ভালোবাসার অনুভুতি (একটি তোতা পাখি ও আমি):
একটি তোতাপাখি ও আমি-
যাই হোক, এবার আসা যাক মূল কথায়, অফিস থেকে আমার বাসা খুব একটা বেশি দূরে না, যে কারণে আমি দুপুরের খাবারটা বাসায় গিয়েই খাই।
Copyright free image source:pixabay
যাথারীতি একদিন দুপুরে আমি বাসায় গিয়ে দরজার কলিং বেল বাজাতেই আমার সাত বছর বয়সি ছেলে এসে দরজা খুলতে খুলতে বললো, জানো বাবা, আমাদের বাসায় একটা তোতা পাখি এসেছে, চলো দেখবে, গিয়ে দেখি বাসার জানালার সাথে একটি তোতা পাখি দাঁড়িয়ে আছে, দেখেই আমার ভেতর কেমন যেন একটা অনুভুতির সৃষ্টি হলো। আমি সাধারনত এক ঘণ্টা সময় নেই দুপুরের খাবারের জন্য কিন্তু ওই সময়টাতে ও আমি আমার পোশাক পরিবর্তন করে লুঙ্গি পড়ি, কিন্ত এই সময় আমি পোশাক পরিবর্তন না করেই, তোতা পাখিটির খাবারের জন্য চাউলের ড্রাম থেকে একমুঠো চাল এবং ছোট একটি পাত্রে কিছু পরিমান পানি দিয়ে তারপর আমি আমার কাজে গেলাম।
তোতা পাখিটি দেখে মনে হচ্ছিলো যে, এটি কোন দল থেকে পথ হারিয়ে হয়তো চলে এসেছে, অনেকটা ক্ষুধার্ত ও মনে হচ্ছিল। আমি খাবার শেষ করে অফিসে আসার সময় গিয়ে দেখলাম যে, সামান্য কিছু খাবার খেয়েছে মাত্র, দেখে মনে হলো যে, তোতা পাখিটির মধ্যে একটা ভয় কাজ করছিল। এর মধ্যে আমার ছেলে বার বার গিয়ে দেখছলো যে,তোতা পাখিটি খাবার খাচ্ছে কি না। আমি অফিসে এসে কয়েকবার ফোন দিয়ে খবর নিচ্ছিলাম যে, তোতা পাখিটি আছে কিনা বা খাচ্ছে কিনা। কেন জানি পাখিটার জন্য একটা অনুভুতি কাজ করছে।
যাথারীতি রাতে বাসায় গিয়ে সব কাজ বাদ দিয়ে প্রথমেই তোতা পাখিটির কাছে গেলাম, দেখলাম পাশের বিল্ডিংয়ের জানালার টপের উপর দাঁড়িয়ে আছে। তখনো বুঝতে পারছিলাম না, তোতা পাখিটি কোথা থেকে এসেছে। তোতা পাখিটি একবার এই বিল্ডিং আর একবার ওই বিল্ডিং এভাবেই ছোটাছুটি করছে। দেখলাম কিছু খাবার ও পানি এখনো অবশিষ্ট আছে, তারপর ও আমি আবার নতুন করে কিছু খাবার পানি দিলাম। সময় যতই যাচ্ছে, এর প্রতি আমার ভালোবাসাটা কেন জানি গভীর হচ্ছে। রাতে ঘুমাতে যাবার আগে আবার আমি বারান্দায় গিয়ে একবার দেখে নিলাম তোতা পাখিটি আছে কিনা, দেখলাম দেখলাম আমার জানালার গ্রীলের উপর দাঁড়িয়ে আছে, দেখে আমি কিছুটা স্বস্তি পেলাম এবং কিছুটা শিওর হলাম যে অন্ততঃপক্ষে রাতে আর কোথা ও যাবে না। এই ভেবে রাতে আমি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে গেলাম।
Copyright free image source:pixabay
পরেরদিন সকালে উঠে প্রথমেই আবার দেখে নিলাম
তোতা পাখিটি আছে কিনা, দেখে আবার খাবার ও পানি দিয়ে আমি অফিসে চলে আসলাম, এবং আসার সময় আমার স্ত্রীকে বলে আসলাম তোতা পাখিটিকে যেন দেখে রাখে এবং খাবার শেষ হলে আবার যেন খাবার দেয়।
