আমি তিথি (গল্পের চতুর্থ ও শেষ পর্ব )
আমি তিথি
এইটুকু বাচ্চাদের মুখে এইসব কথা শুনলে মনটাই ভরে যায়। তখন মনে হয় ওদের জন্য যা করছি সেটা স্বার্থক। ওদের সাথে রাত আটটা পর্যন্ত সময় কাটিয়ে আজিজকে নিয়ে ঘুরতে বের হলাম রাতের বেলায়। আমার লিখা গল্পগুলো নিয়ে কথা বলতে বলতে অনেকটা পথ একসাথে হাঁটলাম। সারাদিন কোচিং আর আর্টের স্কুলে কি কি হলো সেটা নিয়েও গল্প করলাম দুইজন। ওর সাথে কথা বললেই মনটা ভালো হয়ে যায়। ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের লেকচারার। আমার চেয়ে তেমন আহামরি বড় না। স্টুডেন্ট ভালো দেখে মাস্টার্স শেষ করেই লেকচারারের দায়িক্ততা পেয়ে গেছে। আমাকে লেখালেখির ব্যাপারে খুব সাহায্য করে সবসময়। সুন্দর সুন্দর বই উপহার দেয় যখন তখন। ওর পছন্দ করা বইগুলো অসাধারণ এক কথায়। অন্যের অধীনে না খেটে নিজে কিছু করাটাই সবচেয়ে ভালো সেটা যত সামান্যই হোক না কেনো সেটাতে আলাদা একটা মূল্য আছে। এই কথাটা কেউ বুঝতে চায় না। ওদের জোর করে বুঝাতে যাওয়ার সময় আমার নেই। তাই নিজের মতো চলি, বেশি কথাও বলি না ওদের সাথে।
এইভাবে সময় যেতে লাগলো।আমার কিন্ডাগার্টেনটা আরো বড় হলো, ঐখানে ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা বাড়তে লাগলো দিনে দিনে। আমার আর্টের স্কুলটা আগের চেয়ে আরো সুন্দর হতে উঠলো, ঐখানেই অনেক অনেক মানুষ আসতে লাগলো রোজ রোজ। একটা ছোটো করে লাইব্রেরী খুললাম বাড়ির পাশে। ঐটা তে রোজ এত এত মানুষ বই পড়তে আসে, দেখলেই মনটা ভালো হয়ে যায়।আর নিয়মিত গল্প লিখি এখন। আগের লিখাগুলো বইমেলায় বেরিয়েছিল সবার চেষ্টায়। খুব নাম কামিয়েছিলাম। পয়সা তেমন নেই নি নিজে থেকেই কিন্তু যারা আমার লিখা পড়েছিল আমার ভক্ত হয়ে গিয়েছিল। দেখা হলেই খুব বলতো আমাকে নিয়ে। আমি নিজের পড়ালেখা,পরীক্ষা, কিন্ডাগার্টেন,কোচিং আর আর্টের স্কুলে সময় দিয়ে সারাদিন শেষে খুব ক্লান্ত হয়ে যাই কিন্তু যখনই কোনো ছাত্রীর বাবা কিংবা মা কল করে তার ছেলে মেয়ের ভালো রেজাল্টের জন্য আমার সুনাম করে সব ক্লান্তি ভুলে যায়,নতুন করে আবার বেচেঁ উঠি এরকম মনে হয়। সময়টা কিভাবে কেটে গেলো......
আমি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের লেকচারার। এই কাজের পাশাপাশি আমার কোচিং, আর্টের স্কুলটা কোনোটাই বাদ দেইনি। কারণ এইগুলো শুধু পড়ালেখা করানোর জায়গা হয়ে থাকেনি,মানুষের হাজারটা রঙিন স্বপ্ন এরসাথে রোজ বোনা হচ্ছে। এইগুলোর ভালো ভালো টিচার রেখেছি, সবার সুবিধা অসুবিধা বুঝে সামনে এগোচ্ছি। ভার্সিটি শেষ করেই বিয়েটা করে নিয়েছিলাম সবার কথাতে। এরপর আমি আর সে মিলে সব দেখছি, একসাথে কাজ করছি। জীবনটা যে আসলেই খুব সুন্দর সেটা খুব কাছ থেকে এই মানুষগুলোর সাথে থেকে অনুভব করেছি। মনে কোনো আফসোস নেই...মানুষের এত এত ভালোবাসা পাচ্ছি রোজ...মনে হয় কোনখানে কোনো কমতি নেই আর। সবার মুখে এখন "তিথি আপা", "ম্যাডাম", "আসসালামু আলাইকুম মিস","আপা আপনার জন্যই আজকে আমার মেয়েটা এতদূর"...এইসব শুনে শুনেই দিনটা সুন্দর কেটে যাচ্ছে দারুন ভাবে....।
সমাপ্ত
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
_
You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!
গল্পটির শেষটা বেশ ভালই লাগলো আপু। তিথি আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের লেকচারার। সেই সাথে কোচিং, আর্টের স্কুলের ওনার। সবাই তিথিকে ম্যাডাম ম্যাডাম বলে সম্বোধন করে। ভাল লাগলো। তিথিরা বেঁচে থাকুর সারা জীবন।
আপনার লেখায় গল্পটি পড়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে। বিশেষ করে গল্পের শেষ পর্বটি খুবই সুন্দর ছিল। ভালো কাজ করলে এবং ভালো কাজের সাথে জড়িত থাকলে প্রতিদিন মানুষ থাকে এমনিতেই সম্মান করবে। আপু আপনার নিকট থেকে পরবর্তী দিনে আরও সুন্দর সুন্দর গল্প আমি আশা করি।
আগের তিনটি পর্ব পড়ে তিথির ব্যাপারে যতই জেনেছিলাম ততই জানার আগ্রহ বেড়ে গিয়েছিল। ভার্সিটি শেষ করে তিথি আজিজকে বিয়ে করেছে এবং তিথি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের লেকচারার। সবার দোয়া রয়েছে তিথির উপর, কারণ সে নিজের কথা ভাবার আগে পরের কথা ভাবে। তিথির গল্পও প্রকাশিত হয়েছে। সবমিলিয়ে তিথির কোন তুলনা হয় না। তিথির তুলনা তিথি নিজেই। চারটি পর্বের এই গল্পটি পড়ে খুব ভালো লেগেছে আপু। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আশা করি সামনে আরও গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করবেন। ভালো থাকবেন সবসময়।