বাদলা দিনের গান। { জীবনের সাধ আর একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা }
হ্যালো প্রিয় কমিউনিটির সদস্য,লেখক ও পাঠকবৃন্দ, আপনাদের সবাইকে একগুচ্ছ ফুলেল অভিবাদন জানাই।
আজ ৫ই মে, রবিবার ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ। বাংলার আকাশে বইছে কালোমেঘের ঘনঘটা, দীর্ঘ এক উষ্ণতার দাহনের পর আকাশের কান্না ভারী হয়ে ঝরে পড়ার একটি জুতসই উপলক্ষ তৈরি হয়ে এসেছে।
আমাদের সবার জীবনে আর প্রকৃতির ক্যানভাসে চিত্রিত জনজীবনে তাপমাত্রার অসহনশীলতায় একটি হাঁফ ছেড়ে বাঁচার আকুতি ছিল, তার পূর্ণতা নিয়ে এলো বৃষ্টিধারা।
থাই অ্যালুমিনিয়াম গ্লাসের জানালার পাশে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি বৈশাখের উন্মাদনা আর ছাতিফাটা রোদের দিন এবার শেষের পথে। শ্রাবণ মেঘে ভেসে এবার টিনের চালে ঝুপঝুপ বাজনা ক্রমাগত ঘোর তৈরি করার এইতো সময়, হাঁড়িতে চাল-ডাল-চিকেনের ঠ্যাং, সবজির মিশেল তাঁতিয়ে বাহারি খিঁচুড়ি খাওয়ার উৎকৃষ্ট সময় এসে পড়েছে।
জানিনা, শত ব্যস্ততার মাঝে আপনারা নিজেকে কিভাবে আনন্দ দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। যদিও কিছু মুহূর্ত কাটে নানারকম চিন্তা দুশ্চিন্তায়, সংসারের ঝুটঝামেলায় আর উদ্বিগ্নতায়। কারো দুশ্চিন্তার পরিধিতে থাকে আর্থিক টানাপোড়েন কিংবা মস্তবড় সমস্যার সমাধান, কারো পারিবারিক দিকটায় একটা গোলযোগ বেঁধেই আছে আর জীবনের পাওয়া না পাওয়ার সমীকরণ তো তৈরি হয়েই আছে ।
তবে তারপরও এত শত দুর্যোগ, প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির খেলায় প্রায়শই দেখা যায় মানুষজন নিজেকে হতাশা কিংবা নিরানন্দে জড়িয়ে নেয়। যেন জীবনে শুধুই দুঃখে ভরা আর কখনো এসবের মাঝে খেই হারিয়ে ফেলে। আমি দিনের পর দিন এমন উটকো টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি, কখনো একটুখানি শান্তির জন্য নিজেকে আড়াল করে নিঃসঙ্গতার মধ্য দিয়ে পথ খুঁজেছি।
যখন কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস নিজের মনের মতো হয় নি বা হবে বলেও শেষমেশ একটি বাধায় পড়ে বিপর্যস্ত হয়ে ধোঁয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে, তখন আক্ষেপের পাল্লা ভারী হতে দেই নি। সবকিছু নির্ভর করে নিজের ওপর কিভাবে একটি বিষয়কে নেয়া হয়, মানুষ বাস্তবতাকে যেভাবে ব্যাখ্যা করে ঠিক সেভাবেই তা চোখের সীমানায় আছড়ে পড়ে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো। একটি পর একটি আসছে আর আমরা তা প্রত্যক্ষ করে চলেছি।
তবে, যদি কেউ আমাকে প্রশ্ন করে -আপনি কিভাবে নিজের রাগ অভিমান আর ব্যার্থতার বহ্নিজ্বালাকে সামলে নেন ?
আমি বলবো প্রথমেই জীবন থেকে প্রত্যাশার যে পারদ আছে তার তাপমাত্রা কমিয়ে নিন। কারণ যখনই আমরা খুব বেশি জীবন থেকে আশা করি তখনই তার চেয়ে কম পেলে মন খারাপ করি,কেউ বিষাদে ডুবে যাই, কেউবা ভেতর থেকে ভেঙে পড়ে হতাশ হয়ে যাই।
এসবই হয় কারণ আমরা যা চেয়েছি আর যা পেয়েছি তার মধ্যে বিস্তর ফারাক ছিল - যা একটি দোলাচলে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে জীবনকে আর তার সাথে আমাদের অনুভূতিকে।
অনেক সময়ই আশ্চর্য হয়ে পড়ি সময় ও বিভিন্ন অধ্যায় ক্রমাগত আমাদের ইচ্ছা,চাওয়া পাওয়াকে বদলে দেয় কিভাবে। মানুষ কত নির্বিকার বিভিন্ন সময়ে হয়ে ওঠে আর তার সাথে সাধ পরিবর্তিত হয়ে বিস্তর রূপে আঁকড়ে ধরে।
এইতো সেদিন একটি ষাটোর্ধ্ব বয়সী লোকের সাথে কিছুক্ষণ কথা বললাম। ছেলে মেয়ে পরিজন তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে অন্য শহরে, তিনি ভালো আছেন কি নেই - তা দেখবার কেউ নেই। একটিবার তাদের মন চায় না বাবা কেমন আছে, যাকে ছাড়া তাদের শৈশবের একটি দিনও চলতো না। ঘুম থেকে উঠেই যার মুখ দেখে শিশু বয়সে তাদের মুখের কোনে হাসি লেগে থাকতো।
বাবা বাবা বলে সারা দিন তারা কোলে ওঠার বায়না ধরতো, এই সেই সময় পার হয়ে গিয়ে এখন তারা যৌবনের চূড়ায় উঠে নিজের জীবন, ক্যারিয়ার আর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবে, নিজেদের পৃথিবী যতটুকু তার ভেতরে সেই মানুষটি নেই।
লোকটি যখন অকপটে আমাকে বিশ্বাস করে তার মনের সাবলীল কথা বলে চলেছে, তখন আমি পরিষ্কার দেখে চলেছি তার চোখের কোণে জল জমা হয়ে উঠেছে। হায়রে জীবন! এখন তার শুধুই চাওয়া যাতে বাকি জীবনের জন্য কারো মুখাপেক্ষী না হয়ে চলতে হয়।
অন্যদিকে এমন মানুষও দেখেছি, যারা অর্থ চায় আরো, সম্পদের সরবরাহ আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দীর চেয়ে এগিয়ে যশ আর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে নেয়া। দুটি ক্ষেত্রেই ভিন্ন দুটি মানুষ, বয়স এক,কিন্তু চাওয়া পাওয়ার তফাত আলাদা।
দিনশেষে আমরা সুখ খুঁজে নেই, তালাশ করি যেন কোন অপ্রাপ্তি না থাকে। তার জন্য তাবৎ সংসারে কতকিছু করে চলেছি, কিন্তু পেয়েছি যা চাইনি, আর না পাওয়ার তালিকায় বড় একটি দীর্ঘশ্বাস ! 😴
শেষে এসে একটি গানের চরণ খুব মনে পড়ছে। যদি তা পড়ে নিজে গাইতে শুরু করেন, তাহলে বুঝবো গানটির অর্থ আর মর্ম দুইই বোঝেন, আর অনুভব করেন ভেতর থেকে তার কথা আর অব্যক্ত সুরের ধুয়া।
সবাইতো সুখী হতে চায়, তবু কেউ সুখী হয় -কেউ হয় না ;
জানিনা বলে যে যায় লোকে সুখ যে কি না -
কপালে সবার নাকি সুখ সয় না .. 🎵🎶🎶