একটি কথা না বললেই নয়, আমার ছেলে আমাকে কয়েকবার বলেছে বাবা, তোতা পাখিটি জবাই করে দাও, আমি গোস্ত খাবো। কিন্তু আমি তাকে সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে বলেছি যে, বাবা এমনটি করতে নাই, এর গোস্ত খাওয়া যায় না, তারপর আর কখনো বলেনি। কারণ আমি এভাবেই আমার ছেলেকে শিক্ষা দিচ্ছি।
যাথারীতি আমি আজকে আবার দুপুরের খাবার খেতে গিয়ে তোতা পাখিটিকে খাবার ও পানি দিয়ে আসলাম এবং ওর থাকার মতো একটা জায়গা ও করে দিলাম, দিয়ে আমি অফিসে চলে আসলাম।
আসল ঘটনাটা ঘটলো রাতে যখন আমি বাসায় ফিরলাম তখন, আমি বাসায় গপোশাক পরিবর্তন না করেই তোতা পাখিটি দেখতে গেলাম, কিন্ত তোতা পাখিটিকে না দেখে আমি কিছুটা বিমূর্ষ। হঠাৎ ছেলে দৌড়ে এসে আমাকে বললো, জানো বাবা,পাঁচ তলার আন্টি এসে আমাদের তোতা পাখিটি নিয়ে গেছে। কথাটা শুনেই আমি কেমন যেন হয়ে গেলাম। কি বলবো ভাষা খুজে পাচ্ছিলাম না, কারণ আমি কখনই ভাবতে পারিনি যে, তোতা পাখিটি আমার বিল্ডিংয়েরই কারো পালিত এবং তোতা পাখিটি এত তাড়াতাড়ি অন্য কেউ নিয়ে যাবে। কেননা এর আগে কখনই এই বিল্ডিং এ আমি কোন তোতা পাখি দেখিনি।
এই দুইদিনে তোতা পাখিটির সাথে আমার ভালোবাসার যে গভীরতা সৃষ্টি হয়ে সেটা আমি বলে বোঝাতে পারবো না। মনের অজান্তেই দু চোখ বেয়ে পানি চলে আসলো। একটা তোতা পাখিটিকে দুই দিনেই এতটা ভালোবেসে ফেলেছি সেটা আমি নিজেই বিশ্বাস করতে পারছি না।
Copyright free image source:pixabay
এই ঘটনায় আমি বুঝতে পারলাম, আসলে ভালোবাসাটা হচ্ছে সম্পুর্ণ মনের ব্যাপার এবং এই ভালোবাসাটা যে কোন কিছুর সাথেই হতে পারে। একটা মানুষের প্রতি আরেকটা মানুষের যেমন ভালোবাসার জন্ম হতে পারে, তেমনি একটা মানুষের অন্য যে কোন প্রাণির প্রতি ও জন্মাতে পারে এবং সেটা যে কোন সময়।
এই ইটপাথরের শহরের চার দেওয়ালের মধ্যে থেকে ও একটা তোতা পাখি আমার ঘুমন্ত মনটাকে নাড়িয়ে দিয়ে, যে ভালোবাসার অনুভুতিকে জাগিয়ে দিয়ে গেল সেটা আমি কোনদিনই ভুলতে পারবো না। আসলে ভালোবাসাটা বুঝি এমনই হয়, এভাবেই হয়।
পাখির প্রতি ভালোবাসা আমার অনেক ছোটবেলায় আমার একটি টিয়া পাখি ছিল সব সময় আমার সঙ্গেই থাকতো কিন্তু একটি দুর্ঘটনার কারণে আমার টিয়া পাখিটি আমি হারিয়ে ফেলেছি। আপনার পোস্টটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
শুধু তোতা পাখি বলে নাই ভাই,অচেনা মানুষের যদি দুই দিনের জন্য চোখের সামনে থাকে, তার সাথে ওটা বসা হয় কথা বলা হয়। তাহলে এমনভাবে সে চলে গেলে তার জন্য খারাপ লাগে।
ঠিকই বলেছেন ভাই, মায়া এবং ভালোবাসাবড় একটা জিনিস, এই জিনিস একবার কারো উপর যদি ভর করে তাহলে আর কিছুই করার থাকে না।
বাহ খুব চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আপনার পোস্ট পড়ে খুব ভালো লাগলো। আপনার লেখা বেশ অসাধারণ । আসলে পাখিদের প্রতি আমাদের অন্যরকম ভালবাসা কাজ করে। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল ধন্যবাদ।