নগরজীবন ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দিনকাল | নিবন্ধ | { ১০% সাই-ফক্স, ৫% এবিবি-স্কুল }

🗓️📌 তারিখ : ০৪.০৭.২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ।

সুপ্রিয় পাঠক ও বন্ধুগণ,

আপনাদের সবাইকে আবারো আরেকবার আমার এই বাংলা ভাষায় নিবেদিত বিশেষ ব্লগটিতে স্বাগতম জানাই। সবাই সুস্থ, সুন্দর ও ভালো আছেন এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করি।

পৃথিবী প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। মানুষ সবসময় সুখে দুঃখে নিজেদের জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাতের পর্বের মধ্যে দিয়ে সময়কে অতিক্রম করতে থাকে। সাফল্য ব্যর্থতা পুরো জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমরা সবসময় দেখা যায় তার সাংখ্যিক হিসাব মিলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। যেন সবকিছু গাণিতিক পাল্লায় মাপা থাকে।

আমরা কমবেশি সবাই জানি, আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের পৃথিবীতে যত প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে, ততই জটিল থেকে জটিলতর জীবনের দিকে আমরা প্রবেশ করছি। সেই সরল জীবন যাপন আর নেই, ঘিরে ধরছে ব্যস্ততা, নানা উদ্যোগ, লাভ লোকসান গুনতে বসা, সময়কে মূল্য দিয়ে সমৃদ্ধি লাভের চেষ্টাই যেন সার্বজনীন হয়ে ধরা দিয়েছে সবার মধ্যে ।

Src

আজকাল নাগরিক জীবনের বাইরে তাকালে তেমন একটি অপ্রতিভ ভাব অনুভব করি। স্মার্টফোন ছাড়া, ইন্টারনেট একসেস আর সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম যেন প্রকৃত জীবনের বসবাসের আমোদের চেয়ে বড় হয়ে ধরা দিচ্ছে। বলতে গেলে খুব বেশি অবাক লাগে, আশাহত হই এক নিদারুণ শঙ্কায় যে, তরুন প্রজন্মের ক্ষেত্রে এর কুপ্রভাব কতটা চওড়া তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

একটা সময় ফেসবুক, টুইটার ছিল না - ডিজিটাল ডিভাইসে যেমন করে টাইপ করে ইনপুট হিসেবে পত্র লেখা হয় তাতেও সেই মুক্ত হাতে লেখা চিঠিপত্রের ছোঁয়া নেই, কলমের অনুভূতি নেই, কালির হালকা গন্ধে লেখককে বিমোহিত করে না যখন সবকিছু স্মার্ট হতে শুরু করেছে। এতে করে যোগাযোগ সহজতর হয়েছে, বাস্তবিকভাবে আমরা জীবনযাপনের মধ্যে কি সরস দিকটা আর মৌলিকত্ব হারাতে বসছি না ?

এ প্রশ্ন যখন করে বসি, তখন রাস্তাঘাটে,কলেজ ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে দেখি ছাত্রছাত্রীরা বসে আছে আর কানে হেডফোন, মেসেঞ্জারের মাধ্যমে চ্যাটে ব্যস্ত, দ্রুত রিপ্লাই দেওয়ার কাজে ব্যস্ত। একটি বাস্তবিক আড্ডার পরিবেশের মধ্যে থেকেও তারা সেই একাকী থেকে যে যোগাযোগ করা যায় তার অপপ্রয়োগের মধ্যে আছে। এটি কিন্তু বিশ বছর আগের দৃশ্যপট নয়।

মাঝে মাঝে ভাবি তাহলে কি নব্য ইউরোপীয় প্রযুক্তির প্রভাব সারা বিশ্বে প্রবলভাবে গ্রাস করে নিবে, প্রভাব বিস্তার করবে জনজীবনকে, সরস নিজস্ব সংস্কৃতিকে চাপা দিয়ে একটি গতিশীল পথের দিকে ?

তা বোধ করি, তেমন আর বাকি নেই, এর থেকে বের হওয়ারও কোন পথ খোলা নেই। দিনদিন প্রযুক্তি এগোতেই থাকবে, তা জীবনের বিভিন্ন স্তরে প্রবেশ করবে, আর আমরা ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায় দুইভাবেই তাতে জড়িয়ে যাব।

শুধু কি একটি নির্দিষ্ট দিকেই এটি প্রভাব বিস্তার করে রয়েছে, তা তো নয়। লেখার শুরুতে প্রথমেই যখন বলেছিলাম, প্রযুক্তির মাধ্যমে এখন ব্যবসা, বাণিজ্যে, চাকরি বাকরির দৈনন্দিন লেনদেনে কত আসলো গেলো, বাকির অঙ্কে কত জমা পড়লো, কতটা ঋণ আছে কি নেই, এসব ঘুরপাক খাচ্ছে । কোথাও কোন দিকে কম পড়ে গেলে, কিংবা অপ্রাপ্তি থাকলে তার আফসোস খুব সহজে কমে যায় না।

জীবনের নিরিখে একটি মানুষ কি হিসেবি হবে, জাগতিক দিক দিয়ে খুব বেশি সমৃদ্ধি আশা করবে তা সে নিজেই ঠিক করে নিতে পারবে যতদিন ব্যক্তি স্বাধীনতা বজায় থাকবে। তবে সর্বোপরি, আমার নিজের জন্য এতসব হিসেব চুকানোর স্থান নেই। সাহিত্যচর্চাশীল মন যার আছে, তার জন্য পৃথিবীর শত ব্যস্ত আয়োজন তেমন প্রভাব ফেলতে পারবে না।

Src

তাইতো, আশায় বুক বাঁধি, কিছুটা সময় কেটে যাক জীবিকার জন্য, কিছুটা সময় বিদ্যাশিক্ষা আর প্রকৃতির যতটুকু দান সবার জন্য রয়ে গেছে তার অনুসন্ধানে। যখন চারদিকের জনসমাজ একটি নিরেট ঘূর্ণিমায়ার সম্মুখীন তখন, যাদের প্রখর বোধশক্তি রয়েছে তারাই সাবধানতার সাথে এগিয়ে যেতে পারবে অনেকদূর।

শহুরে কথকতার বিস্তর অনেকখানি পথপ্রান্তর লোকালয় ঘুরে যখন অনুভব করি সবার মনপ্রাণ নানা সমস্যায় জর্জরিত, তার থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছে, তখন আমিও কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়ি । চারদিকে জ্বলছে বাতি, লালনীল রঙিন গড়নের, তারই মাঝে ব্যস্ত জনজীবন আর কিছুটা ছায়া শহরের কিনারার পাশ ধরে বেয়ে চলেছে, তখন তার থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখার সাধ্য কোথায় ?

শেষমেশ বিকেলের হালকা আলোতে বসে এমন ধারা চিন্তার থেকে ইস্তফা দিলাম। সময় গড়িয়ে অনেকটাই হলো, আর দেরী করা ঠিক হবে না। বাসের জন্য অপেক্ষা শেষে উঠে বসলাম সিটে আর গাড়ি ঘরঘর চলতে শুরু করলো...

সমাপ্ত ।

নিজের সম্পর্কে কিছু কথা

(