ভ্রমণঃ বিশ্বের সবথেকে বড় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার।।

bdhero (66)memberverified member 🇧🇩in আমার বাংলা ব্লগ • 3 years ago

💖আসসালামুয়ালাইকুম💖

আশা করি সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও অনেক আছি। আজ আমি আমার কক্সবাজার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো আপনাদের সাথে। তো চলুন শুরু করা যাক।

২০১৮ সালের শেষের দিকে আমি এবং আমার পরিবার মিলে কক্সবাজার ভ্রমণ করি। আমরা প্রথমে নীলফামারি থেকে ঢাকা যাই। নীলফামারি থেকে রাত ১০ টার সময় আমরা জিশা বাসে উঠি। রাত ১ টায় ফুড ভিলেজে খাওয়ার জন্য বাস থামানো হয়। ১৫ মিনিটের বিরতিতে আমরা খাওয়া দাওয়া শেষ করে বাসে উঠি। সকাল ৭ টায় আমরা ঢাকা গাবতলি বাস কাউন্টার এ নামি। সেখান থেকে আমার একটি বড় ভাই এর বাসায় উঠি। সারাদিন রেষ্ট করে রাতে কক্সবাজার যাওয়ার উদ্দেশ্য এ কাউন্টার এ যাই। টিকেট অনলাইনে করা ছিলো আগেই হানিফ বাসের। আমরা ৪ জন ছিলাম। রাত ১১ টায় ঢাকা থেকে কক্সবাজার এর উদ্দেশ্য বাসটি রওনা দেয়। মাঝখানে রাত ২ টায় খাওয়ার বিরতি দেয় ১৫ মিনিট। তারপর বাসটি আবার গন্তব্যের দিকে রওনা শুরু করে। আমরা সবাই অনেক আনন্দমুখর ছিলাম। সকাল ৯-১০ টার মধ্যে আমরা আমাদের গন্তব্য কক্সবাজারে পৌঁছাই। সেখানে কলাতলি মোড় থেকে একটি অটোতে করে প্রথমে একটি হোটেল বুক করি। সবাই সবার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে কক্সবাজার দেখার উদ্দেশ্য বের হই।

কক্সবাজার বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র সৈকত এবং পর্যটন শহর। কক্সবাজার হলো বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত যা মোট ১২১ কিলোমিটার দীর্ঘ। কক্সবাজার চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত একটি জেলা, এটি দীর্ঘতম অবারিত বালুকাময় সমুদ্র সৈকত এর জন্য বিখ্যাত।

কক্সবাজার নামটি এর প্রতিষ্ঠাতা ক্যাপ্টেন কক্স থেকে নেওয়া হয়েছিল। এই সৈকত থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। এটি অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর এবং সমস্ত সৌন্দর্য প্রেমীদের কাছে একটি দুর্দান্ত আকর্ষণ।

আমরা ৩ দিন অবস্থান করেছি কক্সবাজারে। এর মধ্যে প্রথম দিন আমরা লাবনী পয়েন্ট এ ঘুরতে গিয়েছিলাম। লাবনী সৈকত কক্সবাজারের দীর্ঘতম এবং প্রধান সৈকত। এটি শহরের নিকটতম সমুদ্র সৈকত। এখানে কোনও ভ্রমণকারী সহজেই বঙ্গোপসাগর উপসাগরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে। এটি উপভোগের জায়গা, বিদেশি সহ সারা বছরই প্রচুর লোক এখানে আসে। লাবনী সমুদ্র সৈকতে সানব্যাট, সার্ফিং, জগিং, সাইকেল চালানো এবং সাঁতার কাটা উপভোগ করতে পারবেন।এটি সাঁতার এবং শিথিলকরণের জন্য সেরা জায়গা। কেবল দিনের সময়েই নয়, আপনি এই সৈকত থেকে রাতে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন কারণ এটি পর্যটকদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ জায়গা। সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়ের সময় সৈকতটির প্রশংসা করা হয়, যেখানে লোকেরা সমুদ্রটি একবারে দু'বার রঙ পরিবর্তন করার কারণে পর্যটকরা এর সাক্ষী হতে পারে। আমরাও এই লাবনী পয়েন্ট থেকে সূর্যাস্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিলো। এই দৃশ্যটি খুবই মনমুগ্ধকর ছিলো। এটি আমাদের পর্যটন জন্য একটি সুন্দর জায়গা। আমরা রাতে সবাই হোটেলে ফিরে এসে রাতের খাওয়া করে একটি সুন্দর ঘুম দেই।

