ঠুঁটো তেলেসমাতি - যত বেশ তত শেষ | [ একটি বাস্তবভিত্তিক গল্প ]

প্রিয় কমিউনিটি বন্ধুগন,

আসসালামু আলাইকুম / আদাব। শুরুতেই প্রত্যেকের কাছ থেকে দোয়া ও আশীর্বাদ পৌঁছে দিতে চাই।

আপনাদের সবাইকে নতুন একটি দিনের শুরুতে এসে স্বাগতম জানাই। আশা করি সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন। পৃথিবীর যে প্রান্তেই আমরা থাকি না কেন, সদা হাসিখুশি ও প্রাণোচ্ছল থাকা ও আপনজনের সান্নিধ্য লাভ করার মধ্য দিয়েই আমরা নিজেদেরকে প্রকৃতপক্ষে সুখী হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো। এ আকাঙ্ক্ষা সূচনালগ্নে ব্যক্ত করতে চাই।

আজকের পোস্টে তুলে ধরবো একটি গল্প যা বাস্তবজীবনের সাথে বিভিন্নভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে। যদিও আমরা গল্পকে অবাস্তব, কল্পনা মিশ্রিত কিংবা অমূলক বলে ধরে নিতে চাই প্রথমে, কিন্তু আদতে তা সত্য নয় সব ক্ষেত্রে। কেননা, যিনি গল্প রচনা করেন, লেখক হিসেবে তিনি নানা বিষয়, জীবনের দেখা অদেখা দিকগুলো, চরিত্র ও ঘটনাপ্রবাহ তেমনভাবেই নির্মাণ করে চলেন।

Src

মানুষের জীবনে সবসময়ই নানা টানাপোড়েন থাকে, সংকট থাকে যার থেকে সহজে উত্তরণ ঘটানো যায় না। সবাই কমবেশি সংকটের মুখোমুখি হয় আর প্রত্যেকের সংকট থেকে বের হয়ে অতিক্রম করে চলার ধরণও আলাদা। তবে কিছু বিষয় থাকে, যা আমরা বাইরে থেকে বুঝে উঠতে পারি না৷ অনুভব করি না গভীরের বিষয়, কিন্তু নিজ নিজ ব্যক্তি পরিধিতে তা চিন্তার থেকে আলাদা।

তো চলুন, দেরি না করে আমরা গল্পে প্রবেশ করি। এটি একক পর্বে সমাপ্ত ।

প্রারম্ভ সমাচার

কোন একটি উন্নতিপ্রবণ দেশের রাজধানী শহরে বাস করেন এক ধনাঢ্য জনৈক ব্যক্তি যিনি যদিও স্বর্ণের চামচ মুখে দিয়ে জন্মাননি, তবুও তার ক্যারিয়ারের নাটকীয়তা আর উত্থান বেশ রোমাঞ্চকর। যারা ব্যবসা -বাণিজ্য কিংবা মস্ত বড় কারবার কিংবা আর্থিক দিকপাল বেয়ে চলেন, তাদের প্রত্যেকের কাছেই তাঁর নাম মুখে মুখে ফেরে আর সাফল্য গৌরব দেখে ঈর্ষায় মুখ লাল হয়ে ওঠে অনেকের।

সবসময় তিনি সবার সাথে হাসিমুখে থাকেন, কখনো গম্ভীর, কখনো তিনি ধ্যানমগ্ন - চিন্তিত হয়ে থাকেন। তার বুদ্ধির পাশাপাশি কূটবুদ্ধিরও কোন অভাব নেই। সবসময় চেতনে অবচেতনে খুঁজে চলেন নানা ফন্দি ফিকির কীভাবে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে হটিয়ে তিনি সাফল্যের চূড়ায় কিংবা শীর্ষে উঠে যাবেন আর ধনের বহর বাড়িয়ে চলবেন।

দিন কি রাত প্রতি মুহূর্তেই তার মনের মধ্যে ঘুরপাক খায়, যে পথে তিনি চলেছেন তার ধারেকাছে আর কেউ নেই, বোধহয় দুই জন্মে চেষ্টা করে গেলেও তার কাছেধারে কেউ আসতে পারবে না। তার করায়ত্ত বড় বড় প্রতিষ্ঠান,বাজারগুলোতে তার একচেটিয়া প্রভাব আর তারই পাশ ধরে তিনি নিজেকে সময়ের সাথে সাথে ছাড়িয় যেতে পেরেছেন দারুণভাবে।

