প্রাকৃতিক দুর্যোগ : প্রেক্ষিত- বন্যা || এ যেন এক নতুন বাংলাদেশ ||

প্রিয় কমিউনিটি বন্ধুগণ,

আপনারা সবাই কেমন আছেন ? আশা করি ভালোই আছেন আর সুস্থ সুন্দর একটি সময় পার করছেন। বলতে না বলতেই আরেকটি মাসের শেষ চলে আসলো। আগস্ট মাসটি আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে অনেকগুলো চমকপ্রদ ও যুগান্তকারী ঘটনার সাক্ষী হয়ে রয়েছে, যার জাতীয় জীবনে প্রভাব অনেকটাই বেশি।

সেই মাসটির শেষ কয়েকটি দিনে এসে আমরা উপস্থিত হয়েছি। জাতীয় জীবনে নানা ঘটনাপ্রবাহ ঘটে চললেও আমার ব্যাক্তিগত বিষয়ে চিন্তার পরিধি অনেকটাই নানা দিকে বিস্তৃত হয়ে রয়েছে। বর্ষাকাল রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পের মতোই কেবল শেষ হয়েও হইলো না শেষের দিকে এসে উপস্থিত, তবুও অল্প বৃষ্টিতেই দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভাটির দেশ, এই ছোট্ট ব -দ্বীপ টিতে বন্যা এসে উপস্থিত হয়েছে।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্যে আপনারা বন্যাদুর্গত মানুষের দুঃখ দুর্দশা, ঘরবাড়ি থৈ থৈ পানিতে প্লাবিত হয়ে যাওয়ার হাহাকার, খাদ্য ও পানীয় জলের সংকট ও তৃষ্ণা, কষ্টের ব্যাপারে জানতে পেরেছেন। কেউ-বা হয়তো, যারা বাংলাদেশের ব্লগার রয়েছেন, তারা আকস্মিক মানবসৃষ্ট বন্যার কারণে ভুক্তভোগী। সবাইকেই সমবেদনা জানাই।

Src

আশা করি এমন অবস্থা আর বড় পরিসরে ঘটবে না আর শীঘ্রই আমরা বন্যার পানি থেকে মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবো। দেশের সব কয়টি অঞ্চলে বন্যা ততটা প্রবোলভাবে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে নি, হাতে গোনা অল্প কয়েকটি শহর, অঞ্চল,জনপদ প্লাবিত হয়ে রয়েছে। তবুও বন্যার সম্ভাব্য ঝুঁকি ও জনজীবন আরো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে নিরাপদে থাকার নিশ্চয়তা কেউই দিতে পারে না।

উক্ত অকস্মাৎ বন্যা সম্পর্কে যখনই জানতে পারি, প্রথমে একটি টেলিভিশনের নিউজ দেখছিলাম। পানি ধীরে ধীরে নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত করে দিল। ঘরবাড়ি, বাড়ির উঠোন, দোকানপাট, বাজার, মাঠ সবকিছুই পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। অসহায় মানুষ পানির নিচে নিত্য ব্যবহার্য প্রায় সবকিছু হারিয়ে দিশাহারা হয়ে ঘরবাড়ির ছাদে গিয়ে অবস্থান নিয়েছিল।

অতীত ইতিহাসে যখন বন্যা হতে দেখা গিয়েছিল, তখন পানির মাত্রা ও উচ্চতা বৃষ্টিপাত বাড়ার সাথে সাথে অল্প অল্প করে বাড়তো। মানুষ হাঁটু পরিমাণ পানি থেকে, কোমর পর্যন্ত পানি উঠতে উঠতে পর্যাপ্ত সময় পেত। অন্তত দু-চারদিন সময়ের মধ্যেই যারা খুব বেশি অসহায় তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হতো। কিন্তু এবারের দৃশ্যপট ভিন্ন, আপনারা তা জানেন ও বুঝতে পেরেছেন।

