বৃষ্টিস্নাত দিনের নির্ঝরা সকাল ও বাংলাদেশের জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু | [ কিছু হ-য-ব-র-ল কথা ]
তারিখ : ০৯.০৬.২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ, রবিবার।
আসসালামু আলাইকুম / আদাব।
বন্ধুগণ, এই দীর্ঘদিনের শেষে এসে সময়ের ক্রান্তিলগ্নে আপনাদের সবাইকে বাংলা ভাষায় বিশেষায়িত আমার বাংলা ব্লগে স্বাগতম জানাই। সবাই আশা করি ভালো আছেন আর নানা বাধাবিপত্তি ও জীবনের চড়াই উতরাইকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে চলেছেন আপন আপন গন্তব্যে। তার জন্য প্রিয় পাঠকমন্ডলী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানাই।
সকাল থেকেই আবহাওয়ার অবস্থা তেমন সুখকর ছিল না, বিশেষ করে যখন প্রভাতের পর দুপুর গড়িয়ে চলেছিল আর নীল পরিষ্কার আকাশজুড়ে মেঘের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছিল। গুড়ুম গুড়ুম শব্দে চারদিক ছাপিয়ে উঠেছিল স্তব্ধতায় যেন ঝড়ের হালকা পূর্বাভাস পেয়ে প্রকৃতি তার স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে মেঘের অঝোর ধারায় সিক্ত হবার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।
কয়েক সপ্তাহ আগে, আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি গরমের প্রতাপ থেকে বাঁচার উপায় খুঁজে নেয়া, তাপমাত্রার হঠাৎ বৃদ্ধি আর জনজীবনে তার স্পষ্ট ছাপ, প্রাণীকূল হাঁপিয়ে ওঠা আর তারই সাথে যখন কালবৈশাখীর একটি উপরি উপরি আগমনী বার্তা এসে পড়েছিল সেটা মোটেও গাছপালা ও ঘরবাড়ি বিপর্যস্ত হওয়া ছাড়া তেমন বেশি কিছু দিয়ে যায় নি।
বাংলা ক্যালেন্ডারের জ্যৈষ্ঠ মাস এখনো শেষ হয় নি, নিয়ম অনুযায়ী আষাঢ় শ্রাবণ দুই মাস বর্ষাকাল ; কিন্তু থেমে থেমে বারবার বৃষ্টি হওয়া, সকাল বেলার ঝুম বৃষ্টি কিংবা সন্ধ্যার একটানা অবিরাম বর্ষণের ধারা সব হিসেব এলোমেলো করে দেয়। যাক, আজকের সকালটায় তেমন বাদলে বরিষণে কাটাতে হয় নি, বেশ রৌদ্রোজ্জ্বল ছিল - এমন অবস্থায় মনে মনে বেশ খুশি ই হয়েছিলাম বটে।
জীবনের নিয়মের এ দিকটার কথা না বললেই না, যখন একেক সময় একটানা কোন কিছু সে খুব ভালো কিংবা মন্দই হোক, মানবমন সবসময় নতুন কিছু কিংবা দীর্ঘ সুখ দুঃখের থেকে পরিত্রাণ পেতে চায়। ভাবছি সে মাসখানেক আগের গরমের কথা যখন অনেকটা সময় সূর্যের প্রখর তাপ কমছিলো না, তারপর হঠাৎ করে বৃষ্টির ধারায় ধরণী শীতল হয়ে এলো আর সর্বশেষে এখন রৌদ্রজ্জ্বল ঝলমলে দিনই খুব ভালো লাগে। হায়রে, বিচিত্র ইচ্ছেগুলো !
যা হোক ,আপনারা যারা ক্রীড়ামোদী পাঠক আছেন, আর ধৈর্য্য ধরে আমার এ লেখাখানি পড়ছেন - তারা নিশ্চয়ই ক্রিকেটের একটি বড় আসর বিশ্বকাপের শুরুর দিককার ম্যাচগুলো দেখতে ভুলে যাচ্ছেন না। বিশেষ করে আমাদের এই উপমহাদেশে প্রায় সিংহভাগ দেশই কিন্তু ক্রিকেটের সাথে খুব বেশি জড়িয়ে আছে। এই ধরুন, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, সদ্য স্ট্যাটাস পাওয়া আফগানিস্তানও ক্রিকেটীয় সক্ষমতার বাহাদুরিতে কম যায় না ।
সকালবেলা, যদিও ৬ টা থেকে যে ম্যাচটি শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কার মধ্যকার সেটি দুটি দলেরই প্রথম ম্যাচ বলা চলে এই বিশ্বকাপে। ভোরে সচরাচর টি-টোয়েন্টি ম্যাচ আয়োজন হয় না, কিন্তু যদি ভেন্যু হয় এক দিন সময়ে অবস্থিত দূরবর্তী কোন স্থানের তাহলে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হওয়া ম্যাচ সকালেই দেখতে পাওয়া যাবে - তাই তো স্বাভাবিক।
কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো এত ভোরে ঘুমঘুম চোখ নিয়ে টেলিভিশনের সামনে বসে সোফায় হেলান দিয়ে রিমোট অন করে স্পোর্টস চ্যানেলে স্ক্রিনিং করার যে ব্যাপারটা তা বেশ বিরক্তি উদ্রেককর বটে। তবে তার চেয়ে বড় মোহ যেটা ঘিরে ধরেছিল সেটা হলো, নিজের প্রিয় দলের ম্যাচটা যা অন্য সব ঘুম কিংবা আলসেমী অথবা ব্যস্ততার তোয়াক্কা না করা ইত্যাদির চেয়ে ঢের বড়। জাতীয় দলের খেলা দেখার টান কিংবা আকর্ষণ মাপার কোন যন্ত্র এখনো পর্যন্ত অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে যে !
