুরু কর। তবে সাঁতার দেওয়া শুরু করার আগে দাদি আমাকে বারবার সতর্ক করতো যেন দুই কান দিয়ে পানি ঢুকে না যায়।

তারপর দাদির কথা মতো একা একা পুকুরে সাঁতার দিতে গিয়েও সাহস পেতাম না। তখন দাদি আমার পাশে থেকে সাহস দিতো সাঁতার দেওয়ার। পুকুরের একেবারে কিনারায় নিজে নিজে সাঁতার দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। কিন্তু তারপরেও নিজের ভারসাম্য হারিয়ে পুকুরের ঘোলা পানি ঢোকাঢোক খেয়ে ফেলেছি। শুধু তাই নয়, পুকুরের ঘোলা পানি মনের অজান্তে যখন মুখের ভিতর দিয়ে পেটে যাচ্ছিল ঠিক তখনই দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো কাশি উঠে গিয়েছিলাম আমার। আমার কাশির শব্দ শুনে আশপাশের অনেকেই ছুটে এসেছিল। সকলেই ভেবেছিল আমি হয়তো পানিতে ডুবে যাচ্ছিলাম। যাহোক তারপরে বেশ কয়েকদিন আমাকে আর পুকুরে নামতে দেয়নি। তারপরে বেশ কয়েকদিন পর দাদী আমাকে ডেকে বললো আজকে তোর সাঁতার দেওয়া না শিখিয়ে বাড়িতে আসবো না। দাদির কথায় আমিও সাঁতার শেখার জন্য মেতে উঠলাম।

তারপর দাদি আমাকে ডেকে নিয়ে গেল আমাদের বাড়ির পাশের একটি কলা বাগানে। তারপর সেই কলাবাগান থেকে আমাকে দিয়ে একটি মোটা ও বড় কলা গাছ কাটালো। তারপর আমার এক চাচাকে দিয়ে সেই কলা গাছটা ভালোভাবে সাইজ করে কেটে নিলো এবং কলা গাছটি পুকুরে নিয়ে গেল। তারপর দাদি আমাকে বললো, এবার কলা গাছটি ভালোভাবে ধরে সাঁতার দেওয়া শুরু করো। কলা গাছ ধরে সাঁতার দিতে গিয়ে প্রথমে কলা গাছটি হাতের ভিতর থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল। আসলে কলা গাছ খুবই পিচ্ছিল। তাই প্রথম প্রথম কলাগাছকে আয়ত্ত করতে প্রায় এক ঘন্টা সময় লেগে গিয়েছিল। তারপর পুকুরে ভাসমান কলা গাছের উপর বুক তুলে দুই হাত দিয়ে ভালোভাবে চেপে ধরে সাঁতার দেওয়া শুরু করেছিলাম। প্রথমে পুকুরের কিনারায় কলা গাছ ধরে সাঁতার দেওয়া শুরু করলেও অল্প সময়ের মধ্যে সাঁতার দিতে দিতে পুকুরের মাঝখানে চলে গিয়েছিলাম।

আর সেদিনই কলাগাছ ধরে পুকুরে সাঁতার দেওয়া বেশ ভালোভাবে শিখে গিয়েছিলাম। পুকুরে সাঁতার দেওয়া শেখার সাথে সাথে আমার মনে হয়েছিল যেন একটা বিশ্ব জয় করে ফেলেছি। সত্যি বলতে সাঁতার দেওয়া শেখার আগে আমার মনে হতো সাঁতার দেওয়া অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। কিন্তু সাঁতার দেওয়া শেখার পরে মনে হলো যে পুকুরে সাঁতার দেওয়ার মতো সহজ কাজ আর নেই। দাদির সাহায্যে এভাবে সাঁতার দেওয়া শেখার পর খুব সহজেই উল্টো সাঁতার দেওয়া শিখেছিলাম। আর উল্টো সাঁতার দেওয়াটা শিখেছিলাম আমি নিজে নিজেই। উল্টো সাঁতার দেওয়াটা হলো সাঁতার দেওয়ার সময় আমার মুখমণ্ডল আকাশের দিকে থাকবে। অর্থাৎ সোজাভাবে সাঁতার দেওয়ার ঠিক বিপরীত রুপ। যাহোক জীবনে প্রথমবার সেই বাল্যকালে সাঁতার শেখার মাঝে যে পরিমাণ আনন্দ অনুভব করেছি সেটা ওই সময়ের জন্য আর অন্য কোন কিছুতে পাইনি। আর আমার সাঁতার শেখানোর পুরো অবদানই ছিল আমার দাদির।



১০% বেনিফিসারী প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য বরাদ্দ।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 58613.96
ETH 3153.58
USDT 1.00
SBD 2.43