রকমফেরের গন্তব্যে | পর্ব-০১ | [ একটি ধারাগল্প ]

🗓️📌তারিখ : ২৯.০৭.২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

হ্যালো প্রিয় কমিউনিটির বন্ধুগণ,

সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা বরাবরের মতো ভালোই আছেন আর পরম করুণাময়ের কৃপায় সুস্থ সাবলীল একটি প্রাণময় জীবনযাপন করছেন৷ সবার সুস্থতা ও শান্তির বার্তা জ্ঞাপন করে আজকের ব্লগ শুরু করছি।

বেশ কিছুদিন ধরে দেশীয় নানান ঘটনাপ্রবাহ আর ঝক্কিঝামেলার মধ্যে থেকে সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করার তেমন একটা সময় হয়ে ওঠে নি। আসলে মানুষের জীবনে সত্যি হয়ে দাঁড়ায় প্রায়শই যে যখন কঠিন সময় আসে তখন নিজেকে সুস্থ স্বাভাবিক ছন্দে ধরে রাখা সম্ভব হয় না। ছন্দপতন খুব স্বাভাবিক ঘটনা।

সব গল্প কবিতা কিংবা লেখালেখির গন্তব্য আবার যেহেতু একরকম নয়, তাই তাতেও রয়ে যায় বিভিন্নতার টান। তবে আধুনিক যুগে সমাজ কিংবা মানুষ যত প্রবেশমান হচ্ছে, ততই বেড়ে উঠছে মাধ্যমগুলো, গুরুগম্ভীর দর্শনের জাল খাটো হয়ে সহজ, সাধারণে মানুষ আশ্রয় খুঁজে চলে। সময়ের স্রোতকে উপেক্ষা করা দায়, তাই আমিও চলতি পথটাই বেছে নেই।

Src

সব কথা বলা হয় না, আবার যা বলা হয় তাতেও একটি ধুয়া রয়ে যায় যা বিভিন্ন সময়ের প্রকাশে বিভিন্ন রকম। ক্ষনিক দুর্বোধ্য, ক্ষনিক সাবলীল, বিশেষণেরও অভাব নেই বেশি একটা। তবে কিছু গল্প পাঠকের মনের কোণে জায়গা করে নেয় - তাতেই মনের মধ্যে একটু সন্তুষ্টির হালকা বাতাস বয়ে যায়। পাওনাটুকু ওখানেই।

তো, দেরি না করে চলে যাচ্ছি মূল গল্পে।

প্রতিটি মানুষের জীবনেই আশা একটি বড় মানব অনুভূতি যেটি রেখে চলে নিদারুণ ভূমিকা, যার প্রত্যেকটি পর্বেই জড়িয়ে থাকে পথচলার কারণ। অর্থহীন এ পৃথিবীর কিছুই নয়, আর তারপরেও অর্থের খোঁজেই বয়ে চলে দিন, প্রতিদিন। সুবর্ণপুর গ্রামের একটি ছোট ছেলে যখন গ্রামের মাটি ও মানুষের কাছে নিগড়ে থেকে, প্রকৃতি সান্নিধ্যে মানুষ হয়ে লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে প্রায় শেষ মাথায় চলে এসেছে তখন সে একটি মস্ত ভেদ দেখতে পেল।

ছোট পৃথিবী ধীরে ধীরে বড় হয়, জগতে এটাই ঘটে এসেছে দিনের পর দিন। রাতুল যখন ছোটবেলায় নিজ গ্রাম ছেড়ে মামার বাড়িতে ছুটে যেত তখন তার মনে হতো দুটো জায়গার মাঝে রয়েছে যে বিস্তর ফারাক, একটাতে আপণ ভুবনে পরিচিত মানুষজন - অন্যদিকে মাতুলালয়ে সবাই খুব অমায়িক আর আচার ব্যবহারে যথেষ্ট অতিথিপরায়ণ। এক লহমায় যেভাবে কাছে টেনে নিয়ে যেতে পারে, তা আর অন্য কেউ, কোথাও দেখেনি সে।