পরের দিন সকালে উঠে নাস্তা করে আমরা আবার পর্যটন কেন্দ্র উপভোগ করার উদ্দেশ্য বের হই। আমরা প্রথমেই পর্যটন কেন্দ্র হিমছড়ি যাই। হিমছড়ি বাংলাদেশের একটি সুন্দর পর্যটন আকর্ষণ। কক্সবাজার শহরের ঠিক দক্ষিণে হিমছড়ি অবস্থিত।
এটি হিমশীতলীয় গ্রীষ্মমন্ডলীয় বৃষ্টিপাতের বন, তৃণভূমি এবং গাছগুলি নিয়ে গঠিত এবং এতে প্রচুর জলপ্রপাত রয়েছে যার মধ্যে সবচেয়ে বড়টি বালুচর, সূর্য-ভিজে সমুদ্র সৈকতের দিকে ঝাঁকিয়ে পড়েছে। যা ছিমছড়ি পর্যটন যায়গাটির সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করেছে।

তারপর দুপুরে একটি হোটেলে দুপুরের খাওয়া শেষ করে একটু রেষ্ট নিয়ে বিকালে আবার পর্যটন কেন্দ্র ঘুরার উদ্দেশ্য বের হই। এইবার আমাদের গন্তব্য ছিলো আরো একটি সুন্দরতম স্থান ইনানী। ইনানী কক্সবাজারের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রের একটি। ইনানী বিচ প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার একটি সমুদ্র সৈকত। এটি একটি খুব সুন্দর সৈকত যা এর শিলা এবং প্রবাল পাথরের জন্য পরিচিত। পাহাড়গুলি একপাশে এবং অন্যদিকে সমুদ্র দেখা যায় যা এটি সত্যই চিত্তাকর্ষক করে তোলে। এই সৈকতের সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের দৃশ্যটি খুব স্মরণীয় যারা এটির সাক্ষী হয়েছে তাদের কাছে। নীল জল এবং পাথরের রেখাগুলি পর্যটকদের মূল আকর্ষণ। পরিষ্কার নীল এবং হাঙ্গর মুক্ত জল স্নান এবং কোনও ভয় ছাড়াই সাঁতার জন্য আদর্শ। ইনানী সমুদ্র সৈকতের নীরব প্রকৃতি আমাকে অনেক মুদ্ধ করেছে। পর্যটন কেন্দ্র ঘুরার পর আমরা হোটেলের দিকে রওনা দেই। হোটেল যেয়ে ফ্রেশ হয়ে বসলো আমাদের গল্পের আড্ডা। তারপর রাতের খাওয়া করে সারাদিনের ক্লান্তির ফলে একটি সুন্দর ঘুম হয়।

তারপর সকালে উঠে নাস্তা করে সবাই মিলে ব্যাগ গুছাই। তারপর দুপুরের খাওয়া করে একেবারে ব্যাগ নিয়ে বের হই বিকেলে। আমরা শেষ দিনে কলাতলী বিচ এ ঘুরতে যাই। কক্সবাজারের পর্যটকদের জন্য কলাতলি বিচ অন্যতম আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকত। প্রতি বছর বিভিন্ন বয়সের লোকেরা সমুদ্র-স্নান করার অনুভূতি দেখতে এখানে আসে। এই কলাতলি বিচ ও অনেক সুন্দরতম একটি পর্যটন কেন্দ্র।

আমরা সন্ধ্যায় একটি হোটেলে বসে নাস্তা করি। আমাদের বাস ছিলো রাত ৮ টায়। নাস্তা করার পর আমরা বাস কাউন্টারে যাই। এবং যথা সময়ে বাস আসে এবং আমরা নিজেদের বাসার উদ্দেশ্য রওনা দেই। এই ছিলো আমার কক্সবাজার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। আশা করি সবাইকে ভালো লেগেছে। আসলে এটি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ একটি অভিজ্ঞতা ছিলো।