আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা-২০|| আমার প্রথম প্রেমের অনুভূতি
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ
আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আজকের এই প্রতিযোগিতায় অনেকে অংশ নিয়েছেন। প্রত্যকের নিজের জীবনের ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা শেয়ার করেছেন। এইরকমই আমার জীবনে ঘটা কিছু অনুভূতির কথা আপনাদের শেয়ার করছি।
Copyright Free Image source : Pixabay
আমি তখন ক্লাস- ৫ এ নতুন ভর্তি হয়েছি। ছুটির পর প্রথম স্কুলে যাবো সেদিন। আমি ও আমার চাচাতো বোন একসাথেই পড়ি। ও আমাকে স্কুলে যাওয়ার জন্য ডাকতে এসেছে। আমি বাইরে বেড়িয়ে দেখি সে নতুন জামা পরেছে, একটু সেজেগুজেই এসেছে । আমিও নতুন জামা পরেছি কিন্তু সাজগোজ করিনি। যাই হোক আমরা স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আমাদের সাথে পাড়ার কিছু বন্ধু আছে যারা আমাদের সাথেই পড়ে। গ্রামের সেই আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে যাওয়ার মজাই আলাদা। আমরা যে রাস্তা দিয়ে যেতাম সেটার নাম ছিলো ভেতর রাস্তা। গল্প করতে করতে স্কুলে পৌঁছালাম। অনেকদিন পরে সবাইকে দেখে অনেক ভালো লাগলো। একটু পরে আমাদের ক্লাস শুরু হলো। সেদিনের ক্লাস এর মধ্যে ও একটা অন্যরকম ভালো লাগা ছিলো। ২ টা ক্লাস পর পর হয়ে টিফিনের বিরতি শুরু হলো।
আমরা সব বান্ধবী মিলে টিফিন করলাম। তারপর কল থেকে পানি নিয়ে রুমে যাব এমন সময় আমাদের ডেকে পাঠানো হলো।
আমাকে, আমার চাচাতো বোন আর এক বান্ধবীকে হেডস্যার এর রুমে ডাকা হলো। স্যার আমাদের বললো আজকে ক্লাস- ৪ এর সব ক্লাস তোরা নিবি। এটা শুনে আমরা অবাক হলাম না। কারন প্রায় আমাদের থেকে নিচের ক্লাস ১,২,৩, এর ক্লাস নিতে হতো। তবে ক্লাস - ৪ এ আমি প্রথম বার ক্লাস নিতে যাচ্ছি।
খুবই আগ্রহের সাথে আমি আর আমার সহপাঠী ক্লাস নিতে গেলাম। ক্লাসে ঢুকে আমার প্রথম কাজ ছিল বোর্ডে বিভাগ, তারিখ ইত্যাদি লেখা । আমি এগুলো শেষ করে আমার চাচাতো বোনের কাছে গেলাম ওরা ক্লাস নিয়ে কথা বলছিলো। আমাকে অংক আর বিজ্ঞান ক্লাস নিতে বলা হলো আর বাকি গুলো ওরা নিবে। ক্লাস শুরু হলো প্রথম এ ইংরেজি ক্লাস । আমার চাচাতো বোন ক্লাস নিচ্ছে। আর আমি অন্য সবার মতোই তাকে দেখছি।
ওর ক্লাস শেষ হলো এবার আমার পালা। আমি সবাইকে একটা অংক করতে দিলাম। এবার নিজে সেই অংক টা খাতায় করলাম তারপর আমার উত্তর এর সাথে বইয়ের উত্তর মিলিয়ে দেখলাম অংক ঠিক আছে কিনা। এর মধ্যে অনেকে অংক করে আমাকে দেখাতে এসেছে । আমি সবার খাতা দেখলাম। সবার খাতা দেখা শেষ এবার ক্লাস শেষ হবে আমার এমন সময় একটা ছেলে তার বন্ধুকে জোর করছে তার সাথে আমার কাছে অংক দেখাতে আসার জন্য। আমি বিষয় টা দেখে বললাম কি হচ্ছে ওখানে। ছেলেটা বললো আসছি ম্যাডাম। এরপর ২ জনেই এলো আমি ওদের থেকে খাতাটা নিয়ে অংক দেখছি। পাশ থেকে ছেলেটা বলে উঠলো একটা কথা বলবো? আমি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললাম হ্যা বলো। ছেলেটা বললো আচ্ছা আপনি তো ম্যাডাম তাহলে আপনি নিজে অংক করলেন আবার বইয়ের সাথে উত্তর মিলিয়ে দেখলেন কেন? আমি একটু অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম আর বললাম আমি তো ম্যাডাম না এজন্য কনফার্ম করার জন্য মিলিয়ে দেখেছি তাতে কি হয়েছে। ও কিছুনা বলে হাসতে হাসতে চলে গেল। আমি ওকে এই প্রথম দেখছি স্কুলে। ছেলেটার নাম রাইহান।