বারেবারে অনুভব করে আদতে সে সত্য বাণী সহজ কথায় যে, মামার বাড়ি রসের হাঁড়ি সত্যিই তা অপূর্ব রকমে ভালো, দিনের তপ্ত আলোতে যা ঘুরে বেড়ায়, কত রূপ, রাতে যখন সব আলো নিভে যায় আর শুধু পড়ে থাকে কিছু মানুষ, আড্ডা, মায়া আর সেখানে আছে কিছু স্বজন যারা প্রাণের সখার মতো সমস্ত মনপ্রাণ হৃদয় জুড়ে অধিকার করে নেয়।

ছোটবেলায় এ দুটো গ্রামের বাইরে এক মফস্বল আর শহরতলী বাদে বাকি পরিবেশ ও পরিস্থিতির সাথে তার পরিচয় তেমন একটা ছিল না। পৃথিবী যত ছোট, ততই তা নির্মল, অনাবিল আর মাধুরীতে গড়া। লেখাপড়া, পরীক্ষা পাসের মধ্যে দিয়ে সে যেতে চাইতো নতুন আশু ভবিষ্যতের পানে, সময়ের সাথে তা বয়ে চলতো একটু একটু করে। দিন গড়িয়ে নতুন দিন আসতো।

Src

রাতুলের জন্য নতুন একটি কলেজ অপেক্ষারত। বয়সের পাল্লা বেড়ে বেড়ে তা যৌবনের দ্বারপ্রান্তে এসে উপস্থিত হয়ে চলেছে, যখন তাতে পদার্পণ করলো তখন সে বুঝলো চিরচেনা আঙিনায় থাকার সময় ফুরিয়ে এসেছে। শুধুই কেবল সামনের পানে যাওয়া ছাড়া, নতুন যে ভবিষ্যত হাতছানি দিচ্ছে সেটির দিকে চলে যাওয়া ছাড়া তার হাতে বিকল্প পথ নেই।

তাই সে গ্রামের পরিবেশ ছেড়ে রওয়ানা হলো নতুন পথ ধরে একদম অচেনা একটি জনপদে। কুড়ি ত্রিশ ক্রোশ পথ মাঝখানটায় আর তাকে একটি ট্রেনে চড়ে বসতে হলো। ট্রেন চলছে আর সে চারপাশে তাকিয়ে দেখছে পেছনে ছুটে চলেছে গ্রাম,তার চেনা আঙিনা, মাঠঘাট, সবুজে ঘেরা প্রান্তর আর তারই পাশ ধরে একটি নদী যেটাতে সে তার শৈশব কৈশোরের অনেক স্মৃতি লুকিয়ে রেখে এসেছে।

তার খানিকটা চোখে জল চলে এলো, ভবিষ্যত তাকে দূরে একটি সম্ভাবনার ক্ষেত্রের দিকে নিয়ে চলেছে ঠিকই, কিন্তু তারপরেও প্রত্যেকবার যখন সে তার গ্রাম, চেনা আঙিনা ফেলে সামনে চলে যেতে থাকে, তার অন্তরে অনুভব হয় টান। এবার তাকে স্মৃতিকাতরতাও ঘিরে ধরতে শুরু করেছে,কারণ বেশ কিছুদিন, গোটা একটি মাস পর আবার ফিরে যেতে হবে, মাঝে অনেকগুলো কাজ, সম্ভাবনা, স্বপ্ন তার জন্য অপেক্ষায়।

Src

রোমাঞ্চের সাথে অনুভূতি এসে মিলেছে, খানিক শঙ্কা ও ভয়, তবুও সে পথ খুঁজে নিতে চায়। দেখতে চায় সামনের পানে যেখানে অনিশ্চয়তারা শতরূপে জড়ো হতে শুরু করেছে। একটি একটি করে অনেকগুলো, অজস্র, তারা ভরা রাতের মতো, সর্ষে ফুলের মতো, কদমের কলির ঝোঁপের সায়রে ...

[চলবে]

ধৈর্য্য ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আজকের মতো এ পর্যন্তই। ভালো থাকবেন আর হাসিখুশি থাকবেন। এই প্রার্থনা করি।

নিজের সম্পর্কে কিছু কথা