ছোট গল্প "একজন মুনিতা ও একটি প্রেমের গল্প":

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago


আমার বাংলা ব্লগের সবাইকে আমার পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা, আশা করি সবাই ভালো আছেন । আজকে আমি "আমার বাংলা ব্লগের" সবার মাঝে একটি ছোট গল্প শেয়ার করবো, যার নাম দিয়েছি "একজন মুনিতা ও একটি প্রেমের গল্প"। এটি আমার লেখা প্রথম ছোট গল্প। জানিনা সবার কেমন লাগবে, তবে এই লেখাটা লেখার জন্য আমার সবটুকু দিয়ে আমি চেষ্টা করেছি ।

image.png
Copyright free image source: Pixabay

প্রায় একমাস হলো মুনিতা এবং রায়হানের কোন যোগাযোগ নেই। যোগাযোগ নেই বলতে কোন এক অজানা কারণে দুজনের মধ্যে কথা বা সব রকমের যোগাযোগ বন্ধ।

আজ সকালে রায়হান অফিসে যাওয়ার জন্য অফিসের গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু গাড়িটা আসতে কিছুটা বিলম্ব করছে। এই সময়টাতে রায়হান একটা সিগারেট হাতে নিয়ে সিগারেট টানতে শুরু করলো। বলে রাখা ভালো যে মুনিতার কারণেই রায়হান সিগারেট টানতে শিখেছে, তবে মুনিতার থেকে কষ্ট পাওয়ার কারণে নয়, মুনিতার আবদারের কারণেই।

সিগারেট টানতেছে এমন সময় রায়হানের কিছুটা দূরেই একটা গাড়ি থেকে সদ্য বিবাহিত একজোড়া কপোত-কপোতী নামতেছিল। মেয়েটা পিছন থেকে দেখতে অনেকটা মুনিতার মতোই। রায়হান ঠিক ধরতে পারলো না, মেয়েটা আসলেই মুনিতা নাকি অন্য কেউ। চাইলে ও মেয়েটাকে ভালো মতো আর দেখার সুযোগ ছিল না। কারণ, ততক্ষণে রায়হানের অফিসের গাড়ি চলে এসেছে।

রায়হান তড়িঘড়ি করে তার গাড়িতে উঠে পড়লো। কিন্তু তার মনের মধ্যে একটাই চিন্তা, মেয়েটা কি আসলেই মুনিতা নাকি অন্য কেউ। আবার ভাবছে যদি ও মুনিতা হয় তাহলে সে বঁধুর সাজেই বা কেন, আবার সাথের ছেলেটাই বা কে?

এইরকম হাজারো প্রশ্ন রায়হানের মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। মুনিতার সাথে যোগাযোগের যতটা গ্যাপ তাতে করে মনে হয় না যে মুনিতা এতটা বদলে যেতে পারে। তাছাড়া মুনিতা তো আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমাকে একদিন না দেখলে সে পাগলের মতো হয়ে যেত, ছুটে চলে আসতো আমার কাছে। অথচ সামান্য একটা কারণে সে আমার সাথে এমনটা করবে.? এমন একটু আধটু কথা কাটাকাটি তো আগে ও অনেকবার হয়েছে। এমন নানান প্রশ্ন রায়হানের মনে উঁকি দিচ্ছে।

অফিসের কোন কাজেই রায়হানের মন বসতেছে না, কি করবে বুঝতে পারতেছে না। এবার টেবিল থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে মুনিতার মোবাইল নম্বরটা ডায়ালে নিয়ে কল করবে, এমন সময় রায়হানের মনে হলো আমি কেন আগে ফোন দিব, দোষ তো আমি একা করিনি। এই ভেবে মোবাইলটা আবার টেবিলের উপর রেখে দিল। এভাবে বার বার মোবাইলটা হাতে নেয় আবার রেখে দেয়। কি করবে বুঝতে পারছে না।

শেষমেশ নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলো না রায়হান। আর কিছুই না ভেবে এবার মুনিতার নম্বরে ফোন দিলো। ফোন করে যেন রায়হান নিজের টেনশনটা আরো বাড়িয়ে নিলো। কারণ, মুনিতার মোবাইলটা এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। মোবাইলটা বন্ধ আছে।

এবার রায়হানের মনের সঙ্কাটা আরো বেড়ে গেল, তাহলে কি তার দেখাটা সত্যিই ছিল, সেকি মুনিতাকেই দেখেছিল। এই জন্যই কি মুনিতা মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে। রায়হানের টেনশনটা আরো একশ গুন বেড়ে গেল। এবার একের পর এক মুনিতার মোবাইলে ফোন করেই যাচ্ছে। কিন্তু একই উত্তর, মোবাইল বন্ধ। আর কোন নম্বর ও রায়হানের কাছে নাই।

রায়হান এবার চিন্তা করলো, সে মুনিতাদের বাসায় যাবে, আবার ভাবে এটা কি ঠিক হবে? হঠাৎ রায়হানের মনে পড়ে মুনিতার কাছের বন্ধু সজীবের একটা মোবাইল নম্বর তার কাছে আছে। বেশ কয়েকবার মুনিতা সজীবকে সাথে নিয়ে রায়হানের সাথে দেখা করেছে। রায়হান এবার সজীবের নম্বর এ ফোন দেয়। সজীব ফোন রিসিভ করলে রায়হান নিজের পরিচয় দিয়ে মুনিতার কথা জিজ্ঞেস করে। কিন্তু সজীব জানায় অনেকদিন ধরেই মুনিতার সাথে তার যোগাযোগ নেই।

