আজকের গল্প (ডাইরির শেষ পাতায়)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

ডাইরির শেষ পাতায়

angel-5705040_960_720.jpg

image source

ডাইরির শুরুটা ঠিক এভাবেই ছিল যে ভাবে লিখা আছে ঠিক সেভাবেই পড়ছি। একের পর এক ফোন বেজেই চলেছে কাঁপাকাঁপা কন্ঠে ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে প্রচন্ড রাগ আর ধমকের স্বরে........

আজকের পর থেকে তোমার ফোন যেন আমার নাম্বারে না আসে, এক নাম্বারে বাজে আর ফালতু একটা মেয়ে তুমি, তোমার এত এত জেরা আর কথাই আমি অতিষ্ট হয়ে গেলাম। তোমার জন্য আমি আমার পার্সোনাল জীবনে সময় দিতে পারি না সবকিছুর তো একটা লিমিট থাকে তাই নয় কি? প্লিজ প্লিজ প্লিজ আমি সত্যিই রেহাই চাচ্ছি তোমার কাছ থেকে। বলেই ফোন কেটে গেল এরপর...... নিস্তব্ধতা.........

দেখতে দেখতে কেটে গেল পাঁচটি বছর। কি ভাবছেন? কেন বা কিভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি হলো? চলুন তাহলে পাঁচ বছর পিছিয়ে যায়......... দিনটা ছিল পহেলা ফাগুন, আলমারি খুলে সেই শাড়িটা বের করলাম। সাথে খোপায় বাধার বেলি ফুলের মালা টি। মাসের বেশিরভাগ দিনই শাড়ি পরার অভ্যাসটা আমার ভালোই হয়েছে, তবে অভ্যাস বললেও ভুল হবে, প্রিয় মানুষের ইচ্ছেই আমার ইচ্ছে। কখনো হলুদ, কখনো নীল, আবার কখনো গোলাপি। আর হাতে একটি গোলাপ ফুল এটা আমার একটা ইচ্ছা বলা যায়, প্রতিদিন দেখা করতে যাওয়ার সময় একটা গোলাপ ফুল তাকে না দিলে দিনটাই যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম, হলুদ শাড়ি, খোঁপায় বেলি ফুলের মালা, আর হাতে লাল গোলাপ। কিছুদূর হাঁটতেই দেখা পেলাম প্রিয় মানুষটার। যার মুখখানা দেখতেই এতদূর আসা।

আজকের দিন টাও প্রতিদিনের মতো ভালোই কেটেছে, ভালোবাসা কি জিনিস আর ভালোবাসার মানুষ কতটা ভালোবাসা দিতে পারে তা আজ ভালো না বাসলে হয়তো বুঝতে পারতাম না। রিলেশনের আজ তিন বছর এই তিনটি বছরে ভালোবাসার অবহেলা বা না পাওয়ার কষ্ট কখনও বুঝে উঠতে পারিনি, কারণ আমি যে সত্তিকারের ভালোবাসার মানুষকে পেয়েছি। যে কিনা নিজের জীবনের থেকেও আমাকে বেশি ভালোবাসে। শুনেছি ভালোবাসায় নাকি বিশ্বাস থাকতে হয়, নয়তোবা ভালোবাসার আসল মানে থাকেনা। আর সেই বিশ্বাস থেকেই সন্দেহ, যারা কিনা সত্যিকারের ভালোবাসে সে ভালবাসার মানুষকে হারাতে চাইনা, ঠিক তেমনি আস্তে আস্তে হঠাৎ করে আমিও অতিরিক্ত ভালোবাসায় তাকে প্রতিটা জায়গায় প্রতিটা ক্ষেত্রে জেরা করতে শুরু করি। তাকে সবকিছুতেই নজরে রাখি ও চোখের আড়াল করতে দেয়না। আমার মনে হতো হয়তো বা এটাই আরেকটা ভালোবাসা।

