দুঃখ সুখের পৃথিবী

হ্যালো প্রিয় কমিউনিটির বন্ধুগণ,

সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা বরাবরের মতো ভালোই আছেন আর পরম করুণাময়ের কৃপায় সুস্থ সাবলীল একটি প্রাণময় জীবনযাপন করছেন৷ সবার সুস্থতা ও শান্তির বার্তা জ্ঞাপন করে আজকের ব্লগ শুরু করছি।

দুঃখ সুখ মিলিয়েই মানুষের জীবন আর এটি সবসময়ের জন্যই স্থির হয়ে থাকে। কিছু বিষয়, কিছু জিনিস পৃথিবীতে ধ্রুব আর তার সেই ধ্রুবতা প্রত্যেকটি মানুষকেই ঘিরে ধরে। যতই কেউ তার থেকে দূরে সরে যেতে চায়, ততই তার বিস্তার ছড়িয়ে পড়ে সময়ের সাথে। আমরা তা কিছু সময় পরে এসে বুঝতে পারি।

যে বিষয়টি নিয়ে আজকে লিখতে চলেছি, তা আমাকে প্রতিনিয়ত ভাবিয়েছে কিছু ব্যাপার নিয়ে। যে ব্যাক্তি খুব সুখী, অঢেল অর্থবিত্ত, বিশাল সম্পত্তি আর আড়ম্বর, বিলাসীতার মধ্যে জীবনযাপন করে, সে ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে সুখী কি -না, তা তিনি বলতে পারেন না হলফ করে। আর বাহ্যিকভাবে দুখী ব্যক্তির জীবনেও কিছু সুখ আছে যা আমরা বাইরে থেকে বুঝতে পারি না।

Src

দিন যায়, সপ্তাহ চারখানা পূর্ণ হলে মাসেও শেষ এসে পড়ে। আর যখন নিত্যদিনের কাজকর্ম চুকিয়ে গেল, তখনই হাতে কিছু সময় পেলাম অবসরের জন্য। সবার অবসরের প্রিয় কাজের একটি বৈচিত্র্য থাকে, কিন্তু আমার ক্ষেত্রে সেটি কিছুটা আলাদা। প্রকৃতি ও জীবনের ভেতরের বিভিন্ন দিক নিয়ে ভাবতে যে ভালো লাগা কাজ করতো বছর পাঁচ-দশেক আগে, সেটি এখনো আছে বলে কথা।

নিজের জীবন ও ভাগ্যের নানান দিকে কিছুটূ হতাশার প্রলেপ যখন বেড়ে চলেছিল, তখন ঠিক করলাম এবার দুঃখসুখের যেই বিপুল স্রোত চারপাশের সমাজে ছড়িয়ে রয়েছে, তার দিকে নজর দেব যতটুকু সম্ভব। যেই ভাবনা সেই কাজ। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো আর আমি ঠিক করলাম, শহরের উপকন্ঠে যে মেলা বসেছে হরেক রকমের জিনিসপত্রের তার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে আসবো।

যাত্রা শুরু করার পর যানবাহনের শেষ রাস্তার ধারে নেমে পড়ে লম্বা একটি রাস্তা যেটি হাঁটাপথে গড়িয়েছে, তার দিকে ধেয়ে যাবার জন্য মনস্থির করলাম। কিছুপথ যেতে শরতের শেষদিকের প্রকৃতির দারুণ দৃশ্য অবলোকন করলাম আর নানান দোকানপাটের সারি চলো গিয়েছে গলির রাস্তা ধরে। আমার মিনিট পাঁচেক পায়চারীর পর মেলার হাটে এসে পৌঁছলাম।

যখন প্রথম দিন সেটি উদ্বোধন হয়, তখন ক্রেতাসমাগম ছিল অধিক, দিন দুই গড়াতে অর্ধেকের চেয়েও কমে নেমে এল। ভীড়ের মাঝে চলাফেরা একটু কঠিন, তাই স্বাচ্ছন্দ বোধ করলাম। একটি স্টল থেকে অন্যটিতে, তারপর প্রায় পুরোটা ঘুরে শেষমেশ বের হয়ে আসলাম। একটি খেলনা কিনেছি আর তারপর বাড়ির পথ ধরলাম।

পথে দেখতে পেলাম একটি মধ্যবয়স্ক লোক বাঁশি বাজাচ্ছে। যে বেঞ্চটিতে তিনি বসেছেন সেটির একপাশে আপনজনের লেখা একটি চিঠি পড়ে রয়েছে৷ সেটি সম্ভবত তিনি পড়ে বেশ আহত হয়েছেন মনে মনে। বাঁশির নানা সুর তরঙ্গ বয়ে চলেছে, তাতে বাজছে করুন সুর। যেন, তার দুঃখের রাশি গড়িয়ে পড়ছে নিজের মতো করে।

Src

আমি ভাবলাম, বাস্তবে পরম সুখের কোন অস্তিত্ব নেই । দুঃখের মাঝে প্রায় সবাইই ভেসে চলেছে । কারো ব্যক্তিগত জীবন ভালো নেই, কেউ অন্য কোন ক্ষেত্রে দুর্দশাগ্রস্থ৷ সব মিলিয়ে জীবনের এতসব বেড়াজালে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে দুদন্ড নিজের মতো করে সময় কাটানোর মধ্যেই রয়েছে পূর্ণতা আর সুখের সন্ধান।

দুঃখ যখন অন্য কারো মধ্যে প্রতিফলিত হয় তখন তা কিছুটা লঘু হয়ে আসে। আমি তার একটি মোক্ষম উদাহরণ দেখতে পেলাম আর এরই মাঝে পরিতৃপ্ত হয়ে সামনের বাকি পথে পা বাড়ালাম। যত বেশি জটিল ভাবনা, ততই দুঃখের পাল্লা ভারী।

এমতাবস্থায়, দুঃখ সুখের ভারসাম্য রেখে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যেই সার্থকতা। সেটি খুঁজেই পরিতৃপ্ত বোধ করলাম।