আজকের পোষ্ট ||ছোট গল্প-আজ পুষ্পিতার বিয়েঃ

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago
আসসালামু আলাইকুম, বিসমিল্লাহির রাহমানীর রহীম।


আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই? আসা করি সবাই ভালো আছেন আমি ও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ্‌। বন্ধুরা আজ আবার নতুন একটি পোস্ট নিয়ে আমি আপনারদের মাঝে হাজির হয়েছি। আমার আজকের পোষ্টটি হচ্ছে একটি ছোট গল্প। আমাডেড় সমাজের অহরহ ঘটে যাওয়া কীছূ ঘটনার মধ্যে থেকে একটি ঘটনাকে নিয়েই আমার আজকের পোষ্ট । আশা করি সবার ভালো লাগবে। চলুন বন্ধুরা তাহলে শুরু করা যাক-

আজ পুষ্পিতার বিয়ে.jpg

  • পোষ্ট ক্যাটাগরিঃ ছোট গল্প।
  • পোষ্টের নামঃ আজ পুষ্পিতার বিয়ে।
  • পোষ্টের তারিখঃ ১৫ই অগ্রহায়ণ ১৪২৯ খ্রিষ্টাব্দ(বাংলা)।

image.png

আজ পুস্পিতার বিয়ে, বিয়ে বাড়িতে সবার মধ্যেই খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। চারদিকে একটা হৈ হুল্লড এবং খুশির আমেজ নিয়েই বিয়ের আনন্দকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই তো আর কিছুক্ষণ পরেই বরযাত্রী চলে আসবে। রান্না করা প্রায় শেষের দিকে। বর‍যাত্রীর গেট সাজানো কিংবা বরযাত্রীর পেন্ডেল, বরযাত্রীর ঘর সাজানো সব কিছুই সুন্দর ভাবেই করা হয়েছে।

পুস্পিতার আত্নীয় স্বজন সবাই চলে এসেছে। পুস্পিতার বাবা আব্দুস ছালাম সাহেব। তিনি স্থানীয় একটা মসজিদের ইমামতির চাকরি করেন। পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা মাসিক বেতনে তিনি ঈমামতির চাকুরিটি করেন।

এক ভাই এক বোনের মধ্যে পুস্পিতা বড়। ক্লাস নাইন পর্যন্ত লেখা পড়া করেছেন। সংসারের টানাটানি বা বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে আর লেখা পড়া করা হয়নি। পুস্পিতার ছোট ভাই আব্দুল্লাহ একটি মাদ্রাসায় হাফেজি পড়ছে, বয়স মাত্র ১৩ বছর।
বোনের বিয়ের আব্দুল্লাহর যেমন আনন্দ, তেমনি আবার কষ্ট ও হচ্ছে। কেননা, একমাত্র বোন তাকে ছেড়ে চলে যাবে, তখন কে তাকে আদর করবে বা পড়াতে বসাবে।

যাই হোক ইতিমধ্যে বরযাত্রী চলে এসেছে। বরযাত্রী আসলে সবাই এদিক সেদিক ছুটোছুটি শুরু করে দিলেন। কিভাবে বরযাত্রীকে আপ্যায়ণ করবে সেদিকে সবাই ব্যস্ত।

ছালাম সাহেবের যতটুকু সার্মথ্য আছে ততোটুকু দিয়েই চেষ্টা করেছন বরযাত্রী এবং আত্নীয় স্বজনদের আপ্যায়ণ করার জন্য। আগে বরযাত্রী এবং পরে আত্নীয় স্বজনদের খাওয়া-দাওয়া শেষ করলেন। সবার খাওয়া দাওয়া শেষে এবার বিয়ের কাজ শেষ
সম্পাদান করার জন্য সবাই প্রস্তুত। সাধারণত ফাইনালি বিয়ের কাজ শেষ করার আগে পাত্র পক্ষ এবং পাত্রী পক্ষ কিছু কথা বলে থাকেন। সেই কথাগুলো বলতে গিয়েই আসল ঘটনা বেরিয়ে এলো। পাত্র পক্ষের মধ্যে থেকে একজন বললেন যে পাত্রের সকল পাওনা রেডি আছে তো?

এবার পুস্পিতার বাবা বললেন সবই রেডি আছে কিন্তু শুধু মাত্র একটি মাত্র পাওনা আমি এখনো রেডি করতে পারিনি, সেটি হচ্ছে আপনারা যে হাত ঘড়িটি চেয়েছিলেন আমি সেটি কিনতে পারিনি মানে আমার বাজেট হয়নি। এই কথা শুনে ছেলের বাবা মোস্তাক সাহেব তো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন কি বলেন আপনি -আমার ছেলের হাতঘড়ি আপনি ম্যানেজ করতে পারেন নি মানে...। হাত ঘড়ি ছাড়া আমি আমার ছেলের জন্য আপনার মেয়েকে কোনদিন ই বধু করে নি্নে পারবো না। এই বলে ছেলেকে সহ সকলকে নিয়ে বিয়ের আসর থেকে উঠে চলে গেলেন।