কিন্তু হঠাৎই আমার মনে হতে শুরু হল, দিনের পর দিন তার ভালোবাসা কমে যাচ্ছে, সে এখন আমাকে আগের মত কেয়ার করে না, খবর নেয় না, দুই থেকে তিন মিনিটের বেশি কথা বলার সময় ও থাকে না। শুনেছি নতুন নতুন মেয়ে বন্ধু জুটিয়েছে ইদানিং । সে এখন আর আমার জন্য অপেক্ষা করে না, কিন্তু আমি যেনো তার এই পরিবর্তন আর চঞ্চলতাকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিনা। দিনের পর দিন বাস্তবতা থেকে হারিয়ে যাচ্ছি আমি। তাই আজ তার পছন্দের শাড়ি পড়ে ঠিক আগের সাজে তার সাথে দেখা করতে বেরিয়ে পড়ি।জায়গামতো পৌছে তাকে না পেয়ে ফোন দিতে থাকি, কিন্তু ফোন বারবারই ওয়েটিং দেখাচ্ছে। অপেক্ষা করতে করতে প্রায় ঘণ্টাখানেক, ফিরে এসে তার জবাব....... এতবার কেউ ফোন করে ? মেরে ফেলবে নাকি? তোমার জন্যে কারো সাথে কথা বলেও শান্তি পাই না ।

যাক,, কেন এসেছ? কি বলবে বলো? আমার হাতে বেশি সময় নেই । তার এই ধরনের কথাবার্তা আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি, তাই তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকি তুমি কেন এই ধরনের ব্যবহার করছো আমার সাথে? কি দোষ আমার? তুমি কেন আমায় আগের মত ভালবাসো না ? সে আমার কথার জবাব না দিয়ে অঝোরে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয়, আর রাগের মাথায় বলতে থাকে...... তুমি কি আমাকে এইসব বলতে এসেছো?? তোমাকে আমি আগেই বলেছি আমার হাতে সময় নেই। বলে সে চলে যায়.... আর আমি..... নয়ন ভরা অশ্রু আর বুকভরা কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি।

আর শেষ কথা হয় সেই ফোন কলে, যে কথা গুলোতে ছিল আমার কাছ থেকে রেহাই পাওয়ার তার আকুল ইচ্ছে। এখন আর কেউ তাকে বিরক্ত করে না, করেনা মুহূর্তে মুহূর্তে সন্দেহ আর জেরা, করেনা কথায় কাজে ভালোবাসার প্রকাশ। তবে এখন নাকি সে ওই মেয়েটির জন্যই অশ্রু ফেলে, যাকে সে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে গিয়েছিল অবহেলার শেষ প্রান্তে। তবে,,, সে কেন তার ভুল বুঝার পরেও ফিরে যেতে পারেনি তার ভালবাসার কাছে,!? কারন....... সেই ঘুর নিস্তব্ধতায় হলুদ শাড়ীর আঁচলে ঝুলে ছিল সেই মেয়েটির লাশ।

সমাপ্ত

1.png


VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

_

Heroism_3rd.png

Sort:  
 2 years ago 

খুব খারাপ লাগলো আপু ডায়রির শেষ পাতায় পড়ে। এটা ঠিক খুব বেশি ভালবাসলে হারানোর ভয়ে খুব খবর নেয়া, সন্দেহ এসে যায়।ছেলেটা কেন এমন করল?? তার ও তো মেয়েটির জন্য এমন আচরন করা উচিত ছিল।যদি তার জীবনে আর কেউ না থেকে থাকে তবে ত মেয়েটিকেই সারাক্ষণ খোঁজার কথা।এখন কেঁদে কি হবে? মেয়েটির ভালোবাসা তো সত্যি ছিল।সত্যি ভালোবাসায় আসলে অবহেলা মেনে নেয়া যায় না।তাইতো মেয়েটির পরিনতি এই হলো।আফসোস, সত্যি ভালোবাসা কজনা ই বা বোঝে?? অনেক ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

সত্যি আপু এখনকার মানুষরাই এমন, বেশি ভালবাসলে ও সমস্যা না বাসলে ও সমস্যা।

 2 years ago 

আপু গল্পটার প্রথম দিকে পড়তে খুব ভাল লেগেছিল। নিজের ভিতরেও ভালবাসার অনুভূতি অনুভব করেছিলাম। কিন্তুু শেষ লাইনে এসে বুকের ভিতর কষ্ট জমা হলো। সময় থাকতে ভালবাসার মূল্য বুঝতে হয়। ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

হু,তবে বাস্তবটা অনেকটাই এমনি, তবে খারাপ লাগে যে মানুষ ভালবাসার মানুষটিকে চিনতে পারো না। যতক্ষণ তাকে না হারায়।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 58474.85
ETH 2500.10
USDT 1.00
SBD 2.39