মেলার আনন্দ ( ১০%@shy-fox এবং ৫%@abb-school এর জন্য)
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সকল বন্ধুদের একরাশ ভালোবাসা জানিয়ে আজ আমি আমার তৃতীয় উপস্থাপনা শুরু করতে চলেছি। আমার প্রথম পোস্টে আমি নিজের পরিচয় পর্ব সেরেছিলাম এবং দ্বিতীয় পোস্টে একটি ছোট গল্প, যেখানে সুমনের একটি দিনে মুহূর্তের কাছে সবকিছু বদলে যাওয়ার গল্প বলেছিলাম।
আজ যে গল্পটা আপনাদের সাথে ভাগ করে নেব তাকে নিছক গল্প বলা একটু ভুল হয়ে যাবে। তাই চলুন শুরু করা যাক।
গতকাল, অর্থাৎ রবিবার সন্ধ্যে নামার পর একটি মেলায় গিয়ে হাজির হয়েছিলাম। মেলাটি আমাদের এলাকার যেটা প্রতিবছরই হয়। যদিও করোনা মহামারীর করাল গ্রাসে গত দু'বছর সেটি বন্ধই ছিল। তাই এই বছর সেই মেলার উজ্জ্বলতা যেন আরো বেড়ে গেছে। নিজের সমস্ত সাজসজ্জা কে মেলে ধরে সৌন্দর্যের আঙ্গিকে মেলা যেন এবছর প্রাণ ফিরে পেয়েছে। নানান রঙের আলোর রোশনাইতে ঝলমল করছিল চারিদিক।
যেকোনো মেলাই কোন না কোন উৎসবকে উপলক্ষ করে বসে। আমাদের এই পাড়ার মেলাটির উপলক্ষ হল ঝুলন যাত্রা উৎসব। আশা করি এই উৎসবটির সঙ্গে এপার বাংলা -ওপার বাংলার সকলেই কমবেশি ভালোভাবেই পরিচিত। আর পরিচয় না থাকলে, আসুন না আমার গল্পের মাধ্যমে পরিচিতিটা বাড়িয়ে নেবেন।
রাত তখন আটটা সাড়ে আটটা হবে পড়ার ব্যাচ থেকে বেরিয়ে পিঠে ব্যাগ নিয়েই আমি আর আমার কয়েকটা বন্ধু (রাজীব,সোহম, ফয়সাল) পৌঁছে গিয়েছিলাম সেই মেলায়। মেলা মানে যে মিলন ক্ষেত্র তা সেখানে যাওয়ার পর যেন আরো একবার প্রমাণ হয়ে গেল। চারদিকের লোক গিজগিজ করছিল, কচিকাচা থেকে বুড়ো বুড়ি কেউ বাদ নেই। সব বয়সের মানুষ সেখানে একসাথে রয়েছে। ভিড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ানো কিংবা হাঁটা খুব কঠিন হয়ে পড়ছিল। অনেক কষ্টে একটা কোনা ফাঁকা দেখে আমরা সবাই মিলে জড়ো হয়ে দাঁড়ালাম। তারপর মেলাটাকে ভালো করে নিরীক্ষণ করলাম, বুঝলাম একটা লাইন ধরে এগোলে পুরো মেলাটাতে ভালো ভাবে ঘোড়াও যাবে এবং সম্পূর্ণ উপভোগও করা যাবে। আমাদের এই মেলাটি দুটো মাঠ জুড়ে বসে , তার মধ্যে একটি মাঠে বিশাল আকার একটা প্যান্ডেল, যার পাশে বিশালাকার একটা মঞ্চ, সেখানে চলছে নানান রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেমন, নাচ,গান,আবৃত্তি আর অন্য মাঠে নানান দোকানের ঘন ঘটা।
