স্কুল ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখতে যাওয়া এবং তার পরিনাম(শেষ অংশ):

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago
যাই হোক দ্বিতীয়ার্ধের সিনেমা শুরু হয়েছে বটে, আমরা ও সিনেমা দেখছি, কিন্ত আমাদের, বিশেষ করে আমার মন কিছুতেই সিনেমার দিকে নাই। বলে রাখা ভালো যে আমি ছিলাম আমার পরিবারের সবচেয়ে ছোট, যার কারনে সবার শাসন আমাকে হজম করতে হতো। আর আমারা ভাগিনা ছিল সবার বড়, যার কারনে তার ভয়টা ও অনেক কম ছিল। সিনেমা হলে বসে আছি ঠিকই কিন্তু এতটাই টেনশন ভিতরে কাজ করছে যেটা বলার মতো না।

image.png
Copyright free image source:pixabay

অনেক টেনশন থাকা সত্বে ও সিনেমা শেষ করলাম। সিনেমা শেষ করে বের হয়ে চারপাশে ভালো মতো দেখে নিলাম যে, চাচাতো ভাই আশেপাশে আছে কিনা। দেখলাম নাই, তারপর আমরা গাড়ির স্টান্ডে আসলাম। এসে গাড়িতে বসলাম, গাড়িতে বসে ও ভাবছি যে, সেকি আমাদের দেখেছে? দেখলে হয়তো তাকে বলতাম যে, ভাই কথাটা বাড়িতে বলিয়েন না, সে যদি না মানতো তাহলে বাড়িতে গিয়ে আমিই বলে দিতাম যে, আমি সিনেমা দেখতে গয়েছিলাম। কিন্তু এখন কোনটাই নিশ্চিত হতে পারছি না।

অনেক চিন্তা ভাবনার পর সিদ্ধান্ত নিলাম যে, সিনেমা দেখেছি এই কথা কিছুতেই আগে বলা যাবে না, পরে যা হবার হবে। আমাদের বাড়িতে পৌছাতে পৌছাতে বিকেল ৫ টা বেজে গেল। নরমলি আমাদের স্কুল থেকে বাড়িতে আসতে চারটা বাজে। মা আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি আগের মতোই উল্টা পাল্টা বলে মাকে বুঝালাম। মা তখন কিছুই বলেনি, তো আমি একটু স্বস্তির নিশ্বাস নিলাম যে, হয়তো ভাই আমাদের দেখেনি বা দেখলে ও হয়তো বাড়িতে কিছু বলেনি। কিন্তু আমার চাচাতো ভাই, আমাদের অনেক আগেই বাড়িতে এসেছে এবং এসেই বিষয়টা মাকে বলে দিয়েছে, কিন্তু মা আমাকে বুঝতে দেয়নি কারণ, মা যদি আমাকে এখনি কিছু বলে তাহলে আমি হয়তো আজকে ঘরেই যাবো না, অথবা হয়তো ভাবতে পারে রাতে তো ঘরে আসবেই তখনিই তো ধরা যাবে।

যাই হোক, সন্ধার পর আমি হাত পা ধুয়ে প্রদিনের মতো বই নিয়ে পড়তে বসলাম। আমি সব সময় আমার খাটেই পড়তে বসতাম। আমি সবচেয়ে বেশি ভয় পেতাম আমার মেঝ ভাইকে। আমার মেঝ ভাই ১৯৯৪ সালে এস এস সি পরীক্ষায় স্টার মার্ক পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। আমি পড়তেছি এমন সময় আমার মেঝভাই এসে জিজ্ঞেস করলো যে, আজকে স্কুলে কি অংক করিয়েছেন দেখি। আমার মধ্যে একটা ভয় কাজ করছে কি হয় না হয়। তারপর ও আমি সাহস করে বলছি যে, এইটা পড়িয়েছে, এইটা লিখিয়েছে।

image.png
Copyright free image source:pixabay

এমন সময় হঠাৎ মা এসে বললো ও কেমনে জানবে যে, আজ স্কুলে কি পড়িয়েছে, ও তো আজকে স্কুলেই যায়নি। এখনতো আমার ভিতরে ভুমিকম্প শুরু হয়ে গেছে। কারণ, আগে যতবার সিনেমা দেখে মাঝাভাইয়ের কাছে ধরা খেয়েছি, ততোবারই আমাকে ইচ্ছে মতো মার খেতে হয়েছে।
মার কাছ থেকে ওই কথা শোনার পর মেঝ ভাই মাকে জিজ্ঞেস করলো, স্কুলে যায়নি তো কোথায় গিয়েছিল?
মা বললো, ওকেই জিজ্ঞেস কর। আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি কিছুই বলছি না, এমন সময় মা বললো ও আজকে শাহিনের সাথে মাদারীপুর গিয়েছিল সিনেমা দেখতে। এই কথা শোনার সাথে সাথে মেঝ ভাই আমাকে একটা স্কেল(আমার বাবার রেখে যাওয়া লোহা কাঠের স্কেল) দিয়ে আমাকে ইচ্ছেমত পিটানো শুরু করলো। আমি মার খাচ্ছি আর খাটের চারপাশ দিয়ে ঘুরছি। মা সামনে বসে দেখছে কিন্তু কিছু বলতেছে না, কারণ এর আগে ও অনেকবার এমন হয়েছে, কিন্ত আমি সংশোধন হইনি। অনেক্ষণ পর মা আমাকে মাঝাভাইয়ের হাত থেকে ছাড়ায় এবং আমাকে দিয়ে স্বীকার করায় যে, আমি আর কোনদিন স্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখতে যাব না। কিন্ত নতুন সিনেমা আসলে আমার এসব কিছুই আর মনে থাকতো না।

সেদিন আমি অনেক মার খেয়েছিলাম। যেটা আমি কোনদিন ও ভুলতে পারবো না। এই ঘটনার পর থেকে আমার ভাগিনা শাহিনের সাথে আমার যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। অবশ্য এটা বেশিদিন ছিল না। আমরা ভিতরে ভিতরে ঠিকই যোগাযোগ রেখেছি।

image.png
Copyright free image source:pixabay

একটা কথা বলে রাখা ভালো আমি যত কিছুই করতাম আমার পড়ালেখায় কখলো গাফলতি ছিল না, আমি আমার পড়া ঠিক সময় ই করে নিতাম। ক্লাসে আমার রোল ছিল-৩।

সর্বোপরি আমি বলতে চাই , হয়তোবা এমন ঘটনা আমার মতো আমার বাংলা ব্লগের অনেক ভাইদের জীবনে ও ঘটেছে। আমাদের সময় এমন ঘটনা অনেক ঘটেছে, যেগুলো ছিল মজাদার। এখন এমন মজাদার ঘটনা খুব বেশি ঘটে কিনা আমার জানা নেই।(সমাপ্ত)

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 60497.39
ETH 2637.52
USDT 1.00
SBD 2.56