ক্লাস শেষ হলো। আমরা চলে যাবো এমন সময় রাইহান আমাকে ডাকছে কালো ম্যাডাম। আমি একটু রেগেই গেলাম আমি কালো তাই বলে কি আমাকে এভাবে বলবে। আমি ওকে বললাম কি হয়েছে বল আমার তাড়া আছে। রাইহান বললো আপনি আর ফর্সা ম্যাডাম কি বোন? ও আমার চাচাতো বোনের কথা বলছে আমি বললাম হ্যা। ও বললো আজ থেকে আমি আপনাকে কালো ম্যাডাম বলে ডাকবো আর ওই আপুকে ফর্সা ম্যাডাম বলে ডাকবো৷ আমি কোন ম্যাডাম না এই বলে ওখান থেকে চলে গেলাম। সেদিন বাড়ি গিয়ে খুবই রাগ হচ্ছিল আমার কিন্তু কেন জানি একটা অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছিল আমার মধ্যে ।
হঠাৎ করে যেন আমার মধ্যে বিশাল পরিবর্তন চলে এসেছে। পরের দিনের অপেক্ষা করছি স্কুলে যাওয়ার জন্য আর মনে মনে ভাবছি রাইহান যদি ম্যাডাম ম্যাডাম করে বারাবারি করে তাহলে ওকে কি করবো।
পরের দিন স্কুলে গেলাম কিন্তু রাইহানকে দেখতে পেলাম না। এ যেন এক অন্যরকম অস্থিরতা কাজ করছে আমার মধ্যে যা বলে বোঝানো দায়।
সেদিন টিফিন টাইমেও রাইহানকে দেখতে পেলাম না। ও মনে হয় স্কুলে আসে নি এই ভেবে নিলাম ।
রাইহানের বিষয় টা ভুলে গেছি সারাদিনে ওকে না দেখে। ছুটি দিয়ে দিলো আমরা বাড়ি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি। এমন সময় স্যার এসে বললো কালকে তোমাদের স্কুল ছুটি। সবাই অনেক খুশি হলো কিন্তু আমি খুশি হতে পারলাম না কেন সেটা আমার অজানা।
ভেতর রাস্তা দিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। পেছন থেকে কে যেন ডাকছে বলে মনে হচ্ছে । আমরা পিছনে তাকিয়ে দেখি রাইহান তার সাথে একটি মেয়ে আর ছেলে আসছে। আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তাদের দিকে। রাইহান কালো ম্যাডাম কালো ম্যাডাম বলে ডাকতে ডাকতে আসছে। আমি বললাম কি হয়েছে ডাকছিস কেন। রাইহান হেসে বললো এমনি আমার ও বাড়ি এদিকে ভাবলাম একসাথে যাই।
ক্লাস -৪ এ পড়ে একটা ছেলে যে এত পাকা এটা দেখে আমি অবাক হচ্ছি। আমরা সবাই রাইহানকে নিয়ে মজা করতে শুরু করলাম। রাইহান ও আমাদের সাথে মজা করতো।
এভাবে কয়েক মাস কেটে গেল। রাইহানের সাথে বেশ পরিচিত হয়ে গেছি আমরা। দেখা হলেই আমরা কথা বলি। তবে রাইহানের সাথে আমার কথা যতবার হয়েছে ততবার ই আমার মনে হয়েছে যে সে আমাকে কিছু বলতে চাই ।
ক্লাস- ৫ শেষ হবার পর আমরা শহরে চলে যাই। তারপর আর রাইহানের সাথে যোগাযোগ হয়নি। তবে যখন গ্রামে যেতাম তখন ওর সাথে মাঝে মাঝে দেখা হতো, কথা হতো । রাইহানের সাথে আমার বান্ধবি আর আমার চাচাতো বোনের দেখা হতো। তাদের কাছে থেকে পরে শুনেছি রাইহান নাকি আমাকে পছন্দ করতো। রাইহান আমার চাচাতো বোনকে বলেছে তার সাথে আমার সাথে কথা বলিয়ে দিতে। কিন্তু আমার বান্ধবিরা রাইহানের কথা কে মজা মনে করতো তাই আমাকে কোনদিন কিছু বলে নি সেভাবে।
বললে কি হতো আমি জানিনা।
আমার জীবনে প্রথম ভালোলাগা এভাবে শুরু হয়েছিল। তবে সেদিনগুলোতে স্কুলে যাওয়ার আনন্দ অন্যরকম ছিলো। এমনকি যখন ভেতর রাস্তা দিয়ে যাই তখনই সে সব মজার কথা মনে হয় আমার। সময়ের সাথে সব কিছু বদলে গেলেও সেই ভালো লাগা আর সেই অনুভুতি বদলাই নি এখনও।
🖤🤍🖤