দীর্ঘশ্বাসে বাংলার বঞ্চিত ইতিহাস ! |সমালোচনা| [ একটি বিশেষ মুক্তলেখা ]

🗓️📌 তারিখ :১৫.০৭.২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ।

সুপ্রিয় পাঠক ও বন্ধুগণ,

আসসালামু আলাইকুম / আদাব।
আপনাদের সবাইকে আবারো আরেকবার আমার এই বাংলা ভাষায় নিবেদিত বিশেষ ব্লগটিতে স্বাগতম জানাই। সবাই সুস্থ, সুন্দর ও ভালো আছেন এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করি।

অধিকার। একটি শব্দ যেটি বলে চলে পৃথিবীতে বাঁচতে হলে নিজের জন্য নয়, অন্যান্য শোষিত, নিপীড়িত মানুষের ন্যয্য পাওনার ব্যাপারেও বলতে হবে, অর্জন করে নিতে হবে যেটি প্রাপ্য। যুগে যুগে যখন জুলুম, নির্যাতন আর চাপিয়ে দেওয়া নানা কালাকানুন, বঞ্চনার ইতিহাস রচিত হয়েছে, তার সাথে কেড়ে নেওয়া হয়েছে কিছু মানুষের সুখে বাস করার সম্বলগুলো।

Src

সময়ের পরিক্রমায় নানা যুগ যুগান্তর পেরিয়ে চলেছে, কালের পরম্পরায় মহাকাল এসে মিলিত হয়েছে আপণ পথ গড়ে তোলে। প্রাচীন যুগ, মধ্য যুগ আর তারপর আধুনিক সভ্যতার গোড়াপত্তন হয়েছে। কখনো দেখা গিয়েছে বিশৃঙ্খলা,অন্যায়, জুলুম আর অধিকার হরণ করে নেওয়া আর এর মাধ্যমে একটি বিশেষ শ্রেণি সুবিধা নিয়ে সাধারণ প্রজা সমাজের ওপর চালিয়েছে নিষ্পেষণ, সুকৌশলে, বলশক্তি প্রয়োগে।

বিগত কয়েক শতাব্দীতে আমরা দেখেছি কিভাবে মানুষ যুদ্ধ বিগ্রহ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা আর ত্রাসনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। এসব কীর্তিকলাপের পেছনে মূল কলকাঠি নেড়ে গেছে কিছু চরম সুবিধাভোগী লোকজন যারা চরিতার্থ করতে চেয়েছে নিজ স্বার্থ, লোভের ইন্ধনে আবদ্ধ হয়ে মানুষের জীবনযাপন আর ভাগ্যকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছে।

বিশ শতকের ইতিহাস পুরোটাই যুদ্ধ বিপ্লবের ইতিহাস, সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্য ভেঙে যাওয়া আর চরম দামামার হুঙ্কারে ধ্বংসলীলা, প্রচন্ড গোলাগুলি, দখলদারিত্ব, একটি জাতি অন্যটির ওপর চড়াও হওয়া শেষে বিশ্ব শান্তির বার্তা নিয়ে আবির্ভাব আর নগর রাষ্ট্রের পত্তন হওয়া। তারপর যুদ্ধের পরিসর কমে গিয়ে একটি সহনশীল মাত্রায় চলে আসা-ই অনেক কিছু বলে যায়।

যুগে যুগে একটি বিশেষ শ্রেণি বা ব্যক্তি সামগ্রিক সমাজের ওপর দমন পীড়ন চালিয়ে গিয়েছে কিন্তু আধুনিক যুগে এসে প্রযুক্তি যখন যোগ হয়েছে তখন তার মাত্রা অন্যরূপ পেয়েছে। অধিকার আদায়ের সংগ্রামের কথা বলছিলাম, সেটি কিভাবে মানুষকে আঁকড়ে ধরে, রূদ্ধ করে রাখে তা ভাষায় বলে চলা সম্ভবপর হয় না। একটি জাতি কয়েকজন বিশেষ ব্যক্তির কাছে কতটা অসহায় তা বলার অপেক্ষা থাকে না।

Src

বাংলায় একটি বড় দুর্যোগ ও জাতির জন্য ক্রান্তিকালের মুহুর্ত এসে পৌঁছেছিল, সেই ১৭৫৭ সালের নিকট ইতিহাসে, তারপর অনেকগুলো বছর পার হয়ে গেল। স্বাধীনতা একটি বড় অধিকার, তা হরণ করে নিয়ে যাওয়া হলো। কে নিতে দিল ?

