বন্ধুত্ব || জীবনের একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ

আমার সহযোগী লেখক ও ব্লগারবৃন্দ,

আসসালামু আলাইকুম / আদাব। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যারা প্রিয় এই কমিউনিটিতে যুক্ত আছেন, আর যারা ভারতীয় বাংলা তথা পশ্চিমবঙ্গ থেকে সংযুক্ত আছেন - প্রত্যেককেই বিশেষভাবে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা নিবেদন করি। পাশাপাশি আশা করি আপনারা সুস্থ ও ভালো আছেন।

একটি দেশের আবহাওয়া ও প্রকৃতি সবসময়ই পরিবর্তিত হয়। তবে বাংলার সাম্প্রতিক আবহাওয়া ও দুর্যোগের অবস্থা দেখে যে কারোরই হতাশ লাগতে পারে। বিগত সপ্তাহের মধ্যে বৃষ্টি যতটা না প্রভাব ফেলেছে, তার চেয়ে বেশি পাহাড়ী অঞ্চলের জলোচ্ছ্বাস বাঁধ খুলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে গিয়েছে।

নদী নালা খাল বিল জলাধার সমৃদ্ধ এ ব-দ্বীপে বারোমাসই পানিতে ঢাকা থাকে। তবে, যখন অতিবৃষ্টি বেড়ে যায় আর তারই পাশাপাশি অতিরিক্ত পানির উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়, তখন বন্যাদুর্গত মানুষের ভোগান্তি যে চরম মাত্রায় পৌঁছায় তা সহজেই অনুমেয়। যা হোক, আশা করি সবাই এ যাত্রায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, ঘরবাড়ি হারা হয়ে নিঃস্ব ও মানবেতর জীবন যাপন করছেন - তাদের অবস্থার উন্নতি হোক এ দোয়া করি।

Src

আজ আমি আপনাদের সাথে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে নিজের কিছু কথা শেয়ার করবো। যে বিষয়গুলো তেমন একটা লেখার সুযোগ পাই না, সোশ্যাল মিডিয়ায়ও উপলক্ষ তৈরি হয় না, তা ব্লগপোস্ট আকারে বেশ মানানসই হয়। তা আমি লক্ষ্য করে দেখেছি। নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করতে এর চেয়ে ভালো কোন মাধ্যম হয় না।

বন্ধুত্ব একটি শব্দ যেটি মানুষের জীবনে সবসময়ই সাথে থাকে। শৈশব গড়িয়ে যখন বয়স বাড়তে শুরু করে তখন তার উপস্থিতি কোন মানুষ ভুলতে পারে না। শৈশবের বন্ধুত্ব থাকে নির্মল ও জাগতিক সব ধরনের ঝামেলা ও নেতিবাচকতা থেকে মুক্ত। এ সময় বন্ধুত্বের ছাপ পড়ে সবখানে, আর তা কিন্ডারগার্টেন কিংবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।

তারপরে কৈশোরের বন্ধুত্ব, যখন প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে কোন মানুষ তখন তা রূপ নেয় আরো জটিল ধরনের কিছু খুনসুটি কিংবা দুষ্টুমিতে। দুপুরের পরের স্কুল ফাঁকি দিয়ে দেয়াল টপকে ঘুমন্ত দারোয়ানের অগোচরে চোখ ফাঁকি দিয়ে কোন গাছে পাকা আম কিংবা ডুমুর ফল, পেয়ারা কিংবা শহুরে জীবনের সার্কাস দেখতে চলে যাওয়ার বন্ধুত্বের রং আরেকটু আলাদা।

বিকেলের অল্প আলোতে যখন প্রকৃতি কিছুটা সৌন্দর্য লাভ করে, তখন ব্যাট বল হাতে মাঠে কিংবা খালি উঠোনে খেলতে যাওয়ার মাঝে এক ধরনের আনন্দ ছিল যার কোন শেষ খুঁজে পাওয়া যায় না। বয়সের সাথে জীবন হয়ে ওঠে জটিল, আর যখন দায়িত্বের মাত্রা বেড়ে দাঁড়ায়, তার সাথে বন্ধুত্বও ফিকে হয়ে আসে।

বয়স্ক জীবনে বন্ধু্ত্বের সেই সরলীপনা ততটা থাকে না, বাস্তবিক দিকে প্রায় শূন্য হয়ে দাঁড়ায়। শৈশবের খেলার সাথীরাও নেই, কৈশোরের সখারাও হারিয়ে গিয়েছে জীবন থেকে। কলেজ ভার্সিটির বন্ধুরা যে যার মতো নিজ আঙিনায় সংসারে নিবদ্ধ হয়ে রয়েছে।

Src

দেখা হয় না সারি সারি বন্ধুদের মধ্যে থেকে প্রিয় গুটিকয়েক প্রিয় মুখকে। যারা সহচর হয়ে পাশে থাকতো কোন এক অতীতে। হয়তো, বিকেলের পড়ন্ত রোদে তাদের দেখতে মন আনচান করে। ঠিকানা ও নাম্বারও হারিয়ে গিয়েছে ঢের। তবুও শেষ হয় না নতুন করে সাক্ষাতের আকাঙ্খা।

এক সময় অপ্রত্যাশিতভাবে দেখা হয়ে যায় দুপুরের পর কোন এক রেস্তোরাঁ থেকে বের হওয়ার সময়। অথবা ট্রেনে করে যখন একটি পত্রিকা হাতে, শেষপাতা থেকে সামনের ট্রেনের কামরায় চোখ বোলাতেই ক্রমশ হঠাৎ অচেনা মুখ থেকে চেনা মুখ ভেসে উঠে, তার সাথে অতীত স্মৃতি দূর থেকে, দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।

বন্ধুত্বের বয়স হয় না, চেনা জানা পরিচয় দরকার হয় না, তার সাথে দূরত্ব। তবে অতীতের বন্ধুরা জীবনে একবার হলেও ঘুরেফিরে আসে, আর তা সবার ক্ষেত্রেই সত্য হয়ে দাঁড়ায় বহুদিনের ঘটনায়।

ধন্যবাদ।

১০% সাই-ফক্স ও ৫% এবিবি-স্কুল বেনিফিশিয়ারি