সে যে বিষয়ই হোক না কেন, কয়েকটা কথা বলে নেই - তা হলো এবারের বিশ্বকাপ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নিয়ে অনেক কথা বলার আছে আপনাদের সাথে, তা পরবর্তীতে ম্যাচ চলাকালীন সময়ে এবং বিশ্বকাপ আয়োজনের মাঝে শেয়ার করবো এ প্রত্যাশা রাখি। কিছুটা পর্ব আকারে দীর্ঘ বিভিন্ন বিষয়, মতামত তুলে ধরবো সমালোচনা কখনো আলোচনার সুরে এমনটাই ঠিক করে রেখেছি।
প্রথমেই বলে রাখি, এবারের বিশ্বকাপের বাংলাদেশ টিমের স্কোয়াড যখন নির্বাচকমণ্ডলী ঘোষণা করলো, তারপর থেকে আমি অর্ধেকেরও বেশি আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। বেশ কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড়দের দল থেকে বাদ দেয়া হয়েছে, মূল এগারো জনের মধ্যে যে একটা ভারসাম্য রাখার ব্যবস্থা রাখার কথা তা দেয়া হয় নাই। সব মিলিয়ে একটি মিশ্র দল কিছুটা দ্বিতীয় সারির অনভিজ্ঞ খেলোয়াড়ে সাজানো হয়েছিল যা দেখে বোঝার উপায় ছিল না তারা ভালো খেলতে পারবে।
যে কয়টি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিল তাতে ভালো ফলাফল আশানুরূপ হয় নি, এমনকি কিছু প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্সও স্বভাবসুলভ হয় নি। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হার আর মনোবল বিদীর্ণকারী ফলাফল মূল পর্বে একটি নেতিবাচক ফল ঘটারই বার্তা দিচ্ছিল। কিন্তু বেশ অনেকদিন পর, তারা জানান দিল যে লম্বা দূরত্বে দৌড়াতে হলে কয়েক গজ পিছনে যেতে হয়, তার কিছুটা ঝলক মূল পর্বের প্রথম ম্যাচে হলো।
শ্রীলঙ্কা একটি প্রতিদ্বন্দ্বী দল হিসেবে মোটেও সামান্য প্রতিদ্বন্দ্বী কোন দল নয়, বরং তারা ক্রিকেটীয় পরাশক্তি হিসেবেই পরিচিত বিশ্বমহলে। বাংলাদেশ মোটামুটি পূর্ণশক্তির দল না নিয়েও যে পারফরম্যান্স দেখাল, তাতে তাদের প্রতি আশাবাদী হওয়াই যায়। তবে অনেক ক্ষেত্রে উন্নতি করার বিকল্প নেই। কিছু খেলোয়াড়দের দায়িত্বশীল হতে শিখতে হবে, নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভালো খেললেই দল এগিয়ে যাবে আপসে।
সব বিষয় ও খুঁটিনাটি এক পোস্টে শেষ করতে পারবো না, তাই আজ এ পর্যন্তই লিখলাম। অভিনন্দন বাংলাদেশ টীমকে প্রথম জয় অর্জনের জন্য, যদিও সহজ ম্যাচ কঠিন করে জেতার জন্য তারা একটি সমালোচনামূলক স্তুতি প্রাপ্য। তবে আশা করি সকল ভুলভ্রান্তি উপেক্ষা করে এগিয়ে যাবে এ দলটি এবং একদিন অবশ্যই ভালো কিছু নিয়ে আসবে পুরো বাঙালি জাতির জন্য।
আপনাদের ধন্যবাদ ধৈর্য্য ধরে পোস্টটি পড়ার জন্য। অনেক অনেক শুভকামনা ও শুভেচ্ছা রইলো। 💐✒️✅