আসল জীবনের ঠিকানা - গল্প
আসল জীবনের ঠিকানা
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার পরেই আমাদের দিন শুরু হয় । একদিন খারাপ গেলে পরদিন ভাল আবার পর দিন খারাপ গেলেও এরপর দিনের আশায় থাকি নিশ্চয় ঐ দিনটা ভালো যাবে। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখছেন মৃত্যুর পরের জীবনটা কেমন যাবে? বা ঐ জীবনে ভালো থাকার জন্য আমরা কে কি তৈরি রাখছি ? আমার মোটেও মনে হয় না দিনে একবার হলেও আমাদের মনে আসে যে আমরা ঐ দিনটিতে ভালো থাকার জন্য কিছু করছি। বা ওই দিনটির কথা স্মরণ করছি। সত্যি বলতে পরকালের জীবনই হচ্ছে আমাদের আসল জীবন। আর এটা আমাদের মানতেই হবে দিনের-পর-দিন ভালো থাকার জন্য, ভালো খাবারের জন্য, ভালো পরিধানের জন্য আমরা কত কিছুই না করে থাকি। তবে এই সকল কিছু কি আমাদের কোনো কাজে দেবে ? নাকি পরকালের জীবনে ভালো থাকার রাস্তা তৈরি করে দেবে ? কোনোটাই নয় । দুনিয়ার পিছনে ছুটে কোন লাভ নেই। চলুন তাহলে আজ শিক্ষনীয় ছোট্ট একটি গল্প শেয়ার করি।
একটি গ্রামে থাকতো একজন ধনী ব্যক্তি তার নিজের সম্পদ, জায়গাজমিন, টাকাপয়সা কোন কিছুতেই কোনো কমতি ছিল না, তবে কমতি ছিল একটাই তার মহত্ত্বের। যে যাই বলুক বা যতই বিপদে পড়ুক না কেন ওই ধনী ব্যক্তির কাছ থেকে কখনো কেউ এক পয়সাও নিজের করে নিতে পারতোনা। হাজার হাজার টাকার মালিক হলেও কাউকে কখনো কিছু দেয়ার মতো মন-মানসিকতার বড়ই অভাবছিল। দিনের পর দিন রং তামাশা করে নিজের সব টাকা এভাবেই শেষ করতো, অপরদিকে গ্রামের মানুষজন না খেয়ে তার কাছে সাহায্য চাইলে ও কখনো তার মনে বিন্দু পরিমান দয়া হতোনা।
অন্যদিকে সেই গ্রামে বাস করতো একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তি, সারাদিন কাজের পরেও মাসশেষে অল্পকিছু টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খেয়ে যেত ।কিন্তু সে ছিল মহৎ আর দয়ালু মনের অধিকারী। আশেপাশের মানুষের জন্য কিছু না করতে পারলেও নিজের পরিশ্রমের টাকা দিয়ে গরিব মানুষদের সাহায্য করে যেত। মানুষের খাওয়া-পরা, জায়গা, বাসস্থান থেকে শুরু করে সকল ভাবে মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করতো এই ব্যক্তিটি । তার এই মহৎ মন-মানসিকতা গ্রামের মানুষজনের মন সহজেই কেড়ে নিয়েছে। আর সৃষ্টিকর্তার কাছেও ভাল মানুষ রূপে পরিচিত হয়েছে।
একদিন হঠাৎ সৎ নিষ্ঠাবান ও দয়ালু ব্যক্তিটি মৃত্যুবরণ করেন। তার এই অকাল মৃত্যু পরিবার থেকে শুরু করে গ্রামের কোনো মানুষই মেনে নিতে পারছেন না। প্রতিটি মানুষ তার জন্যে চোখের জল ফেলেছে আর ভালবাসা প্রকাশ করতে দূর দূর থেকে এসে তার জানাজায় শরিক হয়েছে। কথায় আছে, ভালো মানুষ বেশি দিন বাচে না, আবার নেমে এলো গ্রামের মানুষের জীবনে দুর্দশা। কষ্টের সময় যেন তাদের আবারো শুরু হতে শুরু করেছে।
দেখতে দেখতে একদিন হঠাৎ সেই ধনী ব্যক্তিরও মৃত্যু ঘটলো, তার মৃত্যুতে গ্রামের মানুষজন তো দূরের কথা পরিবারের মানুষরাই এক ফোটা চোখের জল ফেলেনি। তার এই অহংকার আর নিচু মন-মানসিকতায় অসন্তুষ্ট ছিলেন মহান আল্লাহ তায়ালাও। তার মৃত্যুর পর জানাজা তো দূরের কথা তার লাশকে কেউ ধরতে পর্যন্ত আসেনি। সেই বিশাল বড় মহলে তার লাশ পচে গলে নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল। পারেনি তার জমানো টাকা তাকে বেশিদিন বাঁচিয়ে রাখতে কিংবা সেই টাকা তাকে মৃত্যুর পর ভালোকিছু দিতে।
সত্যি বলতে বাস্তবতা এটাই, যে এই জীবনে আমরা রঙ তামাশা আর ফুর্তি করতে আসিনি। নিজের যা কিছুই থাকুক বা না থাকুক মানুষের উপকার করে যেতে হবে। কারন একমাত্র উপকার আর দান সদকা পারে আমাদের দুনিয়া আর আখেরাতের দিন কে সুন্দর আর সম্মানিত করতে।
সমাপ্ত
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
_
আপু আজকে খুব গুরুত্বপূর্ণ টপিক এবং সুন্দর একটি গল্প নিয়ে কথা বলেছেন। প্রত্যেকটা মানুষের চিন্তা চেতনা সঠিক হওয়া উচিত। জীবনের জন্য যে দুনিয়াবী সুখের চেষ্টা করে যাচ্ছি সেটাই কি মুল সুখ আমরা কিন্তু কেউই জানি না পরকালের কথা। যাই হোক এখানেই তো মানুষের বড় পার্থক্য প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যে সততা, নিষ্ঠা, দয়ালু এগুলো থাকতেই হবে তা না হলে তাকে মানুষ হিসেবে গণ্য করা একেবারেই চলে না। যেমন ওই গরিব লোকটি খুবই সততা নিষ্ঠা এবং ন্যাপরায়ন ছিলেন তাকে মানুষ খুবই ভালোবাসতো আর ওই ধনী ব্যক্তি যার কোন কিছুরই অভাব ছিল না শুধু মনুষ্যত্ব , উদারতা, দয়ালু মনোভাব ছিল না সেজন্য মানুষ তাকে ঘৃণা করতো। এখনো আমাদের সমাজে এরকম অনেক লোক রয়েছে।
আপু আজ খুব গুরুত্বপূর্ণ ও বাস্তবতা তুলে নিয়ে লেখাটা শেয়ার করেছেন। আমার খুব ভাল লেগেছে।এ জীবনই জীবন নয়। পরকাল বলেও একটা জীবন আছে।সেই জীবনের কথা আমরা ভুলে বসে থাকি।এখানে ন্যায়, সততা, মনুষ্যত্ব, দয়ালু হলে সব মানুষের কাছে যেমন ভাল হওয়া যায়, ঠিক তেমনি পরকালে আল্লাহর কাছেও ভাল থাকা যায়।ধনী হয়ে কি হবে যদি মানুষের উপকারেই না এলাম। সুন্দর করে গুছিয়ে পোস্টটি শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপু।অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য।