একটি বৃষ্টিমুখর দিন | { ১০% সাই -ফক্স ও ৫% এবিবি-স্কুল বেনিফিশিয়ারি }

🗓️📌 তারিখ : ০৯.০৭.২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ।

প্রিয় বন্ধুগণ,

আপনাদের সবাইকে সালাম ও আদাব জানাই। সবাই কেমন আছেন ? আশা করি ভালো আছেন আর বেশ স্বাচ্ছন্দ্যের সাথেই সময় কেটে যাচ্ছে। ব্যক্তি ও মানুষ হিসেবে সুস্থতা ও পরিপূর্ণ বিকাশ লাভ করার মধ্যে একটি প্রাপ্তিযোগ আছে। দিনশেষে চাওয়া পাওয়ার মধ্যে এটি জুটে যাওয়া একটি ভাগ্যের বিষয়।

আজ সকালের দিনটি বেশ রৌদ্রোজ্জ্বল ছিল যা দীর্ঘ একটি সময়ের ও ঋতুর স্বাভাবিক পরিবেশগত ব্যবহারের থেকে আলাদা হয়ে জনজীবনে বেশ স্বস্তি এনে দিয়েছিল। প্রত্যেকদিন সকালে বা সূর্য ওঠার বেশ অনেকক্ষণ পরে যখনই ঘুম ভেঙে আড়মোড়ের রেশ কাটিয়ে চোখ মেলে জানালার ফাঁক দিয়ে বাইরের পরিবেশের দিকে তাকিয়ে দিনের শুরু হয়।

একটি প্রবাদ আছে ইংরেজিতে যার ভাষান্তর করলে যা দাঁড়ায় তা হলো, সকালবেলার ছবি পুরো দিনের আগমনী বার্তা জানিয়ে দেয়। এটি কিছুটা ধোঁয়াশাব্যঞ্জক বা অস্পষ্ট মনে হলেও তা কিন্তু সত্য হয়ে ধরা দেয় প্রায়ই। সকালে যখন আকাশটা কালোমেঘের ছায়ায় ঢাকা না থেকে নীল রঙের মেঘমুক্ত ছবি দেখায়, তখন মনের অজান্তেই অনুভূত হয় একটি সাহস সঞ্চারী ভাবনা, যা দিনের কাজ শুরু করতে এবং নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রেরণা জোগায়।

Src

বিভিন্ন মনোবৃত্তিক কেন্দ্রের মানুষের আর ব্যক্তিগত পছন্দ ও রূচির পার্থক্যে অনুভবের মাত্রা বিভিন্নরকম থাকে কমবেশি সবারই। বর্ষা না মেঘমুক্ত আকাশ দুটোর মধ্যে যেকোন একটাকে বেছে নিতে বললে, দেখা যাবে একটি মিশ্র ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। এটি ঘটে মূলত কারণ মেঘের আগের যে ঝড়ো হালকা বাতাস, প্রকৃতি, মাঠ ঘাট অরণ্যে কিংবা রাস্তা সড়কে যে একটি শূন্যতা ও পাখি গাছপালার দোলা বিরাজ করে তা মনপ্রাণে এক ধরনের স্বস্তি এনে দেয়।

গ্রীষ্মের পরের বৃষ্টি আর তার জন্য গ্রাম কি শহরের মানুষের কত রকমের আয়োজন যে থাকে, তার কোন ইয়ত্তা নেই। গরমের মাত্রা যাদেরই স্পর্শ করে চলে, তাদের সবারই প্রায় একই রকম ইচ্ছা থাকে, কখন বৃষ্টি এসে ফেটে যাওয়া পথপ্রান্তর, শুকিয়ে যাওয়া ধরনীকে স্বস্তি দিয়ে নতুন করে সজীবতায় বাঁচতে সাহায্য করে চলবে।

কিন্তু বাংলার ঋতুপ্রকৃতির একটি স্বাভাবিক দিক হলো, এটি কখনোই পুরোপুরি সুযোগ দিয়ে যাবে না, কিছু দিকে স্বস্তি এলে অন্য দিকে নেমে আসে সীমাহীন দুর্ভোগ। কখনো তা বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে এতটাই বিরক্ত করে তোলে, যে বৃষ্টির জন্য কাজকর্মও থেমে থাকতে শুরু করে।

