পরিবার নিয়ে উত্তরার দিয়াবাড়ি লেকপাড়ে কিছুক্ষণঃ

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)
আসসালামু আলাইকুম
ভ্রমণ সবার কাছেই অনেক প্রিয়। আমি ও তার ব্যতিক্রম কেউ না। আমার কাছে ভ্রমণ অনেক ভালো লাগে। কিন্তু ঢাকার শহরের মতো ইট পাথরের শহরে ভ্রমণ করার মতো জায়গা কোথায় বলেন? যা কয়েকটা জায়গা আছে সেগুলোর পরিবেশ খুবই বাজে অবস্থা। তার উপর আবার যানজটের যন্ত্রণাতো আছেই। ঢাকার মধ্যেই কোন একটা জায়গায় তেতে হলে কতক্ষণে যেতে পারবো তার কোন ঠিক নাই। যাই হোক তারপর ও এর মধ্যেই সময় নিয়ে ঘুরতে হবে। আজ আমি ঢাকার দিয়া বাড়িতে ঘুরতে যাওয়ার একটু অভিজ্ঞতা আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি। চলুন তাহলে শুরু করা যাক-
পোষ্ট ক্যাটাগরিঃ ভ্রমন কাহিনী
শিরোনামঃ পরিবার নিয়ে উত্তরার দিয়াবাড়ি লেকপাড়ে কিছুক্ষণ
তারিখঃ ৭ই আশ্বিন ১৪২৯ খ্রিস্টব্দ
ছেলে নিহানের মাদ্রাসা আটদিন বন্ধ, কারণ প্রথম সাময়িক পরীক্ষা শেষ হয়েছে মাত্র তিনদিন আগে অর্থাৎ ৮ই সেপ্টেম্বর ২০২২ ইং তারিখে। আজ ১২ ই সেপ্টেম্বর সোমবার আমার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। ছেলের বায়না কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে। মাদ্রাসায় খুব একটা ছুটি পাওয়া যায় না। তাই তাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়না। আজ যেহেতু ছেলে বায়না ধরেছে না গিয়ে আর কি করার, অবশ্যই যেতে হবে। কোথায় যাবো? কোথায় যাবো? অনেক চিন্তাভাবনা করে ছেলে আর আমি মিলে খুজে বের করলাম যে, উত্তরা দিয়াবাড়ি তে যাওয়া যায়। কারণ উত্তরাতে গেলে দুদিক থেকেই লাভ। প্রথমত হচ্ছ্‌ , উত্তরা ১২/১৩ এর মোড়ে আমার একটা রেস্টুরেন্ট ব্যবসা আছে, দিয়া বাড়ি যাওয়ার পথে আমি আমার রেস্টুরেন্টের খোঁজখবর টা নিতে পারব, দ্বিতীয়তঃ আমার পরিবারকে নিয়ে আমি দিয়াবাড়ি লেকে সুন্দর একটা সময় কাটাতে পারব ।এ চিন্তা করে আমরা ফাইনাল ডিসিশন নিলাম যে উত্তরাতেই যাব। ছেলে এবং আমার অভিমতটা ছেলের মাকে জানালাম। সে খুব সহজেই মেনে নিল।
ইমেজ-১
ইমেজ--২
ইমেজ--৩
6f8e9e17-6c71-4719-a9a0-29b3cbcbe7fe.jpgb2fd72f0-727e-43ab-b55f-23de124611fa.jpgcfdabc74-33e5-41ba-96fe-a2dd1545a40f.jpg

সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা রেডি হয়ে উত্তরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম, বাসা থেকে বের হতে আমাদের প্রায় সকাল সাড়ে দশটা বেজে গেল। বাসা থেকে বের হয়ে আমরা মিরপুর দুই নাম্বার অর্থাৎ মিরপুর শপিং কমপ্লেক্সের সামনে থেকে প্রজাপতি পরিবহনে উঠলাম। দুপুর সাড়ে এগারোটায় আমরা উত্তরা আজমপুর নামলাম। আজমপুর নেমে অটোতে করে উত্তরা ১২/১৩ মোড়ে গিয়ে নামলাম, তখন বেলা ১১ঃ৫০ মিনিট। আমার রেস্টুরেন্টের নাম হচ্ছে নিউ জাফরান রেস্টুরেন্টে। আমার বাংলা ব্লগের সকল বন্ধুদের আমার রেস্টুরেন্টে দাওয়াত রইলো।
রেস্টুরেন্টে গিয়ে আমি সকালের নাশতা করলাম। বলে রাখা ভালো যে, আমি আমার ভাগিনাকে বলে রেখেছিলাম যেন আমাদের জন্য সকালের নাশতা রুটি পারাটা রেখে দেয়, কারণ আমরা পৌঁছাতে পৌঁছাতে হয়তো না ও থাকতে পারে, ভাগিনা তাই করেছিলো। নাস্তা শেষ করে ছেলে এবং ছেলের আম্মু পাকুরিয়া আমার মেঝো ভাইয়ের বাসায় চলে গেল।

ইমেজ--৪
ইমেজ--৫
ইমেজ--৬
cfdabc74-33e5-41ba-96fe-a2dd1545a40f.jpgd4a11d31-1a6f-4af5-9764-532b9dba550d.jpgf9446269-ddb2-4fe3-ad56-d56f41c48ca6.jpg

আমি বিকেল চারটা পর্যন্ত রেস্টুরেন্টের ক্যাশে বসলাম। ভাগিনা বললো, মামা আপনি আজকে একটু সময় দেন, ভাগিনার কথা মতোই আমি চারটা পর্যন্ত সময় দিলাম। এর মধ্যে দুপুরের খাবারটা ও আমি খেয়ে নিলাম। রেস্টুরেন্টের মালিক হিসেবে খেতে বসে একটু বাড়তি আপ্যায়ন ই পাচ্ছিলাম, ভালোই লাগছিলো নিজের কাছে।