জেলা পর্যায়ের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত করা গেলেও, তাতে অকস্মাৎ "ফ্ল্যাশ ফ্লাডের "কারণে তা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব হয় নি। ফলশ্রুতিতে, বিরাট একটি ক্ষতি হয়, প্রাণহানি ঘটে, চরাঞ্চল, নদীবিধৌত অঞ্চল, উপকূলীয় ভূমি ও খাল-বিল জলাধারের নিকটবর্তী গ্রাম, মফস্বল, শহর জনপদে তার মাত্রা বেড়ে যায়।

সদ্য শপথ নেয়া সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুতগতিতে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হয় নি, কারণ যে ক্ষিপ্রতায় বন্যা ছড়িয়ে পড়ে সবখানে তা নজিরবিহীন, অতীত ইতিহাসে তা দেখা যায় নি। তবুও নানা দিক থেকে মানুষজন নিজেদের মতো করে উদ্ধার অভিযান, বেঁচে থাকার লড়াই আর নিরাপদ আশ্রয় ও উচ্চতায় ছড়িয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহন করে।

সবচেয়ে যে বিষয়টি ভালো লেগেছে, অকস্মাৎ বন্যার মতো একটি জাতীয় দুর্দিনে সাধারণ মানুষ সারা দেশে একজোট হয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়। কেউ অর্থকড়ি দিয়ে, কেউ বা নৌযান যেমন বোট, অস্থায়ী ভেলা বা ভাসমান দ্রব্যাদি বানিয়ে মানুষকে উদ্ধার তৎপরতা চালাতে সাহায্য করে।

Src

নানা দূরদূরান্ত থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অল্পবিস্তর সাহায্য সহযোগিতা, অনুদান, বন্যার্তদের জন্য বিশেষ ফান্ড গঠন ও বিতরণ, সশরীরে উপস্থিত হয়ে ত্রান পৌঁছে দেওয়া, শুকনা খাবার ও পানির বোতল পৌঁছে দেওয়া, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের উদ্ধার করা ও নিরাপত্তা ইত্যাদি সবকিছুই বেশ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। যখন দেখতে পেলাম, সবিশেষ সবাই-ই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে - তখন বেশ হালকা অনুভব করলাম।

বন্যার মতো দুর্যোগ দেশের সামগ্রিক মানুষের অংশগ্রহণ ছাড়া মোকাবিলা করা কঠিন। সরকারি অনুদান কিংবদন্তি নোবেল লরিয়েট সাহেবের কারণে হাজার কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছিল। যা অনেকাংশেই বন্যা পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে ভূমিকা রেখেছে।

সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা তাদের নিজেদের মধ্যে থেকে ১ দিনের বেতনে সবাই মিলে দান করেছেন বন্যার্ত অসহায় মানুষের জন্য। অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থা ও সরকারি কর্মকর্তারাও বাদ যান নি।

Src

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠটির একটি মিলনায়তন, টিএসসি (ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র) সারা রাজধানীর ত্রানে পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। দেশের মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা, টান ও মমত্ববোধ, সহমর্মিতা দেখে আমার নিজের চোখে হালকা জল চলে এলো! বাঙালি হয়ে, বাংলাদেশী হয়ে লাল সবুজের পতাকার অংশ হয়ে ভেতরে গর্ব অনুভব করলাম।

এ যেন এক নতুন বাংলাদেশ। একজনের বিপদে অন্যজন। এক মানুষের সর্বস্ব হারা অবস্থায় অন্য মানুষের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার নজির তা-ই বলে চলে। তবুও আশা রাখি একদিন আবার আমরা দুর্যোগ মোকাবিলায়ও সক্ষম হবো। সার্থক হবে সহস্র মানুষের সর্বোচ্চ ত্যাগের দান।

পরিশেষে, আমার বাংলা ব্লগকেও ধন্যবাদ জানাই,কিছু অনুদান পৌঁছে দেওয়ার জন্য বন্যার্তদের উদ্দেশ্যে। মানবীয় দিক বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত সর্বসাকুল্যে একটি মহতী মানবসেবার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ধৈর্য্য ধরে লেখাটি পড়ার জন্যও ধন্যবাদ জানাই। দেখা হবে আগামী কোন এক দিনে।

১০% সাই-ফক্স ও ৫% এবিবি-স্কুল বেনিফিশিয়ারি