এই কয়েকদিন আগে একটানা বৃষ্টি হয়ে চলেছিল। মাথার ওপরে ছাদ থাকায় আর শহরের বাড়িতে দিন যাপন করার কারণে রক্ষা। গ্রামাঞ্চলে টিনের ছাদের ঘরবাড়ি বেশ সচরাচরই চোখে পড়ে। অথচ এমন অনেক গ্রাম ছিল আগে যখন শনের ঘর ছিল শতকরা সিংহভাগ, মাটির ঘর যেখানে ছাউনি দেওয়া আছে গোলপাতা, শন ও পাটের। এখন এমন ঘর খুবই দুর্লভ গ্রামের পরিবেশে।

টিনের চালে বৃষ্টির শব্দের ঝমঝম আওয়াজ কখনো অনুভব করেছেন ?

Src

যারা গ্রামে বড় হয়েছেন তাদের কাছে এ একটি সাধারণ বিষয়, আর যারা শহরে শৈশব কৈশোর আর যৌবনের সময় পার করেছেন, তারা নিছকই দুর্ভাগা ও এর রোমাঞ্চ থেকে বঞ্চিত তা সহজেই বলা যায়। তবুও আপনারা গ্রামের এ শখের প্রকৃতির নিরালায় কিছু সময় কাটাবেন - তা আশা করি।

সেদিন ভোরবেলা থেকেই আকাশ কালোমেঘের পরশে ছেয়ে গিয়েছে, সকাল গড়াতে শুরু করলে একটানা অবিশ্রান্ত বৃষ্টির ধারা বইছে তো বইছেই। তার কোন কমতি দেখতে পাই না, তাছাড়া আবার অনেকগুলো কাজ বাকি রয়ে গিয়েছে। সকালের নাস্তা কোন রকমে সেরে নিলাম ঘরে যা আছে, নুডলস আর ডিমভাজা পিঠা গরম তেলে ভাজা, তারপর তা ওভেনে চটপটে উষ্ণ হয়ে গেল।

কিছুক্ষণ পর মনে হলো, কি দুর্ভাগা সময় ! যদি এ সময় বাগানের পাশ দিয়ে বেড়ে ওঠা টিনের ছাদের বারান্দায় কাটানো যেত, তাহলে চাল ডাল আলু সবজি সেদ্ধ করে বসিয়ে দিয়ে বেশ জমপেশ বৃষ্টির সাথে সেই চিরাচরিত উপভোগ্য খিঁচুড়ির স্বাদ নেওয়া যেত। কি চমৎকার খাবার, শুধু বর্ষার দিনেই তা উন্নত রকমের সুস্বাদু ও মুখরোচক হয়ে ওঠে । বাঙালির ষোলআনা নিজস্ব যে রান্নাটি !

Src

যা হোক, তারপর কিছুক্ষণ পত্রিকার পাতায় চোখ বুলিয়ে নিলাম। বৃষ্টি কমতে চাইছেই না, বরং তার ওপর ঝমঝমিয়ে গুড়ুম গুড়ুম মেঘের হুঙ্কার কানে আসতো লাগলো। চাচ্ছিলাম বৃষ্টি কখন কমে যায়, আর ছাতা হাতে বেরিয়ে পড়ি। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠে না। একসময় দুপুরের পর মেঘ কমে যায়, বৃষ্টি পশলা থেকে ফোটায় মিলিয়ে যায়।

আমি তখন সুযোগ বুঝে বেরিয়ে পড়ি। দিনের কাজ একটু দেরিতে সেরে তারপর অপেক্ষায় রইলাম বাড়ি ফেরার। এদিকে বৃষ্টির পর শহরের শেষ মাথায় দিগন্তের পানে রঙধনু লক্ষ্য করা গেছে, কি নান্দনিক একটি সৃষ্টি। তা দেখেই চোখ জুড়িয়ে গেল। এভাবে একটি বৃষ্টিবিঘ্নিত দিন কেটে গেল।

সমাপ্তি।

নিজের সম্পর্কে কিছু কথা

(