শৈশবে ভালোবাসার গল্প (দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব)

বেশ কিছুদিন যাবৎ শিক্ষকতা করছেন ম্যাডাম এই স্কুলের। এই গ্রামের এই মেয়ে সে। বাবার বয়স হয়ে গিয়েছে তাই কোনো কাজ কর্ম করতে পারে না। মধ্যবিত্ত পরিবারের একটি মেয়ে। মেয়ে একজন স্কুলের ম্যাডাম বলে বাবা বেশ গর্ভবোধ করেন। যাইহোক, ক্লাসে ঢুকেই দেখেন ছোট ছোট বাচ্চাদের মধ্যে একজন বড় মানুষ। কোনো ভাবেই যেন তাকে এই ক্লাসে মানাচ্ছে না। ম্যাডাম তখন বলে যে আপনি কে ? কিন্তু তার কোনো খবর যেন নেই। হা করে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে ম্যাডামের দিকে। বেশ কয়েকবার ডাকার পর তার হুশ ফিরে আসে ও ম্যাডামকে বলে আপনি আপনার ক্লাসের নতুন ছাত্র নতুন ভর্তি হয়েছি।

ম্যাডাম তখন কোনো কিছু বুঝতে না পেরে সোজা হেডমাস্টারের কাছে চলে যায় ও গিয়ে বলে আমার ক্লাসে একজন বাইরের লোক এসে বসে আছে। তখন স্যার বলে সে বাইরের লোক না। তুমি যেভাবে ক্লাস করাও সেই ভাবেই করাও আমি তোমাকে পরে সব বুঝিয়ে বলছি। ম্যাডাম তখন আবারো ক্লাসে ফিরে আসে ও প্রতিদিনের মতো ক্লাস করতে শুরু করে। কিন্তু ক্লাসের সব চেয়ে বড় ছাত্রটি যেন ম্যাডামের দিকেই তাকিয়ে আছে ও এভাবেই সে ক্লাস করছে। ক্লাস শেষে ম্যাডাম যখন বাড়ির দিকে ফিরছিলো তখন দেখে খোলা আকাশের নিচে একটি পুকুর পারে ছেলেটি বসে আছে ও শশা খাচ্ছে। তখন ম্যাডাম ছেলেটির কাছে যায় ও তার সম্পর্কে জানতে চাই।

তখন সে আনিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বললে ম্যাডাম সেটা বুঝতে পারে ও বলে সত্যি কথা বলতে আর এভাবেই তাদের মধ্যে আস্তে আস্তে একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। মেয়ের বাবা ছেলেটিকে খুব ভালো বলে জানে ও চিনে তাই প্রায় মেয়ের বাসায় যেত ও মেয়ের বাবার সাথে আড্ডা দিতো। আর এদিকে তাদের দুজনের আড্ডা ও হাসাহাসি দেখে মেয়ে মুচকি মুচকি হাসতো। আর এভাবেই তাদের দুইজনের মধ্যে একটি প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে ঠিকই তবে এখনো একজন আরেকজনকে কিছুই বলেনি।

এর মধ্যেই একদিন শহর থেকে ছেলের বাবা চলে আসে ও ছেলেকে নিয়ে যেতে চাই। বাবা এসে ছেলের কাছে ক্ষমা চাই ও বলে সেদিন আমি রাগের মাথায় কি না কি বলেছি তার জন্য তুই আমাকে ছেড়ে এত দূর চলে আসবি। ছেলেটি বলে আমার এখানেই ভালো লাগে আর আমি এখানেই থাকতে চাই। তারপরেও বাবা অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে ছেলেকে নিয়ে শহরে যায়। আর এদিকে তখন মেয়েটির একা অনুভব হতে থাকে। সে আর এখন বাচ্চাদের ভালো ভাবে ক্লাস করতে পারছে না। ক্লাসে আসলে বার বার সেই ছেলেটি যে ছিটে বসত সেদিকে তাকায়। ক্লাসটা যেন তার কাছে এখন শুন্য শুন্য লাগে।

কিছুদিন পর একদিন হুট করে ছেলেটি আবারো মেয়েটির সামনে হাজির। মেয়েটি বলে আপনি আবার কিসের টানে এসেছেন ? তখন ছেলেটি বললো জীবনে যা হারিয়েছি তা হয়তো আর ফিরে পাবো না, তবে এখন চোখের সামনে যা আছে তা আর হারাতে চাইনা, সাথে করে নিয়ে যেতে চাই। এর পর দুইজন দুজনার হাত ধরেই যেন এই ভালোবাসার সুন্দর গল্পের ইতি ঘটে।