এ বৃহত্তর বাংলারই কিছু মানুষ, সিরাজুদ্দৌলার বুকফাটা আর্তনাদ তখন বাংলার আকাশ বাতাসকে ভারী করে তুলেছিলই, পলাশীর প্রান্তরে ডুবে যাওয়া সূর্য শেষবার করুন চোখে তাকালো শস্য শ্যামলা এ বাংলার দিকে, হায়রে মায়া ! তারপরের দিনের সূর্য পরাধীন ভারতবর্ষের দিন গুণলো।

বাংলায় ১৯৫২ সালে ছাত্ররা বুঝতে পারলো মুখের বুলি, আ মরি বাংলা ভাষা কেড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, রবীন্দ্রনাথের সোনার বাংলা, মাইকেল মধুসূদনের ভান্ডারের বিবিধ রতন, নজরুলের বল বীর চির উন্নত মম শীর, জসীমউদ্দিনের নকশী কাঁথার মাঠ আর জীবনানন্দের আবার আসিব ফিরে, ধানসিঁড়িটির তীরের সেই বাংলা আর আজ যে ভাষায় অক্ষরে, শব্দে, ছন্দে বর্ণে লিখে চলেছি তার রাষ্ট্রীয় প্রয়োগের ওপর চরম আঘাতের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জামতলায় বিশ্ব ইতিহাসের প্রথম বারের মতো রক্ত ঝরলো ভাষার দাবিতে।

ইতিহাস কথা বলে, ইতিহাস ফিরে তাকায়, ইতিহাস পুনরাবৃত্তি করে, এমনভাবে -

ইতিহাস পুনরায় ফিরে আসে, প্রথমে ট্র্যাজেডি হিসেবে, দ্বিতীয়বার প্রহসন ।

আর আজ স্বাধীন দেশে দাঁড়িয়ে দুঃখ হতাশায় মন হাহাকার করে ওঠে, এখনো অধিকার আদায়ের সংগ্রাম শেষ হয় নি। স্বাধীন বাংলায় ৭১ এর গর্জন ধ্বনিত হলো আকাশে বাতাসে, আপামর জনসাধারণ অংশগ্রহণ করলো। লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি মানুষ ভুক্তভোগী হলো, নিজেদের ত্যাগ স্বীকার করলো, বাস্তুহারা হলো, কিন্তু গুটিকয়েক মানুষ মুক্তিযোদ্ধা সনদ ধারী হয়ে স্বীকৃতি পেল। তারপর তাদের টেনে আনা হলো স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর কোটা ব্যবস্থায়।

Src

আপনারা সবাই জানেন, বাংলাদেশে কোটা আন্দোলন, ন্যয্যতার দৃষ্টিকোণ থেকে মেধাবীরা মুক্তি পেয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়বে, রাষ্ট্রীয় সুযোগ চাইবে, সে অধিকার টুকু প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করে দিনরাত কষ্ট পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা চড়াও হয়েছে ৯০ শতাংশ জনমতের ন্যয্যতার দবির ওপর।

হয়তো, অধিকার আদায়ের সংগ্রাম নিকট ইতিহাসে পূর্ণতা পাবে, তবে পৃথিবীর সকল মুক্তিকামী মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পাক এ প্রত্যাশা করি। কিন্তু তারপরেও বাংলায় যে ঐতিহাসিক পালাবদলে ঘটনাগুলো ঘটে চললো তাতে মানুষের অধিকার ভাস্বর থাকুক এই চাওয়াই পূর্ণতা পাক তার জন্য শুভকামনা থাকলো ।

আজকের পোস্টটি অধিকার নিয়ে সাজিয়েছি। হয়তো অনেক অসামঞ্জস্য কিংবা ভুল ত্রুটি থেকে যেতে পারে, তবে তা মুক্তলেখায় সংশোধন, মার্জনা করে নেবেন তা আশা করি। বাঙালী জাতি ও বাংলা চিরজীবী হোক, সেই সোনালী সুদিন ফিরে আসুক, সকল ভেদাভেদ ঘুচে যাক আর হাসিখুশিতে ভরে উঠুক তার অঙ্গীকার ও স্বপ্ন নির্মাণ হোক এই মোর চাওয়া রইলো।

পোষ্টটি ধৈর্য্য ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। দেখা হচ্ছে অন্য কোন লগ্নে।

নিজের সম্পর্কে কিছু কথা