Src
যদিও বিভিন্ন সময়ে শহরের বাসিন্দারা তাকে কটাক্ষ করতো, সুযোগ পেলে ফাঁদে ফেলতে চাইতো। কিন্তু তিনি দমে যাবার পাত্র নয়, প্রত্যেক বারই নিজের বুদ্ধি আর পরিকল্পনার সূক্ষ্ণতার জেরে পাশ কাটিয়ে যেতে পেরেছেন। মাঝে মাঝে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠতো, সাথে নানা অন্যায় ও অযৌক্তিক হস্তক্ষেপের নজির, কিন্তু তিনি কোন এক আসমানী ক্ষমতার বলে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াতেন।

ক্ষমতাটুকু তিনি পেয়েছেন মূখ্যপাত্রের কাছ থেকে, যেখানে তিনি প্রত্যেক বার ইমিউনিটি পেয়ে যেতেন, চুরি কিংবা ডাকাতির পরও। কখনো জালিয়াতি, গরীবের টাকা মেরে খেয়ে, সিন্ডিকেট কায়েম কারে, বড় কারবার ধসিয়ে দিয়ে মুনাফা ফায়দা লুটে নিয়ে। তার এক ফুঁড়ে কঠিন সে কঠিন মুশকিল আসান হয়ে যেত।

কত লোককে তিনি হাওয়ার বলে কলাগাছ বানিয়ে দিয়েছেন, তার ইয়ত্তা চৌকস লোকেরাও খুঁজে বের করতে পারে নি দশকের পর দশক। এভাবে তার দিন কাটতে লাগলো আর বছরের পর বছর কেবল চূড়ায়ই উঠতে থাকলেন। হঠাৎ একসময় এক ভারী তুফান বইতে শুরু করলো।

চারদিকে বেজায় গন্ডগোল বেঁধেছে আর মুখ্যপাত্রের গদিচ্যুত হওয়ার দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসছে। যার প্রশ্রয়ে পিঠ টান করে কলাগাছসম হয়েছেন, তারই দশা এমন, ছেড়ে দে তো পালিয়ে বাঁচি। মুখ্যপাত্র পালিয়ে গেলেন আর জনৈক ব্যক্তি মাত্র দাঁড়ি কামিয়ে নিয়েছেন।

এবার একটি জেলেদের নৌকা ভাড়া করলেন, সাথে মোটা টাকা বখশিশ দেখিয়ে ভেসে পড়লেন মাঝগঙ্গায়। ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে দিন থেকে রাত হয়ে চললো, তিনি মনে মনে ভাবলেন, যেহেতু লোকালয় আর শহর থেকে অনেক দূরে তাই এবার আর কোন ভয় নেই।

Src
তবে তার আফসোস হলো, কি করে মহাপাত্র পালিয়ে গেলেন তাকে একা রেখে । সাথে তাদের এত বছরের রাজ্য ভেঙেও খানখান হওয়ার যোগাড়। নৌকায় শুয়ে শুয়ে এসব ভাবছেন, হঠাৎ একটি ট্রলার এসে কয়েকজন উর্দি পরা জওয়ান তাদের পাকড়াও করলো। আর ধরে বেঁধে নামিয়ে নিয়ে এলো রাজবন্দী হিসেবে।

দিন যায়, মাস যায়, বছর। একের পর এক তদবির আসে, ফিরে যায়। মহাপাত্রও নেই, তার রাজ্যও নেই। ঝড়ের মতো সব লন্ডভন্ড হয়ে গেল। এভাবে তিনি নিজেকে আবিষ্কার করলেন। যেভাবে শিখরে পৌঁছান, সেভাবে মাটিতে পত্তন। শহরবাসী তাদের নিজ নিজ ভাগ বাটোয়ারায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো, ভদ্রলোক তখনো শূন্য চোখে তাকিয়ে রইলেন।

সমাপ্ত।