একটি বৃষ্টিবিঘ্নিত দিন ও চারাগাছের গপ্পো 🌩️☔🎋

আমার সহযোগী লেখক ও ব্লগারবৃন্দ,

আসসালামু আলাইকুম / আদাব।
বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যারা প্রিয় এই কমিউনিটিতে যুক্ত আছেন, আর যারা ভারতীয় বাংলা তথা পশ্চিমবঙ্গ থেকে সংযুক্ত আছেন - প্রত্যেককেই বিশেষভাবে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা নিবেদন করি। পাশাপাশি আশা করি আপনারা সুস্থ ও ভালো আছেন।

বেশ কিছুূদিন পর বাংলার আকাশের অবস্থার সাথে সাথে আবহাওয়ারও পরিবর্তন হলো। বর্ষাকাল নেই অথচ বৃষ্টির একটানা ঝমঝম আওয়াজ থেকে রক্ষা পাওয়ার কোন জো দেখতে পাই নি। জলবায়ু পরিবর্তন ঘটে চলেছে ক্রমাগত কিন্তু তারপরেও এতটা আবহাওয়ার পালাবদল কি মেনে নে যায়, বলুন ?

Src
সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ মেলে জানালার গ্লাস স্লাইডার খুলে হালকা ঝড়ো হাওয়া গায়ে লাগতেই বুঝতে পারলাম ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি বয়েই চলেছে। কতক্ষণ কিংবা সেই কখন থেকে, মাঝরাত কিংবা তারো আগে হয়তোবা সন্ধ্যারাতের পর একটানা হয়তো, কে জানে ! পর্যায়ক্রমে বৃষ্টি হয়ে চলেছে মানে হলো মাঠঘাটে পানি জমে থাকা আর তার থেকে পরিত্রাণ পাওয়া অত সহজ নয়।

যা হোক, সকাল গড়িয়ে সময় বয়ে চললো আর সূর্য যখন মাঝগগনে আর ঘড়িতে সময় বারোটা তখন বেশ হালকা মনে হলো দীর্ঘ কিছু সময়ের পর বৃষ্টির তিরোভাব দেখে। রোদ পড়ছে ছাদের কার্নিশে, জানালার ওপরে যে সানসেট বা একটি ঝুলানো দেয়াল থাকে তার ওপরে।

বাইরের দিকে ঝুঁকে পড়া ব্যলকনিতে মাস দুয়েক আগে লাগিয়েছিলাম কয়েকটা দেশী বিদেশী বিলেতি ফুলের চারা আর সেগুলো এখন বেশ দেখতে হয়েছে।
আমি যদিও উদ্ভিদবিদ নই, তা সম্পর্কে কোন গবেষণা নেই, উচ্চতর জ্ঞানও নেই - তবুও সেই কলেজে পড়ার সময় নানা জাতের, প্রজাতির গাছ, চারাগাছ কিংবা বৃক্ষের বৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাস, নেমেসিস আর বৈশিষ্ট্য পড়েছিলাম। তারই সাথে কিভাবে চারাগাছ, কলম দেওয়া কিংবা গ্রাফটিং এর মতো করে একটি চারা থেকে অঙ্গজ বংশবিস্তার করা যায় তার প্রাথমিক জ্ঞান ছিল।

Src

মাস দুয়েক আগের কথা। নিজ এলাকা থেকে বের হয়ে শহরতলীর দিকে দু এক কিলো হাঁটার পরই দেখতে পেলাম চিরাচরিত সেই নার্সারি খানা। একটি সুন্দর সাবলীল বাগান, তাতে থরে বিথরে লাগানো আছে নানা জাতের ফুল, ফল, ছোট চারাগাছ, গুল্মলতার সারি, সবজির কয়েকটি পদ থেকে শুরু করে কিছু বিদেশি ফল (স্ট্রবেরি, ড্রাগন)।

একটি সারি ধরে হাঁটা শুরু করলে আরেকটি সারি এসে পড়ে এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম৷ এতদিন জাদুঘর দেখে অভ্যস্ত ছিলাম। বাংলার ভেতরে যা-ই জোটে না কেন, লুভ্যর মিউজিয়াম কিংবা ব্রিটিশদের মতো তো আর বৈশ্বিক কালেকশান খোঁজার সময় হবে না। মিউজিয়ামে একটির পর একটি নিদর্শন দেখে দেখে শেষ হতে চায় না, নার্সারিটিও দেখতে এমন দেখতে লাগলাম।

আধঘন্টা কাটিয়ে আর নার্সারির দেখভাল করার জন্য নিযুক্ত ব্যক্তিবর্গদের সাথে কিছু আলাপ জমিয়ে দিয়ে শেষে বুঝতে পারলাম, বেশি গাছের সারি দেখে মাথা খারাপ করে আর কাজ নেই। তাড়াতাড়ি কয়েকটা দেশী ফুলগাছ কিনে নিয়ে কেটে পড়ি।
যেই চিন্তা, সেই কাজ।

বেছে বেছে ভালো জাতের ও উজ্জ্বল রঙের চারাগাছ দুটো,একটি সূর্যমূখী, একটি গাঁদাফুলের চারা কিনেই সাথে দুটো আলাদা পলিমাটির ব্যাগ বুঝে নিলাম। তারপর একটি রিকশায় উঠলাম আর তাকে বললাম দ্রুত বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে যেতে। এত তাড়া দেয়ার কারণ, হাতে কোন ছাতা নেই,অতিরিক্ত হলো বৃষ্টির আগমনের ফের ঘোর লক্ষণ দেখা দিয়েছে। মাস দুয়েক আগের কথা।

Src
মিনিট দশেকের মধ্যে বাসায় এসে পৌঁছালাম। হাতমুখ ধুয়ে বিকেলের নাস্তা সেরে নিতেই টব দুটো ধুয়ে মুছে রেডি করে রাখলো আমার এক বিশ্বস্ত সহচর এবং প্রতিবেশী। তাকে দেখেই কেমন ভরসা পেলাম। এক, আমি গাছ লাগাতে আনকোরা, দুই - একজন মাঝারি গোছের এক্সপার্ট লোকেরও প্রয়োজন আছে।

তিরিশ মিনিটের মধ্যে বেশ দেখার মতো গাছের চারা সমেত টব লক্ষ্য করলাম। খুব খুশি লেগেছিল তখন। আর কিছুক্ষনের মধ্যে আবার ঝিরিঝির বইতে শুরু করলো। হালকা বিরক্ত লাগলেও কি করার !
এখন যে বৃষ্টিরই সময়, আইনত বর্ষাকাল, তাই নয় কি ?

ধন্যবাদ। দেখা হবে অন্য কোন দিন। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

১০% সাই-ফক্স ও ৫% এবিবি-স্কুল বেনিফিশিয়ারি