পদ্মার ঢেউ রে , বেশি ভালোবাসি তোমায় !

🗓️📌 তারিখ : ১০.০৬.২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ।

পৃথিবীর কোন মানুষই নিজের ছোট বয়সে বেড়ে ওঠা গ্রাম, নগর, কিংবা ভৌগোলিক পীঠস্থানকে এড়িয়ে বেড়ে উঠতে পারে না। সবসময়ই যে স্থানটি শৈশবকে কেন্দ্র করে গড়িয়ে চলে তার স্মৃতি, টান সবসময় ভাস্বর হিসেবে আজীবন ধিকি ধিকি জ্বলে যাওয়া মোমবাতির মতো আলো দিয়ে যায়।

বন্ধুগণ, আপনারা নিশ্চয়ই এমন একটি টান অনুভব করেন নিজ ছোটবেলায় বেড়ে ওঠা স্থানের প্রতি। এটি কিন্তু কখনোই মন থেকে মুছে যায় না, এবার সে ব্যক্তি দেশপ্রেমিক হোক, প্রবলভাবে নিজ দেশের টান অনুভব করে কি না, তার বেশি কিছু যায় আসে না। এই অনুভূতিটি সর্বদাই মৌলিক একটি চেতনা জাগ্রত করে।

আমি এমন অনেক মানুষ দেখেছি যারা জীবনের জীবিকা ও স্বচ্ছল উন্নত জীবনের আশায় নিজস্ব জনপদের বাইরে অন্য কোন স্থানে, শহরে কিংবা নগর মহানগরে এসে ভীড় করে। জীবনের যেই প্রয়োজন তা মানুষের ভালোলাগা, স্বপ্ন কিংবা ইচ্ছাগুলোকে খুব সহজে দমিয়ে রাখতে পারে। তার জন্য মায়া ছায়া হয়ে পাশ কেটে পড়ে।

Src

এমন মানুষ সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি, আর তাদের ব্যস্ততার জীবনের মাঝে দিন কাটতে থাকে। কখনো নানা বিড়ম্বনা, হতাশা আর অপ্রাপ্তি যোগ হতে শুরু করে। তা ঢের হয়ে এলে তখন আবার সুযোগ আসে কখন ফিরতি ট্রেন কিংবা বাস ধরে পাড়ি দেয়া যায় সেই জায়গাটিতে যেখানে সকল ভালোলাগা বাধা হয়ে আছে।

মায়া আর আবেগকে তো সবসময় তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করে রাখা যায় না, যায় কি ?

বাংলার গ্রামগুলোর সৌন্দর্যের কথা কি আর বলবো, তা তো বলে কখনো শেষ করা যায় না৷ হয়তো জীবনানন্দ ঠিকই বলেছেন, তার কাব্যিক চোখে বিভিন্ন মাঠঘাট ঘুরে ঘুরে তা হলো -

বাংলার রুপ আমি দেখিয়াছি, পৃথিবীর রূপ দেখিতে চাহি না আর ।

বোধহয় পৃথিবীর রূপ দেখার প্রয়োজন সত্যিই পড়ে না, তার আগেই প্রাণ জুড়িয়ে যায়। মাটির সে কি গন্ধ, বাতাসের ঘ্রাণে সে কি সুবাস আর কাঁচা আহবানে জড়িয়ে নেওয়া, অকৃ্ত্রিম ভালোবাসা কাছে টেনে নেওয়া। কি সুন্দর সরল অনাবিল আতিথেয়তা, তা আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই যুগে যুগে বাংলাকে লুট করে, একসময়ের অগাধ সম্পদ পাচার করার লোকের অভাব কখনো হয় নি।

বাংলা ই কি কখনো কৃপণ হয়ে কাউকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে ?

দেয়নি, দিতে জানেও না। তাই তাকে আঁকড়ে ধরে এখনো সভ্যতা গড়ে উঠছে। নদী নালা খালবিলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বিলীন হয়ে গিয়েছে। কখনো যদি কেউ পদ্মার পাড়ে যায়, সুরমা -কুশিয়ারা আর রূপসার জলে একটুখানি স্পর্শ অনুভব করে, তাহলে সে যে মায়ায় বাঁধা পড়বে তা আর কোথাও পাওয়া যাবে না।

অথচ কিছু বিষয় আজ মর্মের খুব গভীরে চলে যাচ্ছে। প্রকৃতিকে ধ্বংস করা হচ্ছে, মনুষ্যত্বের কিছু সোপান খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আর উন্নতির কিছু দিক শাপে অধিকার করে নিয়েছে। বোঝা যায় না, কেমন করে মীর জাফররা আজো সিরাজুদ্দৌলার চরম দুর্দিনের সময়ে নিজ স্বার্থলোভে স্বাধীনতাকে অস্তমিত করে দেয়। চেয়ে থাকে মানুষ, চির নির্লিপ্ত, কিংকর্তব্যবিমূঢ়, তামাশাদর্শী।

তাই এক দীর্ঘশ্বাস ধরে গায়ক গেয়ে যায়,

মানুষ যেন করো না আমায়, মেঘ করে দাও। যেন কাঁদতে পারি পরের দুখে , অনেক ভালো কাজ...

যাই হোক, একটি চাপা হতাশা বুকে চেপে রেখে আজকের মতো শেষবারে বলি মাইকেল মধুসূদনরা বারবার বাংলার ফিরে আসুক, কিছু প্রহসন নিয়ে। আর প্রহসন যা ঘটে চলেছে, তাতে কিছু কাব্যিকতা নিয়ে। আমি বরং চেয়ে থাকি দুচোখ দিয়ে, ঐ তো বৃষ্টি নামবে ঝমঝম, মাঠেঘাটে জলে ছেয়ে যাবে, আর অনুভবের সায়রে হারিয়ে যাব।

হারিয়ে যেতে যে আজ নেই মানা, হারানের জন্যই পথের দেখা, নতুন পথে হেঁটে চলা, হারিয়ে যাওয়া, আবার পথ খুঁজে পাওয়া ।

Src

ধন্যবাদ, আমার পোস্টটি পড়ার জন্য। শুভকামনা অবিরাম ।

নিজের সম্পর্কে কিছু কথা

(