যাই হোক আমি রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার আগে নিহানদের ফোন দিয়ে নিচে নামতে বললাম, তারপর আমি একটা অটো নিয়ে মেঝো ভাইয়ের বাসার সামনে থেকে নিহানদের নিয়ে দিয়াবাড়ি উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আমরা দিয়াবাড়ি লেকে পৌছালাম। পাকুরিয়া এবং দিয়াবাড়ি লেক খুবই কাছাকাছি।

আমাদের সাথে আরো ছিলো আমার মেঝ ভাবি, ভাতিজা এবং দুই ভাতিজি। আমরা পাকুরিয়া লেকপাড়ে নেমে পাড় ঘেসে হাটতে থাকলাম। বড়দের চেয়ে ছোটরাই অনেক বেশি উপভোগ করেছে ছোটরা, সেটা ছোটদের মুভমেন্ট দেখলেই বোঝা যায়।
এদিন সারাদিনই বৃষ্টি ছিল। কিন্তু বিকেল বেলা বৃষ্টি না হলেও আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন এবং হালকা বাতাস ও বইতেছিল। যার কারণে আমাদের ভ্রমণটা আরও বেশি মজাদার ছিল। হালকা বাতাস আমাদের শরীরে এসে লাগতেছি যেটা একটু অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি করেছিল।

ইমেজ--৭
ইমেজ--৮
ইমেজ--৯
1de2f0f3-18c1-48fa-a503-5f5b6aa14640.jpg8b8469ac-eeca-4110-b9bd-782d056304da.jpg25ccba71-a381-4eb3-8edf-d482dd02cd77.jpg

আমরা ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকলাম। একটা বিষয় আমার খুব বেশি চোখে পড়লো সেটি হলো, এই লেকের পানিগুলো দিন দিন কেমন যেন কালো হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি আগে ও কয়েকবার গিয়েছি কিন্তু যতবার গিয়েছি ততবারই আমি লেকের পানির পরিবর্তন দেখেছি। সরকার যদি এই লেকটাকে ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করত তাহলে ঢাকার মধ্যে এটি ভালো একটি পর্যটন কেন্দ্র হতো। এয়ারপোর্ট পাশে হওয়ায় এখান থেকে বিমান উঠা-নামাটা খুব ভালো ভাবেই দেখা যায়।

আমরা লেকের উত্তর দিক থেকে হাঁটতে হাঁটতে একেবারে দক্ষিন দিকে চলে গেলাম। আমি আমার কিউট ভাতিজিকে কোলে নিয়ে হাঁটতেছিলাম। এখান থেকে আর কিছুক্ষণ হাঁটলেই উত্তরা ১৮ নাম্বার সেক্টর, যেখানে মেট্রোরেলের স্ট্যান্ড বানানো হয়েছে, যেখান থেকেই মেট্রোরেল ছেড়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যাবে।

ইমেজ--১০
ইমেজ--১১
ইমেজ--১২
3940d703-5d4c-490a-8dac-2d030c69fb00.jpg9257473c-f93b-44f7-9b16-cd7a188b313d.jpgimage.png

এভাবে হাঁটতে হাঁটতে কখন যে বিকেল শেষ হয়ে সুর্য ডুবতে শুরু করলো টেরই পেলাম না। সূর্য ডুবতে শুরু করলেই আমরা বাসার দিকে চলে আসলাম। আর এভাবেই আমরা সুন্দর একটি বিকেলের সুন্দর কিছু মুহূর্তের যবনিকা ঘটালাম।

ভাইয়েরা আমার এক বিকেলের ভ্রমণ এর অভিজ্ঞতাটা সবার কেমন লাগলো জানতে চাই, সেই সাথে এ কথা ও বলতে চাই যে, আমরা যারা শহর নামের যন্ত্রের মাঝে বাস করছি তারা যেন মাঝে মাঝে একটু সময় করে আশেপাশের কোন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যঘেরা সুন্দর সুন্দর জায়গা গুলি ভ্রমণ করি তাহলে একটু ভালো লাগবে আশা করি বিশেষ করে যাদের ঘরে ছোট বাচ্চা আছে তারা তো অবশ্যই যাবেন। ধন্যবাদ আমার বাংলা ব্লগের সকল বন্ধুদের।

image.png

image.png

image.png

---ধন্যবাদ সবাইকে---
Sort:  
 2 years ago 

আপনাকে প্রথমেই অনেক শ্রদ্ধা যে ছেলের ভাললাগার কিছু বায়না হাজার ব্যস্ততার পরেও পুরন করেছেন । পরিবারের সাথে কিছু সময় কাটানোর মধ্যে অন্যরকম একটা প্রশান্তি কাজ করে । যদিও বাবারা এই যুগে খুব কমই সময় দিতে পারে ফ্যামিলিকে । আপনার ফ্যামিলির সাথে কাটানোর মুহুর্ত গুলো দেখে আমারই অনেক ভাল লেগেছে ভাইয়া । বিশেষ করে সব চেয়ে ভাল লেগেছে কাস ফুলের সেই জায়গাটা । দোয়া রইল আপনার ছেলের জন্য ভাইয়া , যুগশ্রেষ্ঠ আলেম হিসাবে আল্লাহ কবুল করুক -আমিন ।

 2 years ago 

জি ভাই, অবশ্যই ছেলের জন্য দোয়া করবেন। চেষ্টা করি ছেলে এবং পরিবারকে একটু সময় দিতে। ধন্যবাদ ভাই।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 62182.25
ETH 2437.70
USDT 1.00
SBD 2.61