পুরাণের গল্প : "ঋষি ও ইঁদুরের গল্প" - পর্ব ০২
Copyright Free Image Source: Pixabay
ইঁদুরটি তখন হাতজোড় করে বললো, "প্রভু আপনার আশ্রমে এতকাল আমি পরম নিশ্চিন্তে ছিলাম । খাদ্য পানীয়ের প্রাচুর্যতা ছিল, আর ছিল প্রচুর স্বাধীনতা । ইচ্ছেমতো আমি আশ্রমের যত্রতত্র নিঃশঙ্ক চিত্তে ঘুরে বেড়াতে পারতাম । কিন্তু, প্রভু এখন সর্বদা আমাকে প্রাণভয়ে ভীত থাকতে হয় ।"
তখন ঋষি জিজ্ঞেস করলেন, "হে মূষিক, আমার আশ্রমে তো বনের কোনো হিংস্র জন্তু ঢুকতে পারে না, তবে কেন তুমি সর্বদা প্রাণভয়ে শঙ্কিত থাকো ? আমার শিষ্যবর্গের কেউই তো তোমার কোনো ক্ষতি করবে না কখনো, কারণ তুমি আমাদের আশ্রিত । তাই তোমাকে রক্ষা করা আমাদের সকলেরই কর্তব্য ।"
মুনির বচনে কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে ইঁদুরটি বললো, "হে প্রভু, আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ । কিন্তু, প্রভু আপনার আশ্রমে এক ভয়ানক মার্জারের প্রবেশলাভ হয়েছে । আপনার শিষ্যদের মধ্যে একজনের পোষ্য সে । সেই বেড়ালটা আজ আমাকে বধ করার নিমিত্ত আক্রমণ করেছিল । আপনি মার্জারটিকে তাড়িয়ে দিন । নইলে আমার প্রাণরক্ষা করা নিতান্তই অসম্ভব হয়ে পড়বে ।"
ইঁদুরের কথায় মুনির কপালে কিছুটা চিন্তার ভাঁজ পড়লো । মুনি তখন বললেন -
"হে মূষিকবর, আমি তোমার উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ এবার বুঝতে পারছি । কিন্তু, বিড়ালটিকে তাড়ানোর ব্যাপারে আমি অপারগ । কারণ, সেই মার্জার শাবকটিও আমারই আশ্রমের এক আশ্রিত জীব । ঠিক তোমারই মতো তাকে আমি রক্ষা করতে সত্য়বদ্ধ । আমাকে নিজের সত্যভঙ্গ করতে দ্বিতীয়বার অনুরোধ করো না । প্রাণ থাকতে তা আমি পারবো না ।"
মুনির কথা শুনে অত্যন্ত দুঃখিত স্বরে ইঁদুরটি বললো, "তাহলে প্রভু আমাকে বিদায় দিন । আমি বনেই চলে যাই । আপনার নিরাপদ আশ্রয় থেকে আজ আমি বঞ্চিত হলাম । বনেই ফিরে যাই । তারপরে বাকিটা আমার ভবিতব্য । যদি বন্য মার্জারের হাতে আমার মৃত্যু লেখা থাকে তবে তাই হবে ।"
ইঁদুরটির কথা শুনে মুনি মনে মনে অতীব ব্যথিত হলেন । তিনি তখন ইঁদুরটিকে বরাভয় প্রদান করে নিজের কমণ্ডলু থেকে পবিত্র জল ছিটিয়ে দিলেন ইঁদুরটির ওপর, আর বিড়বিড় করে নিম্নস্বরে দুর্বোধ্য মন্ত্রোচ্চারণ করলেন ।
মুহূর্তের মধ্যে ইঁদুরটির শরীরে পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলো । ইঁদুরটির ক্ষুদ্র দেহ অকস্মাৎ স্ফীত হয়ে উঠলো । দেহটি ধীরে ধীরে একটা বিড়ালের আকার নিতে শুরু করলো । কিয়ৎক্ষণের মধ্যে ছোট্ট ইঁদুরটি একটি মোটাসোটা হুলো বেড়ালে পরিণত হলো ।
তখন ইঁদুরের আর আনন্দ দেখে কে ? আনন্দের চোটে সে একচোট গড়াগড়ি খেয়ে নিলো ।
ঋষি তখন ইঁদুর থেকে বেড়াল বনে যাওয়া জীবটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, "হে ভূতপূর্ব মূষিক, আজ থেকে তোমার পুনর্জন্ম হলো । তুমি এখন একটি শক্তিশালী মার্জারে পরিণত হয়েছো । আশা করছি এখন থেকে আমার আশ্রমে তুমি নিঃশঙ্ক চিত্তে বাস করতে পারবে ।"
বেড়ালরূপী ইঁদুরটি তখন মুনির চরণে শতকোটি প্রণাম নিবেদন করে আনন্দে চিৎকার আর লম্ফঝম্প করতে করতে কুটীর মধ্যে প্রবেশ করলো । আজ থেকে তার আর কোনো ভয় নেই ।
[ক্রমশঃ]
দারুণ উপভোগ করলাম ব্লগটি, কেননা পূর্বের লেখাটিও পড়েছিলাম। অপেক্ষায় থাকলাম ভাই পরের পর্বের জন্য, জানিনা আবার কি অপেক্ষা করছে পরের পর্বে।
বাহ্! ইঁদুর থেকে বিড়ালরূপী হয়ে, ইঁদুরটি তো বেশ খুশি হয়েছে তাহলে। এখন তো আর কোনো ভয় নেই তার। সে স্বাধীনভাবে আশ্রমে থাকতে পারবে এখন থেকে। সেই বিড়ালটি এখন আর কিছুই করতে পারবে না তার। যাইহোক আগের পর্বের মতো এই পর্বটি পড়েও ভীষণ ভালো লাগলো। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।