ডাকছে পুরনো স্মৃতির দিন ! [ অগুছালো পাতা থেকে ]

🗓️📌 তারিখ : ১৪.০৭.২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

অতীত থেকে বর্তমানের দিকে সময় বেয়ে চলে, এ পৃথিবীতে প্রতিদিন কত কত মানুষের আলাদা আলাদা ধরণের জীবননাট্য মঞ্চস্থ হয়ে যায় - তার কোন ইয়ত্তা নেই।

এইতো সেদিন যখন অনেকদিন পর চিন্তায় উঠে আসলো পুরনো সেই গন্তব্যে যাওয়া হয়ে ওঠে না নিজ কাজকর্মে ডুবে, তখন আর কর্তব্যবোধ কিংবা অজুহাত বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারলো না মনের চাওয়ার কাছে।

সবার ক্ষেত্রেই পুরনো কোন কিছু, সে শৈশবের স্মৃতি হোক, ছোট একটি ব্যবহৃত জিনিস, কিংবা কোন স্থানের ছবি বছরের ধূলোময়লায় ঢাকা পড়েছে ক্রমশ অতীতের খাঁচায় তখন তাতে আলাদা একটি মায়া জন্মায়। অতীতে ফিরে যেতে সবাই চায় না, পুরনো কিছু মুহূর্ত নতুন করে বাঁচার সাধ নেয়ার মতো ইচ্ছে সবার হয় না। তার পেছনেও কারণ রয়েছে।

Src

আমরা সচারাচর নিজেদের নিয়ে ভেবে চলি, নিজেদের নিজ নিজ কার্যে, গল্পে ধ্যানে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়ি যে অন্য দিকের গল্পে ততটা মনোযোগ দেওয়ার সময় খুঁজে পাই না। কিছুদিন আগে বলেছিলাম, অতীতের ক্ষেত্রে শৈশব একটি বড় রঙ্গমঞ্চ যেখানে ঘটে চলে জীবনের আদি দিককার ঘটনাগুলো, একটি ছোট্ট গন্ডির মধ্যে আটকে পড়া জীবন বেড়ে ওঠে তার নিজ ঢঙে, তারপর তা আপণ পথে তরী ভীড়ায়।

সবার জন্য সেই একই পথের দিশারী হয়ে জীবন বেড়ে ওঠে, কিন্তু একটি প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবে চলে আসে -সকলের নিজ শৈশব কি রঙিন মোড়কে আর কাগজে মোড়ানো স্বপ্নকে বেঁধে পথ চলতে সাথী হয় ?

প্রসঙ্গতই সামনে চলে আসে আর্থসামাজিক অবস্থা, নানা দুর্দশার মধ্যে দিনাতিপাত করে দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত সংগ্রাম প্রবণ পরিবারে বেড়ে ওঠা মানুষ যাদের অতীতের থেকে সামনের ভবিষ্যতের স্বপ্ন পথের সারথী হয়ে এগিয়ে চলাই একমাত্র ভালোলাগা। মুছে দিতে চায়, ভুলে যেতে চায় করুণ কিংবা মন্দ কিছু ভাগ্যের পরিহাসের কথা যা সুখের তৃপ্ততার মাঝে এগিয়ে যেতে সুযোগ করে দেয়নি।

Src

আমি যখন একটি বাসে উঠে তারপর ভ্যানে চড়ে শহরতলীর প্রান্ত বেয়ে নদীর ঢাল বয়ে চলা কিনারায় এসে পৌঁছেছি, তখন অনেকটা সময় পার হয়ে গিয়েছে। দুপুর বেলায় রোদের তেজ একটি বেশিই ছিল অন্যান্য দিনের থেকে, তার দিকে ততটা খেয়াল করি নি। এই বৃষ্টি, এই রোদ - ঝলমলে আবহাওয়া সাথে হালকা বাতাস গায়ে এক অন্যরকম অনুভূতি দিচ্ছিল।

কয়েক ঘন্টার মধ্যে যখন চলে এলাম পুরনো সেই বসবার বেদীতে তখন বেশ সূর্য ঢলে পড়েছে। খেয়াল করে দেখিনি কয়েকটি দোকান, চায়ের টঙ দেখা যাচ্ছে, যা কয়েক বছরের ব্যবধানে বিরান স্থান থেকে লোকে লোকারন্য হয়ে পড়েছে। নগরায়ন ধীরে হলেও গ্রাম কুঞ্জকে ছেড়ে যায় নি, এটা দেখে ভালো লাগলো।

Src

দর্শনীয় স্থানটিতে ঘুরে অনেক কিছু দেখতে পারছি আর তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে শুরু করেছে বেশ। আমি দেখতে পাচ্ছি শ্রমজীবী মানুষরা তাদের কাজ সেরে বাড়ি ফিরছে, রাস্তাঘাটে মানুষের আনাগোনা শুধু। তারপর যখন গাছের ছায়ায় বসে আছি তখন মনে হলো পুরনো দিনের কিছু স্মৃতি উঁকি দিয়ে উঠেছে। প্রকৃতিঘেরা রাজ্যে কতদিন ঘুরে বেড়িয়েছি, স্মৃতির রেখায় তা ঘিরে ধরেছে।

সবার ক্ষেত্রে যেটি দেখা যায়, অতীতে ফিরতে চায় না এটি অবশ্য মনে একটি দিক ঘিরে চলে। সবাই ইচ্ছা করলে নিজের ভাগ্যকে বদলাতে পারে, যদি একনিষ্ঠ পথে নিজ কাজে মনোনিবেশ করে প্রতিদিনকে জয়লাভ করতে পারে। সবার জীবনের সংগ্রামটা একরকম হয় না, একজনের দুংখ অন্যজন ততটা পরিপূর্ণভাবে অনুভব করে না, যার জ্বালা সে বুঝে।

তাই সমব্যাথী হওয়ার সৎসাহসটুকু রাখি না পুরোপুরি, তবু মনে পড়ে থাকে একদিন যার যার প্রতিফল সে দেখে যায়। দুঃখ আর ক্ষোভ জড়ো হয়ে তা বিশাল জলস্রোতে ভেসে হারিয়ে যায়। মনে থাকে আনন্দ, একটি যাত্রা ক্রমশ অনন্তের পানে । এটাই অবসানের গহীনের কথা, তার পরে কিছু নেই..

ধৈর্য্য ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আজকের মতো এ পর্যন্তই। ভালো থাকবেন আর হাসিখুশি থাকবেন। এই প্রার্থনা করি।

নিজের সম্পর্কে কিছু কথা