বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে লিখিত একটি গল্পঃ দালাল(প্রথম অংশ)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago
আসসালামু আলাইকুম
আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমি ও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের সামনে একটি গল্পের প্রথম অংশ শেয়ার করবো। গল্পটার নাম হচ্ছে দালাল। দালাল,গল্প আকারে লেখা হলেও এটি একটি বাস্তব ঘটনা অবলম্বন লেখা। এর পিছনে রয়েছে এক করুন কাহিনী। গল্পটা কয়েকটি পর্ব আকারে আপনাদের মাঝে শেয়ার করাবো। আশা করি সবগুলো অংশই আপনারা পড়বেন তাহলেই গল্পটার আসল মর্মার্থ বুঝতে পারবেন। ঘটনাটি আমার এক ছোট ভাইয়ের বিদেশ যাত্রাকে নিয়ে লেখা। আসলে অতিরিক্ত লোভ কখনো ই ভালো না। আমাদের উচিৎ সব কিছুতে অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকা। চলুন তাহলে শুরু করা যাক-


image.png

Copyright free image:pixabay

image.png

পোস্ট ক্যাটাগরিঃ ধারাবাহিক গল্প।
গল্পের শিরোনামঃ দালাল।
তারিখঃ ১৪ই আশ্বিন ১৪২৯ খ্রিস্টাব্দ(বাংলা)।
আমার আপন খালাতো ভাই মোঃ জাহিদ, যার ডাক নাম হচ্ছে মাহফুজুর রহমান। ছোট খালার ছোট ছেলে। বয়স আনুমানিক ২৭ অথবা ২৮ বছর হবে। পাঁচ ভাই এবং এক বোনের মধ্যে জাহিদ সবার ছোট। লেখা পড়া খুব একটা করা হয়নি। সপ্তম শ্রেণীপর্যন্ত লেখা পড়া করেছে। করা হয়নি মানে লেখা পড়ায় তেমন একটা ভালো ছিলো না, এছাড়া লেখা পড়া করার তেমন একটা আগ্রহ বা ইচ্ছা ও ওর মধ্যে ছিল লা।


পরিবারের ছোট ছেলে হওয়ার কারণে ছোট বেলা থেকেই সব কিছুতে কেমন যেন একটু উদাসীন উদাসীন ভাব ছিলো। তাছাড়া সংসারের সবাই মোটামুটি ইনকামের মধ্যে থাকায় সংসার ও মোটামুটি স্বচ্ছল ছিল যার কারণে নিয়ে তেমন একটা ভাবতে হয়নি। তাছাড়া আমাদের মাদারীপুরের ছেলেদের মনের ভিতরে সব সময় একটা জিনিস কাজ করে সেটা হলো - লেখা পড়া হোক বা না হোক, চাকুরী হোক বা না হোক ইতালি যাওয়ার রাস্তা তো খোলা আছেই। আমাদের মাদারীপুর জেলায় এমন কোন বাড়ি নেই যে বাড়ির একটা ছেলে ইতালি নাই।

জাহিদের মনের ভিতরে ও এমন চিন্তা ই হয়তো ছিল। হয়তো কি ১০০% ছিল। কারণ, তখন তার মেঝো ভাই মোঃ কামরুজ্জামান ইতালির বাসিন্দা। সে প্রায় চার-পাঁচ বছর যাবত ইতালি থাকে।

এদিকে জাহিদ একবার স্কুলে ভর্তি হয়ে কয়েক দিন ক্লাস করে আবার মিস দেয়। আমার সাথে একদিন দেখা হলে আমি জিজ্ঞেস করলাম কিরে লেখা পড়া নিয়ে এমন উদাসীন কেন? একবার কয়দিন স্কুলে যাস আবার কয়দিন যাস না। ব্যাপার কি? ও আমাকে বলে ভাই স্কুলে গিয়ে কি হবে আমার দ্বারা লেখা পড়া হবে না। আপনি তো জানেন আমার মেধা কেমন। আমি ভাই চেষ্টা করতেছি ইতালি যাওয়ার জন্য। মেঝো ভাইয়ের সাথে কথা বলেছি। মেঝো ভাই ব্যবস্থা করবে বলেছে।

image.png
Copyright free image:pixabay

ওর সাথে কথা বলার দেড় মাস পরে ফেইসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিলো আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর রহমতে আমি ইতালিতে এসে পৌছালাম। আপনারা হয়তো বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, মাদারীপুরের ছেলেদের কাছে ইতালি যেন পান্তা ভাত। ওদের কাছে ইতালি যাওয়া মানে হচ্ছে মাদারীপুর থেকে ঢাকায় আসা। ভাগ্য খাবাপ হলে অনেক সময় আবার মাসের পর মাস কিংবা বছরের পর বছর ও লিবিয়াতে পড়ে থাকতে হয়। অনেকে আবার জীবন যুদ্ধে হেরে গিয়ে মৃত্যুকে আপন করে নেয়।

যাই হোক জাহিদের হয়তো ভাগ্য ভালো, আল্লাহ তাকে খুব সহজেই তার গন্তব্য স্টেশনে পৌঁছে দিয়েছেন। ইতালিতে যেহেতু জাহিদের মেঝভাই ছিলো তাই তার সেখানে থাকা খাওয়া বা অন্যান্য কাজে তেমন কোন অসুবিধা হয় না। তবে একটা বিষয় হচ্ছে ইতালিতে যাওয়ার পর প্রথমে তাকে একটি সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয় এবং সেখানেই তার থাকা খাওয়া এবং অন্যান্য সুবিধা-অসুবিধাগুলো সরকারি ভাবেই দেওয়া হয়। চাইলে এখানে থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে কাজ করে মাসে ৮০/- হাজার থেকে ১০০০০০/- আয় করতে পারে। এবং আমাদের বাংলাদেশিরা মূলত এই কাজটিই বেশি করে। কারণ এখানে যেহেতু থাকা খাওয়া ফ্রী তাহলে এখানে থেকে যা আয় করা যাবে সবটাই হাতে থেকে যায়।