সজীবের কাছ থেকে এমন কথা শুনতে রায়হান মোটেই প্রস্তুত ছিলো না, রায়হান সজীবকে জিজ্ঞেস করে মুনিতার কোন মোবাইল নম্বর তার কাছে আছে কিনা, সজীব বলে একটা নম্বরই আছে, সজীব নম্বরটা রায়হানকে বলে, কিন্তু রায়হান নম্বরটা শুনে নিরাশ হয়ে যায় কারণ, এই নম্বর এবং তার কাছে থাকা নম্বর যে একই।

এবার রায়হান সজীবকে বলে এই নম্বরটা তো বন্ধ। সজীব এবার রায়হানকে বলে ভাইয়া এটা ছাড়া আমার কাছে মুনিতার আর কোন নম্বর নেই, তবে ওর ছোট বোন জেনিকার একটা মোবাইল নম্বর আমার কাছে আছে, চাইলে এটাতে ট্রাই করে দেখতে পারেন।

রায়হান আর দেরি না করে জেনিকার নম্বরটা নিয়ে জেনিকার নম্বরে ফোন দেয়। জেনিকার সাথে রায়হানের কখনো কথা হয়নি তবে মুনিতার মুখে অনেকবার জেনিকার কথা শুনেছে। ওপাশ থেকে জেনিকা ফোন ধরে সালাম দেয়, রায়হান সালামের উত্তর দিয়ে বলে আমি তোমার সজীব ভাইয়া (রায়হান একটু চালাকি করেই নিজেকে সজীব বলে পরিচয় দেয় কারণ জেনিকা সজীবকে মোটামুটি চিনে এবং নিজের নাম বললে মুনিতা হয়তো তার সাথে কথা না ও বলতে পারে) বলছিলাম কেমন আছো? ওপাশ থেকে জেনিকা উত্তর দেয়, আমি ভালো আছি ভাইয়া, তুমি কেমন আছো? তোমার কন্ঠটা এমন লাগছে কেন ভাইয়া। রায়হান বুঝতে পারে যে তার কন্ঠটা মনে হয় জেনিকার কাছে একটু ভিন্ন মনে হচ্ছে, তাই সে বলে এই একটু অসুস্থ তো তাই। জেনিকা বলে ও আচ্ছা বুঝতে পেরেছি। তো এতদিন পরে ফোন দিলে যে, কোন সুসংবাদ দিবে কিনা?

রায়হান আর কথা না বাড়িয়ে বললো তোমার আপুকে একটু দেওয়া যাবে, একটু দরকার ছিলো। জেনিকা বললো অবশ্যই দেওয়া যাবে, তুমি লাইনে থাকো আমি দিচ্ছি। এবার রায়হানের বুকের মধ্যে কাঁপনি শুরু হয়ে যায় কি হয় না হয় এই ভেবে।

জেনিকা, মুনিতার কাছে গিয়ে মুনিতার হাতে মোবাইলটা দিয়ে বলে আপু কথা বলো সজীব ভাইয়া ফোন দিয়েছে। সজীবের কথা শুনে মুনিতা কিছুটা অবাক হয়, তারপর ও জেনিকার হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে খুব উৎফুল্ল মনে বলে, কিরে কেমন আছিস? এতদিন পরে আমার কথা মনে পড়লো।

রায়হান কোন কথা বলছে না, চুপ করে আছে, সে বুঝতে পারছে মুনিতা খুব ভালো মেজাজেই আছে। বোঝা যাচ্ছে তার মনে একটুকু কষ্টের লেস মাত্র নেই।

মুনিতা কথা বলে যাচ্ছে, রায়হান চুপ করে শুনে যাচ্ছে, কিন্ত কিছুই যেন বলতে পারতেছেনা। এবার মুনিতা বলে উঠলো কিরে কথা বলছিস না কেন?
এবার রায়হান নিজেকে সামলে নিয়ে উত্তর দিল, আমি ভালো আছি, তুমি কেমন আছো? রায়হানের কন্ঠটা বুঝতে মুনিতার এক সেকেন্ড ও সময় লাগলো না, রায়হানের কন্ঠটা বুঝতে পেরেই মুনিতা বললো আপনি? আপনি আমাকে কেন ফোন দিয়েছেন, আর আমার বোনের মোবাইল নম্বর ই আপনি কোথায় পেয়েছেন?

মুনিতার মুখ থেকে আপনি শব্দটা শোনার পর রায়হান যেন কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো। যে মানুষটি জীবনে কোনদিন আপনি শব্দটা ভুলে ও উচ্চারণ করেনি আজ সে এতটা বদলে গেল কিভাবে..? তাহলে কি সেদিনের বঁধুবেশের মেয়েটি মুনিতাই ছিলো। রায়হান চুপ করে আছে।

মুনিতা বলছে, আপনি আজকে সকালে যাকে গাড়ি থেকে নামতে দেখেছেন, সে ছিলাম আমি এবং সাথে ছিলো আমার হাজবেন্ড। আশা করি এর চেয়ে বেশি কিছু আপনাকে বলতে হবে না। দয়া করে আর কোনদিন আমাকে বিরক্ত করতে আসবেন না। এই বলেই মুনিতা ফোনটা কেটে দিলো। রায়হানকে কিছু বলারই সুযোগ দিল না।

রায়হান কিছু বলতে চেয়ে ও বলতে পারলো না, শুধু ভাবলো সব সম্পর্কগুলো কি এমনিই হয়, চাইলেই কি নিমিষেই সব শেষ করে দেওয়া যায়। ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তেই দু চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।

image.png
Copyright free image source: Pixabay



Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 69076.52
ETH 2742.00
USDT 1.00
SBD 2.72