এই কথা যখন পুস্পিতার কানে গেল পুস্পিতা তখন চড়া গলায় বলে দিল যে , যে ছেলে একটি মাত্র হাত ঘড়ি যৌতুকের জন্য আমাকে বিয়ে করবে না, এমন ছেলেকে আমি ও কোনদিন বিয়ে করব না। এই বলে পুস্পিতা বিয়ের পোশাক শরীর থেকে খুলে ফেললো এবন মনে মনে ভাবলো, এই পৃথিবীর মানুষগুলো কতো স্বার্থপর যে সামান্য একটি ঘড়ির জন্য একটা বিয়ে ভেঙ্গে দিতে পারে। ঘৃণা করি এই সমাজটাকে , এই সমাজের মানুষরূপি পশুগুলোকে। এই বলতে বলতে পুস্পিতা কেঁদে ফেললো।

শিক্ষাঃ আমাদের সমাজে এখনো এমন কিছু মানুষ আছে যারা অতি লোভী বা অন্যর জিনিসের উপর নির্ভর করে চলতে চায়।আমাদেরকে এই সব মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তা নাহলে আমাদের সমাজে আমাদের ছেলে বলেন মেয়ে বলেন তারা কোনদিন ই পরাধীনতার শিকল; থেকে বের হয়ে আস্তে পারবে না।

image.png

image.png

আমি আজিজুল মিয়াঁ, আমার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর। আমি জগ্ননাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে বর্তমানে একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে ম্যানেজার পদে কর্মরত আছি। লিখতে আমার অনেক বেশি ভালো লাগে। আমি ছোট বেলা থেকেই কম-বেশি লেখা-লেখি করতাম। লেখা-লেখির পাশা-পাশি আমি ঘুরতে এবং খেলা-ধুলা করতে অনেক পছন্দ করি। সময় পেলেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে বের হই। অতিরিক্ত কথা বলা এবং মিথ্যা কথা বলা আমি সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করি।


image.png

image.png

image.png

Sort:  
 2 years ago 
পুষ্পিতার বিয়ে নিয়ে পুরো পোস্টটি পড়লাম। আসলে এটা কত যে একটা ঘৃণীত কাজ তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আর পুষ্পিতা যে প্রতিবাদ করেছে তা খুবই যুক্তি সংগত।অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া, এত সুন্দরভাবে যৌতুকের বিষয়টি ছোট গল্পের মাধ্যমে আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য।
 2 years ago 

এম্ন সুন্দর একটি কমেন্টের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

বেশ চমৎকার একটি গল্প লিখেছেন আপনি।আমাদের সমাজে এরকম অহরহ ঘটনা আছে ঘড়ি,সাইকেল,রেডিও এগুলো জন্য বিয়ে ভেঙে গেছে।তবে বর্তমান সমাজ এত ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাই না।মোটরসাইকেল, বড় গাড়ি,মোটা অংকের টাকা এসব নিয়ে মাথা বেশি ঘামায়।ধন্যবাদ আপনাকে খুব সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

এমন সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

পুষ্পিতা একদম ঠিক কাজ করেছে। বর্তমান যুগে যদি কোন মেয়ে এভাবে প্রতিবাদ করত তাহলে হয়তো যৌতুক নামের প্রথা এই পৃথিবী থেকে উঠে যেত। পুষ্পিতার মত এত সাহসী মেয়ে মনে হয় এখনো দেখা যায়নি। যারা ছোট্ট একটা যৌতুকের জন্য বিয়ে ভেঙ্গে দিতে পারে তাদের সাথে বিয়ে না হওয়া অনেক ভালো। সত্যিই সমাজের মানুষগুলো কতটা নিচু মনের তা একটা যৌতুক প্রথা বিয়েতে বোঝা যায়। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

উৎসাহমূলক সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

আপনার এই গল্পের সাথে বাস্তবতার মিল আছে যদিও বর্তমান সময়ে এরকম প্রেক্ষাপট খুব একটা দেখা যায় না। তবে যদি আজ থেকে ২০ বছর পিছনে ফিরে যাওয়া যায় তাহলে এরকম অনেক দৃশ্য দেখা যাবে। যৌতুকের প্রথাটা এখনো আছে তবে আগের তুলনায় অনেক কম কারণ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে, সেই সাথে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের নারী সমাজ।

 2 years ago 

এরকম ঘটনা প্রত্যেক সমাজে অহরহ ঘটে থাকে। পুষ্পিতা সেই ছেলেটিকে বিয়ে করেনি তাই ঠিক হয়েছে। না হলে বিয়ের পর ছেলেটি পুষ্পিতাকে আরো বেশি যন্ত্রনা দিত। আপনি খুবই সুন্দর একটি গল্প লিখেছেন যা বাস্তবিক ঘটনা সাথে পুরোপুরি মিল। এরকম ছেলের সাথে তো মেয়ে বিয়ে দেওয়াটাই পাপ। এরকম নিচু মনের মানুষ কিভাবে হতে পারে। ছোট্ট একটি ঘড়ির কারণে পুরো বিয়েটা ভেঙে দিল। যৌতুক আমার একদমই পছন্দ না। আমাদের মাঝে এত সুন্দর একটি গল্প তুলে আনার জন্য ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.21
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 68156.06
ETH 3517.56
USDT 1.00
SBD 2.81