মাস খানেক পরে জাহিদ আমাকে মেসেঞ্জারে ফোন দেয় এবং বলে ভাই আমি এক মাস হলো ইতালি এসেছি, সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে আছি এখন। এখানে কিছুদিন থাকার পরে মেঝো ভাইয়ের কাছে যাবো। বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার পুরো ঘটনা আমার সাথে শেয়ার করলো। বললো ভাই এখন এখানে থেকে কিছু কাজ করতেছি। আমি জিজ্ঞেস করলাম নতুন অবস্থায় এখানে থেকে কাজ করলে কেমন ইনকাম হয়। জাহিদ আমাকে বললো, নতুন অবস্থায় এখন বাংলাদেশি ৬০,০০০/- থেকে ৭০,০০০/- টাকা ইনকাম করা সম্ভব। আমি বললাম দেখ যেটা ভালো সেভাবেই কর। জাহিদ আমাকে বললো, ঠিক আছে ভাই ভালো থাকবেন। এখন কাজে যাবো, অন্যদিন আবার কথা
বলবো এই বলে জাহিদ ফোন রেখে দিল।

কিছুদিন পরে জাহিদ আমাকে আবার মেসেঞ্জারে ফোন দেয়। তখন রাত ১১ টা বাজে। আমি ফোন রিসিভ করতেই বললো ভাই কেমন আছেন? আমি উত্তর দিলাম আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। জাহিদ আমাকে বলে ভাই, বিদেশে আসার পর সবাইকে খুব বেশি মনে পড়ে তাই আপনাকে মাঝে মাঝে ফোন দেই, দেশের কারো সাথে কথা বললে অনেক ভালো লাগে। আমি জাহিদকে জিজ্ঞেস করলাম তোর সাথে আমাদের দেশের কেউ নাই। ও বললো আছে ভাই। আমাদের বাড়ির পাশের ই আরও দুইজন থাকে।
এবার জাহিদ আমাকে বলে ভাই ইতালি আসবেন নাকি? আমি জাহিদকে বললাম আমার সাগরে অনেক ভয় লাগে। জাহিদকে আমি জিজ্ঞেস করলাম কেন তুই কি ইতালি লোক নিবি নাকি?

জাহিদ আমাকে উত্তর দেয় এখনো এমন চিন্তা ভাবনা নাই, দেখি নিজে আগে প্রতিষ্ঠিত হই তারপর ভেবে দেখা যাবে। তবে ভাই যদি সুযোগ পাই তাহলে চিন্তা করবো। জাহিদকে আমি মজা করে বললাম তাহলে তুই দালালি শুরু করবি? জাহিদ আমার কথা শুনে হেসে দিল।

image.png
Copyright free image:pixabay

গল্পটি পড়ে প্রথমে আপনারা হয়তো অনেক কিছুই বুঝতে পারবেন না। কিন্তু প্রতিটি পর্ব পড়লে আপনারা হয়তো বুঝতে পারবেন দালাল মূল ঘটনা। এই জন্য আপনাদের প্রতিটি পর্বই পড়তে হবে। কারণ দালাল একটি বাস্তব কাহিনী নিয়ে লেখা গল্প।(চলবে...)

আমার পরিচয়
আমি আজিজুল মিয়াঁ, আমার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর। আমি জগ্ননাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে বর্তমানে একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে ম্যানেজার পদে কর্মরত আছি। লিখতে আমার অনেক বেশি ভালো লাগে। আমি ছোট বেলা থেকেই কম-বেশি লেখা-লেখি করতাম। লেখা-লেখির পাশা-পাশি আমি ঘুরতে এবং খেলা-ধুলা করতে অনেক পছন্দ করি। সময় পেলেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে বের হই। অতিরিক্ত কথা বলা এবং মিথ্যা কথা বলা আমি সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করি।

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNz8uuU7jNdUdZcqn6h7peG3CH7HW4Dj4EnjdfKn9T6S1nX92sULZRaFUhpFmzY87Rh7WVkoNuC.png

45GhBmKYa8LQ7FKvbgfn8zqd6W2YEX34pMmaoxBszxVcFaFa6PCA5PqBjf3814AomaBNh1sjAhGurcrbXNutXLYaLc5W7C7iWHwYRZUdeGsxQyRorKqnJwnjUc3brU9oeX9B2T59jAoyyKcMJuoLMWCjXWGm8395pPJ5ZzZK8THWPqVK9d2S1GubN3KFmMuzpzgMZ43oggvLaDWozr.png

45GhBmKYa8LQ7FKvbgfn8zqd6W2YEX34pMmaoxBszxVcFZqrzKdJTDj19NPENMLjUWvB8Xjks4ZJeRhMA1w1uNJiqUvFDj1Cxtp3GTJiYfTRwjrKyVACdNy67niAXdjqPmgxWcX1tSNeVajwdHgFxSEpDaGPFFSEfVeYAUjLVGhJxyRXT1AcMGYY1yujdtG4RN6Awmrg5FynsEPea9.png

ধন্যবাদ সবাইকে

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59403.33
ETH 2607.28
USDT 1.00
SBD 2.38