কোন জিনিসের দোকান যে সেখানে নেই তা বলা ভারি দুষ্কর। শুধু জিনিসের দোকান বলা কেন, বিভিন্ন রাইড গুলো দেখে আমার মন তো উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিল। বিশেষ করে ছোটদের জন্য যে রাইড গুলো এসেছিল সেগুলোতে চড়ার জন্য আমার মনটা যেন আবার বাচ্চা হয়ে যেতে চাইছিল, ছোট ছোট বাচ্চাগুলো যখন বিশালাকার একটা বেলুনের ওপর লাফালাফি করছিল, ঘোড়ার গাড়িতে করে বন বন ঘুরছিল ,আমার খালি মনে হচ্ছিল আমি ওদের সাথে এক হয়ে যাই। কিন্তু তাতে বাধ সাধলো আমার বয়স, প্রকৃতপক্ষে তাকে তো আর কমানো যায় না। তবে বড়দের জন্য একটা দৈত্যাকার মেরি-গো-রাউন্ড ছিল, যাকে ওই নাগরদোলা বলে, সেটাই। তবে ওটায় উঠে চড়ার মত সাহস বা ইচ্ছে কোনটাই আমার মনে আজ অবধি জন্মায়নি। কেবল একটি ভয়ই আমাকে বারবার আঁকড়ে ধরে, যদি ওপরে গিয়ে কারেন্ট চলে যায় বা মোটরটা বন্ধ হয়ে যায় আর যদি এখানে মানে একদম টঙে আটকে যাই বা কোন কারণে যদি কোন নাট বল্টু ঢিলে হয়ে গিয়ে থাকে ,তাহলে কি হবে? যাক বাদ দেই সে সব কথা, ওটাতে সাহস করে আর কবে যে উঠতে পারবো সে কেবলমাত্র আমার ঈশ্বর জানেন।
কয়েকটা দোকানে উপচে পড়া ভিড় দেখে উকি মেরে জানার চেষ্টা করলাম সেখানে কি পাওয়া যাচ্ছে, তবে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হল কারণ যা যা পাওয়া যাচ্ছিল সেগুলোর মধ্যে একটাও আমার কাজের না। দোকান ভর্তি সব মেয়েদের প্রসাধনী, আর তার সামনে ভিড়ও সব মেয়ে দের, বোন দিদি কাকিমা পিসিমা এমনকি দিদার বয়সী মহিলারাও ভিড় জমিয়েছিল। এতক্ষণ ঘোরাঘুরি করার পর খিদেয় পেটে ছুঁচো যেনো ডন বৈঠক দিচ্ছিল। তাই সব বন্ধুরা মিলে খাবারের দোকানগুলোতে হামলে পড়লাম। শুরু করলাম ফুচকা দিয়ে তারপর একে একে ঘুগনি,পপ কর্ন,আইসক্রিম,পেস্ট্রি, স্পাইরাল পটেটো ফ্রাই সবকিছু প্রান ভরে খেলাম।
শেষে একটা দোকান থেকে স্পাইডারম্যান ওয়ালা একটা চাবির রিং ও কিনেছিলাম আমার সাইকেলটার জন্য।
তারপর ফেরার পালা ,ফেরার সময় বাড়ির জন্য কিনে আনলাম বেশ কিছুটা জিলিপি। আর মেলা যে জিনিসটা ছাড়া একেবারে অসম্পূর্ণ তা হল পাপড় ভাজা। তাই প্রত্যেকেই হাতে একটা করে পাপড় নিয়ে নিলাম আর সেই পাঁপড় ভাজায় কামড় বসাতে বসাতে বাড়ি ফিরে এলাম।
বেশ আনন্দে কেটেছিল সন্ধ্যেটা,দেখি যদি আরেকদিন যেতে পারি পরিবারের লোকজনকে নিয়ে, তাহলে আনন্দের বাকি নির্যাসটুকুও একেবারে নিঙড়ে উপভোগ করব।
আপনার পোস্ট পড়ে ভালো লাগলো, আর ফটোগ্রাফি গুলো ও বেশ ভাল লাগলো, তবে ফটোগ্রাফি পোস্টে অবশ্যই লোকেশন দিতে হবে যে জাইগা থেকে ফটোগ্রাফি গুলো করেছেন সেই জাইগার। আশাকরি বুঝতে পেরেছেন। ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ, পরের বার থেকে খেয়াল রাখবো।